তিনি বলেন, ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় তিনি নিশ্চিত নন, এই সংঘাত ‘কত দিন চলবে’। ট্রাম্প বলেন, ‘দুটি সহজ শব্দ—নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ। আমি আর সহ্য করব না।’
ইরানের হোয়াইট হাউসে আলোচনা করতে যাওয়ার যে ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প, তা নাকচ করে দিয়েছে ইরান। ইরানের জাতিসংঘ মিশনের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতির বরাত দিয়ে আলজাজিরার খবরে বলা হয়, কোনো ইরানি কর্মকর্তা কখনো হোয়াইট হাউসের দরজায় মাথা নোয়াতে যায়নি। তাঁর (ট্রাম্প) মিথ্যার চেয়ে আরও ঘৃণ্য বিষয় হলো তাঁর কাপুরুষোচিত হুমকি। তিনি (ট্রাম্প) হুমকি দিয়েছেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে হত্যা করবেন। ইরানের মিশন আরও জানিয়েছে, ইরান জোর-জবরদস্তিতে আলোচনা করে না, চাপিয়ে দেওয়া শান্তি গ্রহণ করবে না।
এদিকে খামেনি এক্সে দেওয়া পোস্টে ফার্সি ভাষায় ‘যুদ্ধ শুরু হলো’ বাক্যটি লিখলেও সেই যুদ্ধ কার বিরুদ্ধে, তা তিনি স্পষ্ট করেননি। তিনি ওই পোস্টের সঙ্গে একটি ছবিও দিয়েছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, এক ব্যক্তি তলোয়ার হাতে একটি দুর্গের প্রবেশদ্বারের সামনে দাঁড়িয়ে। তার পেছনে রয়েছে অনুগামীরা। আর আকাশ থেকে উল্কা ঝরছে!
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ব্যাপক সামরিক প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের দু’টি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ প্রস্তুত করা হয়েছে। ব্রিটেন থেকে আনা হয়েছে যুদ্ধবিমান। ইসরায়েলও প্রস্তুত। যেকোনো মুহূর্তে ইরানের ফরদো পারমাণবিক স্থাপনাসহ বিভিন্ন এলাকাকে বোমা মেরে উড়িয়ে দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। যদিও এতদিন পরে রাশিয়া ও চীন সোচ্চার হয়েছে। মুখ খুলেছে মুসলিমদের যেকোনো বিপদে পাশে দাঁড়ানো তুরস্কও। দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেছেন, ইরান আত্মরক্ষা করছে। তার ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। একথা সবাই বলছেন। ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক বার্তা দিয়েছে রাশিয়া। অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং সাফ জানিয়ে দিয়েছেন একটি দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও অখণ্ডতা লঙ্ঘনের বিরোধী তিনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনো যুদ্ধে যুক্ত হতে হলে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে অনুমোদন নিতে হয় কংগ্রেসের। সেই অনুমোদন না নিয়েই তিনি যুদ্ধে যুক্ত হবেন কি না তা নিয়ে বিতর্ক, সমালোচনা চলছে। তবে এর আগে অনুমোদন না নিয়েই মার্কিন সাবেক প্রশাসন বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ করেছে। বলা হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতাবলে যুক্তরাষ্ট্রের কমান্ডার ইন চিফ। তিনিও তা পারেন। ভয়াবহ যুদ্ধ উত্তেজনায় কাঁপছে মধ্যপ্রাচ্য। সম্ভবত এই যুদ্ধ থেকে যুক্তরাষ্ট্র বিরত থাকছে না। ভয়াবহ এই সংঘাত হয়তোবা পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। এমনটা টের পেয়ে ইরান তার প্রতিবেশী আরব দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা যেন যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের মাটি ব্যবহার করতে না দেয়।
সংকটের দ্রুত অবসান চেয়ে মধ্যস্থতার প্রস্তাব পুতিনের
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইসরায়েল-ইরান সংকট নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস-এর বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানিয়েছে, দুই নেতা চলমান সংকট নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন এবং দ্রুত সমাধানের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।
ফোনালাপে পুতিন বলেছেন, এই সংকটে মধ্যস্থতা করতে রাশিয়া প্রস্তুত। তিনি এ বিষয়ে অন্যান্য আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে হওয়া তাঁর আলোচনার অগ্রগতিও আমিরাত নেতাকে জানিয়েছেন।
বিশ্ব এখন ‘বিপর্যয় থেকে মাত্র কয়েক মিলিমিটার দূরে রয়েছে’
বিশ্ব এখন বিপর্যয়ের কিনারায় বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা। ড়শলভঠ তিনি মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের প্রসঙ্গ টেনে মারিয়া জাখারোভা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামোয় ইসরায়েলের প্রতিদিনকার হামলার কারণে বিশ্ব এখন ‘বিপর্যয় থেকে মাত্র কয়েক মিলিমিটার দূরে রয়েছে।’
