সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীকে কোণঠাসা করে রেখেই প্রহসনমূলক তিনটি জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের বিজয় নিশ্চিত করেছিল। নির্বাচনের সময় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা পুলিশ কর্মকর্তাদের মতোই নির্বাচনী অপরাধের জন্য কাউকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করতে পারবেন—এই বিধান সে সময় ক্ষমতাসীনরা মেনে নিতে পারেনি। সশস্ত্র বাহিনীর ওই ক্ষমতাকে তারা তাদের ভোট লুটের অন্তরায় মনে করে এবং ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২’ সংশোধন করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞা থেকে প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগগুলোকে (সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী) বাদ দেওয়া হয়। এর ফলে নির্বাচনী অপরাধ নিয়ন্ত্রণে একজন আনসার সদস্যের যে ক্ষমতা ছিল সেনা সদস্যদের তা ছিল না।
এবার নির্বাচনে সেনাবাহিনীই ভরসা
- সেনাবাহিনীকে কোণঠাসা রেখেই প্রহসনের তিন জাতীয় নির্বাচন
- ১৬ বছর পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সংজ্ঞায় ফিরছে সশস্ত্র বাহিনী
কাজী হাফিজ

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, ‘২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনী নিয়োগের জন্য সরকারকে চিঠি দেয়।
এ ছাড়া বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে সেনাবাহিনীর যে অবস্থান তাতে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনীকেই প্রধান ভরসার স্থল হিসেবে দেখা হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল (স্টাফ কর্নেল) মো. শফিকুল ইসলাম ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে নির্দেশনা পেলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার জন্য সব ধরনের সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে সেনাবাহিনী।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন : নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য বেগম জেসমিন টুলি কালের কণ্ঠকে বলেন, ২০০১ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আরপিও সংশোধন করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগগুলো বা সশস্ত্র বাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের আরেক সদস্য ড. মো. আবদুল আলীম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনব্যবস্থায় সশস্ত্র বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। আজ যে ছবিসহ ভোটার তালিকা, এনআইডি এগুলো সশস্ত্র বাহিনীরই অবদান। সশস্ত্র বাহিনীর সহযোগিতা ছাড়া এই বিশাল কাজ করা সম্ভব ছিল না। দেশে যে কটি জাতীয় নির্বাচন অনেকাংশে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে সেগুলোতে সশস্ত্র বাহিনীর কার্যকর সহযোগিতা ছিল। কিন্তু ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তৎকালীন সরকার সেনাবাহিনীকে কার্যকরভাবে নির্বাচনী দায়িত্বে রাখতে চায়নি। কারণ সেনাবাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালনের সময় নির্বাচনী অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশের মতো কোনো দলের নেতাকর্মীদের চেনেন না। তাঁরা নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতহীনভাবে দায়িত্ব পালন করেন। নির্বাচনী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর এই অবস্থান ভোট লুটের অন্তরায়।
যেভাবে দূরে রাখা হয়েছিল সেনাবাহিনীকে : সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তাদের অনেকেই তাঁদের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলে আসছেন, গত ১৫-১৬ বছরে নির্বাচনের দায়িত্ব পালনে ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৯ থেকে ১৩১ ধারায় এবং সেনা বিধিমালা ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’-এর আওতায় সেনাবাহিনী মোতায়েন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা ছিল না। ম্যাজিস্ট্রেটদের অধীনে সেনাবাহিনী রাখলে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে না-ও হতে পারে। কারণ ম্যাজিস্ট্রেটরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হতে পারেন, অথবা তাঁদের ওপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে, যা সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষতাকে বিঘ্নিত করতে পারে। এর ফলে নির্বাচনপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা কমে যেতে পারে।
২০১৭ সালে কে এম নুরুল হুদা কমিশনের নির্বাচনী সংলাপে যোগ দিয়ে সাবেক কয়েকজন নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে থাকলে তাদের দায়িত্ব পালন সঠিক হবে না। তবে তাঁদের এই মতামত আমলে নেওয়া হয়নি।
