<p>বাংলাদেশে আগের চেয়ে আরবি ভাষা শেখার আগ্রহ অনেক গুণ বেড়েছে। একসময়ে শুধু মাদরাসাপড়ুয়ারা আরবি ভাষায় পারদর্শী হলেও এখন অনেক সাধারণ শিক্ষিত লোকও এ ভাষায় কথা বলছেন। মাদরাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও এই আগ্রহ বেড়েছে। বাঙালি মুসলিম সমাজে ব্যক্তি উদ্যোগে আরবি ভাষা শেখার ঐতিহ্য থাকলেও এ ভাষায় প্রাথমিক জ্ঞান থাকা এখন ভাষাগত দক্ষতার অংশে পরিণত হয়েছে। অনলাইন ও অফলাইনে গড়ে উঠেছে আরবি ভাষা শিক্ষা লাভের অসংখ্য প্রতিষ্ঠান, বিশেষত করোনাকাল ও পরবর্তী সময়ে অনলাইনে অসংখ্য মানুষ আরবি ভাষা শিখছে।<br /> ২০১৯ সালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আরবি ভাষা শেখাতে সিবাওয়াই ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে তিন হাজারের বেশি শিক্ষার্থী আমাদের কাছে আরবি ভাষা শিখেছে। তাদের বেশির ভাগই ঢাবি, বুয়েট ও ঢামেকের সাধারণ শিক্ষার্থী। সচিবালয়, সামরিক মিশন ও দূতাবাসের কর্মকর্তা ছাড়াও সাধারণ শিক্ষিতরা এ ভাষা শিখছে। এ ক্ষেত্রে অফলাইনের চেয়ে অনলাইন ক্লাসের প্রতি আগ্রহ অনেক বেশি। শত ব্যস্ততার মধ্যেও প্রবল আগ্রহ ও অদম্য ইচ্ছায় তারা আরবি ভাষাকে নিজেদের আয়ত্তে আনছে।’<br /> ইনস্টিটিউট অব অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজের সমন্বয়ক আবু নাঈম বলেন, ‘২০২০ সালে প্রতিষ্ঠার পর এখান থেকে হাজারের বেশি মানুষ আরবি ভাষার কোর্স সম্পন্ন করেছেন। অনলাইন ও অফলাইন ক্লাস একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা নিজেদের সুবিধামতো ক্লাসে অংশ নিতে পারেন। মাদরাসা শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন পেশার মানুষ ভাষার আমাদের কাছে কোর্স করছেন।’<br /> ২০২৩ সালে টেন মিনিট স্কুল চালু করে সহজে স্পোকেন আরবি কোর্স। এক বছরেই প্রায় দুই হাজার জন কোর্সটি সম্পন্ন করেছে। প্রবাসে দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিয়ে মৌলিক আরবি কথোপকথনের এই কোর্স। ৩৫টি ভিডিওতে ১৪ ঘণ্টার এই কোর্সের ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষক মেহেদী হাসান।<br /> তা ছাড়া বাংলাভাষীদের জন্য অনলাইনভিত্তিক অনেক প্রতিষ্ঠান এখন আরবি ভাষা কোর্সের আয়োজন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে- আসলাফ একাডেমি, ইসলামিক অনলাইন মাদরাসা, আল-হারামাইন ইসলামিক একাডেমি, কিউ অ্যারাবিক ডটনেট, অনলাইন অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউট।<br /> ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. যুবাইর মুহাম্মদ এহসানুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আরবি বিশ্বের সমৃদ্ধ ও জীবন্ত ভাষাগুলোর মধ্যে অন্যতম। মুসলিম হিসেবে আরবি ভাষার প্রাথমিক জ্ঞান থাকা জরুরি। পবিত্র কোরআন ও দৈনন্দিন জীবনের ইবাদতগুলো আরবি ভাষায় পড়া হয়। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে অর্থনীতি, কূটনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে আরবি ভাষাগত দক্ষতার ভূমিকা রয়েছে। তাই প্রাথমিক জ্ঞান লাভের পাশপাশি এ ভাষায় গভীর পাণ্ডিত্য লাভ করাও গুরুত্বপূর্ণ।’<br /> আরবি ভাষা পাঠদানে যুগোপযোগী পাঠ্যসূচি ও শিখন পদ্ধতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান রাজধানীর মুহাম্মদপুরে অবস্থিত মারকাযুল লুগাতিল আরাবিয়্যাহ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মাওলানা মহিউদ্দীন ফারুকী। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, সবার মধ্যে আরবি ভাষা শেখার আগ্রহ তৈরি হওয়া খুবই প্রশংসনীয়। এ ক্ষেত্রে সুবিন্যস্ত পাঠ্যসূচির আলোকে প্রশিক্ষিত শিক্ষকদের মাধ্যমে পাঠদান করানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নতুবা শিক্ষার্থীরা একসময় এ আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। আরবি ভাষার সঙ্গে কোরআনের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তাই আরবি প্রাথমিক জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি আলেমদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা জরুরি।<br /> ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষক হারুনুর রশীদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আরবি ভাষা শেখার ক্ষেত্রে নিজেদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সুস্পস্ট ধারণা থাকতে হবে। কারণ ধর্মীয় গুরুত্বের পাশাপাশি এ ভাষা পারস্পরিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। তাই সাময়িক কয়েকটি কোর্স সম্পন্ন করে ক্ষান্ত না হয়ে বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।’</p>