<p>আজ ১৫ জুলাই ‘বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস’। বেকারত্ব দূরীকরণ আর যুব সম্প্রদায়ের জন্য অধিকতর আর্থ-সামাজিক পরিবেশ নিশ্চিতকরণকল্পে ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ সভায় এই দিনটিকে  world Youth skills day বা বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।</p> <p>যুবশক্তি ব্যক্তি, সমাজ বা জাতীয় জীবনের এক অমূল্য সম্পদ। যৌবনের সুদৃঢ় মনোবল, অপরিসীম সাহস আর কর্মস্পৃহার মানসিকতা ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক কাঠানো, সামাজিক বন্ধন, এমনকি রাষ্টীয় কাঠামো পর্যন্ত খুব সহজেই বদলে দিতে পারে। অদম্য প্রাণশক্তি আর সৃষ্টির উন্মাদনাই যৌবনের গৌরব। অধিকার আদায়ে প্রতিন্ধকতার দুয়ার চূর্ণ করে যুবশক্তি যখন জেগে ওঠে; তখন তারা অনায়াসে সব প্রতিবন্ধকতা মাড়িয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনে। তাদের পদচুম্বন করে বিজয়ের পুষ্পমাল্য। তাই তো বলতে হয়, মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ সময় হলো যৌবনকাল। পবিত্র কোরআনের ভাষ্যমতে—‘আল্লাহ, তিনি দুর্বল (শিশু) অবস্থায় তোমাদের সৃষ্টি করেন, অতঃপর দুর্বলতার পর (যৌবনে) শক্তিদান করেছেন, অতঃপর শক্তির পর দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য...।’</p> <p>(সুরা : রুম, আয়াত : ৫৪)</p> <p>মহানবী (সা.) যৌবনকালকে গনিমত মনে করতেন। তিনি এক ব্যক্তিকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন, ‘পাঁচটি বিষয়কে পাঁচটি বিষয় আসার আগে গনিমত মনে করো; বার্ধক্যের আগে যৌবনকে, অসুস্থতার আগে সুস্থতাকে, দারিদ্র্যের আগে সচ্ছলতাকে, কর্মব্যস্ততার আগে অবসরকে এবং মৃত্যুর আগে জীবনকে।’</p> <p>(সুনানে বায়হাকি, হাদিস : ১০২৪৮)</p> <p>তাই তো এ কথা সর্বজনবিদিত সত্য যে যৌবনকালই হচ্ছে কোনো কিছু অর্জনের সর্বোত্তম সময়। কাজেই এই যুবশক্তিকে ব্যক্তি, পর্যায় ও পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাজে লাগাতে পারলে সমাজ ও দেশের চিত্র বদলে দেওয়া সম্ভব। যুবশক্তিকে নীতি-নৈতিকতা আর আদর্শের মানদণ্ডে যে জাতি যত বেশি উত্কৃষ্ট হিসেবে সাজাতে পারবে সেই জাতির সামাজিক চিত্র তত বেশি পরিশুদ্ধ হবে। যুবশক্তির আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে তাদের পরনির্ভরতাবিমুখ করে গড়ে তুলতে পারলে অর্জিত হবে অর্থনৈতিক বিপ্লব।</p> <p>আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, একদিন আনসারের এক যুবক মহানবী (সা.)-এর কাছে এসে তাঁর কাছে কিছু চাইলেন। তিনি বলেন, তোমার ঘরে কি কোনো জিনিস নেই? লোকটি বলল, একটি কম দামি কম্বল আছে। এটার একাংশ আমি গায়ে দিই, আর অপর অংশ বিছিয়ে নিই। এ ছাড়া কাঠের একটি পেয়ালা আছে। এ দিয়ে আমি পানি পান করি। মহানবী (সা.) বললেন, এ দুটি জিনিস আমার কাছে নিয়ে এসো। লোকটি এ জিনিস দুটি নবী (সা.)-এর কাছে নিয়ে এলো। জিনিসটি নিজের হাতে নিয়ে তিনি বললেন, এ দুটি কে কিনবে?  এক ব্যক্তি বলল, আমি এক দিরহামের বিনিময়ে কিনতে প্রস্তুত। নবী (সা.) বললেন, এক দিরহামের বেশি দিয়ে কে কিনতে চাও? এ কথাটি তিনি ‘দুই কি তিনবার’ বললেন। এ সময় এক ব্যক্তি দুই দিরহাম বললে তিনি দুই দিরহামের বিনিময়ে সেগুলো বিক্রি করে দিরহাম দুটি আনসারিকে দিয়ে দিলেন। অতঃপর তাকে বললেন, এক দিরহাম দিয়ে খাদ্য কিনে পরিবারের লোকজনকে দেবে। দ্বিতীয় দিরহামটি দিয়ে একটি কুঠার কিনে আমার কাছে আসবে। সে ব্যক্তি কুঠার কিনে নবী (সা.)-এর কাছে এলো। তিনি নিজ হাতে কুঠারের একটি মজবুত হাতল লাগিয়ে দিয়ে তাকে বললেন, এটা দিয়ে লাকড়ি কেটে বিক্রি করবে। আর আমি তোমাকে আগামী পনেরো দিন যেন এখানে দেখতে না পাই। লোকটি চলে গেল। বন থেকে লাকড়ি কেটে জমা করে বাজারে এনে বিক্রি করতে লাগল। কিছুদিন পর সে যখন নবী (সা.)-এর নিকট ফিরে এলো। তখন সে ১০ দিরহামের মালিক। এর কিছু দিয়ে সে কিছু কাপড়চোপড় কিনল আর কিছু দিয়ে খাদ্যশস্য কিনল। মহানবী (সা.) তার অবস্থার এ পরিবর্তন দেখে বললেন, কিয়ামতের দিন ভিক্ষাবৃত্তি তোমার চেহারায় ক্ষত চিহ্ন হয়ে ওঠার চেয়ে এ অবস্থা কি উত্তম নয়? মনে রাখবে, শুধু তিন ধরনের লোক হাত পাততে পারে, ভিক্ষা করতে পারে। প্রথমত, ফকির, যাকে কপর্দকহীনতা মাটিতে শুইয়ে দিয়েছে। দ্বিতীয়ত, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, যে ভারী ঋণে লাঞ্ছিত হওয়ার পর্যায়ে। তৃতীয়ত, রক্তপণ আদায়কারী, যা তার জিম্মায় আছে অথচ তার সামর্থ্য নেই। (মিশকাত,</p> <p>হাদিস : ১৮৫১, আবু দাউদ, হাদিস : ১৬৪৫)</p> <p>আলোচ্য হাদিসে মহানবী (সা.) শুধু পরনির্ভরতা নিষেধ করেই থেমে যাননি, তিনি তাকে নিজ হাতে কুঠার প্রস্তুত করে দিয়ে স্বনির্ভর হওয়ার প্রশিক্ষণ দিয়ে দিয়েছেন। তার সামনে কর্মক্ষেত্রের পথও উন্মোচন করে দিয়েছেন। তাই নববী শিক্ষার আলোকে আমরাও যদি আমাদের যুবশক্তিকে যার যার যোগ্যতার মানদণ্ড বিবেচনায় উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তুলতে পারি, তাহলে আমাদের অর্থনীতির চাকা যেমন গতিশীল হবে, তেমনি পরিবর্তনশীল আগামীর জন্য প্রস্তত হবে দক্ষ এক জনশক্তি।</p> <p>তাই আমাদের যুবশক্তির প্রতি আহ্বান, আসুন! বিদ্রোহী কবির কণ্ঠে আমরাও বলি—‘আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে, তোমার ছেলে উঠলে মাগো রাত পোহাবে তবে।’ কারণ যুবশক্তির উদ্যমতা ছাড়া জাতির ভাগ্য পরিবর্তনের আশা করা বাতুলতা ছাড়া কিছু নয়।</p> <p> </p> <p>লেখক : প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও মুহাদ্দিস</p> <p>saifpas352@gmail.com</p> <p> </p> <p> </p>