ঢাকা, মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫
৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৯ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫
৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৯ মহররম ১৪৪৭
বিশেষ লেখা

উপদেষ্টারাই অন্তর্বর্তী সরকারকে বিতর্কিত করছেন

  • অদিতি করিম
শেয়ার
উপদেষ্টারাই অন্তর্বর্তী সরকারকে বিতর্কিত করছেন
অদিতি করিম

গত ৮ মে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্যাঙ্কক গেলেন। চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার আগে তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানে মেডিক্যাল বোর্ড ক্যান্সারে আক্রান্ত সাবেক রাষ্ট্রপতির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা আবদুল হামিদকে বিদেশে যাওয়ার পরামর্শ দেয়।

চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে সরকারের সব মহলকে অবহিত করে সাবেক রাষ্ট্রপতি ব্যাঙ্কক যান। তিনি যথারীতি তাঁর প্রাপ্য ভিআইপি সুবিধা ব্যবহার করে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করেন। এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। পরদিন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা গাজীপুরে গিয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেন যে তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতির পালানোর ব্যাপারে কিছুই জানতেন না।
যারা তাঁকে পালাতে সাহায্য করেছে তাদের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে তিনি পদত্যাগ করবেন বলেও ঘোষণা করেন।

তাঁর এই ঘোষণার পর হুলুস্থুল পড়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ইমিগ্রেশনে দায়িত্ব পালনকারী তিনজন পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। এ নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় তোলপাড়। আবদুল হামিদ পালিয়েছেন, না সরকারের অনুমতি নিয়ে বিদেশে গেছেনএ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলে বিতর্ক। উপদেষ্টাদের কেউই দায়িত্ব নিতে রাজি হন না। বরং তাঁরা রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই চেষ্টা শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি।
অবশেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ঘোষণা করেন যে তিনি ইন্টারপোলের মাধ্যমে আবদুল হামিদকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

কিন্তু এর মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে অনেক জল ঘোলা হতে থাকে। আবদুল হামিদের এই তথাকথিত পলায়নের ঘটনার জেরে আওয়ামী লীগ বিরোধী আন্দোলন তীব্র হয়। নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা সেলিনা হায়াত আইভীকে কোনো মামলা ছাড়াই গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁর বিরুদ্ধে দেওয়া হয় হত্যা মামলা। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি, জামায়াত ও হেফাজত আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের রাজনীতি জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু নাটকের আসল ক্লাইম্যাক্স এখনো বাকি। ৮ জুন আবদুল হামিদ চিকিৎসা শেষ করে দেশে ফিরে আসেন। একই বিমানে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি প্রোটোকল ব্যবহার করে নির্বিঘ্নে বাড়িতে চলে যান। মজার ব্যাপার হলো, যাওয়ার সময় তাঁর যে পোশাক ছিলশার্ট ও লুঙ্গি, আসার সময়ও তিনি সেই শার্ট-লুঙ্গি পরেই এসেছেন। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তিনি বেশ অসুস্থ।

যদি আবদুল হামিদ পালিয়ে গিয়ে থাকেন, তাহলে ফেরার সময় বিমানবন্দরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো না কেন? তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা ছিল বলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ একাধিক উপদেষ্টা অভিযোগ করেছেন। সেই হত্যা মামলায় তো তাঁকে গ্রেপ্তার করার কথা। কিন্তু তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো না। ঘটনার শেষ এখানেই নয়। এরপর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বললেন যে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ওয়ারেন্ট নেই। এ জন্য তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা আছে। এই মামলার তদন্ত চলছে। তদন্তে তাঁর হত্যাসংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে। তাহলে এত জল ঘোলা করা হলো কেন?

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিজেই বলেছিলেন, ইন্টারপোলের মাধ্যমে আবদুল হামিদকে ফিরিয়ে আনবেন। নিজেই বলেছিলেন যে আবদুল হামিদ পালিয়েছেন। আবার তিনিই বললেন যে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নেই। অর্থাৎ তাঁর বিরুদ্ধে যদি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা না থাকে, তিনি যদি নির্বিঘ্নে দেশে ফিরতে পারেন, তাহলে তিনি নির্বিঘ্নে বিদেশে যেতে পারবেন না কেন? এটি একটি ছোট্ট উদাহরণ।

উপদেষ্টারা কিভাবে সরকারকে বিতর্কিত, হাস্যকর করছেন? তাঁদের অযোগ্যতা, দায়িত্বহীনতা ও লাগামহীন কথাবার্তার কারণে সরকার পদে পদে বিব্রত হচ্ছে। এটি যেন ঠিক পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আরেক রূপ। আওয়ামী লীগের কিছু মন্ত্রীর কথা নিশ্চয়ই জনগণের মনে আছে। ওবায়দুল কাদেরের অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ বাচনভঙ্গি ও কথাবার্তা জাতিকে শুধু বিনোদনই দেয়নি, এক পর্যায়ে জাতির ঘৃণা তৈরি হয়েছিল তাঁর ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। হাছান মাহ্মুদ বা মোহাম্মদ আলী আরাফাতের মতো আওয়ামী লীগের নেতাদের অরুচিকর লাগামহীন বেপরোয়া কথাবার্তা আওয়ামী লীগকে ডুবিয়েছেএটি অনেকেই মনে করেন।