এর আগে ২০১১ সালে ড. এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী আইন সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করে এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় আবারও সশস্ত্র বাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রাখে। বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ওই সংলাপে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, এ প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। পরবর্তী সময়ে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীকে ফের অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে অবস্থান নিতে পারেনি।
কাজী রকিবের নির্বাচন কমিশন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রহসনমূলক দশম সংসদ নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৯ থেকে ১৩১ ধারায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করে। তবে নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার বা প্রিজাইডিং অফিসারের চাহিদা ছাড়া সেনাবাহিনীর ভোটকেন্দ্রের ভেতর কিংবা ভোট গণনা কক্ষে কোনো প্রকার দায়িত্ব গ্রহণ করা নিষিদ্ধ রাখা হয়। কাজী রকিবের কমিশন ২০১৫ সালে ঢাকার দুই সিটি এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রথমে জানানো হয়, মহানগরীর ভেতর সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকবে। রিটার্নিং অফিসারের নির্দেশ পাওয়ামাত্র তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেবে। সেনা সদস্যদের সঙ্গে ১৬ জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা সেনাবাহিনীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবেন। কিন্তু পরে জানানো হয়, সেনাবাহিনী মূলত সেনানিবাসের অভ্যন্তরে রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে অবস্থান করবে এবং রিটার্নিং অফিসারের অনুরোধে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করবে। কিন্তু ব্যাপক অনিয়মের ওই ভোটে রিটার্নিং অফিসাররা সে ধরনের কোনো অনুরোধ করেননি বা সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নেননি।
তার আগে ২০১১ সালের অক্টোবরে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের তৎকালীন এ টি এম শামসুল হুদার নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের দুই দিন আগে সেনা নিয়োগ চেয়ে সরকারের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে চিঠি দিয়েছিল। এ বিষয়ে সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, নারায়ণগঞ্জে এমন কিছু হয়নি যে সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন ছিল। ওই ঘটনায় সে সময় সংবিধান প্রদত্ত নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিএনপির পক্ষে বলা হয়, ‘নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন না করে প্রধানমন্ত্রী এবং নির্বাচন কমিশন উভয়েই সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। এ জন্য তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে৷ এতে প্রমাণিত হয়েছে এই সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না। আর নির্বাচন কমিশনও সরকারের আজ্ঞাবহ।’ এই অবস্থায় নির্বাচন কমিশন কেন সেনা মোতায়েন হলো না, এর জবাব চেয়ে সরকারের কাছে চিঠি লেখে। কিন্তু জবাব মেলেনি। সে সময় ওই নির্বাচনে সেনা মোতায়েনে সরকারের নিষ্ক্রিয়তার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদনও হয়। রিট আবেদনে বলা হয়, সংবিধানের ১২০, ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রের প্রতিটি বিভাগ নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশনকে সহায়তা করতে বাধ্য। কিন্তু ওই রিট আবেদন থেকেও কোনো সুফল মেলেনি।
সম্পর্কিত খবর

মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী হত্যার প্রতিবাদ
সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকর্মী
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’র ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মীদের অংশগ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। গত রবিবার দুপুরে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় শুরু হওয়া বিক্ষোভ মিছিল শাহবাগ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মিটফোর্ড হাসপাতালে গিয়ে শেষ হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুর ১টার দিকে ধানমণ্ডির আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাবে উপস্থিত হয়ে ১০ মিনিট অবস্থান করেন। এরপর তাঁরা মিছিল নিয়ে শাহবাগ হয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে যান।
এ সময় হাসপাতাল ও আশপাশে থাকা বিএনপির ব্যানার ছিঁড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় কয়েকজনকে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবিসংবলিত ব্যানার পদদলিত করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার পর অনেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীর ছদ্মবেশে রাজপথে সক্রিয় হচ্ছে। কেউ কেউ আবার বিএনপির প্ল্যাটফর্মে ঢুকে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে।
