ভিন্নমত দমন না করে তা প্রকাশের সুযোগ দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘সময় এখন ভালো যাচ্ছে না। অনেকেই মন খারাপ করে আছেন। তবে আমি আশাবাদী, সামনে ভালো সময় আসবে।
ভিন্নমত দমনের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতারা
নিজস্ব প্রতিবেদক

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বাংলা একাডেমিতে ‘সিভিল ডিসকোর্স ন্যাশনালস-২০২৫’-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঢাকা কলেজ ডিবেটিং সোসাইটি ও দ্য বাংলাদেশ ডায়ালগ।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হলো ভিন্নমত। কেউ কারো সঙ্গে একমত না হলেও মত প্রকাশের অধিকার সুরক্ষিত থাকতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের চর্চা হয়নি। পাকিস্তান আমল থেকে তা অনুপস্থিত। কিছু সময় চর্চা হয়েছিল, কিন্তু আমরা আবার সেখান থেকে সরে এসেছি।
তরুণদের প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘একটি জরিপে দেখলাম, মাত্র ১.৮৭ শতাংশ তরুণ রাজনীতিতে আগ্রহী। এটি রাজনীতিবিদ হিসেবে আমার জন্য সুখবর নয়। তবে এখানে এসে আশাবাদী হয়েছি।’
পদাধিকার সূত্রে সৃষ্ট শ্রেষ্ঠত্ববোধ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে কেউ মন্ত্রী হলেই তাঁর মানসিকতা পাল্টে যায়।
তিনি আরো বলেন, “‘মাননীয়’ শব্দটি দিয়েই স্বৈরতন্ত্রের জন্ম হয়। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি—এই শব্দটি না থাকলেই হয়তো শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা হতো না।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব রয়েছে। তাদের বোঝাতে সময় লাগে। আবার তারাও আমাদের বোঝে না। রাজনৈতিক সংকট তৈরির এটিও একটি বড় কারণ।’
প্রশাসনিক স্থবিরতায় বাড়ছে ‘মব কালচার’ : রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, প্রশাসনিক স্থবিরতার কারণেই দেশে ‘মব কালচার’ বাড়ছে। তাঁর ভাষায়, ‘গোপন অপতৎপরতা ও কালো টাকার প্রভাবে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
রিজভী অভিযোগ করেন, পরিকল্পিতভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ অপকর্মে জড়ালে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘দলের ভেতরে কেউ অপকর্মে জড়ালে তাকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। এরই মধ্যে কয়েকজনকে বহিষ্কার, পদ স্থগিত, কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’
রিজভীর দাবি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ভূমিকা রহস্যজনক। তিনি বলেন, ‘দল থেকে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বললেও প্রশাসন কোনো সাড়া দিচ্ছে না। বরং কোথাও কোথাও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পরিস্থিতি অবনতির দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’
জাহিদ হোসেন : মব দিয়ে দাবিয়ে রাখা যায় না
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, ‘মব করে কাউকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা ভালো ফল দেয় না।’
গতকাল উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের মুক্তমঞ্চে জাসাসের কর্মী সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জাহিদ হোসেন বলেন, ‘সাংবাদিকরা কিছু লিখলে তাঁদের থামিয়ে আবার মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলা—এটি কোনো সভ্য রাজনৈতিক আচরণ নয়।’
তিনি দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের আহবান জানিয়ে বলেন, ‘যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন, তা করে দ্রুত নির্বাচন দিন। বিভাজনের রাজনীতি নয়, ঐক্য দরকার। যারা গত ১৬ বছর ধরে লুটপাট করেছে, তারা কোথাও হারিয়ে যায়নি, আমাদের চারপাশেই আছে।’
সম্পর্কিত খবর

গাজীপুর
সাংবাদিককে প্রকাশ্যে কুপিয়ে গলা কেটে হত্যা
- আরেক সাংবাদিককে থেঁতলে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর

