কিছু সন্দেহ ও অস্পষ্টতার মধ্যেও দেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফেরার পথে। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন হলে অপেক্ষা আরো আট মাসের। দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় সেনপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের প্রত্যাশার চেয়ে আরো দুই মাস বেশি সময় মাঠে থাকতে হবে সেনাবাহিনীকে। সেনাপ্রধান চেয়েছিলেন ডিসেম্বরেই নির্বাচন হোক।
বিশেষ লেখা
তবু আপন কর্তব্যে অবিচল সেনাবাহিনী
- বর্তমান উপদেষ্টা সরকার সেনাবাহিনীর সমর্থনের ওপর দাঁড়ানো : ফরহাদ মজহার
- জাতি হিসেবে আমরা একতাবদ্ধ থাকতে চাই, সেনাপ্রধানও সেটাই চান : মেজর জেনারেল (অব.) কাজী ইফতেখার-উল-আলম
কাজী হাফিজ

সমালোচকদের কারো মতে, বর্তমানে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব রয়েছে যে সরকারের ওপর, সেই সরকার প্রকৃত অর্থে সেনা সমর্থিত। বর্তমান উপদেষ্টা সরকার সেনাবাহিনীর সমর্থনের ওপর দাঁড়ানো। এটি অস্বীকার করার অর্থই হচ্ছে বাস্তবতাকে অস্বীকার এবং প্রকারান্তরে সরকারকে ভুল পথে নেওয়ার অপচেষ্টা করা। এ ছাড়া বলা হচ্ছে, সেনাপ্রধান ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ও সরব প্রচারে ভালো দিক হচ্ছে সেনাবাহিনী সেনাপ্রধানের নেতৃত্বে আগের চেয়ে আরো ঐক্যবদ্ধ।
মেজর জেনারেল (অব.) কাজী ইফতেখার-উল-আলমের মতে, সেনাপ্রধান দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ দেখতে চান, বিশৃঙ্খলা চান না।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে যদি চিন্তা করি, তাহলে বুঝতে পারব, পরিস্থিতি খুবই সংকটময়। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ—এসব আমাদের অর্থনীতির ওপর আরো নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক সেটাও আগের মতো সৌহার্দ্যপূর্ণ নয়। সব মিলিয়ে যে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে আমরা আছি, সেখান থেকে উত্তরণ হতেই হবে। আমাদের সামনের দিকে তাকাতে হবে এবং সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ না করলে আমরা এগোতে পারব না। জাতি হিসেবে আমরা অবশ্যই বীরের জাতি, এটি সামনের দিনগুলোতে আমরা প্রমাণ করতে পারব, এটা আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’
অবসরকালীন ছুটিতে থাকা সেনাবাহিনীর একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের মতে, দেশের রাজনৈতিক সংকটে সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীকেই বেশি ভুগতে হয়। তিনি গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের পর দীর্ঘ সময় সেনাবাহিনী মাঠে থাকায় সে সময় সেনাবাহিনীর অনেক ক্ষতি হয়। সেনাবাহিনীর পেশাদারি, তাদের রুটিন কাজের ব্যাঘাত ঘটে। প্রশিক্ষণ বিঘ্নিত হয়। সেনাপ্রধান তথা সেনাবাহিনী এ কারণেই দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে। দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার পক্ষে। সেনাপ্রধান দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকেই চাননি, রাজনৈতিক দল ও শক্তিগুলোর মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি হোক। তিনি সবাইকে সতর্ক করতে চেয়েছেন। দেশের এই ক্রান্তিকালে সেনাপ্রধান ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রশংসার। এটি যারা স্বীকার করে না বা সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে তাদের উদ্দেশ্য দেশ-জনগণের স্বার্থের পরিপন্থী বলেই মনে হয়।
