ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ১৮ জুলাই ২০২৫
৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ মহররম ১৪৪৭
গর্বের শিল্প

রূপগঞ্জের রূপসী জামদানি

রাসেল আহমেদ, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
রাসেল আহমেদ, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
শেয়ার
রূপগঞ্জের রূপসী জামদানি
রূপগঞ্জের জামদানিপল্লীতে দক্ষ হাতে নিপুণ কারুকাজে ব্যস্ত এক বয়নশিল্পী। ছবি : রফিকুর রহমান রেকু

বাংলাদেশের বয়সটা খুব বেশি না হলেও এর বয়নশিল্পের ইতিহাস বেশ দীর্ঘ। মহাভারতের যুধিষ্ঠিরের কাছে বঙ্গ থেকে ভেট গিয়েছিল মসলিন। সেটা খ্রিস্টপূর্ব ষোড়শ শতকের কথা। এমন অসংখ্য কাহিনী বলে ইতিহাস।

চন্দ্রগুপ্তের সভায় গ্রিক দূত মেগাস্থিনিস দেখেছিলেন ফুলেল সৌকর্যের এক অসাধারণ মসলিন। ধারণা করা হয়, মেগাস্থিনিস যে মসলিন দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন, সেটি আসলে রূপগঞ্জের রূপসী জামদানি। দেয়াশলাই বাক্সে এঁটে যাওয়া বারোহাতি এই নমনীয় পট্রবস্ত্র এবং ব্রিটিশ সম্রাজ্ঞীদের খুবই পছন্দের এ মসলিন এক সময় হারিয়ে গেল। তার জায়গা পূরণে এলো সূক্ষ্ম মসলিনের কিছুটা স্থূল রূপ জামদানি।
রূপগঞ্জের শীতলক্ষ্যা পারের নোয়াপাড়াই হলো এর সূতিকাগার। অনেক নিয়ম আর নিষ্ঠার সমন্বয়ে তাঁতিরা তৈরি করেন এ জামদানি। জামদানিশিল্পের নান্দনিক বয়ন নকশা এবং অসাধারণ কারিগরি নিপুণতা বাংলাদেশের তাঁতশিল্পের এক উজ্জ্বলতম উদাহরণ। ইনডিয়ান আর্ট অ্যান্ড দিল্লি গ্রন্থে জর্জ ওয়াটের ধারণা, জামদানি ডিজাইনের নমুনাগুলো নিঃসন্দেহে ইরানি শিল্প থেকে গৃহীত।
সে সময়ের জামদানি তাঁতিদেরও অনুমান, ইরানের কিংখার বয়ন নকশা জামদানিকে প্রভাবিত করেছে। পুরনো জামদানি শিল্পকর্মগুলো পৃথিবীর বয়নশিল্পের ইতিহাসের একেকটি প্রামাণ্য দলিল। জামদানি নামের উৎপত্তি অজানা। খুব উন্নতমানের পানপাত্রের নাম জামদানি। ফার্সি ভাষায় জাম এক প্রকার উৎকৃষ্ট মদের নাম এবং দানি অর্থ পেয়ালা, যা খুবই শিল্পমণ্ডিত।

 

জামদানির ইতিহাস ও বৈশিষ্ট্য : ৯৬ বছরের আবদুল গফুরসহ কয়েকজন প্রবীণ তাঁতি জানান, মোগল আমলে জামদানি উৎকর্ষতার চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল। সে আমলে জামদানি আংরাখা বা পোশাকে ব্যবহৃত হয়েছিল, যা নারী-পুরুষ উভয়েই ব্যবহার করত। সে সময়ের ইউরোপিয়ান চিত্রকলার দরবার ভার্সিলি এবং লন্ডনের নারীদের পোশাকে জামদানি গজ কাপড়ের ব্যবহার দেখা যায়। পঞ্চদশ এবং ষোড়শ শতাব্দীতেও রাজ দরবারে জামদানি ব্যবহৃত হতো। এগুলো মূল্যবান সম্পদ হিসেবে ঢাকা থেকে আগ্রা, বোখারা, সমরখন্দসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বাণিজ্য হতো। সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীতেও শতাধিক পণ্য বাংলা থেকে ইউরোপিয়ানরা হামবুর্গ, লন্ডন, মাদ্রিদ, কোপেনহেগেন ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠাত, যার মধ্যে জামদানিই সর্বাধিক সমাদৃত ছিল। জামদানিশিল্প অদ্বিতীয় মূলত দুটি কারণে। প্রথমত, এর রয়েছে বৈশিষ্ট্যমূলক জ্যামিতিক প্যাটার্নের ধারাবাহিকতা। দ্বিতীয়ত, এর মোটিফ, যা বুননের সময়েই কাপড়ে খুব সুন্দরভাবে গেঁথে যায়। জামদানি মোটিফের বয়ন কৌশল অভিনব এবং একই সঙ্গে জটিল। মোটিফগুলো বিমূর্ত দেখালেও এগুলো সরাসরি প্রকৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং ফুল, লতাপাতা, প্রাণিকুলেরই শোভন জ্যামিতিক রূপান্তর। একটি বিশেষ ফুলেল মোটিফ যদি বিচ্ছিন্নভাবে জমিনে বিছানো থাকে তাকে বলা হয় বুটিদার। ফুলের নকশার কোনাকুনি বিন্যাসকে বলা হয় তেছরি। আর মোটিফের সংযুক্তিকে বলা হয় জাল। মোটিফগুলো তাঁতির পারিপার্শ্বিক পরিবেশের প্রভাবে প্রভাবিত বিধায় এগুলোর নাম তাঁতিভেদে পরিবর্তিত হয়।