ঠিক একই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা দেখতে পাচ্ছি এই সরকারের কারো কারো মধ্যে। অতিকথন, এখতিয়ারবহির্ভূত বিষয়ে কথা বলা এবং একই বিষয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়ে তাঁরা নিজেরাই শুধু বিতর্কিত হচ্ছেন না, এই সরকারকে বিব্রত করছেন। সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলছেন। আমরা স্থানীয় সরকার বিষয়ক উপদেষ্টার কথাই ধরি না কেন। তিনি তরুণ ছাত্রনেতা। জুলাই বিপ্লবে তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। প্রথমে তিনি যুব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছিলেন। পরে তাঁকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় দেওয়া হয়। এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তিনি একের পর এক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছেন। এইসব বিতর্ক থেকে বেরোনোর জন্য যেসব কথাবার্তা বলছেন, সেই কথাবার্তা তাঁকে আরো বিতর্কিত করছে। তাঁর সহকারী একান্ত সচিব ৬০০ কোটি টাকার দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত।

শুধু এটি নয়, বিতর্ক যেন তাঁর নিত্যসঙ্গী। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের ব্যাপারে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল একটি রায় দেন। এই রায়টি প্রতিপালন না করে তাঁর মন্ত্রণালয় কালক্ষেপণ করেছে। সিটি করপোরেশন ঘিরে একটি উত্তপ্ত আন্দোলন সূচনা করার সুযোগ দিয়েছেন। এই আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁকে ব্যাপক সমালোচিত হতে হয়েছে। তার পরও তিনি গোঁ ধরে আছেন। ঠিক যেন আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই। বিষয়টি আপিল বিভাগ পর্যন্ত গড়িয়েছে। আপিল বিভাগ এটি পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে। নির্বাচন কমিশন বলেছে, তাদের কাজ শুধু গেজেট প্রকাশ করা। সেটি তারা করেছে। শপথের দায়িত্বে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এ নিয়ে কিছুই করেনি।

এবার ঈদুল আজহার সময় দেখা গেল একটি অভিভাবকহীন নগরী কী রকম জঞ্জালে পরিণত হতে পারে। আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার নেতৃত্বে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বীরদর্পে ঘোষণা করল যে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা সিটির সব আবর্জনা পরিষ্কার করা হবে। উত্তর সিটি করপোরেশনে তা-ও একটা সহনীয় অবস্থা ছিল। কিন্তু দক্ষিণে এখনো ময়লা-আবর্জনার স্তূপ পড়ে আছে। কারণ সিটি করপোরেশন অবরুদ্ধ। সেখানে কোনো কাজ হচ্ছে না। ফলে নগরের পরিচ্ছন্নতার কাজটিও এখন অচল হয়ে আছে। এই অবস্থার জন্য যে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা ছাড়া আর কেউ দায়ী নন, তা বুঝতে কারো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কেন তিনি গোঁ ধরে আছেন, কার স্বার্থ তিনি রক্ষা করছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন হতেই পারে। কিন্তু তাঁর কারণে পুরো ঢাকা শহরে একটা অরাজক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। আন্দোলন, বিশৃঙ্খলায় জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ধারণা হয়েছে যে বিশেষ একটি উদ্দেশ্যের কারণেই হয়তো তিনি এই ধরনের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন।

এবার ঈদে কোরবানির পশুর চামড়ার একটি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। এই নির্ধারিত মূল্যে যেন চামড়া বিক্রি হয় সে জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে বাণিজ্য উপদেষ্টার পক্ষ থেকে অভয়বাণী শোনানো হয়েছিল। কিন্তু এবার চামড়ার দাম এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। শুধু তা-ই নয়, চামড়ার বাজারে যেন হরিলুট হয়েছে। এরপর উপদেষ্টাদের স্ববিরোধী কথাবার্তা। শিল্প উপদেষ্টা বললেন যে সিন্ডিকেটের কারণেই চামড়ার ন্যায্যমূল্য পাননি বিক্রেতারা। আবার বাণিজ্য উপদেষ্টা সদর্পে বললেন, অন্য বছরের তুলনায় চামড়ার দাম এবার বেশি। এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা বলার উদ্দেশ্য কী সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এ রকম অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়। একজন উপদেষ্টা তিন মাস আগে যা বলেছেন, তিন মাস পর সেই অবস্থান থেকে কোথায় এলেন তা যদি নিজে একবার আয়নায় দেখতেন, তাহলে হয়তো নিজেরাই বিব্রত হতেন। পরিবেশ উপদেষ্টার কথাই ধরা যাক। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর পলিথিন নিয়ে তোলপাড় করলেন। সেই পলিথিন এখন বাজারে দেদার বিক্রি হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পলিথিনবিরোধী অভিযানও থেমে গেছে।