সেনাপ্রধান নিজেও সেনাবাহিনীর প্রতি আক্রমণাত্মক কথা না বলার আহবান জানিয়ে বলেছেন, ‘একটা কমন জিনিস আমি দেখতে পাচ্ছি, সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধানের প্রতি বিদ্বেষ কারো কারো। কিন্তু কী কারণে, আজ পর্যন্ত আমি এটা খুঁজে পাইনি।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘আমরা হচ্ছি একমাত্র ফোর্স, যেটা আপনাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, দাঁড়িয়ে আছি প্ল্যাটফর্মে। অবকোর্স নেভি অ্যান্ড এয়ারফোর্স। নেভি, এয়ারফোর্স উই অল। আমাদের সাহায্য করেন, আমাদের আক্রমণ করবেন না। আমাদের অনুপ্রাণিত করেন, আমাদের উপদেশ দিন। আমাদের প্রতি আক্রমণ করবেন না। উপদেশ দিন, আমরা অবশ্যই ভালো উপদেশ গ্রহণ করব। আমরা একসঙ্গে থাকতে চাই এবং দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় শহীদ সেনা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবে ‘২০০৯ সালে পিলখানায় সংঘটিত নির্মম হত্যাকাণ্ডে শাহাদাতবরণকারী শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের স্মরণে’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ওই দিন তিনি সব পক্ষের প্রতি আহবান জানিয়ে আরো বলেন, নিজেরা কাদা ছোড়াছুড়ি, মারামারি ও কাটাকাটি করলে দেশ ও জাতির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে। এই দেশ আমাদের সবার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই সুখে-শান্তিতে থাকতে চাই। আমরা চাই না হানাহানি, কাটাকাটি, মারামারি।’
এ ছাড়া ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর তিনি সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ‘সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে হস্তক্ষেপ করতে দেব না, এটা আমার স্পষ্ট অঙ্গীকার।’
গত সোমবার সেনাপ্রধান জাতিসংঘের জোরপূর্বক গুম বিষয়ক কার্যনির্বাহী দলের (ডব্লিউজিইআইডি) ভাইস চেয়ারপারসন গ্রাজিনা বারানোওয়াস্কারকে জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিচারপ্রক্রিয়া ও মানবাধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তদন্ত প্রক্রিয়ায় সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান এবং দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশিষ্ট রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহারের বিশেষ একটি রাজনৈতিক অবস্থান রয়েছে বলে মনে করা হয়। তাঁর মতামত বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। তিনি মনে করেন, এই সরকার ‘সেনা সমর্থিত উপদেষ্টা সরকার’। গত জানুয়ারিতে কালের কণ্ঠের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেছিলেন। এখনো সেই অবস্থান পাল্টাননি।
গত ২৮ মে ফরহাদ মজহার তাঁর ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘কিছুদিন আগেও ভারতীয় গণমাধ্যম ক্রমাগত বাংলাদেশে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের বিরুদ্ধ সেনা অভ্যুত্থান ঘটানোর জন্য প্রবল উসকানি দিয়েছে। এখনো চলছে। সেটা সফল হয়নি। ভারতীয় গণমাধ্যমের এই প্রয়াসকে হালকাভাবে নেওয়ার উপায় নেই। এটা বাংলাদেশের প্রতি দিল্লির, অর্থাৎ মোদির নীতি। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে উসকানির প্রোপাগান্ডার বিপরীতে নিদেনপক্ষে আমাদের ভেবে দেখা উচিত, দিল্লি যেখানে বাংলাদেশে সেনা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে তাদের পছন্দের কাউকে বসাতে চায়, সেখানে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের বিরুদ্ধে কামান দাগানো আমাদের কর্তব্য কি না? আমরা আগুনে ঘি ঢালছি কেন?’ তিনি আরো লেখেন, ‘সেনাপ্রধানকে ব্যক্তিগতভাবে হেয় করা এবং প্রধান উপদেষ্টা ও সেনাপ্রধানের মধ্যে দ্বন্দ্ব্ব আরো বৃহৎ ও সাংঘর্ষিক করার রাজনীতি কি ভয়ংকর বিপদ টেনে আনবে না? ব্যক্তিগত আক্রমণ, কুৎসা রটনা এবং ভুয়া তথ্য প্রচার সেনাবাহিনী ও সেনা সমর্থিত উপদেষ্টা সরকারের মধ্যে দূরত্ব বৃদ্ধির রাজনীতিতে দিল্লি খুশি হবে। আর আমরা নাকি নিজের পায়ে কুড়াল মেরে ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়ছি? মহা বীর! ষড়যন্ত্র তত্ত্বের লজেন্স খুব মিষ্টি লাগে। আমাদের বিপুল আমোদ। বাংলাদেশ প্রশ্নে দিল্লির রাজনীতি বোঝা কি কঠিন? সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ উসকে দেওয়ার ভারতীয় দৃশ্যমান ও সরব প্রচারে ভালো দিক হচ্ছে সেনাবাহিনী সেনাপ্রধানের নেতৃত্বে আগের চেয়ে আরো ঐক্যবদ্ধ। আমাদের কর্তব্য নির্ধারণ মোটেও কঠিন ব্যাপার নয়। আশা করি, আমরা সতর্ক হতে শিখব।’
