<p> বন্দরনগরী চট্টগ্রামের পানওয়ালাপাড়ার একটি গুদাম থেকে ২১ বস্তায় প্রায় এক হাজার ২৫ কেজি সালফার আটক করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৭ (র‌্যাব)। বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহারযোগ্য এ রাসায়নিক দ্রব্য গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে আটক করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় তিনজনকে।</p> <p> র‌্যাব-৭-এর সহকারী পরিচালক ও সহকারী পুলিশ সুপার মো. মফিজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আসামিদের কাছে সালফার মজুদের কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই।'</p> <p> র‌্যাব কর্মকর্তা আরো বলেন, উদ্ধারকৃত সালফার দিয়ে হাতবোমা, ককটেল ইত্যাদি তৈরি করা হয়। তিনি বলেন, এ গুদাম থেকে সালফার দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। এসব সালফার নাশকতা চালানোর জন্য ককটেল তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে- এমন তথ্য র‌্যাবের কাছে আছে।</p> <p> র‌্যাবের অভিযানের সময় গুদামমালিক ছগির হোসেনকে পাওয়া যায়নি। তিনি পলাতক রয়েছেন। গ্রেপ্তার করা তিনজন ছগিরের কর্মচারী। তাঁরা হলেন- চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার সুমন বসাক (২১), কুমিল্লার মো. মনির হোসেন (২৩) ও নোয়াখালীর লিপন চন্দ্র নাথ (২৬)। র‌্যাব কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা বলেছেন, সালফার মজুদের বিষয়ে সবকিছু জানেন ছগির। গুদামে কী কাজ হয় সে বিষয়ে গ্রেপ্তার করা তিনজন সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি।</p> <p> ব্যার কর্মকর্তারা জানান, ডবলমুরিং থানা এলাকার পানওয়ালাপাড়ায় একটি টিনশেড গুদামঘর থেকে মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে সালফারগুলো জব্দ করা হয়। গুদামঘরটির আশপাশ ঘনবসতিপূর্ণ।</p> <p> এ বিষয়ে র‌্যাব-৭-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম. সাহেদ করিম সাংবাদিকের জানান, র‌্যাব জানতে পেরেছে গুদামমালিক ছগির জামায়াতের মতাদর্শে বিশ্বাসী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্যই তিনি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় গুদামঘর তৈরি করে সালফার মজুদ করেছিলেন। র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, 'সালফার উদ্ধারের পর বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সালফারগুলোতে প্রায় ৯৭ ভাগ রাসায়নিক উপাদান আছে।'</p> <p> সালফারগুলো বিস্ফোরণের কাজে ব্যবহৃত হতো- এমন ধারণা করার যুক্তি হিসেবে সাহেদ করিম বলেন, 'মঙ্গলবার বিকেলেই গুদামটি শনাক্ত করা হয়। ছগির হোসেন সালফার মজুদের বৈধতা প্রমাণের জন্য কাগজপত্র দেখাবেন বলে আশ্বাস দেওয়ায় অপেক্ষা করা হয়। কিন্তু তিনি পালিয়ে গেছেন।'</p> <p> র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে ডবলমুরিং থানায় বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলা দায়েরের পর জব্দ করা সালফার ও ওই তিনজনকে থানায় সোপর্দ করার প্রক্রিয়া চলছে।</p> <p> দেশে হরতালের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সহিংস কর্মকাণ্ডে ব্যাপকভাবে ককটেল ব্যবহার হচ্ছে। ককটেল তৈরিতে সালফার ব্যবহৃত হয়।</p> <p> প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর নগরীর লালখান বাজারে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি ইজাহারুল ইসলাম চৌধুরী পরিচালিত জামেয়াতুল উলম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে আহত তিনজনের মৃত্যু হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখান থেকে তাজা গ্রেনেড উদ্ধার করে।</p> <p> এ ঘটনার পর নগরীর একটি বাসায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল। ওই বাসা থেকে বিস্ফোরকদ্রব্যও জব্দ করা হয়।</p> <p> তবে দেশে সালফারের বৈধ ব্যবহারও রয়েছে। এ কারণে প্রতি বছর সালফার আমদানিও হয়।</p> <p> এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যালেন্সর ও রসায়নবিদ ড. সরোজ কান্তি সিংহ হাজারী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দেশের শিল্পকারখানায় প্রয়োজনীয় সালফিউরিক এসিড তৈরিতে প্রচুর সালফার ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া দিয়াশলাই ও চর্ম রোগের মলম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।' তিনি বলেন, 'সালফারের অবৈধ ব্যবহারও হতে পারে।'</p> <p>  </p> <p>  </p> <p>  </p> <p>  </p> <p>  </p>