পলিটিক্যাল রিয়েলিজম মতে, ‘Conflict is inevitable’, অর্থাৎ সংঘর্ষ অনিবার্য। অনদিকে আইডিয়ালিস্ট দৃষ্টিভঙ্গি বলছে, ‘Peace is possible’ শান্তিও সম্ভব। এই দুটি তাত্ত্বিক অবস্থান পরস্পরবিরোধী মনে হলেও মানব সভ্যতার ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, অনেক সময় সংঘর্ষের মাধ্যমেই শান্তির পথ তৈরি হয়েছে। যুদ্ধ ও শান্তি একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত—একটি মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের মতো দুটি বাস্তবতা।
বিশেষ লেখা
কী করা যেতে পারে ইসরায়েলের আধিপত্যবাদ প্রতিরোধে
- ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী

আধিপত্য ও হেজিমনি : ইসরায়েল-ইরান সংঘাতকে সরলভাবে ধর্মীয় দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখা এক ধরনের বিশ্লেষণাত্মক ভ্রান্তি। প্রকৃতপক্ষে এটি একটি হেজিমনিক (যবমবসড়হু-ফত্রাবহ) সংঘর্ষ, যেখানে ধর্মের চাদরের আড়ালে চলছে ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা।
তবে বর্তমানে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপ মূলত দুটি উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষণ নিশ্চিত করে।
ইসরায়েলের এই আগ্রাসনকে ‘প্রিএম্পটিভ অ্যাকশন’ বা পূর্বপ্রস্তুতিমূলক আত্মরক্ষা বলা হলেও এটি মূলত এক ধরনের আগ্রাসী কৌশল, যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইনকে পাশ কাটিয়ে একতরফা শক্তি প্রয়োগ করা হয়। আগে ইরাক ও সিরিয়ার ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্র এই একই কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিল। এই আগ্রাসনের মাধ্যমে সামরিক শিল্প-কারখানাগুলো লাভবান হয়, অস্ত্র ব্যবসা প্রসার লাভ করে এবং তেলের বাজার অস্থিতিশীল করে ডলারের আধিপত্য পুনরুদ্ধার করা যায়। বিশ্বের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন জি৭ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন—এদের কার্যকর ভূমিকার অভাব ও মৌন সমর্থন এই সংঘাতকে আরো জটিল করে তুলছে। এমনকি পশ্চিমা গণমাধ্যমও এই আগ্রাসনের সমালোচনা করতে দ্বিধান্বিত, যা এক ধরনের কাঠামোগত পক্ষপাতমূলকতা নির্দেশ করে।
মানবতার পরাজয়ই হবে এই যুদ্ধের পরিণতি : ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ কোনো একক দ্বন্দ্ব নয়। এটি ইতিহাসের ধারাবাহিকতা, আধিপত্যবাদের বিস্তার, বৈশ্বিক নৈতিক দেউলিয়াত্ব এবং মানবতার প্রতিরোধের পরীক্ষার একটি অংশ। শান্তি ও সংঘর্ষের এই দ্বৈরথে, বিশ্ব কিসের পক্ষে দাঁড়াবে, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। যদি আজ আমরা নীরব থাকি, তাহলে আগামীকাল এই আগ্রাসনের শিকার হতে পারে আরো অনেকে—আর তখন হয়তো মানবতা বলে কিছু থাকবে না, থাকবে শুধু শক্তির খেলা। একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে আলোচিত এবং দাবি করা আদর্শ মানবতা হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। ইসরায়েলের ফিলিস্তিন এবং এখন ইরান আগ্রাসন মানবতার গোড়ায় যে আঘাত হেনেছে, তা নিঃসন্দেহে সভ্যতার জন্য লজ্জার। শিশু, নারী এবং নিরীহ জনগোষ্ঠী যখন বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়, তখন সেটা কেবল একটি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা অভিযান নয়, বরং একটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের দৃষ্টান্ত।