ফরহাদ মজহার আরো লেখেন, ‘শুরু থেকেই সেনাপ্রধান পরিষ্কার বলে আসছেন যে তিনি দীর্ঘকাল সেনাবাহিনীকে ক্যান্টনমেন্টের বাইরে রাখতে চান না। অতীতের অভিজ্ঞতা বলে, সেনাবাহিনীর দীর্ঘকাল সেনানিবাসের বাইরে থাকলে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে হুমকি তৈরি হয়, নানা স্বার্থান্বেষী মহলে সেনা সদস্য ও অফিসারদের বিভ্রান্ত ও ভুল কাজে ফুসলানোর সুযোগ পায়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকেই সেনাপ্রধান এই বক্তব্য নানা সময় দিয়েছেন। বরাবরই দ্রুত নির্বাচন চাওয়ার এটাই তাঁর প্রধান যুক্তি ছিল।’
চট্টগ্রাম বন্দর ও মানবিক করিডর জাতীয় নিরাপত্তা ও সামরিক স্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয় উল্লেখ করে ফরহাদ মজহারের বক্তব্য, ‘এসব বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার সেনাবাহিনীর সঙ্গে পরামর্শ করবে, সেটা খুবই যুক্তিসংগত। সেই ক্ষেত্রেও দূরত্ব তৈরি করে রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর শুধু মাল খালাস করার জেটি নয়, সামরিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশি করপোরেট ব্যবস্থাপনায় সামরিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার সুরক্ষা নিশ্চিত করা জাতীয় স্বার্থেই জরুরি। সামরিক ও নিরাপত্তা বিষয়াদির সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে আন্তরিক পরামর্শের গুরুত্ব জনগণ ও সরকার সবাইকেই বুঝতে হবে। এসব বিষয় আমলে না নিয়ে যাঁরা ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রোপাগান্ডার সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়েছেন এবং বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের জায়গা থেকে প্রধান উপদেষ্টা ও সেনাপ্রধানের সঙ্গে দ্বন্দ্ব মীমাংসার পরিবেশ তৈরি না করে আরো দূরত্ব বৃদ্ধি করে চলেছেন, বিনয়ের সঙ্গে আমরা তাঁদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করি। আমি বারবার এই দূরত্ব দ্রুত কমানোর কথা বলেছি।’
তিনি তাঁর পোস্টে আবারও বলেন, ‘আমরাও বারবার জনগণকে মনে করিয়ে দিচ্ছি যে বর্তমান উপদেষ্টা সরকার সেনাবাহিনীর সমর্থনের ওপর দাঁড়ানো। এই সরকারের আইনি বৈধতা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু সেনা সমর্থনের রাজনৈতিক মর্ম হচ্ছে সেনাবাহিনী গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত জনগণের অভিপ্রায়কেই ধারণ করে। সেই তাগিদেই তারা ড. ইউনূস ও উপদেষ্টা সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। আমরা এই অবস্থানকে সমর্থন করি।’
তবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সেনাপ্রধানের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে—এমন একটি ধারণা প্রচারের চেষ্টা হলেও বাস্তবতা ওই ধারণা সমর্থন করে না। ঈদুল আজহার দিনেও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সেনাপ্রধানকে সস্ত্রীক আন্তরিক অবস্থায় দেখা গেছে। একই দিনে সেনাপ্রধান সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ), ঢাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আহত রোগীদের খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি তাদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। পরে তিনি রাজধানীতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সেনা সদস্যদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে ঢাকায় বিভিন্ন সেনা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। সেনা সদস্যরাও সেনাপ্রধানকে পাশে পেয়ে অনুপ্রাণিত এবং অত্যন্ত আনন্দিত হন। তিনি তাঁদের সঙ্গে প্রীতিভোজেও অংশগ্রহণ করেন।
সম্পর্কিত খবর

মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী হত্যার প্রতিবাদ
সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকর্মী
