ঢাকা, মঙ্গলবার ২২ জুলাই ২০২৫
৬ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৬ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, মঙ্গলবার ২২ জুলাই ২০২৫
৬ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৬ মহররম ১৪৪৭

লাল ফিতায় বন্দি ঋণের সহায়তা ফাইল

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
লাল ফিতায় বন্দি ঋণের সহায়তা ফাইল

বড় ঋণের সহায়তায় কমিটি গঠনের সাড়ে পাঁচ মাসেও কোনো অগ্রগতি নেই। সময় চলে যাচ্ছে যাচাই-বাছাইয়ে। এ সময় প্রায় এক হাজার ২৫০টি আবেদন জমা পড়লেও কমিটি এখন পর্যন্ত যাচাই-বাছাই করেছে মাত্র ১০০টি। তবে ১০০ ফাইল যাচাই-বাছাই করলেও এখনো একটি ফাইলেরও চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করতে পারেনি কমিটি।

ফলে বড় বড় শিল্প গ্রুপগুলো অনিচ্ছাকৃত খেলাপি হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাঙ্ক্ষিত সহায়তা না পেয়ে আরো রুগ্ণ হয়ে পড়ছে। কোনো কোনোটি বন্ধ হয়ে বিপুলসংখ্যক কর্মীর চাকরি হারানোর ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় গতি হারানোর পেছনে সদ্য সাবেক কমিটির প্রধান মেজবাউল হকের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

তথ্য-উপাত্ত বলছে, দেশের শিল্প খাত চরম সংকটের মুখে রয়েছে।

ক্ষমতার পালাবদল, রাজনৈতিক অস্থিরতা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি, ঋণের উচ্চসুদ, ডলারের লাগামহীন দর, আস্থাহীনতাসহ নানান কারণে মন্দা সময় পার করছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য শিল্প খাত। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের শর্তের খড়্গ। সংস্থাটি ছয় মাসের পরিবর্তে ঋণের কিস্তি শোধের সময়সীমা তিন মাস করায় খেলাপি ঋণ এক লাফে অনেক বেড়ে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন প্রকৃত শিল্পোদ্যোক্তারা।
ব্যবসায় মন্দার কারণে তাঁরা ঠিকমতো কিস্তি দিতে পারছেন না। এতে তাঁদের আইনের মারপ্যাঁচে ফেলে খেলাপি হিসেবে দেখানো হচ্ছে। সময়ের আগেই খেলাপি হয়ে পড়ায় অনেকের শিল্প-কারখানা চালু রাখা, ব্যবসা চালিয়ে নেওয়া বা স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখাই কঠিন হচ্ছে। এ ঘটনা ঘটেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় অনেক শিল্প গ্রুপের ক্ষেত্রেও। যাদের উৎপাদন সক্ষমতা অনেক বেশি, যেখানে বিপুলসংখ্যক লোক কাজ করে এবং তারা সরকারকে মোটা অঙ্কের রাজস্ব দেয়।
এসব প্রতিষ্ঠানের অনিচ্ছাকৃত খেলাপি হয়ে পড়ায় তাদের শিল্প এগিয়ে নেওয়া এখন দুরূহ হয়ে পড়ছে।

বিষয়টি সরকারকেও ভাবিয়ে তোলে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৫০ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে এমন বড় বড় শিল্প গ্রুপের অনিচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণের পর্যালোচনা করে তাদের বিশেষ নীতি সহায়তা দিতে একটি কমিটি করে দেয়। ওই কমিটির কাজ হলো কারা সত্যিকার অর্থে নীতি সহায়তা পাওয়ার যোগ্যএমন ঋণগ্রহীতা চিহ্নিত করা, যাতে তাদের ঋণ সহায়তা দিলে তারা শিল্প-কারখানা স্বাভাবিক রাখতে পারবে।

কমিটি গঠনের পর তারা ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতাদের আবেদন করার আহবান জানায়। এতে বিপুল সাড়া পড়ে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ হিসাবে গত সাড়ে পাঁচ মাসে আবেদন জমা পড়েছে এক হাজার ২৫৩টি। এর মানে, অন্তত সাড়ে ১২শ শিল্প প্রতিষ্ঠান অনিচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হয়ে এখন নীতি সহায়তা চাচ্ছে। এদের মধ্য থেকে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের চিহ্নিত করে নীতি সহায়তা দেওয়া হলে এসব প্রতিষ্ঠান ঘুরে দাঁড়াতে পারবে এবং অর্থনীতির চাকা সচল থাকবে।

কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, কমিটি গঠনের সাড়ে পাঁচ মাসেও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। তারা এ সময় ১৩টি সভায় মিলিত হলেও মাত্র ১০০টি ফাইল যাচাই-বাছাই করেছে। কিন্তু চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করতে পারেনি একটিরও। বলতে গেলে কাজের কাজ তেমন হয়নি।

এতে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক গ্রুপের বন্ধের ঝুঁকি বাড়ছে। তারা নানাভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও এ ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সমাধান পাচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, কমিটি মিটিংয়ের পর মিটিং শেষে যে শ খানেক ফাইল বাছাই করেছে, সেগুলো পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছে। এখন ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে শর্ত পরিপালন করে চূড়ান্ত পুনর্গঠন (পুনঃতফসিল) অনুমোদন হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক ও বড় ঋণ পুনর্গঠন (পুনঃতফসিল) বাছাই কমিটির সদস্যসচিব শাহরিয়ার সিদ্দিকী কালের কণ্ঠকে বলেন, এরই মধ্যে ১০০টিরও বেশি কেস আমরা বাছাই করেছি। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছে হস্থান্তর করেছি। এখন ব্যাংক ও গ্রাহক মিলে শর্ত পরিপালনসাপেক্ষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। আর বাকি কেসগুলো আমরা দ্রুত বাছাইপ্রক্রিয়া সম্পন্নের কাজ করছি। সার্বিক বিষয়টি মিডিয়াতে জানানো হবে।

ঋণদাতা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো (এনবিএফআই) এসব আবেদন চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করার কথা। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত কোনো আবেদনেরই চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। কিছু ব্যাংক সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের ঋণ পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিলেও অন্য ব্যাংকগুলো ঝুলিয়ে রেখেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যেসব গ্রাহকের ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে, কেবল তাঁরাই পুনর্গঠনের আবেদন করতে পারবেন। ওই সময় দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। এর তিন মাস পর গত বছরের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে তিন লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকায় ঠেকে। খেলাপি ঋণের হার দাঁড়ায় ২০.২০ শতাংশে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে আরো ৭৪ হাজার ৫৯১ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ বেড়েছে। গত মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে চার লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের ২৪.১৩ শতাংশই এখন খেলাপি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা অবশ্য কাজের ধীরগতির জন্য নানা যুক্তি দেখাচ্ছেন। তাঁরা জানান, গত ৩০ জানুয়ারি ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে দেওয়া চিঠিতে যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে, সেগুলো ভঙ্গ করেও অনেক গ্রাহক কমিটির কাছে আবেদন করেছেন। আবার খেলাপি নন, এমন অনেক গ্রাহকও নিজেদের ঋণ পুনর্গঠন করে মেয়াদ বৃদ্ধি করতে চাচ্ছেন। এ কারণে কমিটির পক্ষে আবেদন যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি বলেন, হাজারের বেশি আবেদন একটি কমিটির পক্ষে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই কঠিন। এ জন্য কমিটির সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়েও ভাবা হচ্ছে। দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংক খাতের স্বার্থেই খেলাপি ঋণ কমাতে হবে। দেড় দশক ধরে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে যেসব ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, সেগুলো এত দিন ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল। এখন আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের অডিট ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে সেসব ঋণ খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। তবে যেসব গ্রাহক সত্যিকার অর্থেই যৌক্তিক কারণে খেলাপি হয়েছেন, আমরা তাঁদের সুযোগ দিতে চাই।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আশরাফ আহমেদ জানিয়েছেন, নানামুখী চাপ ও ব্যাবসায়িক সংকটে বিপর্যস্ত দেশের অর্থনীতি। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, জ্বালানি ঘাটতি, লাগামহীন মূল্যস্ফীতি, উচ্চ সুদহার, কঠোর মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এই ছয়টি বড় ধাক্কায় ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি থেমে গেছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ব্যাবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের বিকল্প নেই। দেশের স্বার্থেই ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ জরুরি। সেই পরিবেশ তৈরি করতে সরকারের প্রতি অনুরোধও করেছেন তিনি।

এদিকে শিল্প গ্রুপগুলোকে বিশেষ সহায়তা দিতে গঠিত কমিটির ধীরগতির পেছনে কমিটির তৎকালীন আহবায়ক বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন বিভাগের তখনকার দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হকের নিষ্ক্রিয়তা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও তিনি এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজশাহী শাখায় বদলি হয়েছেন। এখন সেই দায়িত্ব পালন করছেন নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, যে কমিটি ক্ষতিগ্রস্তদের চিহ্নিত করবে, তার প্রধান করা হয়েছিল এমন এক ব্যক্তিকে, যিনি এরই মধ্যে রিজার্ভ চুরিতে জড়িত থাকার দায়ে দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন। কমিটির সাবেক প্রধান মেজবাউল হকের বিরুদ্ধে রিজার্ভ চুরির আলামত নষ্ট করার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ইতিপূর্বে বহু অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

গত বছর দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নরসহ ১২ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দায় পেয়েছে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। সিআইডির তদন্তে যেসব কর্মকর্তার দায় চিহ্নিত হয়েছে তাঁদের মধ্যে মেজবাউল হকও একজন।

এ ছাড়া মেজবাউল হকের বিরুদ্ধে মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিস নগদের অনুমোদন, বিনিময় অ্যাপ চালুর মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের আস্থাভাজন হওয়ার চেষ্টা ও ২০২৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করার অভিযোগ রয়েছে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য

শিশুদের আর্তচিৎকারে হতবিহ্‌বল হয়ে পড়ি

রেজোয়ান বিশ্বাস ও শরীফ শাওন
রেজোয়ান বিশ্বাস ও শরীফ শাওন
শেয়ার
শিশুদের আর্তচিৎকারে হতবিহ্‌বল হয়ে পড়ি

দুপুরে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি ছাত্রাবাসে ছিলাম। হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দে রুম থেকে বের হয়ে দেখি আগুনের কুণ্ডলী। দৌড়ে এসে দেখতে পাই বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। শিশুরা পুড়ে অঙ্গার।

ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে যেতে থাকল আমার। ভেতরে আগুনে পুড়তে থাকা শিশুগুলোর কান্না আর আর্তচিৎকারে হতবিহ্বল হয়ে পড়ি। এ সময় পিঠে বইয়ের ব্যাগ নিয়ে ছোটাছুটি করছিল কেউ কেউ।

এভাবেই বলছিলেন রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মেহেদী হাসান।

গতকাল সোমবার  বিকেলে কালের কণ্ঠকে তিনি ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কিছুটা আবেগতাড়িত হয়ে বলেন, আমি ওই কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। দুপুর সোয়া ১টায় বিকট শব্দের আওয়াজ পেয়ে মেস থেকে বেরিয়ে এসে দেখলাম একটি ফাইটার ভবন ভেঙে ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে। আগুন জ্বলছে। ভবনের সামনে একজন শিক্ষিকা সম্ভবত গলা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পড়ে আছেন।
এ ছাড়া আগুনে ঝলসে যাওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ কর্মচারী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছেন। কারো হাত পুড়েছে, কারো শরীর। সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখি প্রাথমিকের একটি ক্লাসে অনেক শিক্ষার্থী আটকা পড়েছে। জানালার কাচ ভেঙে কয়েকজনকে উদ্ধার করতে পেরেছি। পরে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসেও অনেক শিক্ষার্থীকে আহত ও নিহত অবস্থায় উদ্ধার করে।
আমার দেখা মতে কমপক্ষে অর্ধশত শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছে। হয়তো তাদের বাঁচানো সম্ভব হবে না। বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত উদ্ধারকাজে সহযোগিতা করেছি। এত মৃতদেহ ও গুরুতর আহত দেখতে দেখতে নিজের মানসিক অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। পরে সেখান থেকে বেরিয়ে আসি।

ঘটনাস্থল থেকে অক্ষত অবস্থায় বেঁচে ফিরেছে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রায়হান রাফি। প্রত্যক্ষদর্শী এই শিক্ষার্থী কালের কণ্ঠকে বলে, প্রতিষ্ঠানটির প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি একটি তিনতলা ভবনে এই দুর্ঘটনা ঘটে। সেখানে চতুর্থ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হয়। আমাদের ক্লাস মাত্র শেষ হয়। আমরা গাড়িতে গিয়ে উঠি। কিছু শিক্ষার্থী ক্যান্টিনে গিয়েছিল। আর কিছু শিক্ষার্থী ক্লাসরুমে কোচিংয়ের জন্য অবস্থান করছিল। এমন সময় বিকট একটি শব্দ হয়ে বিস্ফোরণ হয়। একটি বিমান ভবনটির সামনে আছড়ে পড়ে এবং ভবনটিতে আঘাত করে।

একই শ্রেণির শিক্ষার্থী জারাফ আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলে, চোখের সামনে বিস্ফোরণ দেখে কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে যাই। মুহূর্তেই চোখের সামনে থাকা অন্তত চারজনের মৃত্যু দেখেছি। তাদের মধ্যে একজনের পুরো শরীর পুড়ে বীভৎস অবস্থায় ছিল। তাকে শনাক্ত করা কঠিন। এ ছাড়া ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অন্তত ৫০ জনকে গুরুতর অবস্থায় দেখতে পাই। তারাও বাঁচবে বলে মনে হয় না।

প্রত্যক্ষদর্শী মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজটির নিরাপত্তাকর্মী আকবর হোসেন বলেন, দুর্ঘটনার সময় ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে ছিলাম। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কেবল বের হচ্ছিল। এ সময় হঠাৎ বিকট শব্দের পর তিনতলা ভবনের সামনের নারিকেলগাছ ভেঙে ভবনে ধাক্কা দিলে বিমানটিতে সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়। আকবর হোসেনের বর্ণনা অনুযায়ী তিনতলা ভবনের নিচতলা মাটির নিচে, সেখানে ক্লাস হয় না। বিমানটি সেখানে ঢুকে পড়ে। পরে বিকট শব্দে বিমানটি বিস্ফোরিত হয়।

শিশুদের খোঁজে দিশাহারা প্রত্যক্ষদর্শী অভিভাবকরা : ঘটনার সময় অনেক অভিভাবক স্কলের আশপাশেই ছিলেন। হঠাৎ বিস্ফোরণে তাঁরা ব্যাপক আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে থাকেন। স্কুলে আগুন দেখে তাঁরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শী তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীর অভিভাবক তাসপিয়া আক্তার বিলাপ করে কান্নার সুরে বলছিলেন, আমার নিষ্পাপ শিশুকে আমার কোলে ফিরিয়ে দাও খোদা। আমার একটি মাত্র মেয়ে, তাকে ছাড়া আমি কিভাবে বাঁচব? কেউ আমাকে তার খোঁজ এনে দাও।

দুপুর সোয়া ২টায় কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশে বাধার মুখে পড়ে ফিরে যাওয়ার সময় এমন বিলাপ দিতে থাকেন তিনি। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে এলোমেলো হাঁটছিলেন তিনি, কখনো আবার পড়ে যাচ্ছিলেন। সঙ্গে থাকা দুজন নারী তাঁকে ধরে রাস্তা পার করছিলেন।

দুপুর সোয়া ১টায় বিমান বিধ্বংসের পর থেকেই কলেজ ক্যাম্পাসে মা-বাবা, ভাই-বোনসহ অভিভাবকদের এমন আহাজারি দেখা যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বজনদের ভিড়ও বাড়তে থাকে। তবে উদ্ধারকাজ নির্বিঘ্নে পরিচালনার জন্য কলেজ ক্যাম্পসে প্রবেশে বাধা দেন উদ্ধারকর্মীসহ ভলান্টিয়াররা। শুধু তাই নয়, উদ্ধারকর্মীসহ উদ্ধারকাজে ব্যবহৃত গাড়ি অবাধে চলাচলের লক্ষ্যে সড়ক থেকেও সরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল সবাইকে।

তবে পথে পথে বাধা উপেক্ষা করেই অনেক অভিভাবককে ক্যাম্পাসের মূল গেটের কাছ পর্যন্ত চলে যেতে দেখা যায়। ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে অনেক অভিভাবককে বিতর্কেও জড়াতে দেখা গেছে। অভিভাবকদের অনেকে নিজেদের বিভিন্ন পরিচয় উপস্থান করেও ভেতরে প্রবেশে ব্যর্থ হয়েছেন।

বোরহান কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, আমার সন্তান চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। এখন পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাইনি। বিষয়টি জানার পরও আমাকে ভেতরে যেতে দেয়নি।

পাশে থাকা একজন ভলান্টিয়ার বলেন, ভেতরে দুর্ঘটনায় যারা পড়েছে, তারা সবাই কারো না কারো সন্তান, আত্মীয়। তবে এভাবে সবাই ভেতরে প্রবেশ করলে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হবে। এতে তাদের জীবনে ঝুঁকি আরো বাড়বে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা হতাহতদের উদ্ধারে চেষ্টা করছি। দ্রুততার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্ট হাসপাতালেও পাঠানো হচ্ছে। সেখান থেকে অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের খোঁজ নিতে পারবেন।

ঘটনাস্থলে আরো অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হঠাৎ বিমান বিধ্বস্তের পর আগুন ও ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে যেতে থাকে তাঁদের। তাঁরা স্কুলে থাকা সন্তানদের খুঁজতে থাকেন। এতটুকু শরীর নিয়ে ভয়ংকর আগুনের সামনে অভিভাবকদের আর কিছুই করার ছিল না। তাঁদের চোখের সামনে শরীরে আগুন নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ছিল একের পর এক সন্তানরা। আগুনে কারো শরীর, কারো কপাল পুড়ে গেছে, মাথা ফেটে গেছে, কেউ যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে।

প্রসঙ্গত, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। আহত হয়েছে শিক্ষার্থীসহ অর্ধশতাধিক মানুষ। হতাহতদের মধ্যে বেশির ভাগ শিশু শিক্ষার্থী।

মন্তব্য

৫৩ বছরে বিমান হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত ১০৫

    নিহতদের মধ্যে পাইলট কো-পাইলট ৩০ জন
কাজী হাফিজ
কাজী হাফিজ
শেয়ার
৫৩ বছরে বিমান হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত ১০৫

গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশে বিমান ও হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০৫ জন। তাঁদের মধ্যে বিমান বা হেলিকপ্টারের সাধারণ যাত্রী ও ক্রু ছাড়া পাইলট ও কো-পাইলট রয়েছেন ৩০ জন। বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল খাদেমুল বাশার, বাংলাদেশের প্রথম মহিলা পাইলট কানিজ ফাতিমা ও দেশের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের কন্যা ফারিয়া লারাও রয়েছেন এই তালিকায়। দেশের ভেতরে এসব দুর্ঘটনা ছাড়াও বিদেশে বিমান ও হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় যেসব বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে, তাঁরা এই ১০৫ জনের বাইরে।

২০১৮ সালের ১২ মার্চ নেপালের কাঠমাণ্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস বাংলার বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ২৬ বাংলাদেশিও রয়েছেন এই হিসাবের বাইরে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে বিমান দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে ১৯৮৪ সালের ৪ আগস্ট। বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইনসের একটি ফকার এফ-২৭ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসার পথে বিধ্বস্ত হলে দেশের প্রথম মহিলা পাইলট কানিজ ফাতিমাসহ বিমানের কো-পাইলট, ক্রু ও যাত্রীরা সবাই নিহত হন। ওই দুর্ঘটনায় মোট ৪৯ জন নিহত হন।

এর আগে বাংলাদেশে প্রথম বিমান দুর্ঘটনা ঘটে ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। এদিন একটি ডগলাস ডিসি-৩ এয়ারক্রাফট বিধ্বস্ত হলে পাঁচজন ক্রু নিহত হন। ১৯৭৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল খাদেমুল বাশার ও স্কোয়াড্রন লিডার মফিজুল হক বিমানবাহিনীর ঢাকা এয়ার বেজে নিহত হন। ১৯৭৯ সালের ১৮ নভেম্বর বাংলাদেশ বিমানের একটি ফকার এফ-২৭ পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের সময় সাভার বাজারের কাছে একটি মাঠে বিধ্বস্ত হয়।
এতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। ওই বছরের ২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইনসের একটি ফকার এফ-২৭ বিমান ৮৯ জন যাত্রী নিয়ে সিলেট এয়ারপোর্টে ঘন কুয়াশার মধ্যে ক্র্যাশ ল্যান্ডিং করে। বিমানটি রানওয়ে থেকে ছিটকে তিন কিলোমিটার দূরে ধানক্ষেতে চলে যায়। এতে আহত হন ১৭ জন। ২০০৪ সালের ৮ অক্টোবরও সিলেটে একই ধরনের ঘটনা ঘটে।

১৯৯৩ সালে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান এফটি-৫ বিধ্বস্ত হলে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট কুদ্দুস নিহত হন। ১৯৯৬ সালে পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষে বিমানবাহিনীর দুটি পিটি-৬১ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হলে উইং কমান্ডার হক, স্কোয়াড্রন লিডার ইসলাম ও ফ্লাইং অফিসার মাসুদ নিহত হন। ১৯৯৮ সালের ২৬ অক্টোবর টাঙ্গাইলের মধুপুরে বিমানবাহিনীর মিগ-২১ বিধ্বস্ত হলে পাইলট নিহত হন। ১৯৯৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২০০২ সালের ৭ জুন পর্যন্ত পারাবত ফ্লাইং একাডেমির বিমান দুর্ঘটনায় তিনজন পাইলটের মৃত্যু হয়। ১৯৯৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর প্রশিক্ষণ উড্ডয়নের সময় এয়ার পারাবতের একটি বিমানে আগুন ধরে গিয়ে ঢাকার পোস্তগোলায় বিধ্বস্ত হলে নিহত হন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের কন্যা পাইলট ফারিয়া লারা (২৬) ও কো-পাইলট সৈয়দ রফিকুল ইসলাম। এর আগে ওই বছরের ২৭ জুন এয়ার পারাবতের আরেকটি বিমান সাভারের কাছে ক্র্যাশ ল্যান্ডিং করে। এতে কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। ২০০২ সালের ৭ জুন এয়ার পারাবতের আরেকটি সেসনা-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন পাইলট মুখলেছুর রহমান সাকিব। এসব দুর্ঘটনার পর বন্ধ হয়ে যায় বেসরকারি এয়ারলাইনস এয়ার পারাবত।

এর আগে ২০০১ সালে ৭ জানুয়ারি একটি এফটি-৭ যুদ্ধবিমান ঢাকা বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হলে স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ মহাসীন নিহত হন। ২০০২ সালের ৩০ জুলাই চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হলে নিহত হন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আদনান মুকিত। ২০০২ সালের ১৯ অক্টোবর বিমানবাহিনীর একটি এম-১ হেলিকপ্টার চট্টগ্রামে সার্জেন্ট জহুরুল হক বিমানঘাঁটির কাছে একটি টেলিভিশন টাওয়ারে ধাক্কা লেগে বিধ্বস্ত হলে নিহত হন উইং কমান্ডার কাজী কামরুল নেওয়াজ, ফ্লাইং অফিসার সাব্বির আহমেদ, ওয়ারেন্ট অফিসার জহির হোসেন ও সার্জেন্ট আবদুস সামাদ।

২০০৫ সালের ৭ জুন ঢাকার উত্তরায় একটি ভবনে ধাক্কা খেয়ে ভেঙে পড়ে বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ এমবি যুদ্ধবিমান। এ ঘটনায় পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আহসানুল কবীর প্যারান্ডাটের মাধ্যমে অবতরণ করে নিজের জীবন বাঁচাতে সক্ষম হলেও দুই শিশুসহ ছয় বেসামরিক নাগরিক আহত হন। ২০০৬ সালের ২৪ এপ্রিল বিমানবাহিনীর একটি পিটি-৬১ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় ফ্লাইট ক্যাডেট তানিউল ইসলাম নিহত হন।

২০০৭ সালের ৯ এপ্রিল বিমানবাহিনীর একটি পিটি-৬১ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে নিহত হন বিমানটির পাইলট ফ্লাইট ক্যাডেট ফয়সল মাহমুদ। ২০০৮ সালের ৮ এপ্রিল আরেকটি এফ-৭ এমবি জঙ্গি বিমান বিধ্বস্ত হয় টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার পাহাড়িপাড়া গ্রামে। বিমানটির পাইলট স্কোয়াড্রন লিভার মোরশেদ হাসান বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগে প্যারাশুটের মাধ্যমে অবতরণের চেষ্টা করলেও শেষরক্ষা হয়নি। পরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।

২০০৯ সালের ৯ মার্চ যশোর থেকে ঢাকায় আসার পথে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে নিহত হন মেজর জেনারেল রফিকুল ইসলাম ও হেলিকপ্টারের পাইলট লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহীদ ইসলাম। ২০০৯ সালের ১৬ জুন এফটি-৬ মডেলের প্রশিক্ষণ বিমান চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে পড়ে বিধ্বস্ত হয়। বিমানটির পাইলট সে সময় প্যারাশুটের মাধ্যমে অবতরণ করে জীবনরক্ষায় সক্ষম হন। একই বছরের ২২ অক্টোবর বগুড়ার কাহালুর কাছে এরোলিয়ায় রানওয়েতে অবতরণের সময় বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। ২০১০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে বিমানবাহিনীর এফ-৭ এমবি মডেলের একটি জঙ্গি বিমান বিধ্বস্ত হয়। ওই ঘটনায়ও পাইলট তাঁর জীবন রক্ষা করতে সক্ষম হন। ওই বিমানটিসহ আগের পাঁচ বছরে বিমানবাহিনীর তিনটি এফ-৭ এমবি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়।

২০১০ সালের ৩০ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার কাছে যমুনা নদীতে বিধ্বস্ত হয় ফ্লাইং ক্লাবের একটি প্রশিক্ষণ বিমান। এতে পাইলট কামরুল হাসানের মৃত্যু হয়। আরেকটি বিয়োগান্ত ঘটনা ঘটে ২০১০ সালের ২০ ডিসেম্বর। এদিন বরিশালের কাছে একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে বিমানবাহিনীর দুজন বৈমানিক স্কোয়াড্রন লিডার আশরাফ ইবনে আহমেদ ও স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ মাহমুদুল হক নিহত হন।

২০১১ সালের ১০ অক্টোবর চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ বিমানে আগুন লেগে গেলে দুজন পাইলট আহত হন।

২০১২ সালের ৮ এপ্রিল টাঙ্গাইলের মধুপুরে মুরইল ইউনিয়নের বড়মহর গ্রামে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হলে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শরিফ রেজা নিহত হন।

২০১৩ সালের জুলাইয়ে রাশিয়ার তৈরি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান এ-ফাইভ পটিয়া উপজেলার একটি বিলে পড়ে। তার আগে প্যারাশুটের সাহায্যে নিরাপদে অবতরণ করেন পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আবু জাহের আরাফাত। ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি যশোরের সদর উপজেলার মাহিদিয়া গ্রামের ধানক্ষেতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি পিটি-৬ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। ওই ঘটনায় অক্ষত থাকেন বিমানের দুই পাইলট স্কোয়াড্রন লিডার ফারুক ও পাইলট অফিসার জামি। একই বছরের ৩০ এপ্রিল চট্টগ্রামে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়।

২০১৫ সালের ১ এপ্রিল রাজশাহীর শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দরে বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমির একটি ১৫২ মডেলের সেনা প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে প্রশিক্ষণার্থী পাইলট তামান্না রহমান (২২) ঘটনাস্থলে নিহত হন। তাঁর প্রশিক্ষক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাঈদ কামালও পরে মারা যান। একই বছরের ২৮ জুন চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ চলাকালে সাগরে বিধ্বস্ত হয় এফ-৭ যুদ্ধবিমান। এতে বিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তাহমিদ নিখোঁজ হন। ২০১৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর সকালে কক্সবাজারের উখিয়ার সোনারপাড়া সমুদ্রসৈকতে মেঘনা এভিয়েশনের একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে একজন নিহত ও চারজন আহত হন।

২০১৬ সালের ৯ মার্চ ট্রু এভিয়েশনের একটি কার্গো বিমান কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের কয়েক মিনিট পর বঙ্গোপসাগরের নাজিরারটেক পয়েন্টে বিধ্বস্ত হয়। এতে পাইলটসহ তিন ক্রু নিহত হন। আহত হন আরো এক বিদেশি। বিমানটি চিংড়ি পোনা নিয়ে কক্সবাজার থেকে যশোর যাচ্ছিল। নিহতরা হলেন বিমানটির পাইলট মুরাদ কাপারত, ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার কুলিশ আন্ত্রে ও কো-পাইলট ইভান ডেমান।

২০১৭ সালে মহেশখালীতে বিমানবাহিনীর দুই প্রশিক্ষণ বিমানের মধ্যে সংঘর্ষে দুটি বিমানই বিধ্বস্ত হয়। তবে পাইলটরা অক্ষত ছিলেন।

২০২১ সালের ১৬ মার্চ রাজশাহীর তানোরে আলুক্ষেতে বাংলাদেশ ফ্লাইং ক্লাবের একটি প্রশিক্ষণ বিমান আছড়ে পড়ে।

২০২২ সালের ২৭ জুলাই আর্মি এভিয়েশনের একটি বেল-২০৬ হেলিকপ্টার ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার একটি ধানক্ষেতে পড়ে। হেলিকপ্টারটি নিয়মিত প্রশিক্ষণ ফ্লাইট পরিচালনার অংশ হিসেবে ইমার্জেন্সি ল্যান্ডিং প্রসিডিউর অনুশীলন করার সময় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে অবতরণ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে। হেলিকপ্টারের উভয় পাইলট লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইসমাইল ও মেজর শামসকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা সিএমএইচে আনা হয়।