গাজীপুরে এক সাংবাদিককে কুপিয়ে ও গলা কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে মহানগরীর ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তায় মসজিদ মার্কেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে গত বুধবার বিকেলে শহরের সাহাপাড়া এলাকায় আনোয়ার হোসেন সৌরভ নামের আরেক সাংবাদিককে ইট দিয়ে পা ও শরীর থেঁতলে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। দুটি ঘটনাই ঘটেছে চাঁদাবাজির জের ধরে।
নিহত সাংবাদিকের নাম মো. আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮)। তিনি দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি একটি ইউনানি ওষুধ কম্পানির গাজীপুরের ডিলার ছিলেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, পূর্বশত্রুতার জের ধরে পাঁচ-ছয়জন সন্ত্রাসী গতকাল রাত সাড়ে সাড়ে ৮টার দিকে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় আসাদুজ্জামান তুহিনকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে। এ সময় তিনি দৌড়ে মসজিদ মার্কেটের একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নেন।
চা দোকানি খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দোকানে বসেছিলাম। হঠাৎ তুহিন দৌড়ে এসে আমার দোকানে ঢুকে পড়ে। পরে তিনজন আমার দোকানের ভেতরে ঢুকে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে।
তিনি আরো জানান, ওই সময় অনেক লোক ঘটনাটি তাকিয়ে দেখলেও কেউ তুহিনকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি।
অন্য দিকে আহত সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন সৌরভ (৩৫) দৈনিক বাংলাদেশের আলো পত্রিকার গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি। তিনি শহরের সাহাপাড়া এলাকায় বাস করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাংবাদিক তুহিন রাত ৮টার দিকে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকা পার হচ্ছিলেন। এ সময় হঠাৎ কয়েকজন সন্ত্রাসী তাঁকে ঘিরে ধরলে তিনি দৌড়ে মসজিদ মার্কেটের একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নেন। তখন সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে লোকজনের সামনেই তাঁকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। সন্ত্রাসীরা তাঁকে সেখান থেকে টেনেহিঁচড়ে বাইর করে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর শরীরে ২০টির বেশি ধারালো অস্ত্রের কোপের দাগ রয়েছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সাংবাদিক তুহিন চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার ফুটপাত ও দোকানপাট থেকে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সরব ছিলেন। এরই জেরে কয়েক দিন আগে বাসন থানা পুলিশ ফুটপাতের দোকান ও আশপাশের চাঁদাবাজি বন্ধ করে দেয়। গতকাল বিকেলে ফের চাঁদাবাজি শুরু করলে সন্ধ্যায় মোবাইলে ভিডিও করেন সাংবাদিক তুহিন। এতে ক্ষুব্ধ হয় চাঁদাবাজরা। রাত ৮টার দিকে নিজের ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করে তুহিন লেখেন ‘যেমন খুশি তেমন রাস্তা পার হওয়ার দৃশ্য। গাজীপুর চৌরাস্তা।’
ওই পোস্ট দেওয়ার পরই সন্ত্রাসীরা তাঁর ওপর সন্ত্রাসী আক্রমণ চালিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।
খবর পেয়ে র্যাব-পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে দুই শিশুসন্তান নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন নিহত তুহিনের স্ত্রী। স্বামীর ক্ষতবিক্ষত লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তাঁর বুকফাটা আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠে সেখানকার পরিবেশ।
নিহত তুহিনের বন্ধু শামিম বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে হেঁটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একজন মহিলা কিছু লোকজন নিয়ে অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছিল। তুহিন দৌড়ে সাইডে গিয়ে ভিডিও করছিল। তার পর থেকে আর তাঁকে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে দোকানের সামনে জটলা দেখে সেখানে গিয়ে দেখি তাঁর ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ পড়ে আছে। বাসন থানার ওসি শাহীন খান জানান, পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। কী কারণে এ হত্যার ঘটনা ঘটেছে, তা জানার চেষ্টা চলছে।
সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার প্রতিবাদে গতকাল রাতে ঘটনাস্থলে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও আলেম সমাজ। তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানায়।
অন্যদিকে গাজীপুর শহরের মার্কাজ সড়কের সাহাপাড়া এলাকায় একদল সন্ত্রাসী সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন সৌরভকে মারধর করে। এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা ইট দিয়ে তাঁর পা ও শরীর থেঁতলে দেয়। সৌরভকে মারধরের একটি ভিডিও গতকাল বিকেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ভিডিওতে দেখা যায়, লোকজনের সামনেই ইট দিয়ে তাঁর পায়ে আঘাত করা হচ্ছে। ঘটনার পর পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
সদর মেট্রো থানার ওসি মেহেদী হাসান বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত আনোয়ার হোসেন সৌরভকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় আহত আনোয়ার হোসেনের মা আনোয়ারা সুলতানা বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ করে এবং ১৫ থেকে ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ একজনকে আটক করেছে।

