<p>জীবন চলার পথে অর্থকড়ি ও সম্পদের প্রয়োজন আছে। তবে মানবজীবনে জ্ঞানের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। সম্পদ জ্ঞানের প্রতিপক্ষ নয়। তবে সম্পদের চেয়ে জ্ঞানের কার্যকারিতা বেশি। জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্য সম্পদ সংগ্রহ করা নয়, যদিও জ্ঞানের মাধ্যমে সম্পদও অর্জন করা যায়। অন্যদিকে অর্থ দিয়ে জ্ঞান কেনা যায় না, গভীর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তা আহরণ করতে হয়। জ্ঞানের জন্য অনেক সাধনার প্রয়োজন হয়। ইসলাম দুনিয়ার জীবনের প্রয়োজনকে উপেক্ষা করে না। ইসলামের দৃষ্টিতে দুনিয়ার সম্পদ আল্লাহর নিআমত। দুনিয়ার সব কিছু মানুষের জন্যই। তাই মানুষ দুনিয়া ভোগ করবে—এটাই স্বাভাবিক। এ কারণেই হালাল উপায়ে অর্থ উপার্জনের যত পথ ও পন্থা আছে, সব কটিকেই ইসলাম ধর্মে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হালাল উপার্জন করা ফরজগুলোর (ইবাদত) পরে (গুরুত্বপূর্ণ) ফরজ।’ (বায়হাকি)</p> <p>চাষাবাদ করা ও জীবিকার সন্ধান করা ইসলামের দৃষ্টিতে পুণ্যের কাজ। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুমিন যখন গাছ লাগায় অথবা কৃষিজ ফসল ফলায়, অতঃপর তা থেকে কোনো পাখি, মানুষ বা পশু আহার করে; সেটি তার জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হবে।’ (বুখারি-মুসলিম)</p> <p>সুতরাং জ্ঞান আহরণ ও বিতরণের পাশাপাশি জীবন ধারণের জন্য সম্পদ উপার্জন করতে হবে। যারা পার্থিব সম্পদ-সৌন্দর্য ও ধর্মের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করে, তাদের প্রতি মহান আল্লাহর জিজ্ঞাসা : ‘তাদের জিজ্ঞাসা করো, ‘আল্লাহ বান্দাদের জন্য যে সৌন্দর্য ও পবিত্র রিজিক সৃষ্টি করেছেন, তা হারাম করল কে? বলে দাও, এগুলো ইমানদারদের পার্থিব জীবনের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য এবং বিশেষভাবে পরকালের জন্য নির্দিষ্ট। এভাবে আমি জ্ঞানবানদের জন্য আমার আয়াত সবিস্তারে উপস্থাপন করি।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩২)। তবে এটাও সত্য যে ঈমানদার ব্যক্তি বিশ্বাস করে, পার্থিব জীবন ক্ষণস্থায়ী। পরকালের অনন্ত অসীম জীবনে এই জীবনের হিসাব হবে। সেখানে ভালো-মন্দের পরিপূর্ণ প্রতিদান দেওয়া হবে। তাই ঈমানদার সম্পদ অর্জনে আল্লাহর বিধিনিষেধ মেনে চলে, সম্পদ ব্যয়েও সে আল্লাহর হুকুম পালন করে। ঈমানদার ব্যক্তি দুনিয়াকে প্রয়োজনমতো ধারণ করে, কিন্তু দুনিয়া অর্জন কখনোই তার জীবনের লক্ষ্য হয় না। ঈমানদারের সামনে দুনিয়ার হাকিকত ও বাস্তবতা পরিষ্কার। দুনিয়ার হাকিকত কী? মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা জেনে রেখো, দুনিয়ার জীবন ক্রীড়া-কৌতুক, শোভা-সৌন্দর্য, তোমাদের পারস্পরিক গর্ব-অহংকার এবং ধন-সম্পদ ও সন্তানসন্ততিতে আধিক্যের প্রতিযোগিতা মাত্র। এর উপমা হলো বৃষ্টির মতো, যার মাধ্যমে উৎপন্ন ফসল কৃষকদের আনন্দ দেয়। তারপর তা শুকিয়ে যায়। ফলে তুমি তা হলুদ বর্ণের দেখতে পাও, অতঃপর তা খড়কুটায় পরিণত হয়। আর আখিরাতে আছে কঠিন আজাব এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। দুনিয়ার জীবন ধোঁকার সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়।’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ২০)</p>