২০২৪ সালের ৯ মে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকায় বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ নিহত হন।

গত ১৩ মার্চ যশোর বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণকালে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়। এ ঘটনায় বিমানের দুই পাইলট গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোল্লা মোহাম্মদ তহিদুল হাসান ও স্কোয়াড্রন লিডার আহমদ মুসা সুস্থ ছিলেন।

সর্বশেষ গতকাল ২১ জুলাই সোমবার বাংলাদেশে বিমান দুর্ঘটনার ইতিহাসে একটি শোকের দিন হিসেবে স্থান পায়। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে গতকাল দুপুর ১টা ৬ মিনিটে ঢাকার উত্তরায় দিয়াবাড়ীতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দোতলা একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়। নিহত হন বিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম সাগরসহ অনেকে। আইএসপিআর জানায়, গতকাল বিকেল ৫টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ২০ জনে। আহতের সংখ্যা ১৭১। এদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী।

মন্তব্য

ফেসবুকজুড়ে নিখোঁজ শিশুদের মুখ

    সন্তানদের না পেয়ে কাঁদছেন অভিভাবকরা
কেয়া আক্তার
কেয়া আক্তার
শেয়ার
ফেসবুকজুড়ে নিখোঁজ শিশুদের মুখ

হলুদ জামা পরা ছোট্ট একটি মেয়ের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে। নাম সায়মা। উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলের ক্লাউড সেকশনের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সে। তার ভাই সুমন আহমেদ ফেসবুকে লিখেছেন, উত্তরার মাইলস্টোন ক্যাম্পাসের বিমান বিধ্বস্তের স্থান থেকে আমার বোন নিখোঁজ।

এমন অসংখ্য শিশু-কিশোরের ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে এখন ফেসবুকে। কেউ নিজ সন্তানকে খুঁজছেন, কেউ হয়তো অন্যের সন্ধান জানাতে পোস্ট করছেন। অনেকে আবার উদ্ধার হওয়া শিশুদের নাম-পরিচয় না জানায় অভিভাবকের খোঁজ করছেন।

তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. জুনায়েত হাসানের মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।

ফেসবুকে তার স্কুল আইডি কার্ডের ছবি দিয়ে অভিভাবকের উপস্থিতি কামনা করা হয়েছে।

ধচতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাফসি আক্তার রাফিয়া উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ছবি দেখে পরিবার তাকে শনাক্ত করে হাসপাতালে পৌঁছেছে।

আরেক শিক্ষার্থী সাবিহা জাহানের সন্ধানেও ফেসবুকে অনুরোধ করা হচ্ছে উত্তরার আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যোগাযোগ করার জন্য।

তৃতীয় শ্রেণির আফিয়া উম্মে মরিয়ম, সাদ সালাউদ্দীন ও রাইসা মনিকেও খুঁজে বেড়াচ্ছেন স্বজনরা। কারো খবর মিলেছে, কেউ এখনো নিখোঁজ।

প্রথম আলোর সাংবাদিক সেলিম জাহিদ নিজের ছেলে সায়ের মাহবুবের সন্ধান চেয়ে ব্যক্তিগত ফেসবুকে পোস্ট দেন। সায়ের মাইলস্টোন মেইন ক্যাম্পাসের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। পরে তাকে সুস্থ অবস্থায় পাওয়া যায়।

নুসরাত জাহান আনিকা (তৃতীয় শ্রেণি) ও মেহনাজ আফরিন হুমায়রা (দ্বিতীয় শ্রেণি)এই দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ রয়েছে সিএমএইচের মর্গে, এমন খবর ছড়িয়েছে ফেসবুকে। তাদের পরিবারের সদস্যদের খোঁজা হচ্ছে।

অভিনেত্রী তমা মির্জার ফেসবুক প্রোফাইলে মোছা. আসমাউল হুসনা জায়রা নামের এক শিশুর আইডি কার্ড পোস্ট করে তিনি জানান, বাচ্চাটি তাঁর স্কুল ফ্রেন্ডের ভাইয়ের অফিসে আছে, সেফ আছে, তবে নাম-ঠিকানা কিছুই বলতে পারছে না।

অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানভির আহমেদের মৃত্যুর খবর আসে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে। তার পরিচয় মিললেও পরিবারের সন্ধানে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া হয়।

বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থী আরিয়ান নাফিসের অভিভাবকদেরও খোঁজা হচ্ছে ফেসবুকে।

ওয়াকিয়া ফেরদৌস নিধি, তাসফিয়া সুলতানা, রাইসা মনিতাদের কাউকে এখনো পাওয়া যায়নি।

২১ বছর বয়সী ইয়াসীন মাইলস্টোন পার্মানেন্ট ক্যাম্পাসের পরিবহন বিভাগের কর্মী। বাড়ি নোয়াখালী। বর্তমানে উত্তরার মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

এ ছাড়া মাইলস্টোন হোস্টেলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফুয়াদ এখনো নিখোঁজ।

প্রতিটি নামই এখন পরিবারের কাছে একেকটি আশার আলো। আর প্রতিটি ছবি যেন ফেসবুকে চোখ আটকে রাখা কান্নার দলিল।