কেন বিখ্যাত রূপগঞ্জের নোয়াপাড়া : তাঁতি নুরুল আমিন, আনোয়ার, বাচ্চু মিয়াসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকার ডেমরা সুলতানা কামাল সেতু পার হলেই শীতলক্ষ্যাপারের যে নোয়াপাড়া গ্রাম, দীর্ঘকাল ধরে জামদানি কারিগরদের বসবাসের ফলে এখানে গড়ে উঠেছে জামদানি পল্লী। আবহাওয়া এখানে তাঁতিদের মধ্যে তৈরি করেছে উদ্দীপনা, কর্মস্পৃহা। এ প্রসঙ্গে মজার একটা গল্প প্রচলিত আছে। দুই দশক আগের জামদানি তৈরিতে দক্ষ শাহিন মিয়া নামের এক তাঁতি তাঁতসহ চলে গেলেন ময়মনসিংহের নিজ বাড়িতে। কিন্তু তাঁর কাজের মান খারাপ হচ্ছে। অগত্যা তিনি ফিরে এলেন রূপগঞ্জে আর তাঁর কাজে ফিরে এলো আগের জৌলুস। ধারণা করা হয়, এর পেছনে রয়েছে শীতলক্ষ্যার জলহাওয়া আর অজানা রসায়ন। এখানকার রোদের তেজে সুতায় আসে আলাদা ঔজ্জ্বল্য, যা পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায় না। এই শিল্পে যেমন রয়েছে সম্ভাবনার সমুদ্র, তেমনি আছে সমস্যার পাহাড়। মুক্তবাজার অর্থনীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, সিদ্ধান্ত প্রদানে সরকারের দীর্ঘসূত্রতা, হরতাল-অবরোধ, প্লট প্রদানে অনিয়ম ও ব্যাংক ঋণের অপ্রতুলতার কারণে জামদানিশিল্প বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

