কাস্টমসের উপকমিশনার জাহিদুল ইসলাম হাই। সার্কেল-৯ (উত্তরা অঞ্চল) থেকে সম্প্রতি সরিয়ে নেওয়া এই কর্মকর্তা ২০১১ সালের ১ আগস্ট বিসিএস ক্যাডারে যোগ দেন। মাত্র ছয় বছরেই ৭২টি দলিলের মাধ্যমে নিজ এলাকা পাবনায় ২০০ বিঘা জমির মালিক হয়েছেন তিনি। এমনকি মায়ের নামে থাকা সম্পত্তি বাগিয়ে নিতে তিনি নিজের ভাইকে জেল পর্যন্ত খাটিয়েছেন।
৭২ দলিলে ২০০ বিঘা জমির মালিক কাস্টমস কর্মকর্তা জাহিদুল
হায়দার আলী

জাহিদুল পাবনার ভাঙ্গুরা এলাকার মৃত রিয়াজুল ইসলামের ছেলে। এলাকায় কারো জমি বিক্রি করার দরকার পড়লে এখন তাঁর কাছেই যায় সবার আগে। কেননা অন্য যে কারো চেয়ে বেশি দাম দিয়ে হলেও তা কিনে রাখেন জাহিদুল। এত টাকা তিনি কোথায় পান?
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে জানা গেছে, সিনিয়র সহকারী কমিশনার হিসেবে কুমিল্লায় দায়িত্ব পালন করার সময় একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির সুযোগ দিয়ে তাদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ নিয়েছেন জাহিদুল।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার ভাঙ্গুরা, মাগুরা, মেন্দা, চৌবাড়িয়া ও ভবানীপুর মৌজার পাশাপাশি সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়ায়ও জমি রয়েছে জাহিদুলের। স্থানীয়ভাবে ওই জমির বিঘাপ্রতি দাম সাড়ে চার লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা। তবে রাস্তার পাশে হলে বিঘা ২০-৩০ লাখ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীতে উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরে স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে থাকেন কাস্টমস কর্মকর্তা জাহিদুল। মাসে ৬০ হাজার টাকার মতো বেতন পান তিনি। বাড়িভাড়া, সন্তানদের পেছনে খরচ এবং অন্যান্য ব্যয় মিটিয়ে বাকিটা সঞ্চয় করলেও ছয় বছরে এত বিপুল সম্পত্তির মালিক হওয়া সম্ভব নয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পৈতৃক সূত্রে মাত্র ১৫ বিঘা জমি পেয়েছিলেন জাহিদুল। কাস্টমসে চাকরি পাওয়ার সময় জাহিদুলের ব্যাংক হিসাবে ছিল মাত্র ১১ হাজার টাকা।
কালের কণ্ঠ’র হাতে আসা নথিতে দেখা গেছে, চাকরিতে যোগদানের এক বছর পর ২০১২ সালে ২৬৬৭, ২৫০৬ ও ১৯৩১ নম্বরের তিনটি দলিলে প্রায় সাত বিঘা জমি (২০৮ শতাংশ) কেনেন জাহিদুল। এরপর ৬৪৮, ১৯৩৮, ১৫৫৩, ৮৬, ১০৭৭, ১০৭৮, ১১৯২, ২৪৩৫ ও ১৫৩৯ নম্বর দলিলসহ নামে-বেনামে ওইসব জমির মালিক হয়েছেন তিনি।
তা ছাড়া নিজের তিন ভাই ও পাঁচ বোনের কাছ থেকে ৩৪টি দলিলের মাধ্যমে ২৮ বিঘা জমির মালিক হয়েছেন জাহিদুল। রাজস্ব ফাঁকি দিতে এবং ঘুষের কালো টাকা সাদা করতে ভাই-বোনদের কাছ থেকে কেনা জমির হেবানামা (দানস্বত্ব) দলিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁর তিন ভাই।
জাহিদুলের এক ভাই সাইফুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উপযুক্ত মূল্য পেয়েই ভাইয়ের কাছে আমরা জমি বিক্রি করেছি। ঘুষের টাকা সাদা করতে এবং রাজস্ব না দিতে হেবানামা দলিলে জমি কিনেছে জাহিদুল।’