রাজনৈতিক পরিচয় : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিক্ষোভের বেশ কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া ‘আইডিয়াল কলেজ শিক্ষার্থী’ ইয়ামিনকে তাঁর সহপাঠীরা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে চিহ্নিত করেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলায়। আগেও তাঁকে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে।
নেপথ্যে রাজনৈতিক হিসাব : রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. দিলারা চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এটি রাজনৈতিক দলগুলোর ভিত নষ্ট করার একটি অপচেষ্টা। এর ফলে আবারও ১/১১-এর মতো সংকট সৃষ্টি হতে পারে। রাজনৈতিক দলে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ বাড়ছে। সোহাগ, যিনি আগে হাজি সেলিমের সঙ্গে ছিলেন, এখন বিএনপির কর্মী। বিএনপি যদি নিজেকে রক্ষা করতে চায়, তাহলে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে।’
এ বিষয়ে জানতে কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদারের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
জানতে চাইলে ডিএমপি উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওই মিছিলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের উপস্থিতির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে নিষিদ্ধ যেকোনো দলের কার্যক্রম রুখে দিতে পুলিশ সব সময় প্রস্তুত রয়েছে। এর আগেও রাজধানীতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে যারা ঝটিকা মিছিল করেছে, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এই বিষয়টিও আমরা খতিয়ে দেখব।’
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খলীল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যারা গুপ্ত রাজনীতি করে এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করতে চায় তারা জল ঘোলা করতে এমন কর্মকাণ্ড করছে। তারা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারমান তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তিমূলক ভিডিও করেছে। তাদের ব্যানার পদদলিত করে আগুন জ্বালিয়েছে। যারা স্বৈরাচারের আমলে তাদের লুঙ্গির নিচে ছিল, তারাই এখন ঘোলা জলে মাছ শিকার করা চেষ্টা করছে। জনগণের কাছে তাদের অবস্থান না থাকার কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পেছনে থেকে গুপ্ত হামলা করার চেষ্টা করছে।’
তিনি বলেন, “পুলিশের তদন্তে এসেছে ‘ব্যাবসায়িক দ্বন্দ্ব’ থেকে সোহাগ হত্যাকাণ্ড। এর পরও আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে শোক জানিয়েছি, এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছি। একই সঙ্গে দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার জোর দাবিও জানিয়েছি।”

বড় ধরনের সহিংস অপরাধের সংখ্যা বাড়েনি : প্রেস উইং
১০ মাসে ৩৫৫৪ খুন, ৪১০৫ ধর্ষণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

গত ১০ মাসে (২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত) দেশে তিন হাজার ৫৫৪ জন খুনের ঘটনা ঘটেছে। একই সময়ে ডাকাতি হয়েছে ৬১০টি, দস্যুতা এক হাজার ৫২৬টি, দাঙ্গা ৯৭টি, ধর্ষণ চার হাজার ১০৫টি, এসিড নিক্ষেপ পাঁচটি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১২ হাজার ৭২৬টি, অপহরণ ৮১৯টি, সিঁধেল চুরি দুই হাজার ৩০৪টি, চুরি সাত হাজার ৩১০টি এবং এই সময়ে রুজুকৃত মামলার সংখ্যা এক লাখ ৪৪ হাজার ৯৫৫টি।
গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ১০ মাসের অপরাধ পরিসংখ্যানে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এসব পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে।
অপরাধ পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে দেশে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৩৬৭টি, খুন হয়েছে এক হাজার ৯৩৩টি এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে দুই হাজার ৭৪৪টি। এ সময় নারী নির্যাতন ছয় হাজার ১৪৪টি এবং শিশু নির্যাতনের দুই হাজার ১৫৯টি ঘটনা ঘটেছে।
এর আগের বছর ২০২৪ সালে ডাকাতি হয়েছিল ৪৯০টি, খুন চার হাজার ১১৪টি, ধর্ষণ চার হাজার ৩৯৪টি, নারী নির্যাতন ১০ হাজার ১৯৮টি এবং শিশু নির্যাতন দুই হাজার ৯৬৪টি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, চলতি বছর দেশে অপরাধের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন খবরে জনমনে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সরকারি অপরাধ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছর বড় ধরনের অপরাধের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে—এমন দাবি সঠিক নয়। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ মাসে বড় ধরনের অপরাধের প্রবণতা স্থিতিশীল রয়েছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, পরিসংখ্যানে বড় ধরনের অপরাধের দ্রুত বাড়ার কোনো লক্ষণ নেই। বাস্তবে বেশির ভাগ গুরুতর অপরাধের হার কমছে বা একই পর্যায়ে রয়েছে।
