উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তির সংঘবদ্ধ বিশৃঙ্খলার (মব সন্ত্রাস) বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে বিএনপি। সম্প্রতি সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদাকে হেনস্তার ঘটনায় দলটি মব সন্ত্রাস ও সহিংস রাজনীতির বিরুদ্ধে তাদের কঠোর অবস্থান আরো স্পষ্ট করেছে। এই ঘটনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠিন বার্তা দিয়েছেন। দলের অন্য শীর্ষ নেতৃত্বও প্রকাশ্যেই নিন্দা জানিয়েছে এবং সাংগঠনিকভাবে এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
মব সন্ত্রাসে কঠোর বিএনপি
হাসান শিপলু

৫ আগস্টের পর থেকে যেসব মব সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে তাকে শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, বরং সামাজিক শৃঙ্খলা ও আইনের শাসনের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে বিএনপি। মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান হচ্ছে জিরো টলার্যান্স নীতি। দলের কারো এর সঙ্গে জড়িত হওয়ার প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রবিবার ঢাকার উত্তরায় নুরুল হুদাকে তাঁর নিজের বাসা থেকে বের করে এনে হেনস্তা করা হয়।
তবে বিএনপি এই ধরনের কর্মকাণ্ডের দায় নিতে রাজি নয়।
মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিএনপির কঠোর অবস্থান এসেছে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্যেও।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) হিসাব মতে, মব তৈরি করে মানুষের উচ্ছৃঙ্খল আচরণে গত ৯ মাসে দেশে অন্তত ১৩১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক মানুষ।
এর মধ্যে ধানমণ্ডিতে সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন ধ্বংস, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের অতিথিকক্ষে তোফাজ্জল হোসেন নামের এক যুবককে (৩২) পিটিয়ে হত্যা করা হয়, যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। পরে পুলিশ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। গত ২৯ এপ্রিল অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে পোশাক ছিঁড়ে পুলিশে সোপর্দ করে একদল লোক। এর আগে ৪ মার্চ রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ছিনতাইকারী তকমা দিয়ে ইরানের দুই নাগরিককে মারধর করে একদল ব্যক্তি। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষকে জোর করে পদত্যাগ করানো, মানুষের বাসায় দল বেঁধে হেনস্তা ও মালপত্র নিয়ে যাওয়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেয়েদের ফুটবল খেলা বন্ধ করে দেওয়া, ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে হেনস্তাসহ নানা ঘটনা ঘটেছে।
এসব ঘটনার সঙ্গে বিএনপির জড়িত থাকার বড় ধরনের কোনো অভিযোগ সেভাবে আসেনি। তবে মাঠ পর্যায়ের কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্ন কিছু অভিযোগ আছে। অবশ্য ৫ আগস্টের পর যেকোনো অপকর্মের বিরুদ্ধে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কঠোর হয়েছেন। নানা অভিযোগের প্রমাণ মেলায় বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বহিষ্কারসহ নানা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কড়া বার্তা বিএনপির
সম্প্রতি বিএনপির উচ্চ মহল থেকে মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যে অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে তা দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের জন্য বার্তা বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। দলের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, ৫ আগস্টের পর থেকে সারা দেশে বিভিন্ন পক্ষের প্রশ্রয়ে বিরোধীপক্ষকে হেনস্তা, বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। তখনই বিএনপি এর বিরুদ্ধে অবস্থান জানিয়েছিল, এখন তা আবারও স্পষ্ট করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজনৈতিক কৌশলগত দিক থেকে বিএনপি এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও সাধারণ জনগণের দৃষ্টি যখন সহিংসতাবিরোধী, তখন দলের ভাবমূর্তি বাড়াতে ‘মব সন্ত্রাস বিরোধী’ অবস্থানকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মী ও জনগণকে নতুন বার্তা দিয়েছে দলটি। বিএনপি তাদের ইউনিটগুলোকে নির্দেশ দিয়ে বলেছে, কর্মসূচির আগে ও পরে নিজেদের দায়িত্বে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সহিংসতায় অংশ নেবে, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি বহিষ্কারও করা হতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মব সন্ত্রাস কোনো সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। অপরাধের বিচার হবে আদালতে, রাস্তায় নয়। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্ব। বিএনপি এই অপশক্তির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকার তার দায়িত্ব কতটুকু পালন করছে, সেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরও মব সন্ত্রাস হয়েছিল। তখনো এর প্রতিকার করেনি তখনকার সরকার। ফলে দেশে অরাজকতা তৈরি হয়েছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও মব সন্ত্রাস দমনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, ‘মব সংস্কৃতির শুরু করেছে কে? ইশরাকের প্রচারণায় বেগম খালেদা জিয়াকে মব সৃষ্টি করে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন মবের রানি শেখ হাসিনা। তিনিই মবের মাস্টারমাইন্ড।’ গত ২৫ জুন জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণতন্ত্র ফোরামের এক প্রতিবাদী যুব সমাবেশে মব নিয়ে জয়নুল আবদিন ফারুক এই মন্তব্য করেন।
