রাষ্ট্রের সংস্কার প্রশ্নে চার্টার বা সনদ তৈরির লক্ষ্যে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সূচনা বৈঠকের মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজ শুরু হয়। এর প্রায় সাড়ে চার মাস পরে গতকাল রবিবার এই কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বিভিন্ন বিষয়ে অগ্রগতি হলেও সত্যি কথা হচ্ছে, আশাব্যঞ্জক অগ্রগতির ক্ষেত্রে আমরা খানিকটা পিছিয়ে আছি।’ জুলাই ঘোষণা সম্পর্কে গত ১০ মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত হিসেবে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণা চূড়ান্ত করে প্রকাশ করা হবে।
ঐকমত্য নিয়ে ধোঁয়াশা
- কাজ শুরুর সাড়ে চার মাস পর কমিশনের শঙ্কা প্রকাশ
কাজী হাফিজ

রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ‘নিয়ত’ কী, সেই প্রশ্নও তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। গত শনিবার ঢাকার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “সংস্কার এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে আমি মাননীয় সংস্কৃতি উপদেষ্টাকে বলছিলাম, একটা কবিতাই লিখে ফেলেন, ‘হে সংস্কার তোমাকে পাওয়ার জন্য, আর কতকাল আলাপ-আলোচনা করিবে’।” সালাহউদ্দিন আহমদ গতকালও ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় দফার সপ্তম দিনের বৈঠকের মাঝে সাংবাদিকদের বলেন, ঐকমত্য কিভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় হবে তা ঠিক করতে হবে। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে সেসব বিষয়ে সনদ করা যায়, যেগুলোতে হবে না সেগুলো বাস্তবায়ন হবে না।
গতকালের সংলাপ শেষে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘শতভাগ একমত হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়াটা প্রায় অসম্ভব।’
ঐকমত্য কমিশন যাদের সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যে পৌঁছতে যাচ্ছে তারা দেশের শতভাগ মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করে কি না সেই প্রশ্নও উঠেছে। গত ১৭ জুন এ প্রশ্ন তোলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আরিফুল ইসলাম। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে তিন ধরনের অংশীজন ছিল।
সার্বিক এই পরিস্থিতি সম্পর্কে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মানেই তো তাদের বিভিন্ন আদর্শ ও পরিকল্পনা আছে। এদের সবাইকে এক জায়গায় আনাটা যে সম্ভব হবে না তা প্রথম থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। ডান দল যেটা ভাববে, বাম দল সেটা ভাববে না। ইসলামী দল যেটা ভাববে, মধ্যপন্থী দল সেটা ভাববে না। সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ যেসব বিষয় সবই তো রাজনীতির বিষয়। যদি সমাজকল্যাণমূলক বিষয় হতো, যেমন বেকার ভাতা দেওয়া, দারিদ্র্য ভাতা দেওয়া, তাহলে ঐকমত্য হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। সংবিধান হলো রাজনৈতিক আইন। সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য হওয়ার সম্ভাবনা প্রথম থেকেই ছিল না। তার পরও সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে যেসব প্রস্তাব করা হয়েছে, একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী কত দিন থাকতে পারবেন তার সময়সীমা নির্ধারণ, এটা তো সংসদীয় ব্যবস্থায় দুনিয়ার কোথাও নেই। এ ধরনের সময়সীমা নির্ধারণ রাষ্ট্রপতিশাসিত শাসনব্যবস্থায় আছে। সে ক্ষেত্রে দুনিয়ার কোথাও নেই এমন ব্যবস্থা চালু করার প্রস্তাব করলে তো হয় না। আবার প্রাদেশিক সরকার নেই, কিন্তু দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটাও দুনিয়ার কোথাও নেই। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ সেখানেই আছে, যেখানে প্রাদেশিক সরকার আছে। এসব বিষয়ে ঐকমত্য হলেও তা পাস করাতে হবে সংসদের ভোটে। আমরা কথার কথায় যদি ধরে নিই, নির্বাচনে একটি দল ১৭০ আসন পেয়ে জিতল এবং সেই দলের নেতা প্রধানমন্ত্রী হলেন। এরপর বিরোধী দলগুলো ঐকমত্যের কথা বলে দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকার পক্ষে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব রাখল। তখন ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যরা ওই সংশোধনীর পক্ষে ভোট না-ও দিতে পারেন। রাজনৈতিক বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য হওয়ার সম্ভাবনা না থাকার পরও এ বিষয়ে সময়ক্ষেপণ ছাড়া আর কিছু লাভ হবে বলে আমি মনে করি না। অন্য সব সংস্কার প্রস্তাবের কোনো কিছুই বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে থাকতে হবে। রাজনৈতিক দল যখন ক্ষমতায় আসবে তখন এগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে।’