এদিকে ইসরায়েল-ইরান সংঘাত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার যোগাযোগ চলছে বলে জানিয়েছেন রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ। রুশ বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্সের বরাত দিয়ে আলজাজিরা এ তথ্য জানায়।
এর আগে রিয়াবকভ সতর্ক করে দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সরাসরি সামরিক সহায়তা দিলে মধ্যপ্রাচ্যে পরিস্থিতি ভয়াবহভাবে অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে।
আরও সামরিক হস্তক্ষেপ ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে : গুতেরেস
গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস বলেছেন, নতুন করে আরও সামরিক হস্তক্ষেপ ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। গতকাল এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস এ কথা বলেন। ওই বিবৃতির বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাতের নতুন মাত্রায় তিনি ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’। মধ্যপ্রাচ্যে আরও সামরিক হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই সংঘাত যেন আন্তর্জাতিক পরিসরে ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য আমি সবাইকে জোরালোভাবে সতর্ক করছি।’
গুতেরেস আরও বলেন, যেকোনো নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। শুধু সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর জন্য নয়, পুরো অঞ্চল এবং বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
ইসরায়েলের পাশে থাকার জন্য ট্রাম্পকে ধন্যবাদ নেতানিয়াহুর
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘ইসরায়েলের পাশে থাকার জন্য’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সিএনএনের খবরে বলা হয়, নিজ দপ্তরের প্রকাশ করা এক ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, ‘ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র যে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে, তার জন্য আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানাই।’ নেতানিয়াহু জানান, তাদের মধ্যে নিয়মিত কথা হচ্ছে। গত রাতেও অত্যন্ত আন্তরিকভাবে কথা হয়েছে।
নতুন করে হামলা, পাল্টা হামলা
গতকালও ইরানের রাজধানী তেহরান লক্ষ্য করে দফায় দফায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) ব্রিফিংয়ের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, তেহরানে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাপনা ও মজুত কেন্দ্রগুলো লক্ষ্য করে নতুন হামলা চালানো হয়েছে। আইডিএফ জানায়, এর আগে তেহরানে ইসরায়েলের টানা তিন ঘণ্টার হামলায় সেন্ট্রিফিউজ তৈরির একটি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। বারজান সাদিক নামে একটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে বলা হয়েছে, পূর্ব তেহরানে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
ইরানও দফায় দফায় পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলে। ইসরায়েল লক্ষ্য করে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রও ছুড়েছে ইরান। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি এ কথা জানিয়েছে। ইরানের দাবি, ‘ফাত্তাহ’ নামের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে সফলভাবে প্রবেশ করেছে।
এদিকে ইরানের ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবস্থা অচল হয়েছে এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থাও বিঘ্নিত হচ্ছে।
ইরানি মিসাইল আটকানোর ক্ষমতা কমে আসছে : ইসরায়েলের ইরানি মিসাইল আটকানোর ক্ষমতা কমে আসছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল। মার্কিন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইসরায়েলিদের অন্যতম শক্তিশালী অ্যারো আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফুরিয়ে আসছে। অ্যারোর সক্ষমতা আসায় ইরানের দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল আটকাতে বেগ পেতে হবে ইরায়েলিদের। উল্লেখ্য, দখলদার ইসরায়েলে বেশ কয়েকটি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের থাড ও প্যাট্রিয়ট ব্যবস্থা ব্যবহার করে তারা। এ ছাড়া তাদের নিজস্ব আয়রন ডোম ও ডেভিড স্লিং নামেও দুটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। সূত্র : এপি, সিএনএন, রয়টার্স, আলজাজিরা