<p> সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া আজ তাঁর ৩৯ বছরের চাকরি জীবনের ইতি টানছেন। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক। এ উপলক্ষে ঢাকা সেনানিবাসে রয়েছে নানা আনুষ্ঠানিকতা।</p> <p> সকাল সাড়ে ৯টায় শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন বিদায়ী সেনাপ্রধান। পৌনে ১০টায় সেনাকুঞ্জে তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে। দুপুর সাড়ে ১২টায় তিনি সেনা সদরে নবনিযুক্ত সেনাপ্রধানের কাছে দায়িত্বভার হস্তান্তর করবেন।</p> <p> ইকবাল করিম ভূঁইয়া ১৯৭৬ সালের ১৯ মার্চ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি দেশ-বিদেশে বেশ কটি প্রফেশনাল কোর্সে অংশ নেন। তিনি মালয়েশিয়ায় কম্পানি কমান্ডার কোর্স, যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ড ডিফেন্স ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল লিগ্যাল স্টাডিজে 'কোর্স অন পিস কিপিং ফর ডিসিশন মেকার্স' সম্পন্ন করেন। ইকবাল করিম ভূঁইয়া মিরপুরে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ এবং যুক্তরাষ্ট্রের কমান্ড অ্যান্ড জেনারেল স্টাফ কলেজের গ্র্যাজুয়েট। এ ছাড়া তিনি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির জেএফকে স্কুল অব গভর্নমেন্টে অনুষ্ঠিত ইনিশিয়েটিভ ফর কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট এবং সিয়েরালিয়নের ফ্রিটাউনে লজিস্টিক সাপোর্ট ইস্যুজ-বিষয়ক কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন।</p> <p> স্টাফ, ইন্সট্রাক্টর ও কমান্ড- সেনাবাহিনীর তিন ধরনের পদেই তিনি যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন। বিদায়ী সেনাপ্রধান তিনটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন, একটি পদাতিক ব্রিগেড ও তিনটি পদাতিক ডিভিশনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। স্টাফ হিসেবে তিনি সেনা সদর দপ্তরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ ও ইনফেন্ট্রি ডিভিশনের কর্নেল স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।</p> <p> ইকবাল করিম ভূঁইয়া বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে প্লাটুন কমান্ডার, ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ ও স্কুল অব ইনফেন্ট্রি অ্যান্ড ট্যাকটিক্সের ডিরেক্টিং স্টাফ ছিলেন।</p> <p> তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবিরোধী অভিযান এবং 'অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম'-এ সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। 'অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম'-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য তিনি লিবারেশন অব কুয়েত মেডেল লাভ করেন। তিনি সিয়েরালিয়নে ইউএনএএমএসআইএলের সেক্টর চার-এর কমান্ডার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।</p> <p> জেনারেল ইকবাল করিম যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, কুয়েত, সিয়েরালিয়ন, গায়ানা, ঘানা, কেনিয়া, আইভরি কোস্ট, লাইবেরিয়া, পাকিস্তান, চীন ও কাতার সফর করেছেন। তিনি দুই কন্যা ও এক পুত্রের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম তাহমিনা ইয়াসমিন।</p> <p> ২০১০ সালের মে মাসে তিনি পদোন্নতি পেয়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হন। ২০১২ সালের ২৫ জুন তাঁকে সেনাপ্রধান করা হয়।</p> <p> ১৯৫৭ সালের ২ জুন কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন ইকবাল করিম। কুমিল্লা জিলা স্কুল এবং ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের ছাত্র ছিলেন তিনি। যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতায় দেশে-বিদেশে সেনাবাহিনীর মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য কাজ করেছেন তিনি। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবস্থান যাতে আরো মর্যাদাপূর্ণ হয়, সে জন্য গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন পদক্ষেপ। তাঁর দায়িত্ব পালনকালে সেনা সদস্যদের স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, রেশন, আবাসন, মেসে খাবারের মানোন্নয়ন এবং সিএমএইচে আরো সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হয়েছে।</p> <p> জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হককে আজ থেকে ২০১৮ সালের ২৫ জুন পর্যন্ত সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁর জন্ম ১৯৫৮ সালের ডিসেম্বরে। ১৯৭৮ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। ক্যাডেট হিসেবে কৃতিত্বের জন্য সোর্ড অব অনার পান তিনি।</p> <p> ২০১৩ সাল থেকে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের পিএসওর দায়িত্বে ছিলেন এই সেনা কর্মকর্তা। এর আগে তিনি ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড ও স্টাফ কলেজের কমান্ড্যান্ট ছিলেন।</p> <p> ৩৭ বছরের কর্মজীবনে সেনাবাহিনীর একটি পদাতিক ডিভিশনের প্রধানের দায়িত্বও পালন করেছেন আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক। রাষ্ট্রপতির এডিসি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।</p> <p> ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিফেন্স স্টাডিজে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। এরপর ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস থেকে দর্শনে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন তিনি।</p> <p> জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে ইরাক, ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়ায় কাজ করেছেন আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক। তাঁর স্ত্রীর নাম সোমা হক। তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।</p> <p> রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ : বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, বিদায়ী সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া গতকাল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেন।</p> <p> রাষ্ট্রপতির প্রেসসচিব জয়নাল আবেদীন বলেন, বৈঠকে সেনাবাহিনী প্রধান তাঁর দায়িত্ব পালনকালে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা এবং সহযোগিতা প্রদানের জন্য রাষ্ট্রপতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। আবদুল হামিদ যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করার জন্য সেনাবাহিনী প্রধানকে ধন্যবাদ জানান।</p> <p> রাষ্ট্রপতির সংশ্লিষ্ট সচিবরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।</p> <p> এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহ্সানুল করিম সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বিদায়ী সেনাপ্রধান তাঁর দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উন্নয়নে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও সমর্থন দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। একই সঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কৃতিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য জেনারেল ভূঁইয়াকে ধন্যবাদ জানান।</p> <p> অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান 'বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাস' ও 'মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অভিযান' শীর্ষক দুটি বই প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেন।</p> <p>  </p>