 

মন্তব্য

হঠাৎ আগুন জ্বলে ওঠে দাউদাউ

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
হঠাৎ আগুন জ্বলে ওঠে দাউদাউ

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর গতকাল সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিল স্থানীয় লোকজন। ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা বিস্মিত হয়। তারা গণমাধ্যমকে বলে, দুর্ঘটনার পর স্কুলের মাঠে একজন প্যারাশুট দিয়ে নামেন। আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল ব্যাপক আকারে।

আর এ জন্য প্রথমেই কাউকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। দুপুর ১টার পর বিমান আছড়ে পড়েছিল স্কুলের একটি ভবনের মুখে, সেখানে শিশু ও অভিভাবকরা সাধারণত অপেক্ষা করেন। ভবনে বেশ কয়েকটি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে, যেখানে তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণির ইংরেজি মাধ্যমের পাঠদান চলত। দুর্ঘটনার আগে সেখানে ক্লাস শেষ হয়েছিল।
অনেক শিক্ষার্থী ক্লাস শেষ করে অপেক্ষাও করছিল। একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী কাওসার বলে, একটা ফাইটার প্লেন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আমাদের জুনিয়র ক্যাম্পাস, যেখানে ক্লাস ফাইভ থেকে এইটের ছাত্ররা পড়াশোনা করে, ঠিক সেইখানে পড়েছে। ওখানে বলতে গেলে সবাই পুড়ে গেছে, সবাই ঝলসে গেছে। আমরা ভেতরে গিয়েছিলাম, আগুনের কারণে কাউকে বের করতে পারিনি।
খুব খারাপ অবস্থা।

দুর্ঘটনার সময় একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আজমাইন ক্লাসে ছিল। বিকট শব্দ শুনে নিচে নেমে সে দেখে আগুন জ্বলছে। দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদমান তানভীর বলে, আমরা যখন ক্লাসে ছিলাম, তখন বিস্ফোরণের শব্দ হয়। প্রথমে কেউ বুঝতে পারিনি বিষয়টি।

হঠাৎ যখন সবাই দৌড়াদৌড়ি, ছোটাছুটি করল তখন বুঝতে পারলাম। ১ নম্বর বিল্ডিংয়ে বিমানের কিছু অংশ হয়তো ব্লাস্ট হয়েছে, সেটা বোঝা গেল। বিল্ডিংয়ের সামনে পড়ছে, যার কারণে পুরো বিল্ডিংয়ে আগুন ধরেছিল। তারপর আমরা বের হয়ে দেখি, কিছুক্ষণ পর আগুন নেভানোর জন্য ফায়ার সার্ভিস থেকে গাড়ি এসেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ঘটনাস্থলের কাছেই ফায়ার সার্ভিস ও আর্মি ক্যাম্প ছিল। ফলে সংশ্লিষ্টরা দ্রুত চলে এসেছিল। আগুন নেভাতে বেশি সময় লাগেনি, কিন্তু ভেতরে অনেক মানুষ ছিল। ছোট বাচ্চারা ছিল। ওদের বের করতে অনেক সময় লাগে। স্কুলের পাশেই লতিফা বেগমের বাসা। এই প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, তাঁর ভাতিজি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ক্লাস শেষে তাঁর ভাতিজি বাসায় ফিরেছিল। অন্য বাচ্চারা কোচিংয়ের জন্য ওই ভবনের সামনে অপেক্ষা করছিল। আর তখনই দুর্ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী জহিরুল ইসলাম বলেন, আমার মনে হয়েছে, বিমান মাঠের মাঝখানে আছড়ে পড়েছে। তারপর ভবনে গিয়ে ধাক্কা খায়। সেখানেই আগুন ধরে যায়। প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ জইমত আলী বলেন, বিমান খুব নিচু দিয়ে উড়ছে, তা দেখে অবাক হই। কয়েক মুহূর্ত যায়। তারপর বিকট শব্দ শুনে বের হই । দেখি, স্কুল থেকে আগুন বের হচ্ছে। জইমত বলেন, সেখানে গিয়ে দেখি, একজন প্যারাশুট নিয়া নামছে। আর বহু বাচ্চা আর তাদের গার্ডিয়ানরা আগুনে পুড়ছে। সবাই ধরাধরি করে তাদের সেখান থেকে সরানোর চেষ্টা করে। কিন্তু আগুনের তাপ ছিল সাংঘাতিক। স্কুলের ওই বিল্ডিংটার ভেতরে ঢোকার কোনো উপায় ছিল না। মাইলস্টোন স্কুল থেকে সবে বাসায় ফিরেছিল দশম শ্রেণির ছাত্র শান্ত। তাদের বাসা স্কুল থেকে দুই মিনিটের হাঁটা পথ। শান্ত বিকট শব্দ হওয়ার পর ঘরের বারান্দায় গিয়ে দেখে, স্কুল থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। সে বলে, ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি স্কুলের আগে যেটা হোস্টেল ছিল, পরে সেটা ইংলিশ মিডিয়াম শাখা বানানো হয়েছে, তার ঠিক সামনে একটি বিমান ক্র্যাশ করেছে। দাউদাউ আগুন বের হচ্ছিল।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