তিনি আরো বলেন, ‘সাবেক সিইসি নুরুল হুদার ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক দলের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ডিসি হারুনকে কেন গ্রেপ্তার করা হয় না। যারা ১৬ বছর ধরে অন্যায়-অত্যাচার করেছে, তাদের কেন গ্রেপ্তার করা হয় না?’
কঠোর অবস্থানে সেনাবাহিনীও
মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর সেনাবাহিনী। গত ২১ মে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাপ্রাঙ্গণে অফিসার্স অ্যাড্রেসে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ‘মব ভায়োলেন্স’ বা উচ্ছৃঙ্খল জনতার সংঘবদ্ধ বিশৃঙ্খলা বা আক্রমণের বিরুদ্ধেও কঠোর বার্তা দেন।
ওই সময় তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সেনাবাহিনী এখন আরো কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে। সংঘবদ্ধ জনতার নামে বিশৃঙ্খলা বা সহিংসতা আর সহ্য করা হবে না।
গত মার্চে রাজধানীর রাসেল স্কয়ারে মব ভায়োলেন্সের মাধ্যমে একজনের ব্যাবসায়িক অফিসে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনার সময় সেনাবাহিনী ও পুলিশ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কলাবাগান থানার সমন্বয়ক পরিচয়ধারী সালাহউদ্দিন সালমানসহ ১৪ জনকে আটক করে কলাবাগান থানায় হস্তান্তর করে।
গত এপ্রিলে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের বর্বরতম গণহত্যার প্রতিবাদ বিক্ষোভের মিছিল থেকে ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠান দাবি করে কেএফসি, বাটাসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাট চালানো হয়। সে সময়ও সেনাবাহিনীকে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়।
গত ২২ জুন সাবেক সিইসি কে এম নুরুল হুদার ওপর মব ভায়েলেন্সের ঘটনা ঘটলে সেনাবাহিনী অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের জন্য দ্রুত অভিযান শুরু করে এবং ২৩ জুন হানিফ নামের এক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশে হস্তান্তর করে। ওই ঘটনা ও সেনা অভিযান সম্পর্কে আইএসপিআর জানায়, দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বিবৃতি দিয়ে দায় সারছে সরকার
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলবদ্ধভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার ঘটনা বেড়েছে। ঘটনার পর সরকারকে বিবৃতি দিতে দেখা গেছে। নুরুল হুদার ঘটনার পরও বিবৃতি দিয়েছে সরকার। গত রবিবার রাতে সরকারের বিবৃতিতে ‘অভিযুক্ত ব্যক্তির ওপর আক্রমণ ও তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা বেআইনি, আইনের শাসনের পরিপন্থী ও ফৌজদারি অপরাধ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘মব সৃষ্টি করে উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টিকারী সকলকে চিহ্নিত করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’ তবে গত ১০ মাসে মব সন্ত্রাস দমনে সরকারের কার্যক্রম সেভাবে চোখে পড়ার মতো নয় বলে বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে।
সরকার অবশ্য বারবার মব সন্ত্রাস বন্ধ করার কথা বলছে। গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, ‘কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে কেউ সমাজে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করলে আমরা তাঁকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় নিয়ে আসব।’
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক বৈশ্বিক ঘোষণা অনুযায়ী, ‘মব জাস্টিস’-এর কারণে মানবাধিকারের বড় লঙ্ঘন হয়। ওই ঘোষণা অনুযায়ী, আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত অভিযুক্ত ব্যক্তির অধিকার তাঁকে যেন নিরপরাধ বলে বিবেচনা করা হয়। পাশাপাশি বিচারের সময় অভিযুক্ত ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকতে হবে।
তবে অভিযুক্তের সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা যায়নি বলে সমালোচনায় পড়েছে সরকার। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, একদল ব্যক্তি মামলার আসামিকে ধরে হেনস্তা করছে, তারপর পুলিশে দিচ্ছে। কিন্তু সরকার এসব অপরাধ দমনে কঠোর হচ্ছে না।
আইনজীবীরা বলছেন, সংবিধান, ফৌজদারি কার্যবিধিসহ অন্যান্য আইনের বিধান অনুযায়ী কাউকে আটক করার নামে হেনস্তা, জুতার মালা পরানো কিংবা শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তা করা অপরাধ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক মনে করেন, মব বন্ধে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার, তা হচ্ছে না। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, মব নিয়ে সরকার বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী বিভিন্ন আদেশ-নির্দেশ জারি করছে। কিন্তু সেগুলোর প্রয়োগ না থাকায় মব উচ্ছৃঙ্খলতাকারীদের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না।
সম্পর্কিত খবর

