<div> বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের লেখা সদ্য প্রকাশিত বইয়ের কঠোর সমালোচনা করেছেন দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ। তাঁর ভাষ্য মতে, ‘কাক সাতসমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে গেলেও কাকই থাকে। ডিগবাজ, আদর্শহীন ও দলছুট নেতার বইয়ে বিএনপির কিছুই আসে যায় না। ২০০৬ সাল পর্যন্ত বইয়ের লেখক (মওদুদ) কোন সরকারের মন্ত্রী ছিলেন? বিএনপি সরকার দুর্নীতি করলে ওই সময় লেখক পদত্যাগ করলেন না কেন?’ মওদুদ আহমদ নিজের বাড়ি রক্ষা কিংবা ক্ষমতাসীনদের খুশি করতে বইয়ে এসব লিখেছেন কি না সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।</div> <div> গতকাল সোমবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে রিজভী আহমেদ এসব কথা বলেন। গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে করা এক মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের নামে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।</div> <div> <a name="RIMG0"></a></div> <div> তবে রিজভী আহমেদের সমালোচনার জবাবে মওদুদ আহমদ বলেছেন, ‘ভেবেছিলাম আমার দল বা দলের নেতা-কর্মীরা আমাকে অভিনন্দন জানাবে। কিন্তু এখন দেখছি ফল উল্টো। আমি ভয় করেছিলাম, বইটা বের হওয়ার পরে সরকার আমার ওপর অসন্তুষ্ট হবে। হয়তো আমাকে আবার জেলখানায় যেতে হতে পারে।’ তিনি পুরো বই পড়ে সমালোচনা করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনুরোধ জানান।</div> <div> রিজভী আহমেদ বলেন, ‘দেশের একজন বিজ্ঞ আইনজীবী ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ হিসেবে মওদুদ আহমদকে সম্মান করি। তিনি দলের জ্যেষ্ঠ নেতা। তাঁর এ বই সম্পর্কে আমি দলীয় বক্তব্য দিতে পারব না, তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি তাঁর বক্তব্য সঠিক নয়। তিনি নিজের স্বার্থে বাঁচার জন্য যে কথা বলেছেন দেশবাসীর কাছে তা দুর্ভাগ্যজনক। তিনি অনেক দিন ধরে রাজনীতি করেন, তবে যখনই নিজের স্বার্থ আসে তখনই এ ধরনের কথা বলেন।’</div> <div> সদ্য প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ : ইমারজেন্সি অ্যান্ড দ্য আফটারম্যাথ : ২০০৭-২০০৮’ বইয়ে এক জায়গায় মওদুদ লিখেছেন, ‘ওই সময় খালেদা একজন রাজনৈতিক নেতার চেয়ে বেশি একজন মা হয়ে উঠেছিলেন। ২০০৭-০৮ সালের জরুরি অবস্থার সময় খালেদা জিয়া শুধু তাঁর দুই ছেলের মুক্তি নিয়েই চিন্তা করেছেন।’</div> <div> এ ব্যাপারে রিজভী বলেন, নিজের ছেলেদের প্রতি যদি খালেদা জিয়ার অনুকম্পা থাকত তাহলে তিনি আগেই ছেলেদের বিদেশে পাঠিয়ে দিতেন। খালেদা জিয়া ওয়ান-ইলেভেন সরকারের কথা না শোনার কারণেই তাঁর ছেলেদের ওপর নির্যাতন হয়েছে, তাঁরা এখনো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছেন।</div> <div> মহাসচিবকে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করার জন্যই এ মামলা করা হয়েছে দাবি করে রিজভী আরো বলেন, মামলা-হামলা করে এ সরকার বেশি দিন টিকে থাকতে পারবে না।</div> <div> সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দস তালুকদার দুলু, অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, নগর বিএনপির সদস্যসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল প্রমুখ।</div> <div> প্রসঙ্গত, মওদুদের বইয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ হিসেবে বিএনপি সরকারের অপশাসন, দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ, বিএনপি সরকারের কিছু মন্ত্রীর সম্পৃক্ততায় জঙ্গিবাদের উত্থান, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের নামে হাওয়া ভবনের ক্ষমতা, প্রভাব ও দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়।</div> <div> দল থেকে সমালোচনায় হতাশ মওদুদ</div> <div> বই লিখে নিজ দলের ভেতর থেকেই সমালোচনার মুখে পড়ায় হতাশ হয়েছেন মওদুদ আহমদ। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের কাছে তিনি বলেন, ‘রিজভীকে আমি ছোট ভাইয়ের মতো মনে করি। অনেক স্নেহ করি। কিন্তু সে যে মন্তব্য করেছে, আমি তার কাছে এটা আশা করিনি। আমি তো ভেবেছিলাম রিজভী আমাকে অভিনন্দন জানাবে, ধন্যবাদ জানাবে এ ধরনের বই লেখার জন্য। রিজভী বইটি পড়েছে কি না আমি জানি না। পুরো বই পড়লে এ কথা বলত না। আমি যেখানে ভয় করছিলাম সরকার অসন্তুষ্ট হবে, সেখানে দেখছি আমার একজন সহকর্মী আমার ওপর অসন্তুষ্ট হলেন।’</div> <div> ব্যারিস্টার মওদুদের ভাষ্য মতে, ‘বইটি যদি অন্যভাবে পড়া হয়, তাহলে দেখা যাবে ২০০৭-০৮ সালে মইনুদ্দীন-ফখরুদ্দীন সরকার কিভাবে রাজনীতিবিদদের ওপর নির্যাতন করেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, বিশেষ করে শেষ পর্যায়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে বিএনপিকে দুর্বল করার জন্য ষড়যন্ত্র করেছে। বইয়ে বলা আছে, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। কিভাবে কারচুপি হয়েছে তা বিস্তারিত দেওয়া আছে। এটাই বইয়ের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। আমার দল সম্পর্কে বা আমার দলের যে ব্যর্থতা বা আমরা যে পরাজিত হলাম, এর অনেকগুলো কারণ বইতে দেওয়া আছে। আমি আশা করি এসব ভুল-ত্র“টি শুধরে নিলে পরবর্তীতে বিএনপি আবার ক্ষমতায় যেতে পারবে। এটাই মূলবার্তা।’</div> <div> মওদুদ বলেন, ‘এ বইয়ে দল সম্পর্কে আমার যে অভিব্যক্তি, সেটা আমার ব্যক্তিগত। এটার সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ আমি যখন বই লিখি, তখন দলীয় ব্যক্তি হিসেবে বই লিখি না। আমি একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হিসেবে লিখি। সব বইতে বস্তুনিষ্ঠভাবে দেশের ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করি। বইটি বর্তমানের জন্য নয়, ভবিষ্যতের জন্য।’</div> <div> বাড়ি নিয়ে মামলার বিষয়ে রিজভীর করা মন্তব্য সম্পর্কে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমি বই লিখেছি ২০০৭-০৮ সালে; যখন জেলখানায় ছিলাম। অনেক বছর পরে বইটা প্রকাশিত হয়েছে। এ বইয়ের সঙ্গে আমার বাড়ির কোনো সম্পর্ক নেই। বাড়ি বা সরকারকে সন্তুষ্ট করার প্রশ্নই ওঠে না। আমার বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা আছে।’</div>