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’র ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মীদের অংশগ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। গত রবিবার দুপুরে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় শুরু হওয়া বিক্ষোভ মিছিল শাহবাগ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মিটফোর্ড হাসপাতালে গিয়ে শেষ হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুর ১টার দিকে ধানমণ্ডির আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাবে উপস্থিত হয়ে ১০ মিনিট অবস্থান করেন। এরপর তাঁরা মিছিল নিয়ে শাহবাগ হয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে যান।
এ সময় হাসপাতাল ও আশপাশে থাকা বিএনপির ব্যানার ছিঁড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় কয়েকজনকে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবিসংবলিত ব্যানার পদদলিত করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার পর অনেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীর ছদ্মবেশে রাজপথে সক্রিয় হচ্ছে। কেউ কেউ আবার বিএনপির প্ল্যাটফর্মে ঢুকে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে।
রাজনৈতিক পরিচয় : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিক্ষোভের বেশ কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া ‘আইডিয়াল কলেজ শিক্ষার্থী’ ইয়ামিনকে তাঁর সহপাঠীরা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে চিহ্নিত করেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলায়। আগেও তাঁকে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে।
নেপথ্যে রাজনৈতিক হিসাব : রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. দিলারা চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এটি রাজনৈতিক দলগুলোর ভিত নষ্ট করার একটি অপচেষ্টা। এর ফলে আবারও ১/১১-এর মতো সংকট সৃষ্টি হতে পারে। রাজনৈতিক দলে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ বাড়ছে। সোহাগ, যিনি আগে হাজি সেলিমের সঙ্গে ছিলেন, এখন বিএনপির কর্মী। বিএনপি যদি নিজেকে রক্ষা করতে চায়, তাহলে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে।’
এ বিষয়ে জানতে কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদারের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
জানতে চাইলে ডিএমপি উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওই মিছিলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের উপস্থিতির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে নিষিদ্ধ যেকোনো দলের কার্যক্রম রুখে দিতে পুলিশ সব সময় প্রস্তুত রয়েছে। এর আগেও রাজধানীতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে যারা ঝটিকা মিছিল করেছে, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এই বিষয়টিও আমরা খতিয়ে দেখব।’
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খলীল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যারা গুপ্ত রাজনীতি করে এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করতে চায় তারা জল ঘোলা করতে এমন কর্মকাণ্ড করছে। তারা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারমান তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তিমূলক ভিডিও করেছে। তাদের ব্যানার পদদলিত করে আগুন জ্বালিয়েছে। যারা স্বৈরাচারের আমলে তাদের লুঙ্গির নিচে ছিল, তারাই এখন ঘোলা জলে মাছ শিকার করা চেষ্টা করছে। জনগণের কাছে তাদের অবস্থান না থাকার কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পেছনে থেকে গুপ্ত হামলা করার চেষ্টা করছে।’
তিনি বলেন, “পুলিশের তদন্তে এসেছে ‘ব্যাবসায়িক দ্বন্দ্ব’ থেকে সোহাগ হত্যাকাণ্ড। এর পরও আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে শোক জানিয়েছি, এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছি। একই সঙ্গে দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার জোর দাবিও জানিয়েছি।”