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল
সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে আবারও ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে
বিশেষ প্রতিনিধি

প্রায় দুই দশক পর জাতীয় সমাবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আগামীকাল শনিবার ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সমাবেশ হবে। বৃহৎ পরিসরে আয়োজিত এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত দলটির নেতাকর্মীরা।
সমাবেশ উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জামায়াত।
তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মৌলিক সংস্কার জরুরি। কোনো ষড়যন্ত্র যেন এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। অংশ নেবেন ইসলামী দলগুলোর নেতারা, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা, জুলাই আন্দোলনে শহীদদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিরা।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে আমাদের দল নানা নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসের রাজনৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে বাকস্বাধীনতা ও সাংবিধানিক অধিকার কিছুটা ফিরে এসেছে।
তিনি জানান, নির্বাচন সামনে রেখে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে ফ্যাসিবাদী হামলায় নিহত ব্যক্তিদের বিচারে দৃশ্যমান অগ্রগতি চান তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে একটি ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াত। দলটির পক্ষ থেকে এ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।
জুলাই মাসে নিহত ও আহতদের পুনর্বাসন এখনো সম্পূর্ণ হয়নি বলেও দাবি করেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল।
তিনি জানান, সমাবেশ সফল করতে একটি বাস্তবায়ন কমিটিসহ আটটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। লিফলেট, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ছাড়াও ভ্রাম্যমাণ মাইক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে সমাবেশের প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
সমাবেশে থাকবে ২০টি পয়েন্টে প্রায় ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক। ঢাকার আশপাশ থেকে আগতদের জন্য ১৫টি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
সমাবেশস্থলের ভেতরে ও বাইরে ১৫টি মেডিক্যাল বুথ থাকবে, প্রতিটিতে থাকবেন দুজন করে চিকিৎসক, জরুরি ওষুধ এবং অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা থাকবে।
ড্রোন ও ক্যামেরার মাধ্যমে ভিডিও ধারণ ও সরাসরি সম্প্র্রচারেরও আয়োজন থাকবে—এলইডি স্ক্রিন ছাড়াও ফেসবুক ও ইউটিউবেও সম্প্রচার করা হবে।
সমাবেশের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলেও জানান গোলাম পরওয়ার।
সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনি বলেন, ‘সারা দেশ থেকে মানুষ রেল, সড়ক ও নৌপথে সমাবেশে অংশ নিতে আসবে। এতে নগরবাসীর কিছুটা দুর্ভোগ হতে পারে। আমরা তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।’ তিনি জানান, সমাবেশ শুরু হবে দুপুর ২টায়। তবে সকাল ১০টা থেকেই সাংস্কৃতিক পরিবেশনা চলবে।
এ সময় গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনারও নিন্দা জানান গোলাম পরওয়ার। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ব্যর্থতার অভিযোগও করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের সাত দফা দাবিও তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো—অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ; সব গণহত্যার বিচার; মৌলিক রাষ্ট্রীয় সংস্কার; ‘জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র’ বাস্তবায়ন; ‘জুলাই শহীদ’ ও আহতদের পুনর্বাসন; পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন এবং এক কোটির বেশি প্রবাসী ভোটারের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মা’ছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, মতিউর রহমান আকন্দ, নূরুল ইসলাম বুলবুল, মো. সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।

তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোটার তালিকা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এর মাধ্যমে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ পাবেন যোগ্য নাগরিকরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদে খসড়াটি অনুমোদন দেওয়া হয়। তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক।
সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ আহম্মদ বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, অর্থাৎ যাঁদের বয়স ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ১৮ বছর হয়, তাঁরা পরবর্তী জানুয়ারি মাসের হালনাগাদ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। নির্বাচন কমিশন প্রতিবছরের ২ জানুয়ারি ওই খসড়া ভোটার তালিকা এবং ২ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, পরবর্তী নির্বাচনের আগে যেসব নাগরিকের বয়স ১৮ বছর হয়, অর্থাৎ ভোটার হওয়ার জন্য যোগ্য হন, তাঁরা ওই নির্বাচনে ভোটাধিকারের সুযোগ পান না।
ফয়েজ আহম্মদ আরো বলেন, এই বাস্তবতায় নির্বাচন কমিশন ভোটের তফসিল ঘোষণার আগে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, তাঁদের ভোটার তালিকায় নিয়ে আসাকে যৌক্তিক মনে করে। এ বিষয়ে উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ধরুন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন। তার সর্বোচ্চ দুই মাস আগে তফসিল ঘোষিত হয়।
ফয়েজ আহম্মদ বলেন, ‘আজ যে অধ্যাদেশের খসড়াটি অনুমোদন করা হলো, এর ফলে যখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে, তার অন্তত এক মাস আগ পর্যন্ত যেসব ব্যক্তির বয়স ১৮ বছর হবে, তাঁরা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন।’
মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ : গতকাল সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন করেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, অনেকের কিডনি ড্যামেজ হয়, অনেকে চোখে দেখতে পায় না, কর্নিয়া সংযোজন হলে অন্ধত্ব দূর করা যায়, এসব বিষয়ে বাংলাদেশের যে আইন ছিল সেটা অনেক দিন থেকে আপডেট হয়নি।
তিনি বলেন, নতুন এই অধ্যাদেশের ফলে অঙ্গ প্রতিস্থাপনটা খুব সহজ হবে। আগে যেমন ছিল অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য খুবই কাছের যেমন—ভাই, বোন, মা-বাবা থেকে নিতে পারতেন, এখন এটাকে একটু সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
অঙ্গ দান করার ক্ষেত্রে নতুন করে কাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, আগে যেমন ভাতিজা, ভাগিনা তারা অঙ্গ দান করতে পারত না। এখন তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, মানে পরিধি বাড়ানো হয়েছে।
প্রেস সচিব আরো বলেন, ‘এর ফলে আমরা মনে করি, বাংলাদেশের অনেককেই এখন কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য আর বিদেশে যাওয়া লাগবে না। বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোও এই সার্ভিস দিতে পারবে। আমরা মনে করি, এটা বাংলাদেশের জন্য যুগান্তকারী আইন।’
একই সভায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
গোয়েন্দা তথ্য ছিল, তবে এত পরিমাণ যে হবে সে তথ্য হয়তো ছিল না
নিজস্ব প্রতিবেদক

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রাকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি এখন অনেকটা শান্ত ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গোপালগঞ্জে গত বুধবার যে ঘটনা ঘটেছে, সে সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য ছিল কি না, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গোয়েন্দা তথ্য ছিল। তবে এত পরিমাণ যে হবে, ওই তথ্য হয়তো ছিল না।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা এসব তথ্য জানান।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গতকাল (বুধবার) এনসিপির সমাবেশে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার পর গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তিনি বলেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৫ জনকে আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এ ঘটনায় আমাদের ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে এনসিপি নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে এ বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ভবিষ্যতে আর যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, যত দিন পর্যন্ত সব অপরাধী ধরা না পড়বে, তত দিন পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। উপদেষ্টা এ সময় গোপালগঞ্জের ঘটনা লাইভ করায় সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট টিভি চ্যানেলগুলোকে ধন্যবাদ জানান। এর আগে উপদেষ্টা রাজধানীর রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে গোপালগঞ্জের ঘটনায় আহত পুলিশ সদস্যদের শারীরিক অবস্থা দেখতে যান।

আ. লীগ আমলের ৯৬ পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল
নিজস্ব প্রতিবেদক

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিবন্ধিত ৯৬টি পর্যবেক্ষক সংস্থার সব নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম।
তিনি বলেন, নতুন নীতিমালা জারি করা হয়েছে এবং আগের নীতিমালা বাতিল হয়েছে। তাই আগের নীতিমালার অধীন নিবন্ধিত সব পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেছে।
২০২৩ সালে দুই দফায় ৯৬ সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ নিবন্ধন দেওয়া হয়। এসব সংস্থার বেশির ভাগই ছিল নতুন। আগে কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা ছিল না।
একাধিক সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ছিল। সে সময় বেশ কিছু অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন পেতে উৎসাহ বোধ করেনি বা আবেদন করলেও নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সে সময় ব্যাপক সমালোচনা হয়।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে স্বচ্ছতা আনতে আগের সব পর্যবেক্ষক সংস্থাকেই বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে নতুন করে নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়। গতকাল সেই নতুন নীতিমালা-২০২৫ জারি ও ২০২৩ সালের নীতিমালা বাতিল করা হয়েছে। ফলে আগের নীতিমালা অনুসারে নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর নিবন্ধনও বাতিল করা হয়েছে।