সংবিধান সংশোধন বা সংস্কার প্রস্তাব সম্পর্কে শাহদীন মালিক বলেন, ‘বলা হচ্ছে অনাস্থা প্রস্তাব আর বাজেটের বিষয় ছাড়া ৭০ অনুচ্ছেদ থাকবে না। তাহলে তো সংসদে সরকারের কোনো আইন পাস করার সম্ভাবনাও কমে যাবে। সরকারি দলের সংসদ সদস্যদের সরকারের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিতে উৎসাহিত করা যাবে। সরকার স্থবির হয়ে যাবে। হর্সট্রেডিং হতে পারে। এখন রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের অবস্থান বেশি। তাঁদের তেমন আদর্শিক ভিত্তি নেই। তাঁদের আদর্শিত ভিত্তি হলো অর্থ কামানো। তাঁদের হর্সট্রেডিং করানোও সহজ হবে। আমি আবারও বলি, সংবিধান হলো প্রধান রাজনৈতিক আইন। এই আইন সংস্কারের বিষয়টি আগে থেকে যদি রাজনৈতিক দলের এজেন্ডায় না থাকে, তাহলে ফল ইতিবাচক হবে না। সব ঘরানার লোকদের এক জায়গায় বসিয়ে ঐকমত্য করা সম্ভব হবে—এই ধারণাটাই ভুল। এই ভুল ধারণা থেকেই ঐকমত্যের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এটা এখন ক্রমশ প্রমাণিত হচ্ছে।’
জুলাই সনদ ও ঘোষণা সম্পর্কে তিনি বলেন, “এই সনদ ও ঘোষণার আইনগত ভিত্তি হওয়া সম্ভব না। সবাই এতে স্বাক্ষর করল, কিন্তু এটি বাস্তবায়নের তো কোনো নিশ্চয়তা নেই। আইনের চোখে এটি কেবল একটি ঘোষণা। এই ঘোষণা কেউ বাস্তবায়ন না করলে তার বিরুদ্ধে আপনি তেমন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবেন না। ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র যেটি ছিল, সেটি সে সময় মুজিবনগরে জাতীয় সংসদ ও প্রাদেশিক সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা করেছিলেন। এর প্রথমেই বলা আছে, ‘যেহেতু ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে শাসনতন্ত্র রচনার উদ্দেশ্যে প্রতিনিধি নির্বাচন করা হয়েছিল এবং যেহেতু এই নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ ১৬৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ দলীয় ১৬৭ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছিল।’ ঘোষণাপত্রে এমনটাই বলা হয় যে নির্বাচিত হওয়ায় জনগণ তাঁদের দায়িত্ব দিয়েছে। সেই দায়িত্ব থেকেই বাংলাদেশকে স্বাধীন ঘোষণা করলাম। এর আইনগত ভিত্তি ছিল। নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই এটা করেন। সে সময় নির্বাচিত প্রতিনিধিরা প্রায় সবাই এক দলের ছিলেন এবং সে কারণেই ওই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু এখন তো অনেক দল এবং ঘোষণার আগেই ভিন্নমত দেখা যাচ্ছে। এর পরও জুলাই সনদে ১০০ রাজনৈতিক দল সই করলেও তার আইনগত ভিত্তি হবে না। ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের বিষয়টিই হয়তো এখন মাথায় ঘুরছে। কিন্তু প্রায় আড়াই শ বছর আগে ফ্রান্সের বাস্তবতার সঙ্গে আমাদের বাস্তবতার মিল নেই।”
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদের মতে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন শুধু সংবিধান সংস্কার, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ—এগুলো নিয়েই পড়ে আছে। গতকাল তিনি কালের কণ্ঠের কাছে এই মন্তব্য করে বলেন, ‘অন্যান্য সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে কোনো আলাপ-আলোচনাই হচ্ছে না। আমি নিজে সংস্কার কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে প্রশ্ন করি। কিন্তু তেমন সদুত্তর পাইনি।’
তিনি আরো বলেন, কয়েকটি দল জাতীয় সরকার নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দাবি করছে। কিন্তু স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সংস্কার সম্পন্ন না করে নির্বাচন হওয়া উচিত হবে না। স্থানীয় সরকার আইন সংস্কার না করে নির্বাচন করলে পাঁচটি নির্বাচন করতে হবে। আর আইন সংশোধন করে নির্বাচন করলে একই সঙ্গে সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা সম্ভব। কিন্তু এ বিষয়ে কেউ কোনো কথা বলছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বীর আহমেদ মনে করেন, সংস্কার নিয়ে যে সংশয় দেখা দেবে, ধোঁয়াশা সৃষ্টি হবে, বাস্তবতা বিবেচনায় এটাই স্বাভাবিক। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উনারা (ঐকমত্য কমিশন) যেটা চান সেটাই হতে হবে এই অ্যাপ্রোচটাই ভুল। উনারা নিশ্চয় ভালো চান। কিন্তু যাঁরা বাস্তবায়ন করবেন তাঁদের মতামতটাও গুরুত্ব দিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে দলের ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তারা এমন প্রস্তাবে রাজি হবে না, যে প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে তাদের সরকারের ক্ষমতা খর্ব হতে পারে। যেসব দল এখন মন-ভোলানো কথা বলছে, তারাও ক্ষমতায় গেলে আধিপত্য ধরে রাখার চেষ্টা করবে। সবাই ক্ষমতায় যেতে চায় এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যা যা করার তা করবে। দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতায় যাওয়ার কল্পনাবিলাস প্রবল। খুব ভালো তাদের কাছে আশা করা যায় না।’
সম্পর্কিত খবর