জাহিদুলকে জমি কিনে দিয়েছেন এমন একজন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শুধু পাবনা আর সিরাজগঞ্জই নয়, ঢাকার উত্তরা, গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে জমি কিনেছেন জাহিদুল।
জাহিদুলের ঘুষের টাকায় শ্বশুরও কোটিপতি : জাহিদুলের শ্বশুর আলাউদ্দিনের বাড়ি চাটমোহর উপজেলার হরিপুর গ্রামে। স্কুলে শিক্ষকতা করে সংসারের চাকা সচল রাখতে হিমশিম খেতে হতো তাঁকে। কিন্তু জামাতার কল্যাণে রাতারাতি বদলে গেছে তাঁর জীবনও। তিনিও এখন কোটিপতি। তিনিও নিজের নামের পাশাপাশি পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে জমি কিনেছেন।
শ্বশুরের চেয়ে এগিয়ে ভাগ্নে : তবে জাহিদুলের অবৈধ অর্থে শ্বশুরের চেয়েও ‘বর্ণাঢ্য’ জীবন তাঁর (জাহিদুল) ভাগ্নে সাহিদুর রহমান সাগরের। জাহিদুলের মেজ বোনের ছেলে সাগর। বলতে গেলে এই ভাগ্নেই জাহিদুলের ডান হাত। এলাকার কোথায় জমি বিক্রি হবে, তার খোঁজ রাখেন সাগর। কথাবার্তা চূড়ান্ত হয়ে গেলে জাহিদুল টাকা পাঠান। আর সেই টাকা হস্তান্তর করেন সাগর।
জানা গেছে, মামার দেওয়া অর্থে ঢাকা, পাবনা, সিরাজগঞ্জসহ কয়েকটি জেলায় জমি কিনেছেন এই সাগর। এলাকাবাসী জানায়, মামার বদৌলতে সাগরও এখন কোটি টাকার মালিক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাহিদুল ইসলাম সাগর বলেন, ‘আমি মামার টাকায় মামার নামে জমি কিনে দিই, তাতে আপনার সমস্যা কি? আমি কি ভাগ্নে হয়ে মামাকে সাহায্য করতে পারি না।’
আপনার নামেও নাকি জমি কিনে দিয়েছেন আপনার মামা—এ প্রশ্ন শুনেই সাগর বলেন, ‘আমি এখন জরুরি কাজে ব্যস্ত আছি, পরে কল দেন।’ এরপর মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।
জালিয়াতি করে মায়ের জমিও লিখে নিয়েছেন জাহিদুল : অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতারণার মাধ্যমে জমি লিখে নেওয়ার অভিযোগে জাহিদুলের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন তাঁরই বৃদ্ধ মা সামছুন্নাহার। পাবনার ভাঙ্গুড়া সহকারী জজ আদালতে ওই মামলা হওয়ার পর মাকে সহযোগিতার অভিযোগে ছোট ভাই আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেন জাহিদুল। ওই মামলায় আশরাফুলকে জেলও খাটিয়েছেন তিনি। এমনকি ক্যাডার দিয়ে বৃদ্ধ মাকে তুলে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে নিজের নামে হওয়া মামলাটি প্রত্যাহার করিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ সামছুন্নাহারের অন্য সন্তানদের। জাহিদুলের মা সামছুন্নাহার এখন শয্যাশায়ী।
জাহিদুলের ছোট ভাই আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘মা যে মামলা করেছিল সেই মামলায় মাকে সঙ্গে নিয়ে সাক্ষ্য দিতে যাওয়ার সময় আমাকে ডিবি পুলিশ দিয়ে পাবনা কোর্ট চত্বরে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায় জাহিদুল। সে কাস্টমস কর্মকর্তা হওয়ায় তার ঘনিষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা দিয়ে আমাকে কয়েকটি মামলায় জেল খাটায়। এখন সব আল্লাহর কাছে ছেড়ে দিয়েছি। একদিন তার বিচার হবেই।’