বড় ধরনের সহিংস অপরাধের সংখ্যা বাড়েনি : প্রেস উইং
১০ মাসে ৩৫৫৪ খুন, ৪১০৫ ধর্ষণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

গত ১০ মাসে (২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত) দেশে তিন হাজার ৫৫৪ জন খুনের ঘটনা ঘটেছে। একই সময়ে ডাকাতি হয়েছে ৬১০টি, দস্যুতা এক হাজার ৫২৬টি, দাঙ্গা ৯৭টি, ধর্ষণ চার হাজার ১০৫টি, এসিড নিক্ষেপ পাঁচটি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১২ হাজার ৭২৬টি, অপহরণ ৮১৯টি, সিঁধেল চুরি দুই হাজার ৩০৪টি, চুরি সাত হাজার ৩১০টি এবং এই সময়ে রুজুকৃত মামলার সংখ্যা এক লাখ ৪৪ হাজার ৯৫৫টি।
গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ১০ মাসের অপরাধ পরিসংখ্যানে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এসব পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে।
অপরাধ পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে দেশে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৩৬৭টি, খুন হয়েছে এক হাজার ৯৩৩টি এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে দুই হাজার ৭৪৪টি। এ সময় নারী নির্যাতন ছয় হাজার ১৪৪টি এবং শিশু নির্যাতনের দুই হাজার ১৫৯টি ঘটনা ঘটেছে।
এর আগের বছর ২০২৪ সালে ডাকাতি হয়েছিল ৪৯০টি, খুন চার হাজার ১১৪টি, ধর্ষণ চার হাজার ৩৯৪টি, নারী নির্যাতন ১০ হাজার ১৯৮টি এবং শিশু নির্যাতন দুই হাজার ৯৬৪টি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, চলতি বছর দেশে অপরাধের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন খবরে জনমনে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সরকারি অপরাধ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছর বড় ধরনের অপরাধের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে—এমন দাবি সঠিক নয়। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ মাসে বড় ধরনের অপরাধের প্রবণতা স্থিতিশীল রয়েছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, পরিসংখ্যানে বড় ধরনের অপরাধের দ্রুত বাড়ার কোনো লক্ষণ নেই। বাস্তবে বেশির ভাগ গুরুতর অপরাধের হার কমছে বা একই পর্যায়ে রয়েছে।
প্রেস উইং নাগরিকদের প্রতি সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে বলেছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ওপর আস্থা রাখতে হবে। কারণ অপরাধের হার মোটামুটি স্থিতিশীল, যাতে বোঝা যায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

মা-সন্তানসহ ৫ জেলায় সাতজনকে হত্যা
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

ময়মনসিংহের ভালুকায় দুই সন্তানসহ মাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জে শিশুকে হত্যা করে ঘরে লুকিয়ে রেখেছে সত্মা। এ নিয়ে দেশের পাঁচ জেলায় সাতজনকে খুন করা হয়েছে। আর তিন জেলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে চারজনের লাশ।
ভালুকা (ময়মনসিংহ) : পৌর এলাকার পনাশাইল রোডে এক ভাড়া বাসায় মা ও দুই সন্তানকে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলো নেত্রকোনার কেন্দুয়ার রফিকুল ইসলামের স্ত্রী ময়না বেগম (২৫), মেয়ে রাইসা (৭) ও ছেলে নীরব (২)।
স্থানীয় ও থানা সূত্রে জানা যায়, রফিকুল ইসলাম এখানে ভাড়া থেকে ভালুকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। রবিবার রাত ৮টার সময় তিনি কর্মস্থলে যান এবং গতকাল সকালে ফিরে বাসার বারান্দার দরজা তালাবদ্ধ দেখেন।
রফিকুলের ভাই নজরুল ইসলাম একই বাসায় পাশাপাশি কক্ষে থাকেন। নিজ এলাকার একটি হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামি নজরুল ভালুকায় অটো চালাতেন। ঘটনার পর থেকে তিনি নিরুদ্দেশ, তাঁর মোবাইল ফোনটিও বন্ধ।
