<p>ফাতিমা গ্রিম ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম আলোচিত জার্মান নারী। ১৯৩৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৬০ সালে ইসলাম গ্রহণ করেন। জার্মান সমাজে ইসলাম প্রচারে বিশেষ ভূমিকা রাখেন এই নওমুসলিম নারী। তিনি লেখালেখি ও বত্তৃদ্ধতার মাধ্যমে ইসলামের ভাষ্য তুলে ধরেন। ইসলামী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তিনি একাধিক সংগঠনও প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৩ সালের ৬ মে তিনি ইন্তেকাল করেন</p> <p> </p> <p>ইসলাম গ্রহণের আগে আমি বৈশ্বিক রীতিনীতি সম্পর্কে জানতে চাইছিলাম। এমন শৃঙ্খলা, যা পৃথিবীর সব জায়গায় ও সব সময় কার্যকর। তারও আগে ১৯৫০ সালেও একই বিষয়ে আমার আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছিল। প্রত্যেকেই সত্যের সন্ধান পাওয়ার দাবি করে। অথচ প্রতিটি সমাজের রীতিনীতি ও শিষ্টাচার ভিন্ন। এর ব্যাখ্যাও ব্যক্তিগত। এটাই আমাকে দ্বিধান্বিত করছিল। তাহলে কি পৃথিবীতে বৈশ্বিক কোনো নিয়ম নেই? এই ধরনের নিয়ম কে প্রবর্তন করতে পারে? কোনো মহান দার্শনিক? প্রখর কোনো মেধাবী ব্যক্তি? আর সেই বৈশ্বিক নিয়ম কত দিনই বা প্রয়োগযোগ্য থাকবে।</p> <p>আমার এই চিন্তাগুলো আমার ভেতর স্রষ্টা সম্পর্কে প্রশ্ন তৈরি করে। মন আমাকে সব সময় তার যুক্তি দিয়ে সাহায্য করছিল। এ ব্যাপারে আমার কোনো সংশয় ছিল না যে পৃথিবীতে আমার যত কল্যাণ সাধিত হচ্ছে, তা অবশ্যই কোনো ঐশ্বরিক উৎস থেকেই হচ্ছে। হৃদয় বলছিল, আমার কৃতজ্ঞতা আদায় করা উচিত। কিন্তু আমি জানতাম না কার প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করতে হবে। আমি জানতাম না আমার প্রভু কে। তিনি কি পিতৃ-খোদা, যিনি জান্নাতে বসে আছেন? নাকি তিনি খোদার পুত্র, যিনি ‘ক্রুুশবিদ্ধ!’ হন? নাকি তিনি আগের কোনো হাস্যোজ্জ্বল ব্যক্তি? তিনি যিনিই হোন না কেন, আমি আমার প্রভুর প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করতে চাই এবং যথাযথ প্রভুর প্রতিই কৃতজ্ঞতা আদায় করতে চাই। এ ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনে কোনো কমতি ছিল না। এটাই আমাকে প্রত্যয়ী করে তোলে।</p> <p>একটি জটিল অস্ত্রোপচারের পর আমি জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে ফিরছিলাম। কেন আমি এখনো বেঁচে আছি? এই সময় প্রথম ইসলামের সঙ্গে পরিচিত হই এবং সচেতনভাবেই হই। তবে আমি চিন্তিত ছিলাম; কেননা আগে আমার ঐশ্বরিক উৎসের অনুসন্ধানগুলো সফল হয়নি। আমি কোরআন পড়ছিলাম, আবার কয়েকজন মুসলিমের কাছে আমার অবস্থানও তুলে ধরছিলাম। আমি হৃদয়ের গভীরে শুনতে পেলাম—হ্যাঁ, এটাই সত্য। এটাই সেই পথ, যা তুমি খুঁজছিলে। আমি ইসলামের বক্তব্যে কোনো সংঘাত বা বিচ্ছিন্নতা খুঁজে পাইনি। প্রতিটি ধারণাই যথাযথ। তখন আমি আত্মপ্রশান্তি লাভ করতে শুরু করি। আমার মনে হলো, আমি একজন বিজয়ী। সত্যের সন্ধান পাওয়ার পর আমার প্রথম কর্তব্য ছিল ইসলাম গ্রহণ করা এবং আমি তা-ই করি।</p> <p>মূলত আত্মপ্রশান্তি রক্ষার জন্য স্রষ্টায় বিশ্বাস, তাঁর সম্পর্কিত জ্ঞানার্জন এবং কর্মতৎপরতা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। এটার জন্য জানতে পারলাম, আল্লাহর সান্নিধ্যলাভের জন্য তাঁর প্রদত্ত বিধিবিধান মান্য করা আবশ্যক। তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমেই আমি আত্মপ্রশান্তি অর্জন করতে পারব। এর মধ্যে রয়েছে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। পাঁচবার আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ। যখন আমাদের হৃদয়ে প্রশান্তি থাকে, তখন আমরা তা ধরে রাখতে পারি এবং তা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারি। আমরা যদি আত্মপ্রশান্তিই লাভ করতে চাই, তাহলে আল্লাহ ও তাঁর বিধান সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে হবে। কোরআন আত্মপ্রশান্তি লাভের মাধ্যম। কোরআন অধ্যয়ন ও কোরআন গবেষণা আমাদের জীবনকে স্থিতিশীল করবে। আমাদের মনে রাখা উচিত, জাগতিক জীবন ক্ষণস্থায়ী। এই বিশ্বাস আমাদের পৃথিবীর অনেক জটিলতা ও মৃত্যুভয় থেকে রক্ষা করতে পারে। একজন মুসলিম হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি, আমরা আল্লাহর কাছে ফিরে যাব, যিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু। পরকালে তিনি আমাদের অনন্ত সুখের জান্নাত দান করবেন। আত্মপ্রশান্তির এটাই তো মূলমন্ত্র।</p> <p>অনুবাদ : আবরার আবদুল্লাহ</p>