এলাকায় সরেজমিনে গেলে জাহিদুলের মেজ ভাই সাইফুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গোপনে আমার মায়ের সম্পত্তি লিখে নিয়েছে ছোট ভাই জাহিদুল। আমাদের ভাই-বোনদের বঞ্চিত করে প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের বিশাল মার্কেটসহ জমি জালিয়াতি করে হাতিয়ে নিয়েছে। তার ভয়ে আমরা এখন মুখ খুলতেও পারি না।’
যাদের কাছ থেকে জমি কেনা হয়েছে : খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভাঙ্গুরা উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের ভবানীপুর মৌজায় শফিকুল ইসলাম মেম্বার ও তাঁর স্বজনদের কাছ থেকে সাড়ে ছয় বিঘা জমি ৮৫ লাখ টাকায় কেনেন জাহিদুল। জমিটি নিজের নামে দলিল না করে স্ত্রীর বড় ভাই রফিকুল ইসলামের নামে দলিল করেছেন।
এ বিষয়ে জমির মালিক সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিক্রি করা জমি নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না, আবার কোন ঝামেলায় পড়ি।’
ভবানীপুর গ্রামের মুকুল কালের কণ্ঠকে জানান, জাহিদুলের কাছে তাঁর ভাই জমি বিক্রি করেছে। প্রায় ২৩ শতাংশ জমি ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। জাহিদুল নিজেই উপস্থিত থেকে তাঁর নামেই এই জমি কিনে নেন।
চরভাঙ্গুরা গ্রামের জোত্স্না বেগম জানান, তাঁর প্রায় এক বিঘা জমি কেনার জন্য প্রথমে জাহিদুল মোবাইল ফোনে দরদাম করেন। পরে তাঁর বোনের জামাই বাবলু জমি কেনার সময় উপস্থিত ছিলেন। ওই জমি জাহিদুলের স্ত্রীর নামে দলিল করা হয়। তবে একজন মুহুরীর মাধ্যমে টাকা দেন জাহিদুল। বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দামেই জমিটি তিনি কিনে নিয়েছেন। জোত্স্না বেগম আরো বলেন, ‘শুধু আমার জমিই নয়, গ্রামের অনেকের জমিই হাই কিনে নিচ্ছে।’
ভবানীপুর গ্রামের আবুল কালাম জানান, তিনিসহ তাঁর আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে প্রায় দেড় বিঘা জমি কিনে নেন জাহিদুল। বিঘাপ্রতি চার লাখ টাকায় এসব জমি কিনে নিয়েছেন। জাহিদুলের নামে এই জমি কেনা হলেও টাকা-পয়সা লেনদেন করেন তাঁর ভাগ্নে সাগর।
এ ছাড়া ভবানীপুর গ্রামের আব্দুর রহিমের কাছ থেকে চার লাখ ২০ হাজার টাকা বিঘা দরে দেড় বিঘা এবং আব্দুর রউফের কাছ থেকে সাড়ে ১০ লাখ টাকায় প্রায় ১০ শতাংশ বাড়ির জমি কিনেছেন জাহিদুল। এই ভবানীপুর মৌজার বাসিন্দা রফিকুল ইসলামের কাছ থেকে ৩১ শতাংশ জমি জাহিদুল তাঁর স্ত্রীর বড় ভাই রফিকুল ইসলামের নামে কিনে দেন।
মাগুরা গ্রামের আনোয়ার হোসেন জানান, জাহিদুলকে একাধিক স্থানে ১৭ থেকে ১৮ বিঘা জমি কিনে দিয়েছেন তাঁদের গ্রামের মজনু। তবে মজনুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
