<p>বর্তমানে সবচেয়ে অবহেলিত একটি সুন্নত হলো মেসওয়াক। কিছু মুমিন পুরুষ মেসওয়াক ব্যবহার করলেও নারীরা এ ক্ষেত্রে উদাসীন। অথচ নারী-পুরুষ সবার জন্য মেসওয়াক করা আবশ্যক। এখানে সংক্ষেপে মেসওয়াকের গুরুত্ব ও উপকারিতা তুলে ধরা হলো :</p> <p>ইসলামে মেসওয়াকের গুরুত্ব<br /> ইসলামে মেসওয়াকের গুরুত্ব অনেক। ইমাম আজম আবু হানিফা (রহ.)-এর অভিমতে এটা অজুর একটি সুন্নত। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, আমার উম্মতের জন্য বা তিনি বলেছেন, লোকদের জন্য যদি কঠিন মনে না করতাম, তাহলে প্রত্যেক নামাজের সঙ্গে মেসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম। (বুখারি, হাদিস : ৮৪৩)</p> <p>আল্লাহর আদেশে মেসওয়াক<br /> আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে মেসওয়াক ব্যবহার করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। তাঁর আমল থেকে খুব সহজেই উপলব্ধি করা যায়। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, জিবরাইল (আ.) যখনই আমার কাছে আসতেন, তখনই আমাকে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতেন। তাতে আমার ভয় হতে লাগল যে আমি আমার মুখের সামনের দিক ক্ষয় করে ফেলব। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২২১৭০, মেশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ৩৫৬)</p> <p>ইন্তেকালের আগে মেসওয়াক<br /> মুমূর্ষু অবস্থায় ইন্তেকালের আগে রাসুলুল্লাহ (সা.) মেসওয়াকের আগ্রহ প্রকাশ করেন। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বুঝতে পেরে মেসওয়াকের বন্দোবস্ত করেন। আয়েশা (রা.) বলেন, আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর (রা.) একটি মেসওয়াক হাতে নিয়ে দাঁত মাজতে মাজতে প্রবেশ করলেন। রাসুল (সা.) তাঁর দিকে তাকালেন। আমি তাঁকে বললাম, হে আব্দুর রহমান! মেসওয়াকটি আমাকে দাও। সে তা আমাকে দিল। আমি ব্যবহৃত অংশ ভেঙে ফেললাম এবং তা চিবিয়ে রাসুলকে দিলাম। তিনি আমার বুকে হেলান দেওয়া অবস্থায় তা দিয়ে মেসওয়াক করলেন। (বুখারি, হাদিস : ৮৪৬)</p> <p>নারীদের মেসওয়াক করা<br /> নবীর সুন্নত সবাইকে মেনে চলতে হয়। মেসওয়াক বিষয়ে নারী-পুরুষের কোনো পার্থক্য নেই। সবার জন্য একই বিধান। আয়েশা (রা.) নবী করিম (সা.) মেসওয়াক করার পর তাঁর মেসওয়াক আমাকে ধৌত করতে দিতেন। অতঃপর আমি উক্ত মেসওয়াক দ্বারা নিজে মেসওয়াক করতাম। পরে আমি তা ধৌত করে (সংরক্ষণ জন্য) তাঁর কাছে দিতাম। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫২, মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ৩৫৪)<br /> মেসওয়াকের দুটি পুরস্কার<br /> ইসলামের প্রত্যেকটি বিধান ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণে পরিপূর্ণ। মেসওয়াকের মাধ্যমে দাঁতের ময়লা ও মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়। অর্জিত হয় আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা মেসওয়াক করো। কেননা তা মুখের পবিত্রতার উপায় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যম। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৫, ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৮৯, ইবনে হিব্বান, হাদিস : ১০৭০)</p> <p>মেসওয়াকের উপকারিতা<br /> মেসওয়াকের অনেক উপকারিতা বিজ্ঞানের গবেষণার প্রমাণিত। মূলত মেসওয়াকের সুন্নত ছেড়ে দেওয়ার কারণেই মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। ডেন্টাল সার্জনদের উৎপত্তি হয়েছে। নিয়মিত মেসওয়াক ব্যবহারে দাঁত জীবাণুমুক্ত হয়, দাঁতের গোড়া মজবুত হয়, দাঁতের ক্যালসিয়াম পূরণ হয়, পাকস্থলী রোগ মুক্ত হয়, মস্তিষ্ক সজীব থাকে, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং ইবাদাতে বিশেষ এক স্বাদ তৈরি হয়। (সুন্নাতে রাসুল ও আধুনিক বিজ্ঞান, পৃষ্ঠা : ৩৫–৪০)</p> <p>ব্রাশ ও মেসওয়াকের পার্থক্য<br /> ব্রাশ ও মেসওয়াকের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। ব্রাশ ব্যবহার করার জন্য অ্যান্টিসেপটিকসমৃদ্ধ টুথপেস্ট ব্যবহার করতে হয়। অথচ মেসওয়াকে উন্নত মানের অ্যান্টিসেপটিক উপাদান আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন। একই ব্রাশে জীবাণুর স্তর জমে যাওয়ায় দীর্ঘদিন ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু মেসওয়াক সে ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ আলাদা। নিয়মিত মেসওয়াক ব্যবহারের ফলে মুখের ভেতরের রোগজীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়। ছত্রাক নিঃশেষ হয়ে যায়। ব্যবহারকারী আরো অসংখ্য রোগবালাই থেকে সুরক্ষিত থাকে। তাই সবার নিয়মিত মেসওয়াক করা উচিত।</p>