ইহুদি বুদ্ধিজীবী আভি শ্লেইমের মতো পণ্ডিত বারবার বলেছেন, ইসরায়েল তার জন্মলগ্ন থেকেই আন্তর্জাতিক আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একতরফা সীমানা সম্প্রসারণ করেছে এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। ইসরায়েলের এই আগ্রাসন যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি না হয়, তবে এর ফলাফল দিন দিন আরো ভয়াবহ হবে। প্রথমত, এটি পুরো মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে দেবে, রিফিউজি সমস্যা বাড়বে। দ্বিতীয়ত, বিশ্বজুড়ে মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা থেকে নতুন করে চরমপন্থা মাথাচাড়া দিতে পারে। তৃতীয়ত, এটি ইউক্রেন যুদ্ধ, ভারত-পাকিস্তান বিরোধ ও তাইওয়ান সংকটের মতো বিদ্যমান বৈশ্বিক সংঘর্ষকে আরো তীব্র করে তুলবে।
শান্তি সম্ভব, কিন্তু কিভাবে? : ন্যায়বিচার ছাড়া শান্তি স্থায়ী হতে পারে না। ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, নিরাপত্তা, সুনির্দিষ্ট সীমান্ত নির্ধারণ করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হলে এই ন্যায়বিচার পূর্ণতা পাবে না। ফলে শান্তি প্রচেষ্টা কেবল কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকবে, বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হবে। এ লক্ষ্যে ইসরায়েলকে ১৯৬৭ সালের সীমান্তে ফিরে যেতে হবে, দখলদারির অবসান ঘটাতে হবে এবং ফিলিস্তিনিদের সার্বভৌম অধিকার মেনে নিতে হবে। যুক্তি ও বাস্তবতার নিরিখে বলা যায়, যত দিন ‘ইহুদি প্রশ্ন’ রাজনৈতিকভাবে সমাধান না হবে এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ন্যায্য দাবিকে স্বীকৃতি না দেওয়া হবে, তত দিন মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি শুধু একটি অলীক কূটনৈতিক প্রতিশ্রুতি হিসেবেই রয়ে যাবে।
এই সংকটের সমাধানে শান্তির একমাত্র পথ হলো আন্তর্জাতিক দ্বৈতনীতির অবসান ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা এবং জাতিসংঘের নেতৃত্বে কার্যকর যুদ্ধাপরাধের বিচার নিশ্চিত করা, যাতে অপরাধীরা জবাবদিহির আওতায় আসে এবং ভবিষ্যতে কেউ এমন আগ্রাসনের সাহস না পায়। পাশাপাশি এই সংকট নিরসনে মুসলিম নেতৃত্বের সর্বোপরি কর্তব্য হবে ইহুদি মানবাধিকারকর্মী আভি শ্লেইমের মতো বিবেকবান বুদ্ধিজীবীদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাঁদের মতো আরো পশ্চিমা সমমনা কণ্ঠস্বরকে জোরালোভাবে এগিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা। কারণ ইসরায়েলের আগ্রাসী ও মানবতাবিরোধী আচরণের বিরুদ্ধে শুধু মুসলিম বিশ্ব নয়, বরং পশ্চিমা বিশ্ব থেকেও একটি ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
এই প্রশ্নকে কেবল মুসলিম বনাম ইহুদি—এমন সংকীর্ণ বাইনারিতে দেখা উচিত নয়। এতে বিষয়টির নৈতিক ও রাজনৈতিক গভীরতা খাটো হয়ে যায় এবং প্রকৃত সমস্যার কেন্দ্রে পৌঁছানো কঠিন হয়। বরং আন্দোলনটি যদি পশ্চিমা সমাজের ভেতর থেকেই বুদ্ধিজীবী, মানবাধিকারকর্মী এবং বিবেকবান নাগরিকদের মাধ্যমে বিস্তৃত হয়, তবে সেটি আন্তর্জাতিকভাবে আরো গ্রহণযোগ্যতা পাবে এবং ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কার্যকর চাপ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।
অতএব, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে এই সংকটকে বৈশ্বিক ন্যায়বিচার ও মানবতার প্রশ্ন হিসেবে উপস্থাপন করে মুসলিম নেতৃত্বের উচিত হবে এ ধরনের জোট গড়ে তোলা, যেখানে ধর্ম নয়, মানবতা হবে প্রতিরোধের ভিত্তি। আর এই ধরনের সমন্বিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই কেবল স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
লেখক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান।
সম্পর্কিত খবর

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল
সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে আবারও ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে
বিশেষ প্রতিনিধি