ভাঙ্গুরা গ্রামের ডা. জাফরের ছেলে বুলবুল ও খাজা এবং ওয়াব মেম্বার ও তোরাব মেম্বার; হানিফ সর্দারের ছেলে রেজাউল, ময়দান হাজির জামাতাসহ অনেকের কাছ থেকেই জমি কিনেছেন জাহিদুল।
তা ছাড়া এলাকাবাসীর দাবি, মাগুরা গ্রামেই ৫০ থেকে ৬০ বিঘা জমি কিনেছেন জাহিদুল।
জাহিদুলের টাকার উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে ভবানীপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব মিজানুর রহমান বলেন, ‘কাস্টমসের চাকরি যেন আলাদিনের চেরাগ। মাস গেলেই লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। আর এই গ্রাম ওই গ্রামে জমি কিনছেন। শুনতাছি ঢাকায়ও নাকি অনেক সম্পত্তির মালিক হইছে।’
জাহিদুলের বক্তব্য : বিপুল জমি, বিশেষ করে ভাই-বোনদের কাছ থেকেও জমি কেনার ব্যাপারে জানতে চাইলে জাহিদুল দাবি করেন, তাঁর ভাইয়েরা তাঁকে জমি দান করেছেন।
কিন্তু আপনার ভাইয়েরা যে বলছে টাকার বিনিময়ে জমি বিক্রি করেছেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে জাহিদুল কোনো জবাব না দিয়ে আরো বলেন, ‘ভাই এগুলো নিয়ে কেন আপনি ঘাঁটাঘাঁটি করছেন।’
স্ত্রীর নামে জমি কেনা প্রসঙ্গে জাহিদুল বলেন, ‘আমার স্ত্রীর নিজস্ব মাছের ঘেরসহ বিভিন্ন ব্যবসা আছে। তাঁর টাকায় সে কিনেছে।’
কিন্তু বিয়ের আগে তো আপনার স্ত্রীর কোনো ব্যবসাও ছিল না। এমনকি আপনার শ্বশুর একজন সাধারণ শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু তিনি টাকা পেলেন কোথা থেকে? এ প্রশ্নে জাহিদুল কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
স্ত্রীর ভাইয়ের নামে জমি কেনার কথা অস্বীকার করে জাহিদুল বলেন, ‘আমি কেন তাঁদের নামে জমি কিনব? আমার স্ত্রীর ভাই একজন কানাডা প্রবাসী। তাঁর টাকায় তাঁরা জমি কিনছেন।’
আর মায়ের জমি জালিয়াতি করে নেওয়া বিষয়ে জানতে চাইলে জাহিদুল প্রথমে অস্বীকার করেন। পরে আবার তিনি দাবি করেন, ‘আমি মায়ের জমি লিখে নিইনি। মা খুশি হয়ে আমাকে লিখে দিয়েছেন।’
তাহলে আপনার মা কেন আপনার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন—এ প্রশ্নে জাহিদুল বলেন, ‘আসলে কি মাকে ভুল বুঝিয়ে আমার অন্য ভাইয়েরা মামলাটি করিয়েছে। সেই মামলাটি শেষ পর্যন্ত মা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।’
ছোট ভাইকে ‘মিথ্যা’ মামলা দিয়ে হয়রানি এবং মাকে তুলে নিয়ে নিজের নামে হওয়া মামলা প্রত্যাহার করিয়ে নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জাহিদুল বলেন, ‘আমি ভাইদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করিনি। তাদের অপকর্মের কারণেই মামলা হয়েছে।’
সম্পর্কিত খবর

স্বস্তির জয়ে সিরিজে ফিরল বাংলাদেশ
সাইদুজ্জামান, ডাম্বুলা থেকে

