<p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পৃথিবীর প্রতিটি বস্তুর একটি বাহ্যিক এবং একটি অভ্যন্তরীণ অবস্থা থাকে। বাহ্যিক অবস্থাকে যদি অবয়ব বলা হয়, তবে অভ্যন্তরীণ অবস্থাকে রুহ বা আত্মা বলতে হবে। কোরবানিরও এমন দুটি অবস্থা রয়েছে। বাহ্যিক অবস্থার পাশাপাশি তার আছে অন্তর্নিহিত শিক্ষা ও মর্ম। একবার সাহাবায়ে কেরাম (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসুল! কোরবানির মর্ম কী? তিনি উত্তর দেন, এটা তোমাদের জাতির পিতা ইবরাহিমের সুন্নত। সুন্নত হলো রীতিনীতি ও পদ্ধতি। এখন চিন্তা ও গবেষণার বিষয় হলো, ইবরাহিম (আ.)-এর রীতি ও পদ্ধতি কী ছিল? তার বৈশিষ্ট্য ও কর্মপন্থা কী ছিল? তিনি কি শুধু পশু কোরবানি করেছিলেন, নাকি আরো বেশি আত্মত্যাগ স্বীকার করেছিলেন?</span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাইয়েদুনা ইবরাহিম (আ.) শুধু পশু কোরবানি করেননি, তিনি আল্লাহর জন্য জীবনের সবচেয়ে অর্জন প্রিয় সন্তানকে উৎসর্গ করেছিলেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর সে যখন তার পিতার সঙ্গে কাজ করার মতো বয়সে উপনীত হলো, তখন ইবরাহিম বলল, ছেলে! আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে আমি জবাই করছি, এখন তোমার অভিমত কী বলো? সে বলল, হে আমার পিতা! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন তা-ই করুন। আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন। যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইবরাহিম তার পুত্রকে কাত করে শোয়াল, তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইবরাহিম! তুমি তো স্বপ্নাদেশ সত্যই পালন করলে—এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি।’ (সুরা : সাফফাত, আয়াত : ১০২-১০৫)</span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যদিও ইসমাঈল (আ.)-কে জবাই করা হয়নি, তবু তাঁকে ‘জাবিহুল্লাহ’ (আল্লাহর জন্য উৎসর্গিত) বলা হয়। কেননা ইবরাহিম (আ.) যেমন সন্তানকে আল্লাহর জন্য জবাই করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন, তেমন ইসমাঈল (আ.)-ও দ্বিধাহীনভাবে ছুরির নিচে গলা পেতে দিয়েছেন। পিতা-পুত্র উভয়ে আল্লাহর পরীক্ষায় শতভাগ উত্তীর্ণ হয়েছেন। আল্লাহ ইসমাঈল (আ.)-এর ফিদিয়া স্বরূপ (জানের বদলা) জান্নাতি দুম্বা পাঠিয়ে দেন।</span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হাদিসে কোরবানিকে ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত বলা হয়েছে। অথচ ইবরাহিম (আ.) জীবনে কেবল একবার সন্তানকে কোরবানি করার চেষ্টা করেছিলেন! তাহলে ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত কী ছিল? ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত ছিল প্রতিটি পরীক্ষার সময় নিঃসংকোচে আল্লাহর আনুগত্য করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাঁর প্রতিপালক যখন তাকে বলেছিলেন, আত্মসমর্পণ করো, সে বলেছিল, জগত্গুলোর প্রতিপালকের কাছে আত্মসমর্পণ করলাম।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৩১)</span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আত্মনিবেদন ও আত্মোৎসর্গই ছিল ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত। আল্লাহ যখনই যে নির্দেশ দিয়েছেন সঙ্গে সঙ্গে তিনি তা পালন করেছেন। আল্লাহ সম্পদ ব্যয় করতে বললে সম্পদ ব্যয় করেছেন; জীবন উৎসর্গ করতে বললে জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত হয়েছেন। ইবরাহিম খলিলুল্লাহর জীবনের পর্যালোচনা করে দেখলে জীবনময় আনুগত্যের এই চিত্রই দেখা যাবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘এবং স্মরণ করো, যখন ইবরাহিমকে তার প্রতিপালক কয়েকটি কথা দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন এবং সেগুলো সে পূর্ণ করেছিল। আল্লাহ বললেন, আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা করছি। সে বলল, আমার বংশধরদের মধ্য হয়েও? আল্লাহ বললেন, আমার প্রতিশ্রুতি জালিমদের প্রতি প্রযোজ্য নয়।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১২৪)</span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আল্লাহর পরীক্ষাগুলোতে ইবরাহিম (আ.) পূর্ণ আনুগত্য ও ভালোবাসার প্রমাণ দিয়েছেন। যখন তাঁকে জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছে, তিনি অবিচল রয়েছেন; যখন তাঁকে বিরাণভূমিতে স্ত্রী-সন্তানদের ছেড়ে আসতে বলেছেন, তিনি তাদের ধূসর মরুতে ছেড়ে এসেছেন; যখন তাঁকে কলিজার টুকরা সন্তানকে জবাই দিতে বলা হয়েছে, তিনি সন্তুষ্টির জন্য তা পালন করতে চেয়েছেন। অর্থাৎ জীবনের সব কিছু তিনি আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করেছেন। আল্লাহর কুদরতি পায়ে জীবন ও জীবনের সব কিছু সমর্পণ করেছেন। তাঁর সুন্নত স্মরণ করেই পশু কোরবানির সময় পাঠ করা হয়—ইন্নি ওয়াজ জাহতু ওয়াজ হিয়া লিল্লাযি ফাতারাছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহ ইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বিজালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়ালাকা...বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার। (অর্থ) ‘নিশ্চয়ই আমি দৃঢ়ভাবে সেই মহান সত্তার অভিমুখী হলাম, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। আমি মুশরিকদের অন্তর্গত নই। নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ—সবই বিশ্ব প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য নিবেদিত। তাঁর কোনো শরিক নেই। আমি এ কাজের জন্য আদিষ্ট হয়েছি। আর আমি আত্মসমর্পণকারীদের একজন। হে আল্লাহ! তোমার পক্ষ থেকে, তোমার জন্য। আল্লাহর নামে, আল্লাহ সবচেয়ে মহান।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৭৯৫)</span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আল্লাহর জন্য সব কিছু উৎসর্গ করার এই আবেগ ও স্পৃহাই কোরবানির রুহ বা আত্মা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না তাদের গোশত এবং রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া বা আল্লাহভীতি।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৩৭)</span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এখানে আল্লাহভীতি দ্বারা ইখলাস ও নিষ্ঠা উদ্দেশ্যে। অর্থাৎ আল্লাহ বান্দার পশু ও তার আকার দেখেন না, কিন্তু তিনি তাদের মনের অবস্থা দেখেন। মনের ভেতর আল্লাহর জন্য ভালোবাসা ও নিবেদন আছে, নাকি লোক-দেখানো ও সুখ্যাতির লিপ্সা আছে। আমল যত নিষ্ঠাপূর্ণ হবে, যত বেশি আল্লাহপ্রেমে ধন্য হবে, তত বেশি প্রতিদান আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া যাবে। তিনি তত বেশি দয়া ও ভালোবাসা দান করবেন।</span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আল্লাহ সবাইকে আল্লাহর জন্য আত্মনিবেদন করার তাওফিক দিন। আমিন। </span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভাষান্তর : আলেমা হাবিবা আক্তার</span></span></span></span></p>