তাঁতিদের সুখ-দুঃখ : ১৯৭৫ সালেও এখানে প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার জামদানি তাঁতি ছিলেন। রূপগঞ্জের জামদানি তাঁতশিল্প শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্র জানায়, নব্বইয়ের দশকে এসে এ সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৬০ হাজারে। আর বর্তমানে দেড় থেকে দুই হাজার পরিবার এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। কথা হয় জামদানি পল্লীর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তাঁতি নুরুল আমিন ও তাঁর স্ত্রী আমিনা বেগমের সঙ্গে। বুকে জমানো কষ্ট আর ক্ষোভ নিয়েই তাঁরা বলেন, 'আমাগো তাঁতিগো কোনো শখ নাই। শরীরের ঘাম ঝরাইয়া আর পরিশ্রম কইরাও ভালা মতোন মজুরি পাই না। হগল লাভ অয় মহাজনগো।' তাঁতি হাওয়া বেগম, আকরাম হোসেন ও সাব্বির হোসেন বলেন, 'একটা শাড়ি বানাইয়া তাঁতিগো কিছুই থাহে না। সরকারের তরফ থেইক্কা যদি ৫০ হাজার টেকা কইরা গরিব তাঁতিগো লোন দিত, তাইলে তাঁতিরা খাইয়া-পইরা বাঁচত।' সত্তরোর্ধ্ব তাঁতি ফজর আলী আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, 'দেশের নাম ধইরা রাহনের লেইগ্যা আমরা এই ঐতিহ্য ধইরা রাখছি। সারা দুনিয়ায় জামদানি শাড়ির লেইগ্যা বাংলাদেশেরে চিনে। এত্তো কষ্ট কইরা তাঁতিরা শাড়ি বানায়, হেই তাঁতিগো সরকার কোনো সুযোগ-সুবিধা দেয় না। তাঁতিরা যদি এই পেশা ছাইড়া চইলা যায়গা, তাইলে সরকার কেমনে এই ঐতিহ্য ধইরা রাখবো?' তাঁতি চম্পা আক্তার, আনোয়ারা বেগম ও সফুরা খাতুন বলেন, 'মাতার ঘাম পায়ে ফালাইয়া একটা শাড়ি বানাই। এত্তা শাড়ি বানাইয়াও আমাগো শাড়ি পরার ভাগ্য নাই। হের পর যদি ঘামের মজুরি ঠিক মতোন না পাই, তাইলে দেশের ইজ্জত বাঁচাইয়া আমরা কী করমু? নিজেরা বাঁইচা তারপর তো দেশের চিন্তা করুম!'

প্লট বরাদ্দে অনিয়ম-দুর্নীতি : ১৯৯৩ সালে জামদানিশিল্পীদের কথা ভেবে নোয়াপাড়া এলাকায় ২০ একর জমিতে প্লট বরাদ্দের পরিকল্পনা নেয় তৎকালীন সরকার। ৪০৬টি প্লট তৈরি করা হয়। কিন্তু বরাদ্দের শুরুতেই চলে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি। মাত্র ১২০ জন প্রকৃত তাঁতির মধ্যে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। আর ৩০টি প্লট খালি পড়ে আছে। বাকি প্লটগুলো স্থানীয় ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নোয়াপাড়ার বিসিক শিল্প নগরীর কার্যালয়ের কতিপয় কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে এসব প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্লট দখলকারীদের অনেকে জামদানি কারখানা করার পরিবর্তে টেক্সটাইল মিল নির্মাণ করেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিসিক কার্যালয়ের সামনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের প্লটগুলো অবৈধভাবে দখলে নিয়ে স্থানীয় রশিদ মিয়া, জয়নাল মিয়া, সোহরাব মাস্টার, হযরত আলী, রহমান মিয়া, আলী আলম, মোখলেস মিয়া টেক্সটাইল মিল করেছেন। এ ছাড়া তারাব পৌরসভার মহিলা কমিশনার জ্যোৎস্না বেগম, মিল ব্যবসায়ী নুরু হাজি, গাড়ি ব্যবসায়ী নুরে আলম, টেক্কু মিয়াসহ আরো অনেকে অবৈধভাবে প্লট দখলে নিয়ে বাড়িঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। জামদানি তাঁতি হিসেবে জানান দিতে কেউ কেউ নামমাত্র বাঁশ-খুঁটি পুঁতে রেখেছেন। অনেক তাঁতি প্লট না পেয়ে বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। কথা হয় তেমন একজনের সঙ্গে। আউয়াল আলী নামের এ তাঁতি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, 'কাগজপত্র জমা দিছি। অথচ প্লট পাই নাই। হেই প্লট পাইছে এক ব্যবসায়ী।' নুরুল আমিন গত ১১ বছর ধরে ভাড়ায় তাঁত চালিয়ে আসছেন। অথচ তাঁর কপালেও জোটেনি প্লট। নুরুল আমিন বলেন, 'আমরা প্রকৃত তাঁতি অইয়াও প্লট পাই না। আর যেরা তাঁতি না হেরা প্লট পায়।'

গত বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে প্লট দখলের অভিযোগ সত্যি কি না বক্তব্য নিতে তারাব পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা আসনের কমিশনার জ্যোৎস্না বেগমের সেলফোনে ফোন দিলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে তিনি দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। তাঁতিরা আরো বলেন, বিসিকের অফিস সহকারী আবদুল হকের বিরুদ্ধেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। এ ব্যাপারে আবদুল হক বলেন, প্লট বরাদ্দে অনিয়ম হয়েছে এটা ঠিক না। গরিব তাঁতিরা প্লট পেলেও তারা ঘর তুলতে না পেরে বিক্রি করে দেয়।