প্রায় দুই দশক পর জাতীয় সমাবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আগামীকাল শনিবার ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সমাবেশ হবে। বৃহৎ পরিসরে আয়োজিত এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত দলটির নেতাকর্মীরা।
সমাবেশ উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জামায়াত।
তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মৌলিক সংস্কার জরুরি। কোনো ষড়যন্ত্র যেন এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। অংশ নেবেন ইসলামী দলগুলোর নেতারা, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা, জুলাই আন্দোলনে শহীদদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিরা।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে আমাদের দল নানা নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসের রাজনৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে বাকস্বাধীনতা ও সাংবিধানিক অধিকার কিছুটা ফিরে এসেছে।
তিনি জানান, নির্বাচন সামনে রেখে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে ফ্যাসিবাদী হামলায় নিহত ব্যক্তিদের বিচারে দৃশ্যমান অগ্রগতি চান তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে একটি ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াত। দলটির পক্ষ থেকে এ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।
জুলাই মাসে নিহত ও আহতদের পুনর্বাসন এখনো সম্পূর্ণ হয়নি বলেও দাবি করেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল।
তিনি জানান, সমাবেশ সফল করতে একটি বাস্তবায়ন কমিটিসহ আটটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। লিফলেট, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ছাড়াও ভ্রাম্যমাণ মাইক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে সমাবেশের প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
সমাবেশে থাকবে ২০টি পয়েন্টে প্রায় ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক। ঢাকার আশপাশ থেকে আগতদের জন্য ১৫টি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
সমাবেশস্থলের ভেতরে ও বাইরে ১৫টি মেডিক্যাল বুথ থাকবে, প্রতিটিতে থাকবেন দুজন করে চিকিৎসক, জরুরি ওষুধ এবং অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা থাকবে।
ড্রোন ও ক্যামেরার মাধ্যমে ভিডিও ধারণ ও সরাসরি সম্প্র্রচারেরও আয়োজন থাকবে—এলইডি স্ক্রিন ছাড়াও ফেসবুক ও ইউটিউবেও সম্প্রচার করা হবে।
সমাবেশের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলেও জানান গোলাম পরওয়ার।
সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনি বলেন, ‘সারা দেশ থেকে মানুষ রেল, সড়ক ও নৌপথে সমাবেশে অংশ নিতে আসবে। এতে নগরবাসীর কিছুটা দুর্ভোগ হতে পারে। আমরা তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।’ তিনি জানান, সমাবেশ শুরু হবে দুপুর ২টায়। তবে সকাল ১০টা থেকেই সাংস্কৃতিক পরিবেশনা চলবে।
এ সময় গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনারও নিন্দা জানান গোলাম পরওয়ার। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ব্যর্থতার অভিযোগও করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের সাত দফা দাবিও তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো—অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ; সব গণহত্যার বিচার; মৌলিক রাষ্ট্রীয় সংস্কার; ‘জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র’ বাস্তবায়ন; ‘জুলাই শহীদ’ ও আহতদের পুনর্বাসন; পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন এবং এক কোটির বেশি প্রবাসী ভোটারের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মা’ছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, মতিউর রহমান আকন্দ, নূরুল ইসলাম বুলবুল, মো. সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।

তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোটার তালিকা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এর মাধ্যমে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ পাবেন যোগ্য নাগরিকরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদে খসড়াটি অনুমোদন দেওয়া হয়। তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক।
সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ আহম্মদ বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, অর্থাৎ যাঁদের বয়স ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ১৮ বছর হয়, তাঁরা পরবর্তী জানুয়ারি মাসের হালনাগাদ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। নির্বাচন কমিশন প্রতিবছরের ২ জানুয়ারি ওই খসড়া ভোটার তালিকা এবং ২ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, পরবর্তী নির্বাচনের আগে যেসব নাগরিকের বয়স ১৮ বছর হয়, অর্থাৎ ভোটার হওয়ার জন্য যোগ্য হন, তাঁরা ওই নির্বাচনে ভোটাধিকারের সুযোগ পান না।
ফয়েজ আহম্মদ আরো বলেন, এই বাস্তবতায় নির্বাচন কমিশন ভোটের তফসিল ঘোষণার আগে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, তাঁদের ভোটার তালিকায় নিয়ে আসাকে যৌক্তিক মনে করে। এ বিষয়ে উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ধরুন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন। তার সর্বোচ্চ দুই মাস আগে তফসিল ঘোষিত হয়।
ফয়েজ আহম্মদ বলেন, ‘আজ যে অধ্যাদেশের খসড়াটি অনুমোদন করা হলো, এর ফলে যখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে, তার অন্তত এক মাস আগ পর্যন্ত যেসব ব্যক্তির বয়স ১৮ বছর হবে, তাঁরা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন।’
মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ : গতকাল সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন করেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, অনেকের কিডনি ড্যামেজ হয়, অনেকে চোখে দেখতে পায় না, কর্নিয়া সংযোজন হলে অন্ধত্ব দূর করা যায়, এসব বিষয়ে বাংলাদেশের যে আইন ছিল সেটা অনেক দিন থেকে আপডেট হয়নি।
তিনি বলেন, নতুন এই অধ্যাদেশের ফলে অঙ্গ প্রতিস্থাপনটা খুব সহজ হবে। আগে যেমন ছিল অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য খুবই কাছের যেমন—ভাই, বোন, মা-বাবা থেকে নিতে পারতেন, এখন এটাকে একটু সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
অঙ্গ দান করার ক্ষেত্রে নতুন করে কাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, আগে যেমন ভাতিজা, ভাগিনা তারা অঙ্গ দান করতে পারত না। এখন তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, মানে পরিধি বাড়ানো হয়েছে।
প্রেস সচিব আরো বলেন, ‘এর ফলে আমরা মনে করি, বাংলাদেশের অনেককেই এখন কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য আর বিদেশে যাওয়া লাগবে না। বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোও এই সার্ভিস দিতে পারবে। আমরা মনে করি, এটা বাংলাদেশের জন্য যুগান্তকারী আইন।’
একই সভায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
গোয়েন্দা তথ্য ছিল, তবে এত পরিমাণ যে হবে সে তথ্য হয়তো ছিল না
নিজস্ব প্রতিবেদক

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রাকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি এখন অনেকটা শান্ত ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গোপালগঞ্জে গত বুধবার যে ঘটনা ঘটেছে, সে সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য ছিল কি না, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গোয়েন্দা তথ্য ছিল। তবে এত পরিমাণ যে হবে, ওই তথ্য হয়তো ছিল না।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা এসব তথ্য জানান।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গতকাল (বুধবার) এনসিপির সমাবেশে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার পর গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তিনি বলেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৫ জনকে আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এ ঘটনায় আমাদের ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে এনসিপি নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে এ বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ভবিষ্যতে আর যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, যত দিন পর্যন্ত সব অপরাধী ধরা না পড়বে, তত দিন পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। উপদেষ্টা এ সময় গোপালগঞ্জের ঘটনা লাইভ করায় সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট টিভি চ্যানেলগুলোকে ধন্যবাদ জানান। এর আগে উপদেষ্টা রাজধানীর রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে গোপালগঞ্জের ঘটনায় আহত পুলিশ সদস্যদের শারীরিক অবস্থা দেখতে যান।

আ. লীগ আমলের ৯৬ পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল
নিজস্ব প্রতিবেদক

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিবন্ধিত ৯৬টি পর্যবেক্ষক সংস্থার সব নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম।
তিনি বলেন, নতুন নীতিমালা জারি করা হয়েছে এবং আগের নীতিমালা বাতিল হয়েছে। তাই আগের নীতিমালার অধীন নিবন্ধিত সব পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেছে।
২০২৩ সালে দুই দফায় ৯৬ সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ নিবন্ধন দেওয়া হয়। এসব সংস্থার বেশির ভাগই ছিল নতুন। আগে কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা ছিল না।
একাধিক সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ছিল। সে সময় বেশ কিছু অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন পেতে উৎসাহ বোধ করেনি বা আবেদন করলেও নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সে সময় ব্যাপক সমালোচনা হয়।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে স্বচ্ছতা আনতে আগের সব পর্যবেক্ষক সংস্থাকেই বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে নতুন করে নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়। গতকাল সেই নতুন নীতিমালা-২০২৫ জারি ও ২০২৩ সালের নীতিমালা বাতিল করা হয়েছে। ফলে আগের নীতিমালা অনুসারে নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর নিবন্ধনও বাতিল করা হয়েছে।