ক্রিকেট ম্যাচ, তার ওপর রবিবার। গতকাল তাই উদ্দাম পার্টির প্রস্তুতি ছিল রনগিরি ডাম্বুলা স্টেডিয়ামের উপড়ে পড়া গ্যালারির। ম্যাচ শুরুর ঘণ্টাখানেক আগে থেকে ডিজের মিউজিক, দর্শকদের ড্রাম পেটানো আর ট্রাম্পেটের চড়া সুরে কান পাতা দায়। সেই পার্টিই মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে যায় দারুণ ক্ষিপ্রতায় কুশল মেন্ডিসকে শামীম হোসেন রান আউট করতেই।
বিশ ওভারের ক্রিকেটে ছন্দ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুতলয়ের ক্রিকেটে ছন্দের সেই গাড়ির স্টিয়ারিং হাতে পেয়ে আর পেছনে তাকায়নি বাংলাদেশ দল।
অবশ্য ম্যাচজুড়েই শামীমের প্রতিপত্তি দেখা গেছে।
কিন্তু সে ধারণা ভুল প্রমাণ করেছেন লিটন ও শামীম। অধিনায়কের সঙ্গে ৬৯ রানের জুটি গড়ে তাওহিদ ফেরেন, একই ওভারে তাঁর সঙ্গে ড্রেসিংরুমে যোগ দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এই ধাক্কায় অবশ্য কাবু হওয়ার অবস্থায় নেই শামীম। আগের ম্যাচে ৫ বলে ১৪ রানে অপরাজিত থাকা এই বাঁহাতি শুরু থেকে চড়াও হন লঙ্কান বোলারদের ওপর। ওদিকে অধিনায়কও থিতু হয়ে গেছেন উইকেটে। তাঁরা জুটি বেঁধে ছোটান রানের গতি। পঞ্চম উইকেট জুটিতে লিটন ও শামীম মিলে তোলেন ৭৭ রান, তা-ও মাত্র ২১ বলে! ১৩ ম্যাচ পর ফিফটির দেখা পান লিটন, যা তাঁর ক্যারিয়ারের দ্বাদশ পঞ্চাশ পেরোনো ইনিংস। এক বাউন্ডারি আর পাঁচ ছক্কায় ৫০ বলে ৭৬ রান করে যখন আউট হন অধিনায়ক, ততক্ষণে লড়াইয়ের জন্য আশাব্যঞ্জক পূঁজি এক রকম হয়ে গেছে বাংলাদেশের। শেষ ওভারে স্ট্রাইক পেতে মরণপণ দৌড়েও ক্রিজে পৌঁছাতে পারেননি শামীম। তাতে ২৭ বলে তাঁর ৪৮ রানের ইনিংস পঞ্চাশ ছুঁতে না পারার আক্ষেপে শেষ হয়েছে। অবশ্য তাঁর মনে কোনো আক্ষেপ নেই, ‘দল জিতেছে। তাতে অবদান রাখতে পেরেছি। এতেই আমি খুশি।’ শামীম আরো খুশি ১৬ জুলাই কলম্বোয় সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা নয়, জয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
ম্যাচ শুরুর আগের রনগিরি ডাম্বুলা স্টেডিয়ামের চালচিত্র না বললেই নয়। হাজার তিরিশেক দর্শকের ঠাঁই হয় এ মাঠে। তবে দুই দিন ধরে টিকিটের জন্য আহাজারি শোনা যাচ্ছিল, তাতে বোঝাই যাচ্ছিল যে পর্যাপ্ত আসন নেই। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় খেলা শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে গ্যালারি ভরে গেছে। বরাবরের মতো গ্যালারি লাগোয়া গাছেও চড়ে বসেন বিনা টিকিটের দর্শক। তাই বলে সিঁধ কেটে বিনা টিকিটের দর্শক ঢোকে ডাম্বুলায়, সেটি অজানা ছিল। গতকাল সেটিও দেখা হলো, বাংলাদেশ ইনিংসের ব্যাটিং পাওয়ার প্লে চলাকালে ভিআইপি স্ট্যান্ডের দিককার কাঁটাতারের বেড়ার নিচের মাটি সরিয়ে অন্তত শ খানেক টিকিটহীন দর্শক ঢুকে পড়লেন স্টেডিয়াম চত্বরে। বিনা বাধায় যোগ দিলেন গ্যালারির উৎসবে। নিজ দলের ব্যাটিং ভরাডুবিতে ক্ষণে ক্ষণে লাউড স্পিকার থেমেছিল বটে। তবে পুরোপুরি থামেনি। পুরস্কার বিতরণীর পরও কিছু দর্শককে দেখা গেছে হাসিমুখে সেলফি তোলায় ব্যস্ত। কয়েকজন তো বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বলেও গেলেন, ‘ওয়েল প্লেইড বাংলাদেশ!’