জামদানি রপ্তানি : তাঁতিরা জানান, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, লন্ডনসহ বিভিন্ন দেশে জামদানি রপ্তানি হয়। প্রতিবছর ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার জামদানি রপ্তানি করা হয়। প্রতিবছর বাংলদেশসহ ভারত, ইসলামাবাদ, করাচি, লাহোর ও ইউরোপে বসে জামদানি মেলা। এসব মেলায় নোয়াপাড়া জামদানি ব্যবসায়ী মজিবুর, আনোয়ার মিয়াসহ প্রায় ১৫ জন অংশ নেন। মৌসুমি জামদানি শাড়ি হাউসের মালিক জিয়াউল হক বলেন, জামদানির কদর রয়েছে সারা বিশ্বে। কিন্তু সমস্যা রয়েছে অনেক। তাঁতিরা এ পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। মহাজনদের জ্বালায় অতিষ্ঠ তাঁরা। পূজা, বৈশাখ, ঈদ, ফাল্গুন ও বসন্তের সময় তাঁদের কদর থাকে। এ ছাড়া কদর নেই। আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, ক্রেতারা ঢাকা থেকে জামদানি কেনে। ক্রেতাদের যদি পল্লীতে এসে জামদানি কেনার সুযোগ থাকত তাহলে তাঁরাও ভালো দামে ও ভালো শাড়ি পেত, পাশাপাশি তাঁতিরা কটা টাকা বেশি পেতেন। ঢাকা থেকে শাড়ি কিনে অনেক ক্রেতাই ঠকে।

লাভের গুড় খায় পিঁপড়ায় : জামদানি তাঁতিদের অসচ্ছলতার সুযোগকে ষোলআনাই কাজে লাগাচ্ছেন এক শ্রেণির দাদন ব্যবসায়ী। ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় ওই সব মহাজনের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে জামদানিশিল্প ও কারিগররা। রূপগঞ্জের জামদানি শিল্পনগরীতে ৭০ জনের মতো মহাজন দাদন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। তাঁতিরা মনে করেন, স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ পেলে তাঁরা দাদন ব্যবসায়ীদের খপ্পর থেকে বের হতে পারতেন। তাঁতি দ্বীন ইসলাম ও জহিরুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক থেকে যদি প্রত্যেক তাঁতিকে কম সুদে ৫০ হাজার করে টাকা করে ঋণ দেওয়া হতো আর প্রকৃত জামদানি কারিগরদের প্লট দিত সরকার, তাহলে জামদানিশিল্পে আবার সুদিন ফিরে আসত। তাঁত বোর্ড থেকে ১৮ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয় বছরে। এটাও অনেকে পায় না। পেতেও অনেক হয়রানি হতে হয়। এ শিল্পকে বাঁচাতে সরকার যদি একটু নজর দেয় তাহলে সারা বিশ্বে জামদানি বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করে তুলবে।

উপজেলা তাঁত বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি। লিয়াজোঁ অফিসারের সেলফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। বিসিক জামদানি শিল্পনগরী নোয়াপাড়ার কার্যালয়ে গত বুধবার দুপুরে কথা হয় শিল্পনগরী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ৪৯টি প্লট অবৈধ দখলে আছে। আবার কেউ কেউ প্লট দখলে নিয়ে টেক্সটাইল মিল করেছে এটাও সত্য। এগুলো অচিরেই দখলমুক্ত করা হবে। ২০০৮ সালে ১৭৯টি প্লট অবৈধ দখলে ছিল। এগুলো বাতিল করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জামদানি এ দেশের ঐতিহ্য। এ শিল্পকে বাঁচাতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ইতিমধ্যে জামদানি প্লট কল্যাণ সমিতি আট দফা দাবি পেশ করে আবেদন করেছে। এসব জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে।

 

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে পাট চাষ

শেয়ার
তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে  পাট চাষ

তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরে করা হয়েছে পাট চাষ। সেই পাট কেটে মহিষের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানিতে জাগ দেওয়ার জন্য। গতকাল রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্নেয়া ইউনিয়নের চর বাঘমারা থেকে তোলা। ছবি : মো. আসাদুজ্জামান

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

শেয়ার
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী মুগদা হাসপাতালে

খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকার আড়াই বছর বয়সী নূরজাহান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম

মন্তব্য

২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
২২৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা খেলাফত মজলিসের

