এতে পূর্ণ উড্ডয়নের জন্য যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন ছিল, বিমানটি তা হারিয়ে ফেলেছিল। ফলে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও বিমানটিকে আর ওপরের দিকে নিতে পারেননি পাইলট।
জানা গেছে, উড্ডয়নের মাত্র পাঁচ মিনিট পর আহমেদাবাদের মেঘানি অঞ্চলের আবাসিক এলাকায় মেডিক্যাল হোস্টেলের ওপর এটি বিধ্বস্ত হয়। উড়োজাহাজটির ৫৩ যাত্রী যুক্তরাজ্যের নাগরিক বলে জানিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া। এ ছাড়া উড়োজাহাজে ১৬৯ জন ভারতের, একজন কানাডার এবং সাতজন পর্তুগালের নাগরিক ছিল।
এয়ার ইন্ডিয়ার এআই১৭১ ফ্লাইটটি আহমেদাবাদের সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাচ্ছিল। উড়োজাহাজটি দুপুর ১টা ৩৮ মিনিটে উড্ডয়ন করেছিল।
উড়োজাহাজের প্রধান পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন সুমিত সাবহারওয়াল ও সহকারী পাইলট ছিলেন ক্লাইভ কুন্ডার। প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উড্ডয়নের পরপরই বিমানে বড় ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়, যে কারণে দ্রুত নিচে নামতে গিয়ে উড়োজাহাজটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। দুর্ঘটনার পর আহমেদাবাদ বিমানবন্দর বন্ধ রাখা হয়েছে এবং সব ফ্লাইট চলাচল স্থগিত করা হয়েছে।
বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই সেখানে বিশালাকৃতির আগুনের কুণ্ডলী দেখা যায়। এরপর সেখান থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। বলা হচ্ছে, বিমানটি ৮২৫ ফুট উঁচু থেকে মাটিতে পড়েছে। দুর্ঘটনার পরপরই বিমানবন্দরের দিকে যাওয়া একাধিক সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বিমানে ছিলেন গুজরাটের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী : বিধ্বস্ত বিমানটিতে গুজরাটের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানিও ছিলেন। তিনি জেড ক্লাসের যাত্রী ছিলেন। লন্ডনে তিনি মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন বলে জানা গেছে। বিজয় রুপানি ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।
ভারত-যুক্তরাজ্যের প্রতিক্রিয়া : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় তিনি ‘বিস্মিত ও দুঃখিত’। তিনি বলেন, ‘এটি ভাষায় প্রকাশ করা যাচ্ছে না। এটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক।’ অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, আহমেদাবাদে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনার দৃশ্যগুলো ‘বিধ্বংসী’। তিনি বলেন, ‘সব সময় ঘটনার খবর রাখছি। গভীর দুঃখজনক এ সময়ে যাত্রী এবং তাদের পরিবারের জন্য আমি চিন্তিত।’
প্রধান উপদেষ্টার শোক : ভারতের আহমেদাবাদে বিমান দুর্ঘটনায় গভীর শোক জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে পাঠানো শোকবার্তায় লিখেছেন, ‘আহমদাবাদে বিমান দুর্ঘটনার মর্মান্তিক সংবাদে আমি গভীরভাবে শোকাহত। যেসব পরিবার তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছে, তাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।’
তারেক রহমানের শোক : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক বিবৃতিতে গুজরাটের বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি শোক ও সহানভূতি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘নিহতদের পরিবার ও ভারতবাসী যেন এই শোক সইতে পারে, তার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি।’
জামায়াত আমিরের শোক : ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনায় হতাহতদের প্রতি শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।’

ভারতের ইতিহাসে ভয়াবহ যত বিমান দুর্ঘটনা
এই দুর্ঘটনা ভারতের ইতিহাসে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনাগুলোর স্মৃতি আবারও সামনে এনেছে। নিচে ভারতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিমান দুর্ঘটনা তুলে ধরা হলো :
চরখি দাদরি দুর্ঘটনা (১৯৯৬) : ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর হরিয়ানার চরখি দাদরিতে সৌদি ও কাজাখ বিমানের সংঘর্ষ হয়। এতে দুই বিমানে থাকা ৩৪৯ জনের সবাই নিহত হয়। ভুল যোগাযোগের কারণে কাজাখ বিমানটি নির্ধারিত উচ্চতা অতিক্রম করে নিচে নেমে আসে এবং সংঘর্ষ ঘটে।
ম্যাঙ্গালুরু এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা (২০১০) : ২০১০ সালের ২২ মে দুবাই থেকে আসা এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের ফ্লাইট ৮১২ ম্যাঙ্গালুরু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় রানওয়ে ছাড়িয়ে খাদে পড়লে ১৬৬ জন আরোহীর মধ্যে ১৫৮ জনই নিহত হয়।
কনিষ্ক বোমা হামলা (১৯৮৫) : ১৯৮৫ সালের ২৩ জুন এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট ১৮২ যাত্রী নিয়ে কানাডা থেকে ভারত যাওয়ার পথে আয়ারল্যান্ড উপকূলে মাঝ আকাশে বিস্ফোরণে উড়ে যায়। বিমানে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পাতা বোমা ছিল বলে তদন্তে উঠে আসে। এ ঘটনায় ৩২৯ জনের মৃত্যু হয়, যা বিশ্ব ইতিহাসে বিমানে অন্যতম ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা।
কোঝিকোড় দুর্ঘটনা (২০২০) : বৃহস্পতিবারের (১২ জুন) আগে এয়ার ইন্ডিয়ার সর্বশেষ বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছিল ২০২০ সালে। সে সময় তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি ফ্লাইট কেরালার কোঝিকোড় বিমানবন্দরে বৃষ্টিভেজা রানওয়েতে অবতরণের সময় ছিটকে গিয়ে দুই ভাগ হয়ে যায়। এতে অন্তত ১৭ জনের মৃত্যু হয়। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, এনডিটিভি