সিরাজগঞ্জ : কামারখন্দ উপজেলায় সাত বছর বয়সী এক কন্যাশিশুকে হত্যার পর বস্তাবন্দি করে ঘরে লুকিয়ে রেখে এক সত্মা পালিয়ে যান। রবিবার রাত ১০টার দিকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে ওই রাতেই সত্মাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নিহত শিশু হাজেরা খাতুন উপজেলার কুটিরচর এলাকার হারুনার রশিদের মেয়ে। শিশুটির দাদি মনোয়ারা খাতুন জানান, রবিবার দুপুরে শিশু হাজেরা স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
এদিকে সিরাজগঞ্জ সদর ও তাড়াশ উপজেলা থেকে গতকাল সকালে দুই যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সদরে উদ্ধার হওয়া আনুমানিক ৩৫ বছর বয়সী যুবকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। সদর থানার এসআই শফিউল আলম জানান, তাঁর মাথা ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন আছে।
অন্যদিকে তাড়াশে নিহত সেলুনকর্মী শান্ত (২০) ঈশ্বরপুর গ্রামের শরিফুল ইসলামের ছেলে। তাড়াশ থানার ওসি জিয়াউর রহমান জানান, সকালে নিজ ঘর থেকে শান্তর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বারহাট্টা থানার ওসি কামরুল হাসান জানান, আহাদুলের সঙ্গে প্রতিবেশী মনহর আলী ও তাঁর চার ছেলে আলমগীর, অনিক, নির্ঝর ও বাবুর জমিসংক্রান্ত বিরোধ ছিল। তার জেরেই ওরা ঢাকা থেকে এসে হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
চট্টগ্রাম : পতেঙ্গা থানার কাটগড় এলাকায় পারিবারিক কলহের জেরে ছুরিকাঘাতে ফেরদৌসী আক্তার নামের এক নারী খুন হয়েছেন। রবিবার রাত ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ফেরদৌসী এলাকার লোকমান হোসেনের স্ত্রী। নিহতের স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিক কলহের জেরে ফেরদৌসীর দেবর তাঁর ঘাড়, পিঠ ও পেটে ছুরিকাঘাত করে।
নিহতের ভাই মামুন খান বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে আমার বোনকে তাঁর স্বামী, শাশুড়ি পরিবারের লোকেরা নির্যাতন করে আসছিল। আমরা একটি সিসিটিভির ফুটেজে দেখেছি, লোকমানের বড় ভাই সোলেমান ও ছোট ভাই রনির হাতে ছুরি। আমরা খুনিদের বিচার চাই।’
ঘটনার পর ফেরদৌসীর স্বামী লোকমানকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। শ্বশুরবাড়ির বাকি লোকজন পলাতক।
বারহাট্টা (নেত্রকোনা) : জমিসংক্রান্ত বিরোধে আহাদুল মিয়া (২৬) নামের এক যুবককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল দুপুরে তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে রবিবার রাতে উপজেলার বাউশী ইউনিয়নের শাসনউড়া গ্রামে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। আহাদুল মিয়া ওই গ্রামের সিদ্দিক মিয়ার ছেলে।
নরসিংদী : এক মাদক কারবারির বাড়ি থেকে সাজিদ হোসেন (২২) নামে এক তরুণের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের বাগহাটা টেকপাড়া গ্রামে দুলালের বাড়ি থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ বলছে, নিহত যুবকের বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। আবার যার বাড়ি থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে তারাও চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তবে নিহতর পরিবারের অভিযোগ, মাদক ব্যবসায়ী দুলালের বাড়িতে নির্যাতন করে সাজিদকে হত্যা করা হয়েছে।
পাবনা : পুকুরে ভাসমান অবস্থায় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে শহরের লাইব্রেরি বাজার এলাকার কলাবাগান কলোনির মিঠুর পুকুর থেকে এ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত যুবকের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তবে আনুমানিক বয়স হবে ৪০ বছর।
গাজীপুর : নিখোঁজের ছয় দিন পর এক শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বিকেলে মহানগরীর ধীরাশ্রম এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত নাবিলা কানিজ সাবা ধীরাশ্রমের দাখিনখান এলাকার নাসির মিয়ার মেয়ে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার শিশুটি বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে সন্ধান না পেয়ে রাতে শিশুটির মা খাদিজা বেগম সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। গতকাল বাড়ির পাশে ঝোপের ভেতর থেকে দুর্গন্ধ বের হতে থাকলে স্থানীয়রা বস্তাটির সন্ধান পায়। বস্তা খুলে সাবার গলিত লাশ পাওয়া যায়।

ফাঁকিবাজদের আতঙ্ক আয়কর গোয়েন্দা
হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন ১৮৩ ভিআইপি
নিজস্ব প্রতিবেদক

যাত্রা শুরুর মাত্র সাত মাসের মধ্যেই কর ফাঁকিবাজদের আতঙ্ক হয়ে উঠেছে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। এ সময় ১৮৩ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এক হাজার ৮৭৪ কোটি টাকার কর ফাঁকি উদঘাটন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে আদায় হয়েছে ১১৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বাকি টাকা আদায়ের প্রচেষ্টাও চলছে বলে জানা গেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, এক হাজার ৭৮৮টি বিভিন্ন শ্রেণির ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি ও অর্থপাচার মামলা তদন্ত করছে আয়কর গোয়েন্দা। এঁদের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, খেলোয়াড়, অভিনেতা-অভিনেত্রী, ডাক্তার, আইনজীবী, প্রকৌশলী, শিক্ষক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সব পর্যায়ের দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি রয়েছেন। এনবিআরের অধীন ৪১টি কর অঞ্চল ও দেশের ৬৪ জেলার করদাতারাও এ কার্যক্রমের আওতায় রয়েছেন।
এয়ার টিকিট সিন্ডিকেট, পরিবহন ব্যবসায়ী, শেয়ারবাজার, আমদানি ও মজুদকারী, চালান জালিয়াতকারী, জুয়াড়ি, ক্ষমতার অপব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির পাশাপাশি কমেছে জনদুর্ভোগ।
আয়কর গোয়েন্দার প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের ১৮ জানুয়ারি। তবে কর্মচারী নিয়োগ ও ভাড়া অফিসে স্থানান্তরের পর মূল কার্যক্রম চালু হয়েছিল ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর।
কর প্রশাসনে দক্ষ গোয়েন্দা গঠন, কর ফাঁকি, অর্থপাচার, বিভিন্ন আর্থিক অপরাধ শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া, রাজস্ব পুনরুদ্ধার করা, স্বচ্ছতা-জবাবদিহি, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, কর ফাঁকির তদন্তে অর্থের উৎস যাচাই করা ও দায়িত্বশীল অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে যৌথ কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্যে এই বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
জানা গেছে, বিশেষায়িত এই গোয়েন্দা ইউনিট অল্প সময়ের ব্যবধানে সফলতা দেখালেও তার নেই প্রয়োজনীয় জনবল ও স্থায়ী অফিস ভবন। শুরুতে এনবিআর ভবনে অস্থায়ী কার্যালয় থাকলেও পরে ভাড়া করা অফিসে যাবতীয় কাজ করছে রাজস্ব ফাঁকি ঠেকিয়ে দেওয়া প্রতিষ্ঠানটি।
জানতে চাইলে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের কমিশনার মো. আবদুর রকিব কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আয়কর গোয়েন্দা অল্প সময় ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই ইউনিটের সদস্যসংখ্যা কম হলেও তাঁরা মেধাবী ও পরিশ্রমী। তাঁদের কাজের প্রতি একাগ্রতা থাকায় আমরা সামগ্রিকভাবে ভালো করতে পারছি। তবে জনবল সংকট, প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট পেলে এই ইউনিট দেশের জন্য আরো অনেক কিছু করতে পারবে। আমরা চাই দেশে একটি নতুন কর সংস্কৃতি। যেখানে কেউ কর ফাঁকি দিতে পারবেন না।’
জানা গেছে, ভবিষ্যতে এই ইউনিটের জন্য ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপনের চিন্তা করা হচ্ছে। কর ফাঁকি-অর্থপাচার রোধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক, প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে। এ ছাড়া কর ফাঁকিবাজদের ডেটাবেইস তৈরি, নিয়মিত তল্লাশি-জব্দকরণ অভিযান পরিচালনা, কর নেটের বাইরে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কাজও করবে এই ইউনিট।