<p>কোরআন শেখার সময় শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের ভুল করে থাকে। শুধু যে শিশু শিক্ষার্থী ভুল করে তা নয়, বরং প্রাপ্তবয়স্ক ও প্রবীণরাও ভুল করেন। প্রশ্ন হলো, শেখার সময় কোরআন তিলাওয়াতে ভুল হলে কি শিক্ষার্থীর পাপ হবে? কোরআন ও হাদিসের আলোকে উল্লিখিত প্রশ্নের উত্তর তুলে ধরা হলো।</p> <p>শিক্ষার্থীর জন্য অবকাশ<br /> কোরআনের শিক্ষার্থী যে বয়সেরই হোক না কেন ইসলামী শরিয়ত তাকে অবকাশ দিয়েছে। শিক্ষার্থী তার সাধ্য অনুসারে শুদ্ধভাবে কোরআন তিলাওয়াতের চেষ্টা করবে। এর পরও ভুল হলে আশা করা যায় আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন; বরং ভুলত্রুটি হওয়ার পরও যে ব্যক্তি চেষ্টা অব্যাহত রাখবে আল্লাহ তাকে দ্বিগুণ সওয়াব দান করবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কোরআন পাঠে দক্ষ ব্যক্তি উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ফেরেশতাদের সঙ্গী হবে। আর যে ব্যক্তি কোরআন পড়ার সময় আটকে যায় এবং কষ্ট করে তিলাওয়াত করে তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব।<br /> (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৪৫৪)</p> <p>এক দিনে তিলাওয়াত শুদ্ধ হয় না<br /> কোনো সন্দেহ নেই, কোরআন তিলাওয়াত এক দিনেই শুদ্ধ হয়ে যায় না এবং তাতে দক্ষতা অর্জনের জন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর দীর্ঘ সাধনা প্রয়োজন হয়। এ জন্য কোরআন ধীরে ধীরে অবতীর্ণ হয়েছিল। মহান আল্লাহ বলেন, ‘বরং সে বলবে, তোমরা রব্বানি হয়ে যাও, যেহেতু তোমরা কিতাব শিক্ষা দান করো এবং যেহেতু তোমরা অধ্যয়ন করো।’<br /> (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৭৯)<br /> ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, রব্বানি হলো যারা শৈশবে মানুষকে প্রতিপালন করে। সুতরাং তারা যেন প্রকৃত প্রতিপালক আল্লাহর মতো সহজতা অবলম্বন করে। (তাফসিরে কুরতুবি : ৪/১২২)</p> <p>চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে<br /> মুমিন কোরআন তিলাওয়াত শুদ্ধ করার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। নিজের ভুলত্রুটি নিয়ে বসে থাকবে না। কেননা মহান আল্লাহ তাঁর কালাম সুন্দরভাবে তিলাওয়াতের নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর কোরআন আবৃত্তি করো ধীরে ধীরে ও সুস্পষ্টভাবে।’ (সুরা : মুজ্জাম্মিল, আয়াত : ৪)</p> <p>চেষ্টা অব্যাহত রাখার পুরস্কার<br /> মুমিন ব্যক্তি কোরআন বিশুদ্ধ করার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। কেননা কোরআনের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর জন্য ইসলাম বিশেষ মর্যাদা ঘোষণা করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম যে কোরআন শেখে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০২৭)<br /> তিনি আরো বলেন, যখন কোনো সম্প্রদায় আল্লাহর কোনো ঘরে সমবেত হয়ে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং পরস্পরে তা নিয়ে আলোচনা করে, তখন তাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হয়, তাদেরকে রহমত ঢেকে নেয়, ফেরেশতারা তাদেরকে ঘিরে রাখে, এবং আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী ফেরেশতাদের কাছে তাদের প্রশংসা করেন। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৪৫৫)</p> <p>শুধরে দেওয়া সবার দায়িত্ব<br /> শিক্ষার্থীরা যদি তিলাওয়াতের সময় ভুল করে তাহলে তা শুধরে দেওয়া সবার দায়িত্ব। শিক্ষার্থী যদি এমন কোনো ভুল করে যার মাধ্যমে অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়, তাহলে তা শুধরে দেওয়া ওয়াজিব। আর যদি অর্থে বিকৃতি না আসে তাহলে শুধরে দেওয়া মুস্তাহাব ও নৈতিক দায়িত্ব। মনে রাখতে হবে, শিক্ষার্থীকে এমন ভাষায় সতর্ক করা যাবে না, যাতে তার মন ভেঙে যায় বা কোরআন শেখার সাহস হারিয়ে ফেলে। (লিকাউল বাবিল মাফতুহ : ১৪/১০৪)</p> <p>অক্ষমদের জন্য অবকাশ<br /> জিহ্বার জড়তা বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা, আঞ্চলিকতার প্রভাব কিংবা বয়স বেশি হওয়ার কারণে কেউ যদি চেষ্টা করেও আরবি উচ্চারণ শুদ্ধ করতে অক্ষম হয়, তাহলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন বলে আশা করা যায়। কেননা মহান আল্লাহর ঘোষণা, ‘তোমরা আল্লাহকে যথাসাধ্য ভয় করো, এবং শোনো, আনুগত্য করো ও ব্যয় করো তোমাদের নিজেদেরই কল্যাণের জন্য।’ (সুরা : তাগাবুন, আয়াত : ১৬)<br /> অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ কারো ওপর এমন কোনো কষ্টদায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না, যা তার সাধ্যাতীত।’<br /> (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৮৬)<br /> আল্লাহ সবাইকে বিশুদ্ধভাবে কোরআন তিলাওয়াতের তাওফিক দিন। আমিন।</p>