প্রেস উইং নাগরিকদের প্রতি সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে বলেছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ওপর আস্থা রাখতে হবে। কারণ অপরাধের হার মোটামুটি স্থিতিশীল, যাতে বোঝা যায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

মা-সন্তানসহ ৫ জেলায় সাতজনকে হত্যা
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

ময়মনসিংহের ভালুকায় দুই সন্তানসহ মাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জে শিশুকে হত্যা করে ঘরে লুকিয়ে রেখেছে সত্মা। এ নিয়ে দেশের পাঁচ জেলায় সাতজনকে খুন করা হয়েছে। আর তিন জেলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে চারজনের লাশ।
ভালুকা (ময়মনসিংহ) : পৌর এলাকার পনাশাইল রোডে এক ভাড়া বাসায় মা ও দুই সন্তানকে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলো নেত্রকোনার কেন্দুয়ার রফিকুল ইসলামের স্ত্রী ময়না বেগম (২৫), মেয়ে রাইসা (৭) ও ছেলে নীরব (২)।
স্থানীয় ও থানা সূত্রে জানা যায়, রফিকুল ইসলাম এখানে ভাড়া থেকে ভালুকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। রবিবার রাত ৮টার সময় তিনি কর্মস্থলে যান এবং গতকাল সকালে ফিরে বাসার বারান্দার দরজা তালাবদ্ধ দেখেন।
রফিকুলের ভাই নজরুল ইসলাম একই বাসায় পাশাপাশি কক্ষে থাকেন। নিজ এলাকার একটি হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামি নজরুল ভালুকায় অটো চালাতেন। ঘটনার পর থেকে তিনি নিরুদ্দেশ, তাঁর মোবাইল ফোনটিও বন্ধ।
সিরাজগঞ্জ : কামারখন্দ উপজেলায় সাত বছর বয়সী এক কন্যাশিশুকে হত্যার পর বস্তাবন্দি করে ঘরে লুকিয়ে রেখে এক সত্মা পালিয়ে যান। রবিবার রাত ১০টার দিকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে ওই রাতেই সত্মাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নিহত শিশু হাজেরা খাতুন উপজেলার কুটিরচর এলাকার হারুনার রশিদের মেয়ে। শিশুটির দাদি মনোয়ারা খাতুন জানান, রবিবার দুপুরে শিশু হাজেরা স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
এদিকে সিরাজগঞ্জ সদর ও তাড়াশ উপজেলা থেকে গতকাল সকালে দুই যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সদরে উদ্ধার হওয়া আনুমানিক ৩৫ বছর বয়সী যুবকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। সদর থানার এসআই শফিউল আলম জানান, তাঁর মাথা ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন আছে।
অন্যদিকে তাড়াশে নিহত সেলুনকর্মী শান্ত (২০) ঈশ্বরপুর গ্রামের শরিফুল ইসলামের ছেলে। তাড়াশ থানার ওসি জিয়াউর রহমান জানান, সকালে নিজ ঘর থেকে শান্তর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বারহাট্টা থানার ওসি কামরুল হাসান জানান, আহাদুলের সঙ্গে প্রতিবেশী মনহর আলী ও তাঁর চার ছেলে আলমগীর, অনিক, নির্ঝর ও বাবুর জমিসংক্রান্ত বিরোধ ছিল। তার জেরেই ওরা ঢাকা থেকে এসে হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
চট্টগ্রাম : পতেঙ্গা থানার কাটগড় এলাকায় পারিবারিক কলহের জেরে ছুরিকাঘাতে ফেরদৌসী আক্তার নামের এক নারী খুন হয়েছেন। রবিবার রাত ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ফেরদৌসী এলাকার লোকমান হোসেনের স্ত্রী। নিহতের স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিক কলহের জেরে ফেরদৌসীর দেবর তাঁর ঘাড়, পিঠ ও পেটে ছুরিকাঘাত করে।
নিহতের ভাই মামুন খান বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে আমার বোনকে তাঁর স্বামী, শাশুড়ি পরিবারের লোকেরা নির্যাতন করে আসছিল। আমরা একটি সিসিটিভির ফুটেজে দেখেছি, লোকমানের বড় ভাই সোলেমান ও ছোট ভাই রনির হাতে ছুরি। আমরা খুনিদের বিচার চাই।’
ঘটনার পর ফেরদৌসীর স্বামী লোকমানকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। শ্বশুরবাড়ির বাকি লোকজন পলাতক।
বারহাট্টা (নেত্রকোনা) : জমিসংক্রান্ত বিরোধে আহাদুল মিয়া (২৬) নামের এক যুবককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল দুপুরে তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে রবিবার রাতে উপজেলার বাউশী ইউনিয়নের শাসনউড়া গ্রামে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। আহাদুল মিয়া ওই গ্রামের সিদ্দিক মিয়ার ছেলে।
নরসিংদী : এক মাদক কারবারির বাড়ি থেকে সাজিদ হোসেন (২২) নামে এক তরুণের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের বাগহাটা টেকপাড়া গ্রামে দুলালের বাড়ি থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ বলছে, নিহত যুবকের বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। আবার যার বাড়ি থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে তারাও চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তবে নিহতর পরিবারের অভিযোগ, মাদক ব্যবসায়ী দুলালের বাড়িতে নির্যাতন করে সাজিদকে হত্যা করা হয়েছে।
