<p>বৈশ্বিক মহামারি (কভিড-১৯) থেকে রক্ষা পেতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বিশেষ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যার অন্যতম হলো, সাবান কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়া। বর্তমানে সাবান ব্যবহার করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু গত দুই শ বছর আগেও এই অঞ্চলের মানুষ সাবানের সঙ্গে পরিচিত ছিল না।</p> <p>‘সাবান’ যাকে ইংরেজিতে বলা হয় সোপ (ঝড়ধঢ়)। এই শব্দটি এসেছে লাতিন শব্দ স্যাপো (ঝধঢ়ড়) থেকে। এই স্যাপো শব্দটি প্রথম ব্যবহার করা হয় খ্রিস্টীয় ৭৭ সালে। আবার পর্তুগিজ ভাষায় স্যাব অথবা স্যাবোনেট নামে একটি শব্দ রয়েছে, যেটির অর্থ তেল বা চর্বি এবং অন্যান্য উপাদানের একটি মিশ্রণ, মূলত ছোট আকারের টুকরা, যা ধোয়াধুয়ির কাজে ব্যবহূত হয়। কেউ কেউ মনে করেন যে স্যাবো থেকে ব্রিটিশ ইংরেজিতে শব্দটি হয়ে যায় সোপ আর তা থেকে বাংলায় সাবান।</p> <p>রোগজীবাণু থেকে বাঁচতে সাবান বা সাবানজাতীয় জিনিসের ব্যবহারের ইতিহাস বেশ পুরনো। পরিচ্ছন্নতার জন্য সাবানজাতীয় বস্তু ব্যবহারের প্রথম প্রমাণ মেলে খ্রিস্টপূর্ব ২৮০০ বছর আগে, প্রাচীন ব্যাবিলনে। শুধু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাই নয়। একসময় সাবান ব্যবহার করা হতো বিভিন্ন চর্মরোগের চিকিৎসায়ও। এ তথ্য জানা যায় খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ সালে প্রকাশিত চিকিৎসাবিজ্ঞান-বিষয়ক প্রকাশনা ইবার্স প্যাপিরাস থেকে। সে সময় মিসরে পশুর চর্বি, সবজির তেল এবং অ্যালকাইন লবণ মিশিয়ে সাবানের মতো দ্রব্য প্রস্তুত করা হতো। মেসোপটেমিয়া, মিসর, মধ্যপ্রাচ্য সাবান তৈরি, ব্যবহার ও ব্যবসার ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। প্রাচীন চীনেও সাবান ব্যবহারের কথা জানা যায়। তবে সর্বপ্রথম শক্ত সাবান তৈরি করেছিল আরবরা। পরবর্তীকালে তা ইউরোপে পরিচিত হয়। আর আমাদের এই অঞ্চলে সাবানের ইতিহাস দুই শ বছরেরও কম। ইতিহাসবিদদের মতে, সুগন্ধি সাবানের উদ্ভব হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যকে কেন্দ্র করে। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ান সভ্যতায় সাবান তৈরি ও ব্যবহারের ব্যাপক প্রচলন ছিল। সেই ধারাবাহিকতায় প্রাচীন সিরিয়ার আলেপ্প শহরের অধিবাসীর ছিল উত্কৃষ্ট মানের সাবান তৈরির দক্ষতা। (প্রথম আলো)</p> <p>তৎকালে সিরিয়াসহ অনেক মুসলিম দেশে সাবান উৎপাদন একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হিসেবে গড়ে ওঠে। রঙিন সুগন্ধি সাবান, ডাক্তারি সাবান তৈরি ও রপ্তানি হতো সিরিয়ার বিভিন্ন শহর থেকে। নাবলুস, দামাস্কাস, আলেপ্পা ও সারমিন ছিল সাবান তৈরিতে বিখ্যাত। তারা সাবান তৈরিতে ব্যবহার করত জলপাইয়ের তেল ও আলকালি। কখনো কখনো এতে যোগ করা হতো ন্যাট্রন।</p> <p>এমনই তথ্য পাওয়া যায় মধ্যযুগের মুসলিম বিজ্ঞানী লেখক দাউদ আল আন্তাকির বর্ণনায়। এ ছাড়া আধুনিক সাবান তৈরির প্রস্তুত প্রণালী আবিষ্কার করেন মুসলিম বিজ্ঞানী আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে জাকারিয়া আল রাজি। (প্রযুক্তির জনকেরা, পৃ. ১৫৫)। চিকিৎসাবিজ্ঞানে আল রাজির অবদান অবিস্মরণীয়। চিকিৎসাশাস্ত্রে মুসলমান বিজ্ঞানীদের অবদানের কথা বলতে গেলে প্রথমেই তাঁর কথা বলতে হয়। তবে তিনি শুধু চিকিৎসকই ছিলেন না, ছিলেন একাধারে গণিতবিদ, রসায়নবিদ এবং দার্শনিক।</p>