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল
সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে আবারও ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে
বিশেষ প্রতিনিধি

প্রায় দুই দশক পর জাতীয় সমাবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আগামীকাল শনিবার ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সমাবেশ হবে। বৃহৎ পরিসরে আয়োজিত এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত দলটির নেতাকর্মীরা।
সমাবেশ উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জামায়াত।
তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মৌলিক সংস্কার জরুরি। কোনো ষড়যন্ত্র যেন এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। অংশ নেবেন ইসলামী দলগুলোর নেতারা, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা, জুলাই আন্দোলনে শহীদদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিরা।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে আমাদের দল নানা নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসের রাজনৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে বাকস্বাধীনতা ও সাংবিধানিক অধিকার কিছুটা ফিরে এসেছে।
তিনি জানান, নির্বাচন সামনে রেখে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে ফ্যাসিবাদী হামলায় নিহত ব্যক্তিদের বিচারে দৃশ্যমান অগ্রগতি চান তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে একটি ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াত। দলটির পক্ষ থেকে এ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।
জুলাই মাসে নিহত ও আহতদের পুনর্বাসন এখনো সম্পূর্ণ হয়নি বলেও দাবি করেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল।
তিনি জানান, সমাবেশ সফল করতে একটি বাস্তবায়ন কমিটিসহ আটটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। লিফলেট, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ছাড়াও ভ্রাম্যমাণ মাইক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে সমাবেশের প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
সমাবেশে থাকবে ২০টি পয়েন্টে প্রায় ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক। ঢাকার আশপাশ থেকে আগতদের জন্য ১৫টি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
সমাবেশস্থলের ভেতরে ও বাইরে ১৫টি মেডিক্যাল বুথ থাকবে, প্রতিটিতে থাকবেন দুজন করে চিকিৎসক, জরুরি ওষুধ এবং অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা থাকবে।
ড্রোন ও ক্যামেরার মাধ্যমে ভিডিও ধারণ ও সরাসরি সম্প্র্রচারেরও আয়োজন থাকবে—এলইডি স্ক্রিন ছাড়াও ফেসবুক ও ইউটিউবেও সম্প্রচার করা হবে।
সমাবেশের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলেও জানান গোলাম পরওয়ার।
সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনি বলেন, ‘সারা দেশ থেকে মানুষ রেল, সড়ক ও নৌপথে সমাবেশে অংশ নিতে আসবে। এতে নগরবাসীর কিছুটা দুর্ভোগ হতে পারে। আমরা তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।’ তিনি জানান, সমাবেশ শুরু হবে দুপুর ২টায়। তবে সকাল ১০টা থেকেই সাংস্কৃতিক পরিবেশনা চলবে।
এ সময় গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনারও নিন্দা জানান গোলাম পরওয়ার। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ব্যর্থতার অভিযোগও করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের সাত দফা দাবিও তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো—অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ; সব গণহত্যার বিচার; মৌলিক রাষ্ট্রীয় সংস্কার; ‘জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র’ বাস্তবায়ন; ‘জুলাই শহীদ’ ও আহতদের পুনর্বাসন; পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন এবং এক কোটির বেশি প্রবাসী ভোটারের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মা’ছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, মতিউর রহমান আকন্দ, নূরুল ইসলাম বুলবুল, মো. সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।

তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোটার তালিকা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এর মাধ্যমে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ পাবেন যোগ্য নাগরিকরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদে খসড়াটি অনুমোদন দেওয়া হয়। তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক।
সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ আহম্মদ বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, অর্থাৎ যাঁদের বয়স ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ১৮ বছর হয়, তাঁরা পরবর্তী জানুয়ারি মাসের হালনাগাদ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। নির্বাচন কমিশন প্রতিবছরের ২ জানুয়ারি ওই খসড়া ভোটার তালিকা এবং ২ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, পরবর্তী নির্বাচনের আগে যেসব নাগরিকের বয়স ১৮ বছর হয়, অর্থাৎ ভোটার হওয়ার জন্য যোগ্য হন, তাঁরা ওই নির্বাচনে ভোটাধিকারের সুযোগ পান না।
ফয়েজ আহম্মদ আরো বলেন, এই বাস্তবতায় নির্বাচন কমিশন ভোটের তফসিল ঘোষণার আগে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, তাঁদের ভোটার তালিকায় নিয়ে আসাকে যৌক্তিক মনে করে। এ বিষয়ে উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ধরুন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন। তার সর্বোচ্চ দুই মাস আগে তফসিল ঘোষিত হয়।
ফয়েজ আহম্মদ বলেন, ‘আজ যে অধ্যাদেশের খসড়াটি অনুমোদন করা হলো, এর ফলে যখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে, তার অন্তত এক মাস আগ পর্যন্ত যেসব ব্যক্তির বয়স ১৮ বছর হবে, তাঁরা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন।’
মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ : গতকাল সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন করেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, অনেকের কিডনি ড্যামেজ হয়, অনেকে চোখে দেখতে পায় না, কর্নিয়া সংযোজন হলে অন্ধত্ব দূর করা যায়, এসব বিষয়ে বাংলাদেশের যে আইন ছিল সেটা অনেক দিন থেকে আপডেট হয়নি।
তিনি বলেন, নতুন এই অধ্যাদেশের ফলে অঙ্গ প্রতিস্থাপনটা খুব সহজ হবে। আগে যেমন ছিল অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য খুবই কাছের যেমন—ভাই, বোন, মা-বাবা থেকে নিতে পারতেন, এখন এটাকে একটু সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
অঙ্গ দান করার ক্ষেত্রে নতুন করে কাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, আগে যেমন ভাতিজা, ভাগিনা তারা অঙ্গ দান করতে পারত না। এখন তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, মানে পরিধি বাড়ানো হয়েছে।
প্রেস সচিব আরো বলেন, ‘এর ফলে আমরা মনে করি, বাংলাদেশের অনেককেই এখন কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য আর বিদেশে যাওয়া লাগবে না। বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোও এই সার্ভিস দিতে পারবে। আমরা মনে করি, এটা বাংলাদেশের জন্য যুগান্তকারী আইন।’
একই সভায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
গোয়েন্দা তথ্য ছিল, তবে এত পরিমাণ যে হবে সে তথ্য হয়তো ছিল না
নিজস্ব প্রতিবেদক

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রাকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি এখন অনেকটা শান্ত ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গোপালগঞ্জে গত বুধবার যে ঘটনা ঘটেছে, সে সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য ছিল কি না, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গোয়েন্দা তথ্য ছিল। তবে এত পরিমাণ যে হবে, ওই তথ্য হয়তো ছিল না।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা এসব তথ্য জানান।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গতকাল (বুধবার) এনসিপির সমাবেশে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার পর গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তিনি বলেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৫ জনকে আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এ ঘটনায় আমাদের ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে এনসিপি নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে এ বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ভবিষ্যতে আর যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, যত দিন পর্যন্ত সব অপরাধী ধরা না পড়বে, তত দিন পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। উপদেষ্টা এ সময় গোপালগঞ্জের ঘটনা লাইভ করায় সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট টিভি চ্যানেলগুলোকে ধন্যবাদ জানান। এর আগে উপদেষ্টা রাজধানীর রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে গোপালগঞ্জের ঘটনায় আহত পুলিশ সদস্যদের শারীরিক অবস্থা দেখতে যান।

আ. লীগ আমলের ৯৬ পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল
নিজস্ব প্রতিবেদক

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিবন্ধিত ৯৬টি পর্যবেক্ষক সংস্থার সব নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম।
তিনি বলেন, নতুন নীতিমালা জারি করা হয়েছে এবং আগের নীতিমালা বাতিল হয়েছে। তাই আগের নীতিমালার অধীন নিবন্ধিত সব পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেছে।
২০২৩ সালে দুই দফায় ৯৬ সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ নিবন্ধন দেওয়া হয়। এসব সংস্থার বেশির ভাগই ছিল নতুন। আগে কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা ছিল না।
একাধিক সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ছিল। সে সময় বেশ কিছু অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন পেতে উৎসাহ বোধ করেনি বা আবেদন করলেও নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সে সময় ব্যাপক সমালোচনা হয়।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে স্বচ্ছতা আনতে আগের সব পর্যবেক্ষক সংস্থাকেই বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে নতুন করে নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়। গতকাল সেই নতুন নীতিমালা-২০২৫ জারি ও ২০২৩ সালের নীতিমালা বাতিল করা হয়েছে। ফলে আগের নীতিমালা অনুসারে নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর নিবন্ধনও বাতিল করা হয়েছে।