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২৩টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দলটি আগামী জাতীয় সংসদে নিম্নকক্ষে আংশিক আনুপাতিক ও উচ্চকক্ষে পূর্ণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক দ্বিকক্ষীয় সাংবিধানিক কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলের নেতারা বলেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ।

আনুপাতিক পদ্ধতির মাধ্যমেই সব শ্রেণি ও মতধারার সঠিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব।

মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া আত্মঘাতী। এতে ফ্যাসিবাদের দোসররা আরো উৎসাহী হচ্ছে। আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, তবে ফ্যাসিবাদ ফের মাথা চাড়া দেবে।

গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী শৈথিল্য দেখালেও পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা দ্রুত প্রতিহত হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেনদলের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন ও মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মূসা, মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা ফয়সাল আহমদ। এ ছাড়া ছিলেন মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা হারুনুর রশীদ, মাওলানা রুহুল আমীন খান, মাওলানা হাসান জুনাইদ, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ছানাউল্লাহ আমিনী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন ও মাওলানা মুহসিন বেলালী।

মন্তব্য

রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা

রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী
রফিকুল ইসলাম, রাজশাহী
শেয়ার
রামেকে ইন্টার্ননির্ভর চিকিৎসায় ঝুঁকিতে মুমূর্ষু রোগীরা

পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার ওয়াহেদুজ্জামান (৭১) জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পরিবারের সদস্যরা গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে পাঠানো হয় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে (মেডিসিন ওয়ার্ড)। ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি করে নেন।

সেখানে বারান্দায় একটি শয্যায় রেখে চলতে থাকে রোগীর চিকিৎসা। পরের দিন ১৪ জুলাই সকালে ওই ওয়ার্ডের দায়িত্বরত স্থায়ী অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা গিয়ে রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন।

পরের দিন ১৫ জুলাই সকালের দিকে রোগী কিছুটা সুস্থ বোধ করলে তাঁকে ছুটি দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দুপুর গড়াতে না গড়াতেই রোগী আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।

তখন কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা রোগীকে প্রথমে অক্সিজেন এবং পরবর্তীতে স্যালাইন দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত রোগীর অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত একটা অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় নগরীর বাকির মোড়ে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে।
সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরে দ্রুত তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। ধরা পড়ে তাঁর শরীরে ডেঙ্গুসহ নানা জটিলতা। তবে তাৎক্ষণিক সঠিক চিকিৎসা পাওয়ায় রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকেন।

এটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র। চিকিৎসকসংকটে দিনের প্রায় ১৮ ঘণ্টাই ইন্টার্ন চিকিৎসকনির্ভরতার মাধ্যমে চলছে এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।

খুব জরুরি প্রয়োজনে ফোনে পরামর্শ নেওয়া হয় অভিজ্ঞ ডাক্তারদের। এর বাইরে এফসিপিএস ডিগ্রিধারী বা এফসিপিএস করছেন এমন মধ্যম মানের চিকিৎসকরা থাকেন ভর্তির দিন ধার্য থাকা ওয়ার্ডগুলোতে। এ ছাড়া দিনের ২৪ ঘণ্টা প্রতিটি ওয়ার্ডেই চার থেকে ছয়জন করে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে হয় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের। এ নিয়ে মাঝেমধ্যেই ইন্টার্নদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। 

পাবনার ঈশ্বদীর রোগী ওয়াহেদুজ্জামানের ছেলে হামিম আবেদীন বলেন, রামেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক দিনে একবার করে আসার কারণে আমার বাবার সমস্যাগুলো জটিল হয়ে গিয়েছিল, যা ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি।

ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি রোগীর সেবা দেওয়ার। কিন্তু যে পরিমাণ রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়, সে পরিমাণ ইন্টার্ন চিকিৎসকও নেই।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ বলেন, হাসপাতালে পর্যাপ্ত আনসার সদস্যও নেই। অন্যদিকে যেসংখ্যক রোগী ভর্তি হচ্ছে, সেসংখ্যক অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধপথ্যও আমরা দিতে পারছি না। কারণ সব কিছু বরাদ্দ হচ্ছে ৫০০ শয্যার বিপরীতে। কিন্তু এখানে শয্যাই আছে এক হাজার ২০০টি। এর বাইরেও অতিরিক্ত আরো দুই থেকে আড়াই হাজার রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের নানাভাবে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।    

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