<p>বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। সব বয়সী মানুষ বাদ্যযন্ত্রের প্রতি ঝুঁকে পড়ছে। অশ্লীল গানবাজনা তো বটেই, ইসলামী সংগীতেও মিউজিকের প্রবণতা বেড়েই চলছে। নিম্নে দফ ও বাদ্যযন্ত্রের ইসলামী বিধান তুলে ধরা হলো :</p> <p>দফ ব্যবহারের বিধান<br /> বাদ্যযন্ত্র সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। তবে অনেকে দফসংক্রান্ত হাদিসগুলো দ্বারা বাদ্যযন্ত্রের বৈধতা দিতে এই যুক্তি দেন যে দফ ছিল তৎকালীন আরবের বাদ্যযন্ত্র। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন তা আরো উন্নত হয়েছে। দলিল হিসেবে তাঁরা বলেন, আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা বিয়ের ঘোষণা দেবে এবং তা মসজিদে সম্পন্ন করবে। আর এ উপলক্ষে দফ বাজাবে।<br /> (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১০৮৯)<br /> অথচ নবীজি (সা.)-এর যুগে ব্যবহৃত দফ সম্পর্কে যাঁরা অনুসন্ধান করেছেন, তাঁদের মতানুযায়ী দফ হলো একপাশ খোলা ঢোলবিশেষ। বাজালে ঢ্যাব ঢ্যাব আওয়াজ হয়। প্লাস্টিকের গামলার মতো অনেকটা। মূলত দফ সংগীতে ব্যবহৃত কোনো বাদ্যযন্ত্রের পর্যায়ে পড়ে না। আউনুল বারি গ্রন্থাকার বলেন, ‘দফের আওয়াজ স্পষ্ট ও চিকন নয় এবং শ্রুতিমধুর ও আনন্দদায়কও নয়। কোনো দফের আওয়াজ যদি চিকন ও আকর্ষণীয় হয় তখন তা আর দফ থাকবে না, বাদ্যযন্ত্রে পরিণত হবে।’ (আউনুল বারি : ২/৩৫৭)<br /> মোল্লা আলী কারি (রহ.) বলেন, ‘দফের মধ্যে যখন বাদ্যযন্ত্রের বৈশিষ্ট্য এসে যাবে, তখন তা সর্বসম্মতিক্রমে নাজায়েজ।’<br /> (মিরকাতুল মাফাতিহ : ৬/২১০)<br /> সুতরাং বাদ্যযন্ত্রকে দফের ওপর অনুমান করা<br /> সঠিক নয়।</p> <p>বাদ্যযন্ত্রের বিধান<br /> কোরআনে গানবাজনা সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এক শ্রেণির লোক আছে, যারা অজ্ঞতাবশত  অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে  মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে পথভ্রষ্ট করার জন্য।’ (সুরা : লোকমান, আয়াত : ৬)<br /> আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) উক্ত আয়াতের অবান্তর কথাবার্তার ব্যাখ্যায় বলেন, তা হলো গান।<br /> বিখ্যাত তাবেয়ি হাসান বসরি (রহ.), বলেন, উক্ত আয়াত গান ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপারে নাজিল হয়েছে। (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৩/৪৪১)</p> <p>গানবাজনা নিষিদ্ধ<br /> হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) গান শিক্ষা দিতে নিষেধ করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বর্ণনা করেন, তোমরা গায়িকা (দাসী) ক্রয়-বিক্রয় করো না এবং তাদের গান শিক্ষা দিয়ো না। এসবের ব্যবসায় কোনো কল্যাণ নেই। জেনে রেখো, এর প্রাপ্ত মূল্য হারাম। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১২৮২)<br /> অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) শরাব পান করতে, জুয়া খেলতে, ঢোল-তবলা বাজাতে এবং ঘরের তৈরি শরাব পান করতে নিষেধ করেছেন। আর বলেছেন, প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী বস্তুই হারাম। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩৬৪৪)</p> <p>বাদ্যযন্ত্র ধ্বংস ডেকে আনে<br /> বাদ্যযন্ত্র ধ্বংস ডেকে আনে। এর কারণে বড় ধরনের আজাবের সম্মুখিন হতে হয়। ইমরান ইবনে হোসাইন (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এই উম্মতের জন্য ভূমিধস, চেহারা বিকৃতি ও পাথর বর্ষণের আজাব রয়েছে। জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), কখন হবে তা? তিনি বলেন, যখন গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রের বিস্তার ঘটবে এবং মদ্যপান দেখা দেবে।<br /> (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২২১৫)<br /> লেখক : আলেম, ছড়াকার ও গল্পকার</p>