মহাসড়ক অবরোধ


ভারতের পণ্যে দ্বিগুণ মার্কিন শুল্ক
বাড়তি শুল্কে সম্ভাবনা জাগছে বাংলাদেশের
নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারতের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপ আকস্মিক দ্বিগুণ করায় দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অন্তত ১ শতাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে দেশটির যুক্তরাষ্ট্রমুখী অন্তত ৬০ শতাংশ পণ্য রপ্তানি কমে যেতে পারে। মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গের এক বিশ্লেষণে এমন আশঙ্কার কথা তুলে ধরা হয়েছে। যদিও ভারতের বন্ধু বলে পরিচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষ থেকে নির্বিচারে এমন শুল্ক আরোপে চটেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
বিশ্ব গণমাধ্যমে এখন চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে—এতে ভারতের কী ক্ষতি হবে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ভারতের পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্কের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতীয় পোশাকের দাম বাড়বে। ফলে ওই দেশের পণ্য রপ্তানি কমে যাবে।
খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, কম খরচে পোশাক উৎপাদনে সক্ষমতা থাকায় মার্কিন বাজারে পণ্য প্রতিযোগিতামূলক মূল্যের সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। ফলে ভারতের তুলনায় কম দামে মার্কিন বাজারে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকরা ভারতের বিকল্প খুঁজবে। বাংলাদেশ একটি নির্ভরযোগ্য বিকল্প হতে পারে।
বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। দক্ষ শ্রমশক্তি ও প্রস্তুত অবকাঠামো এ ক্ষেত্রে বড় সুবিধা। মান ও সময়মতো ডেলিভারি নিশ্চিত করতে পারলে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের স্থায়ী অবস্থান তৈরি হতে পারে বলেও মনে করেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ভারতের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫৫.৩৪ শতাংশ। কিন্তু নতুন ৫০ শতাংশ শুল্কের কারণে ভারতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হ্রাস পাবে। ইউএসটিআরের তথ্য মতে, ভারত ২০২০ সালে ৩০২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে; ২০২১ সালে ৪২০ কোটি ডলার, ২০২২ সালে ৫৬৯ কোটি ডলার; ২০২৩ সালে ৪৪৭ কোটি ডলার এবং ২০২৪ সালে ৪৭০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে।
বাংলাদেশের সামনে বড় সুযোগ : ভারতের চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি মার্কিন বাজারে শুল্কের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাংলাদেশ এই শূন্যস্থান পূরণ করতে পারে। বাংলাদেশ এরই মধ্যে জার্মানি, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের জন্য সরকার ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত প্রচেষ্টা এই খাতের রপ্তানি বাড়াতে পারে।
এ ছাড়া বাংলাদেশের কৃষিপণ্য, যেমন—হিমায়িত মাছ, চিংড়ি, শাকসবজি ও ফলমূল, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপে রপ্তানি হচ্ছে। ভারতের কৃষিপণ্যের ওপর উচ্চ শুল্কের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে এই পণ্যের চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ সুযোগ পেতে পারে। তবে এই খাতে রপ্তানি বাড়াতে গুণগত মান এবং আন্তর্জাতিক মানের সার্টিফিকেশন নিশ্চিত করতে হবে।
ভারতের আইটি সেবা রপ্তানির ওপর উচ্চ শুল্কের প্রভাব পড়লে বাংলাদেশ এই খাতে যুক্তরাষ্ট্রের কম্পানিগুলোর কাছে আকর্ষণীয় বিকল্প হতে পারে। বাংলাদেশের তরুণ জনশক্তি এবং তুলনামূলক কম শ্রমমূল্য এই খাতে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা দেবে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির কারণে বিদেশি কম্পানিগুলো যদি ভারত থেকে উৎপাদন সরিয়ে নিতে চায়, তবে দক্ষিণ এশিয়ায় বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশকেই গুরুত্ব দেওয়া হতে পারে। আবার চীন থেকেও ধীরে ধীরে উৎপাদন সরিয়ে আনছে অনেক কম্পানি। ফলে ভারত-চীন উভয়ের বাইরে তৃতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এগিয়ে আসতে পারে।
সম্ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে চ্যালেঞ্জও আছে উল্লেখ করে বাণিজ্য বিশ্লেষকরা বলেন, শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করা, এলডিসি সুবিধা শেষ হওয়ার পর কর সুবিধার সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে উত্তোরণে উপায় খুঁজে বের করা; বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন, কাঁচামালের দাম কাঁচামালনির্ভরতা ও মূল্য ওঠানামা বড় ধরনের বাধা হতে পারে। এ জন্য তারা মার্কিন বাজারে প্রচার-প্রচারণা বাড়ানো, লিড টাইম কমিয়ে আনতে অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং কারখানায় কর্ম পরিবেশের উন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে বলে পরামর্শ দেন তাঁরা।
তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সহসভাপতি মো. শিহাব-উদ-দোজা চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মার্কিন শুল্ক ইস্যু বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হলেও সরকারের নীতি-সহায়তা আর বন্দরের দক্ষতা বর্তমানে বড় বাধা। এ জন্য এখনই কৌশলগত পরিকল্পনার মাধ্যমে রপ্তানি বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিতে হবে।’
বেশি দামি পোশাকের কদর বাড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চায়না ও ভারতের কার্যাদেশের বড় অংশ স্থানান্তরিত হবে বাংলাদেশে। এ জন্য ক্রেতার বিনা মূল্যে কাঁচামাল (এফওসি) আমদানিতে তিন বাধা তুলে দিতে হবে। এটা হলে কৃত্রিম তন্ত্রের কাপড় (এমএমএফ) বিনামূল্যে ক্রেতারা রপ্তানিকারকদের পাঠাবেন। সেই কাপড়ে তৈরি পোশাক (উচ্চমূল্যের পোশাক) রপ্তানিতে দেশের রপ্তানি আয় বাড়বে।’ তিনি বলেন, বর্তমানে ৭০ শতাংশ মৌলিক পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। এফওসি করা গেলে এমএমএফ পোশাকের রপ্তানি বাড়বে। বর্তমানে এই কাপড়ের তৈরি পোশাকের (উচ্চমূল্যের পোশাক) বৈশ্বিক বাজার ৭০ শতাংশ। বাংলাদেশের হিস্যা এখানে মাত্র ২৫ শতাংশ।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মার্কিন শুল্ক কাঠামোতে যে অযৌক্তিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা তৈরি হলেও এর ফলে তৈরি অনিশ্চিত বিষয়গুলো নিয়েও দেশের উদ্যোক্তাদের আরো সতর্ক থাকা উচিত। এ ছাড়া ভারত চীন এবং ইরান থেকে পণ্য আমদানিতে বাড়তি শুল্ক আরোপের ক্লজ রয়েছে শুল্ক কাঠামোতে। তাই বাংলাদেশের জন্যও মার্কিন শুল্ক চুক্তি বুমেরাংও হতে পারে।’
তবে মার্কিন বর্তমান শুল্কনীতি বাংলাদেশের জন্য সোনালি সময় উল্লেখ করে বিজিএমইএ পরিচালক শাহ মোহাম্মদ রাঈদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উচ্চমূল্যের পোশাকের রপ্তানি বাড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ উচ্চমূল্যের পোশাকের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে। ক্রেতাদের কাছ থেকে বেশ সারা পাওয়া যাচ্ছে। বাড়ছে উচ্চমূল্যের পোশাকের কদর। তবে তিনি কারখানার কর্মপরিবেশ, পরিবেশবান্ধব কারখানা এবং ব্রান্ডিংয়ে জোর দেওয়া গেলে বাংলাদেশ সস্তা থেকে উচ্চমূল্যের পোশাকের বিশ্ববাজারের নেতৃত্ব দেবে।’
আপস না করার ঘোষণা মোদির : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর ‘দ্বিগুণ’ শুল্ক আরোপ করার এক দিন পর কড়া বার্তা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, কৃষক ও জেলেদের স্বার্থে ভারত কোনোভাবেই আপস করবে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানী নয়াদিল্লিতে ‘এমএস স্বামীনাথন জন্মশতবার্ষিকী’ উপলক্ষে এক সম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়ে মোদি বলেন, ‘আমাদের কাছে কৃষকদের স্বার্থই সবার আগে। ভারত কখনো কৃষক, মৎস্যজীবী বা খামারিদের স্বার্থে আপস করবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, এর জন্য বড় মূল্য দিতে হতে পারে, তবু আমরা তৈরি।’

মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৮.৫৫%
নিজস্ব প্রতিবেদক

টানা চার মাস কমার পর আবারও ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জুলাইয়ে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮.৫৫ শতাংশ, যা এর আগের মাস জুনে ছিল ৮.৪৮ শতাংশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিবিএস এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭.৫৬ শতাংশ, যা জুন মাসে ছিল ৭.৩৯ শতাংশ।
গত মার্চে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৩৫ শতাংশ, এরপর তা ধাপে ধাপে কমে আসে—এপ্রিলে ৯.১৭ শতাংশ, মে মাসে ৯.০৫ শতাংশ এবং জুনে নেমে আসে ৮.৪৮ শতাংশে, যা গত ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল। তবে জুলাইয়ে সেই নিম্নমুখী ধারা থেমে গিয়ে ফের ঊর্ধ্বমুখী হয়ে দাঁড়ায় ৮.৫৫ শতাংশে।
বিবিএস সূত্রে জানা গেছে, গত মাসে দেশের কিছু অঞ্চলে টানা বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে শাক-সবজি, ফলমূল ও চালের সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মূল্যস্ফীতির হার কমা মানেই কিন্তু পণ্যের দাম কমা নয়। বরং বোঝায় দামের ঊর্ধ্বগতির হার কিছুটা কমেছে। যেমন—২০২৪ সালের জুলাইয়ে যদি কোনো পণ্যের দাম হয় ১০০ টাকা, তবে ২০২৫ সালের একই মাসে সেই পণ্য কিনতে ৮.৫৫ শতাংশ বেশি অর্থাৎ ১০৮ টাকা ৫৫ পয়সা খরচ হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। মুদ্রানীতিতে সুদের হার বাড়ানোর পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে শুল্ক-কর কমিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, ডিমসহ গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যপণ্যের আমদানি নির্বিঘ্ন রাখতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে ভোক্তারা এখনো এর সুফল পায়নি।