<p> সংসারই টেকে না, জীবনসঙ্গী 'প্রিন্স'কে হারানোর বিরহে কাতর; তারই কোল জুড়ে এলো কিনা সাত-সাতটি ছানা। দুই-এক দিনের ব্যবধানে একে একে পৃথিবীর আলোতে বেরিয়ে এসেছে ওরা। আর এর মধ্য দিয়ে এক বিরল ঘটনার জন্ম দিল প্রিন্সেস নামের একটি ব্লু-গোল্ড ম্যাকাও পাখি। একটি ব্লু-গোল্ড ম্যাকাওয়ের একসঙ্গে সাতটি বাচ্চার মা হওয়ার ঘটনা বিশ্বে বিরল। সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে যাঁর নাম অনেকেরই জানা, সেই পাখি বিশেষজ্ঞ ড. আবদুল ওয়াদুদের ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানায় ঘটেছে এই ঘটনা।</p> <p> রাজধানী ঢাকার হাতিরপুলে মিনি চিড়িয়াখানায় একটি বিশেষ ধরনের বাসায় ব্লু ম্যাকাওয়ের সাত ছানার মা হওয়ার ঘটনায় প্রবল উচ্ছ্বসিত ড. ওয়াদুদ। আর হবেন না-ই বা কেন। এই পাখিটি নিয়ে তাঁকে তো কম সংগ্রাম করতে হয়নি।</p> <p> ঘটনা আর দুর্ঘটনার আবর্তে ঘেরা প্রিন্সেসের জীবন। ২০১০ সালে ইস্কাটন রোডের মো. সেলিম ছেলে ইকরাম সেলিমের জন্য সিঙ্গাপুর থেকে আনা পুরুষ ম্যাকাও পাখি 'প্রিন্স'কে নিয়ে হাজির হন ২২/২ হাতিরপুলে অবস্থিত ড. আবদুল ওয়াদুদের ফিকামলি সেন্টারের মিনি চিড়িয়াখানায়। প্রিন্সকে দেওয়া হয় ড. আবদুল ওয়াদুদের মিনি চিড়িয়াখানায় লালনপালন করার জন্য। ড. ওয়াদুদ প্রিন্সের একাকিত্ব কাটাতে তার জোড়া বাঁধার ব্যবস্থা করেন। সঙ্গিনীর নাম রাখা হয় প্রিন্সেস। সেই থেকে তারা ড. ওয়াদুদের কাছেই ছিল। সেখানে ২০১১ সালে প্রথম ডিম পাড়ে। ডিম থেকে বাচ্চাও হয়।</p> <p> <a name="RIMG0"></a></p> <p> আমাজন এলাকার পাইন বনে যাদের বাস, সেই পাখিকে বাংলাদেশে ড্রামের মধ্যে রেখে বাচ্চা ফোটানোর ঘটনা সবাইকে চমকে দেয়। এই বাচ্চা হওয়ার সংবাদ গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় সাড়া ফেলে দেয়। বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমেও গুরুত্বের সঙ্গে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়।</p> <p> কিন্তু এর পরই ঘটে ছন্দপতন। ঢাকার এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশে ২০১৩ সালের ৩ জানুয়ারি প্রিন্স আর প্রিন্সেসের সংসার ভেঙে যায়। প্রিন্সকে নিয়ে যাওয়া হয় বারিধারা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় মো. সেলিমের বাসায়। আর প্রিন্সেস থেকে যায় ড. ওয়াদুদের কাছে হাতিরপুলে। এ অবস্থায় প্রিন্স ও প্রিন্সেসের সংসার রক্ষার জন্য একই আদালতে (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) আবেদন করা হয়। কিন্তু একই ম্যাজিস্ট্রেট প্রিন্সকে আগের জায়গায় ফেরত না দিয়ে আবেদনটি নিষ্পত্তি করে আদেশ দেন। আদালতের বাইরে প্রিন্স আর প্রিন্সেসের সংসার রক্ষার চেষ্টা হয়। কিন্তু সে চেষ্টাও সফল হয়নি। ওদের সংসার ভেঙে যাওয়ার কাহিনী রূপকথার গল্পের মতোই। এরই মধ্যে ড. ওয়াদুদ বিভিন্ন দেশ থেকে পুরুষ ম্যাকাও পাখি এনে প্রিন্সেসের সঙ্গে জোড়া বাঁধার চেষ্টা করেন। তিনি সিঙ্গাপুর, বলিভিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও থাইল্যান্ড থেকে পুরুষ ম্যাকাও নিয়ে আসেন। কিন্তু কোনোটির সঙ্গেই জোড়া বাঁধেনি প্রিন্সেস। এতেও দমে যাননি এই পাখি বিশেষজ্ঞ। শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টিনা থেকে আনা পুরুষ ম্যাকাও পাখিটি প্রিন্সেসের মন জয় করে। সেটির নাম রাখা হয় আলেকজান্ডার। সেই আলেকজান্ডারের সঙ্গে সুখের সংসারে গত বছরের ২১ আগস্ট ডিম থেকে একটি ছানা ফোটে। তখন সংবাদ মাধ্যমে আবারও আলোচনায় আসে প্রিন্সেস। বহুল আলোচিত দুর্লভ প্রজাতির ব্লু-গোল্ড ম্যাকাও প্রজাতির পাখি প্রিন্সেস আবারও আলোচনায় এসেছে। এবার একসঙ্গে সাতটি বাচ্চা দিয়ে।</p> <p> ড. আবদুল ওয়াদুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, নিরলস চেষ্টার পর প্রিন্সেস কিছুদিন আগে একে একে সাতটি ডিম পাড়ে। একসঙ্গে এতগুলো ডিম পাড়ায় বিশেষভাবে পরিচর্যা করা হয়। আর এতেই সাফল্য আসে। কয়েক দিন আগ থেকেই বাচ্চা ফোটা শুরু হয়। দু-এক দিন পরপর সাতটি ডিম থেকেই ছানা বেরিয়ে আসে। সর্বশেষ ডিমটি ফুটেছে গত বৃহস্পতিবার। এখন মা ও বাচ্চারা সুস্থ আছে। বিশ্বে এ ঘটনা নজিরবিহীন।</p> <p> পাখি বিশেষজ্ঞ ড. ওয়াদুদ জানান, রং আর রূপ সৌন্দর্যের জন্য ম্যাকাও পৃথিবীজুড়ে পাখিপ্রেমিকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় পোষা পাখি। এটিকে বলা হয় ড্রইং-রুম কেইজ বার্ড। এদের আয়ু ৬০ থেকে ৭০ বছর। দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন অববাহিকার গভীর জঙ্গলে এদের আবাস। ম্যাকাও পাখি বড় বড় পাইনগাছে বাসা বাঁধে। এরা বিভিন্ন ফল ও বীচিজাতীয় খাবার খায়। সবিশেষ তাৎপর্যের বিষয় হলো, এই পাখি এখন বাংলাদেশে বিশেষভাবে তৈরি ড্রামের মধ্যে ডিম পাড়ছে ও বাচ্চা ফোটাচ্ছে।</p>