<p>পৃথিবীর সুদীর্ঘ ইতিহাসে মুহাম্মদ (সা.)-ই সর্বপ্রথম দাস-দাসীর জীবনের নিরাপত্তা, মৌলিক অধিকার ও মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করেছিলেন। ধর্ম হিসেবে ইসলামই দাসমুক্তিকে নানাভাবে ইবাদতের গণ্ডিভুক্ত করেছে। নবীজি (সা.) শুধু দাস-দাসীর অধিকার ঘোষণা করেননি, বরং তিনি নিজেও একাধিক দাস ও দাসী মুক্ত করেছেন। মুক্ত দাসীকে স্ত্রীর এবং মুক্ত দাসকে সন্তানের মর্যাদা দিয়েছেন, যা পৃথিবীতে এক নজিরবিহীন ঘটনা।</p> <p> </p> <p>জন্মের সুসংবাদ দিয়ে মুক্তি পেল দাসী</p> <p>রাসুলুল্লাহ (সা.) জন্মগ্রহণের পর চাচা আবু লাহাবকে দাসী সুওয়াইবা ভাতিজা জন্মের সুসংবাদ দিলেন। মৃত ভাইয়ের ঔরসে পুত্রসন্তান জন্মের সংবাদ শুনে আবু লাহাব যারপরনাই খুশি হলেন। কিন্তু সুসংবাদদাতা সুওয়াইবাকে দেওয়ার মতো হাতের কাছে কিছুই পেল না। ফলে সে দাসীকে মুক্তি দানের ঘোষণা করল। এভাবে মহানবী (সা.)-এর আগমন একজন দাসীর মুক্তির উপলক্ষ হলো। (আল মাওসুয়াতু ফি সহিহিস সিরাতিন নাবাবিয়্যাহ, পৃষ্ঠা-৯৯)</p> <p> </p> <p>রাসুলুল্লাহ (সা.) যাঁদের মুক্তি দেন</p> <p>রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর দীর্ঘ জীবনে একাধিক দাস-দাসীকে মুক্তি দান করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলো—</p> <p>১. জায়েদ বিন হারিসা (রা.) : তাঁকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সেবায়০ দান করেছিলেন সাইয়েদা খাদিজা (রা.)।</p> <p>২. আবু রাফে কিবতি (রা.) : তাঁকে দান করেছিলেন আব্বাস (রা.)।</p> <p>৩. সাওবান (রা.) : তিনি জাহেলি যুগের বন্দিত্বের কারণে দাস হয়েছিলেন। নবীজি (সা.) তাঁকে কিনে নেন এবং স্বাধীন করে দেন। তাঁকে তিনি ইচ্ছাধিকার দেন নিজ গোত্রে ফিরে যাওয়ার। কিন্তু তিনি নবীজি (সা.)-এর সান্নিধ্যকেই প্রাধান্য দেন।</p> <p>৪. জামরা বিন আবি জামরাহ (রা.) : তিনিও জাহেলি যুগের বন্দিত্বের কারণে দাস হয়েছিলেন। নবীজি (সা.) তাঁকে কিনে নেন এবং স্বাধীন করে দেন।</p> <p>৫. আবু মুওয়াইহাবাহ (রা.) : রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে কিনে স্বাধীন করেছিলেন।</p> <p>৬. শাকরান (রা.) : তিনি একজন হাবশি দাস ছিলেন। তাঁর মূল নাম ছিল সালিহ। শাকরান তাঁর উপাধি। আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) হুদাইবিয়া থেকে ফেরার পর তাঁকে নবীজি (সা.)-এর সেবায় দান করেন। কিন্তু নবীজি (সা.) তাঁকে আজাদ করে দেন।</p> <p>৭. আবু কাবাশা সালিম (রা.) : রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে কিনে স্বাধীন করেছিলেন। তিনি বদরসহ সব যুদ্ধে নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন।</p> <p>৮. রাবাহ আল আসওয়াদ (রা.) : রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আজাদকৃত দাস ছিলেন। নবীজি (সা.) যখন স্ত্রীদের সঙ্গে অভিমান করেছিলেন, তখন তাঁকে নিজের ঘরের প্রহরী নিযুক্ত করেছিলেন।</p> <p>৯. ফুদালা : তিনি ইয়েমেনের অধিবাসী ছিলেন এবং শামে মারা যান। তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায় না।</p> <p>১০. মিদআ (রা.) : কালো বর্ণের দাস ছিলেন। রিফাআ বিন জায়েদ (রা.) তাঁকে উপহার দিয়েছিলেন। নবীজি (সা.) তাঁকে স্বাধীন করে দেন এবং তিনি ওয়াদিউল কুরার ঘটনায় শহীদ হন।</p> <p>১১. ইয়াসার (রা.) : রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আজাদকৃত দাস ইয়াসার (রা.) তাঁর বকরি চড়াতেন। উরাইনা গোত্রের লোকেরা তাঁকে শহীদ করেছিল।</p> <p>১২. নুবাইহ (রা.) : রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে কিনে মুক্ত করেছিলেন।</p> <p>১৩. কিরকিরা : হুজাহ বিন আলী হানাফি তাঁকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। নবীজি (সা.) তাঁকে মুক্ত করে দেন।</p> <p>১৩. উম্মে আইমান বারাকা (রা.) : রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে পৈতৃক সূত্রে লাভ করেন এবং মুক্ত করে দেন। তিনি নবীজি (সা.)-কে প্রতিপালন করেন।</p> <p>১৪. রায়হানা বিনতে জায়েদ (রা.) : রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে আজাদ করেছিলেন এবং বিয়েও করেছিলেন।</p> <p>১৫. জুওয়াইরিয়া বিনতে হারিস (রা.) : বনু মুস্তালিকের যুদ্ধে তিনি বন্দি হন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে আজাদ করে বিয়ে করেন।</p> <p>১৬. সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই (রা.) : তিনি যুদ্ধবন্দি হিসেবে আটক হন এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে মুক্তি দেন। এরপর তাঁকে আপন পরিবারে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছাধিকার দেন। কিন্তু তিনি নবীজি (সা.)-কে বেছে নেন এবং তাঁদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।</p> <p> </p> <p>দাসদের পরিবারে স্থান</p> <p>রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর মুক্তিপ্রাপ্ত দাস-দাসীদের পরিবারভুক্ত  করে নিয়েছিলেন। এমনকি যাঁদের তিনি মুক্ত করেননি, তাঁদেরকে পরিবারভুক্ত করেছিলেন। যেমন জায়েদ বিন হারিসা (রা.) ছিলেন নবীজি (সা.)-এর পালক পুত্র। দাসীদের ভেতর স্ত্রীর মর্যাদা পেয়েছিলেন রায়হানা বিনতে জায়েদ, সাফিয়্যা বিনতে হুয়াই ও জুওয়াইরিয়া বিনতে হারিস (রা.)। এ ছাড়া রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সন্তানের মা মারিয়া কিবতিয়্যা (রা.) ছিলেন স্ত্রীর মর্যাদাসম্পন্ন।</p> <p>তথ্যঋণ : আলুকা ডটকম, তারাজিম ডটকম ও সাইয়েদ ডটঅর্গ</p> <p> </p>