পাবনা : পুকুরে ভাসমান অবস্থায় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে শহরের লাইব্রেরি বাজার এলাকার কলাবাগান কলোনির মিঠুর পুকুর থেকে এ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত যুবকের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তবে আনুমানিক বয়স হবে ৪০ বছর।
গাজীপুর : নিখোঁজের ছয় দিন পর এক শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বিকেলে মহানগরীর ধীরাশ্রম এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত নাবিলা কানিজ সাবা ধীরাশ্রমের দাখিনখান এলাকার নাসির মিয়ার মেয়ে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার শিশুটি বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে সন্ধান না পেয়ে রাতে শিশুটির মা খাদিজা বেগম সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। গতকাল বাড়ির পাশে ঝোপের ভেতর থেকে দুর্গন্ধ বের হতে থাকলে স্থানীয়রা বস্তাটির সন্ধান পায়। বস্তা খুলে সাবার গলিত লাশ পাওয়া যায়।

ফাঁকিবাজদের আতঙ্ক আয়কর গোয়েন্দা
হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন ১৮৩ ভিআইপি
নিজস্ব প্রতিবেদক

যাত্রা শুরুর মাত্র সাত মাসের মধ্যেই কর ফাঁকিবাজদের আতঙ্ক হয়ে উঠেছে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। এ সময় ১৮৩ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এক হাজার ৮৭৪ কোটি টাকার কর ফাঁকি উদঘাটন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে আদায় হয়েছে ১১৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বাকি টাকা আদায়ের প্রচেষ্টাও চলছে বলে জানা গেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, এক হাজার ৭৮৮টি বিভিন্ন শ্রেণির ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি ও অর্থপাচার মামলা তদন্ত করছে আয়কর গোয়েন্দা। এঁদের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, খেলোয়াড়, অভিনেতা-অভিনেত্রী, ডাক্তার, আইনজীবী, প্রকৌশলী, শিক্ষক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সব পর্যায়ের দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি রয়েছেন। এনবিআরের অধীন ৪১টি কর অঞ্চল ও দেশের ৬৪ জেলার করদাতারাও এ কার্যক্রমের আওতায় রয়েছেন।
এয়ার টিকিট সিন্ডিকেট, পরিবহন ব্যবসায়ী, শেয়ারবাজার, আমদানি ও মজুদকারী, চালান জালিয়াতকারী, জুয়াড়ি, ক্ষমতার অপব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির পাশাপাশি কমেছে জনদুর্ভোগ।
আয়কর গোয়েন্দার প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের ১৮ জানুয়ারি। তবে কর্মচারী নিয়োগ ও ভাড়া অফিসে স্থানান্তরের পর মূল কার্যক্রম চালু হয়েছিল ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর।
কর প্রশাসনে দক্ষ গোয়েন্দা গঠন, কর ফাঁকি, অর্থপাচার, বিভিন্ন আর্থিক অপরাধ শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া, রাজস্ব পুনরুদ্ধার করা, স্বচ্ছতা-জবাবদিহি, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, কর ফাঁকির তদন্তে অর্থের উৎস যাচাই করা ও দায়িত্বশীল অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে যৌথ কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্যে এই বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
জানা গেছে, বিশেষায়িত এই গোয়েন্দা ইউনিট অল্প সময়ের ব্যবধানে সফলতা দেখালেও তার নেই প্রয়োজনীয় জনবল ও স্থায়ী অফিস ভবন। শুরুতে এনবিআর ভবনে অস্থায়ী কার্যালয় থাকলেও পরে ভাড়া করা অফিসে যাবতীয় কাজ করছে রাজস্ব ফাঁকি ঠেকিয়ে দেওয়া প্রতিষ্ঠানটি।
জানতে চাইলে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের কমিশনার মো. আবদুর রকিব কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আয়কর গোয়েন্দা অল্প সময় ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই ইউনিটের সদস্যসংখ্যা কম হলেও তাঁরা মেধাবী ও পরিশ্রমী। তাঁদের কাজের প্রতি একাগ্রতা থাকায় আমরা সামগ্রিকভাবে ভালো করতে পারছি। তবে জনবল সংকট, প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট পেলে এই ইউনিট দেশের জন্য আরো অনেক কিছু করতে পারবে। আমরা চাই দেশে একটি নতুন কর সংস্কৃতি। যেখানে কেউ কর ফাঁকি দিতে পারবেন না।’
জানা গেছে, ভবিষ্যতে এই ইউনিটের জন্য ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপনের চিন্তা করা হচ্ছে। কর ফাঁকি-অর্থপাচার রোধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক, প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে। এ ছাড়া কর ফাঁকিবাজদের ডেটাবেইস তৈরি, নিয়মিত তল্লাশি-জব্দকরণ অভিযান পরিচালনা, কর নেটের বাইরে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কাজও করবে এই ইউনিট।