অবৈধ ব্যাটারির রিকশা জব্দে অভিযান শুরু

রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবৈধ ব্যাটারির রিকশার দাপট বেড়েছে। সেগুলো জব্দে অভিযান শুরু করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। গতকাল মালিবাগে অবৈধ ব্যাটারির রিকশা জব্দ করে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি : ফোকাস বাংলা
।
মানবতাবিরোধী অপরাধ
বেরোবির সাবেক ভিসিসহ ২৪ আসামির আত্মসমর্পণে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরে আবু সাঈদ হত্যা মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদসহ পলাতক ২৪ আসামিকে আত্মসমর্পণের জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারকে বাংলা-ইংরেজি দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দিতে বলা হয়েছে। আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ।
বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গতকাল রবিবার এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের দুই বিচারক হলেন মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার পালোয়ানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেওয়া হয়।
শুনানিতে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘এর আগে ১০ জুলাই এই মামলার ২৬ আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
পরে ট্রাইব্যুনাল আগামী ২২ জুলাই পরবর্তী শুনানির তারিখ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেন। যে দুজন আসামি অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন তাঁরা হলেন রাফিউল হাসান রাসেল ও মো. আনোয়ার পারভেজ।
আবু সাঈদ হত্যা মামলায় মোট ৩০ জন আসামি। এর মধ্যে চারজনকে এদিন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ঢাকার আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানোর মামলায় পরবর্তী শুনানির দিন ১৬ জুলাই ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল-২। এই মামলার শুনানি করেন প্রসিকিউটর মো. সাইমুম রেজা তালুকদার। শুনানিতে তিনি বলেন, পলাতক আট আসামির গ্রেপ্তার বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় প্রয়োজন। তখন ট্রাইব্যুনাল আগামী ১৬ জুলাই প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন। আদেশের সময় মামলার ১৬ আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার আটজনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

হত্যা মামলায় জামিন
আমি রাজনীতি বুঝি না : অপু বিশ্বাস
নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই আন্দোলনের সময় রাজধানীর ভাটারা থানার এনামুল হক নামের এক ব্যক্তিকে হত্যাচেষ্টা মামলায় আত্মসমর্পণ করে অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস জামিন পেয়েছেন। গতকাল রবিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানের আদালত শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। শুনানি চলাকালে অপু বিশ্বাস বলেন, ‘আমি একজন অভিনয়শিল্পী। এটাই আমার পেশা।
এদিন অপু বিশ্বাস আদালতে উপস্থিত হন। এ সময় তিনি মুখে কালো মাস্ক, মাথায় সাদা ওড়না ও বোরকা পরেছিলেন। তাঁর আইনজীবী আব্দুল মান্নান খান জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
এরপর অপু বিশ্বাস বলেন, ‘আমি একজন অভিনেত্রী। অভিনয় করার জন্য অনেক কিছু করতে হয়েছে। আমি রাজনীতি বুঝি না। রাজনীতি করিও না। করতেও চাই না।’ এ সময় আইনজীবীরা আহা আহা সাধু বলতে থাকেন। অনেক আইনজীবী উত্তেজিত হয়ে বলেন, অপু বিশ্বাস এমপি হতে চেয়েছিলেন। শেখ হাসিনার দোসর তিনি। এ সময় অপু বিশ্বাস বলেন, ‘আমি অভিনেত্রী। আমাকে যে পোশাক দেওয়া হয়, সে পোশাক পরে অভিনয় করতে হয়। অভিনয় এমনই। ওই সময় আমি খারাপ অবস্থায় ছিলাম। পারিবারিক ঝামেলা চলছিল। আমার একটা বাচ্চা আছে।’ এ সময় অপু বিশ্বাসের চোখ ছলছল করতে দেখা যায়। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেন।
এর আগে অপু বিশ্বাস গত ২ জুন হাইকোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন পান। পরে গত বৃহস্পতিবার ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) মো. ওয়াহিদুজ্জামানের আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিননামা দাখিল করেন তিনি।
মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, জুলাই আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই ভাটারা থানার সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের ওপর গুলি চালানো হয়। এনামুল হকের পায়ে গুলি লাগে। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৮৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চার শ’ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলাটি করেন তিনি। মামলায় অপু বিশ্বাস, আশ্না হাবিব ভাবনা, নুসরাত ফারিয়া, অভিনেতা জায়েদ খানসহ ১৭ জন তারকাকেও আসামি করা হয়। মামলায় এসব অভিনেতা-অভিনেত্রীকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের অর্থের জোগানদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পরে এই মামলায় গত ১৮ মে গ্রেপ্তার হন আরেক চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। পরদিন তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। গত ২০ মে জামিন পান তিনি।