ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের বোমারু বিমানের হামলার ঘটনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি খোদ মার্কিন রাজনীতিকদের মধ্যেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই একে সংবিধান লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, আবার কেউ কেউ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের প্রশংসাও করেছেন।
মার্কিন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স এ হামলাকে মার্কিন সংবিধানের চরম লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সবাই জানেন, যুদ্ধ ঘোষণা করার অধিকার শুধু মার্কিন কংগ্রেসের রয়েছে, প্রেসিডেন্টের নয়।
’
জাতিসংঘ : জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই হামলাকে চলমান সংঘাতের তীব্রতার ‘ভয়াবহ বৃদ্ধি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, এখন ‘সংঘাত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার বড় ধরনের ঝুঁকি’ তৈরি হয়েছে। ‘শুধু কূটনীতির মাধ্যমে’ এই সমস্যার সমাধান করে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
রাশিয়া : ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে মন্তব্য করেছে রাশিয়া। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল রবিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা হামলা চালানো দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত।
আমরা আগ্রাসন বন্ধের আহবান জানাচ্ছি। চলমান পরিস্থিতিকে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পথে ফিরিয়ে নেওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে প্রচেষ্টা বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছি।’
চীন : চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিজিটিএন মন্তব্য করেছে, যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও ইরাকে করা ভুল ইরানে পুনরাবৃত্তি করছে? মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক হস্তক্ষেপ অতীতে শুধু দীর্ঘমেয়াদি সংঘাত ও অস্থিতিশীলতাই ডেকে এনেছে।
পাকিস্তান : পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘আমরা এই অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধির ঝুঁকিতে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’ নোবেল শান্তি পুরস্কারের প্রার্থী হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন করার এক দিন পর যুক্তরাষ্ট্রের হামলার নিন্দা জানাল দেশটি।
যুক্তরাজ্য : যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, ‘ইরানের পারমাণবিক হুমকি ‘প্রশমনের’ জন্যই যুক্তরাষ্ট্র দেশটিতে হামলা চালিয়েছে। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি।’
বিল ক্লিনটন : সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন বলেছেন, ‘নেতানিয়াহু অনেক আগে থেকেই ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাচ্ছিলেন। কারণ এর মাধ্যমে তিনি চিরকাল ক্ষমতায় থাকতে পারবেন।’
ওমান : ওমান সম্প্রতি ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছিল। মার্কিন হামলাকে অবৈধ আগ্রাসন হিসেবে উল্লেখ করে ওমানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা এই ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং তারা মনে করে, এ ধরনের আক্রমণ সংঘাত আরো ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।
কাতার : কাতার বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর যেভাবে উত্তেজনা বাড়ছে, তা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিকভাবে ধ্বংসাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। সামরিক অভিযান বন্ধ করে দ্রুত কূটনৈতিক পথে সমস্যার সমাধানে ফিরে যেতে হবে।
ইরাক : ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করে এই হামলা গোটা অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে। এই সামরিক উত্তেজনা আরো বড় সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
ভেনিজুয়েলা : ভেনিজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান জিল বলেছেন, ইসরায়েলের অনুরোধে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার ওপর মার্কিন হামলার নিন্দা জানাচ্ছে ভেনিজুয়েলা।
মেক্সিকো : দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে জরুরি ভিত্তিতে কূটনৈতিক আলোচনায় বসার আহবান জানাচ্ছে মেক্সিকো।
কিউবা : দেশটি বলেছে, ‘ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন বোমাবাজির আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। এতে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা ভয়ানকভাবে বাড়তে পারে।’
সৌদি আরব : দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইরানের ঘটনাবলি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলার ঘটনায় সৌদি আরব গভীর উদ্বেগের সঙ্গে নজর রাখছে।
অস্ট্রেলিয়া : দেশটি বলেছে, ‘আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি, ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’
নিউজিল্যান্ড : নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সামরিক কর্মকাণ্ড অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এই উত্তেজনা যাতে আর না বাড়ে, তা নিশ্চিত করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
ইসরায়েল : ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক টেলিভিশন ভাষণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এই সাহসী সিদ্ধান্ত ইতিহাস বদলে দেবে।’ সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি