বিশ্বের সবচেয়ে স্বনামধন্য নিরাপত্তা বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান আটলান্টিক কাউন্সিলের মধ্যপ্রাচ্য কর্মসূচির একজন অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো রিচার্ড লেবারোনিস আশঙ্কা করছেন, ইরানে ইসরায়েলি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে পরম মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছে না থাকলেও শেষ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে। লেবারোনিস কুয়েতে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং ইসরায়েলে মার্কিন দূতাবাসের সাবেক ডেপুটি চিফ অব মিশন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অন্যদিকে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের নিরাপত্তা বিশ্লেষক বেথ স্যানার মনে করছেন, ইসরায়েল এখন ইরানের সঙ্গে সরাসরি ‘পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে’ জড়িয়ে পড়েছে এবং তারা ইরানের পক্ষ থেকে একটি ‘ব্যাপক’ প্রতিশোধমূলক হামলা আসবে বলে ধরে নিচ্ছে।
শুক্রবার ভোররাতে ইরানের রাজধানী তেহরান এবং আশপাশের এলাকায় অবস্থিত পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
রাতের আঁধারে চালানো এই হামলায় দেশটির অভিজাত বাহিনী রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধান জেনারেল হোসেইন সালামি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া রেভল্যুশনারি গার্ডের সদর দপ্তরেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। শিশু ও পরমাণু বিজ্ঞানীসহ আরো অনেকেই হতাহত হয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। এমন অবস্থায় ইসরায়েলে হামলার জবাবে ইরানের পাল্টা হামলা হতে পারে ‘ব্যাপক’।
সিএনএনের নিরাপত্তা বিশ্লেষক বেথ স্যানার বলেন, ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের টার্গেট করে অভিযান চালাচ্ছে। তাঁর ভাষায়, ‘তারা একেবারে ওপরের সারির নেতৃত্ব থেকেই শুরু করেছে, যেমন ইরানের চিফ অব জেনারেল স্টাফকে সরিয়ে দেওয়ার মতো পদক্ষেপ। এটা যেন আমাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যানকে হত্যা করার মতো ঘটনা। আপনি কল্পনা করতে পারেন, যুক্তরাষ্ট্রে এমনটা হলে কী হতো।
’
এই প্রেক্ষাপটে বেথ স্যানার বলেন, ‘ইসরায়েল ধারণা করছে এবার ইরানের জবাব হবে আগের চেয়ে অনেক বড় ও ভয়াবহ। কারণ ইরান এখন অস্তিত্বের সংকট দেখছে।’ তাঁর আশঙ্কা, এই পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যকে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের দিকেও নিয়ে যেতে পারে।
অন্যদিকে আটলান্টিক কাউন্সিলের নিরাপত্তা বিশ্লেষক রিচার্ড লেবারোনিস মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত এমন এক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে, যা তারা ঠিক এই মুহূর্তে চাইছে না। তাঁর মতে, ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলোতে ইসরায়েলের আক্রমণ ট্রাম্পের সতর্কতা এবং আলোচনা আহ্বানের সরাসরি অমান্য করেই হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করছে, যেটা নেতানিয়াহুর সরকার সমর্থন করেনি।
তিনি বলেন, এখন প্রশ্ন হলো, আমেরিকাকে এমন একটি যুদ্ধে টেনে আনা হবে কি না, বরং কিভাবে, যা তারা চায় না। তবে ইসরায়েলে ইরানের পাল্টা হামলা হলে ইসরায়েলও হামলা আর পাল্টা হামলার চক্রে পড়ে যাবে। সেই পরিস্থিতিতে ওয়াশিংটন সম্ভবত দূরে থাকতে পারবে না। কারণ ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে গেলে মার্কিন সামরিক সরবরাহ, গোয়েন্দা সহায়তা এবং কূটনৈতিক সহায়তা প্রয়োজন হবে। তিনি বলেন, উপসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন সেনাদের কিভাবে রক্ষা করা যায় সেটা নিয়ে ওয়াশিংটনকে অবশ্যই মাথা ঘামাতে হবে।
সূত্র : আটলান্টিক কাউন্সিল ও সিএনএন