আমাদের যাঁরা সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, সব সময় তাঁদের দায়িত্বশীল আচরণ জনগণ প্রত্যাশা করে। তাঁরা যে কথাটা বলবেন সেটা তাঁদের ব্যক্তিগত কথা নয়। তাঁদের কথা সরকারের বক্তব্য। কাজেই তাঁরা যখন কোনো বক্তব্য দেবেন, সেই বক্তব্য অবশ্যই দায়িত্বশীল ও পরিমার্জিত হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এই সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা এত দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দিচ্ছেন যে বক্তব্যগুলো শুধু সরকারকেই নয়, জুলাই বিপ্লবকেই প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। আর এ কারণে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আমরা আশা করব, প্রধান উপদেষ্টা এই বিষয়টি নজরে আনবেন। ব্যর্থ, অযোগ্য এবং যাঁরা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে এবং উপদেষ্টা পরিষদ পরিবর্তন করে একটি নিরপেক্ষ অবয়ব তিনি ফিরিয়ে আনবেন, যাতে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন না ওঠে। কারণ এই উপদেষ্টামণ্ডলীর অনেককে নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠছে। তাঁদের নিরপেক্ষতা আজ প্রশ্নবিদ্ধ।

 

লেখক : নাট্যকার ও কলাম লেখক

ই-মেইল : auditekarim@gmail.com

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী হত্যার প্রতিবাদ

সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকর্মী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকর্মী

রাজধানীতে সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মীদের অংশগ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। গত রবিবার দুপুরে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় শুরু হওয়া বিক্ষোভ মিছিল শাহবাগ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মিটফোর্ড হাসপাতালে গিয়ে শেষ হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুর ১টার দিকে ধানমণ্ডির আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাবে উপস্থিত হয়ে ১০ মিনিট অবস্থান করেন। এরপর তাঁরা মিছিল নিয়ে শাহবাগ হয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে যান।

বিক্ষোভে তাঁদের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা যায়। স্লোগানে বলা হয়, চাঁদা লাগলে চাঁদা নে, আমার ভাইকে ফিরিয়ে দে, চাঁদাবাজদের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না ইত্যাদি।

এ সময় হাসপাতাল ও আশপাশে থাকা বিএনপির ব্যানার ছিঁড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় কয়েকজনকে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবিসংবলিত ব্যানার পদদলিত করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

এসব ঘটনার ভিডিও ধারণ করে আন্দোলনকারীরা। এ সময় ফ্যাসিস্ট আখ্যা দিয়ে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোকে বয়কটের ঘোষণাও দেয় তারা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার পর অনেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীর ছদ্মবেশে রাজপথে সক্রিয় হচ্ছে। কেউ কেউ আবার বিএনপির প্ল্যাটফর্মে ঢুকে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে।

সরকারকে বিব্রত করতে এবং বিএনপিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই এসব অপকৌশল।

রাজনৈতিক পরিচয় : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিক্ষোভের বেশ কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া আইডিয়াল কলেজ শিক্ষার্থী ইয়ামিনকে তাঁর সহপাঠীরা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে চিহ্নিত করেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলায়। আগেও তাঁকে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে।

একইভাবে মিছিলে অংশ নেওয়া মিজু নামে আরেক শিক্ষার্থী সাভারের বাসিন্দা এবং তিনিও ছাত্রলীগের কর্মী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

নেপথ্যে রাজনৈতিক হিসাব : রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. দিলারা চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, এটি রাজনৈতিক দলগুলোর ভিত নষ্ট করার একটি অপচেষ্টা। এর ফলে আবারও ১/১১-এর মতো সংকট সৃষ্টি হতে পারে। রাজনৈতিক দলে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ বাড়ছে। সোহাগ, যিনি আগে হাজি সেলিমের সঙ্গে ছিলেন, এখন বিএনপির কর্মী। বিএনপি যদি নিজেকে রক্ষা করতে চায়, তাহলে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদারের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

জানতে চাইলে ডিএমপি উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ওই মিছিলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের উপস্থিতির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে নিষিদ্ধ যেকোনো দলের কার্যক্রম রুখে দিতে পুলিশ সব সময় প্রস্তুত রয়েছে। এর আগেও রাজধানীতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে যারা ঝটিকা মিছিল করেছে, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এই বিষয়টিও আমরা খতিয়ে দেখব।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খলীল কালের কণ্ঠকে বলেন, যারা গুপ্ত রাজনীতি করে এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করতে চায় তারা জল ঘোলা করতে এমন কর্মকাণ্ড করছে। তারা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারমান তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তিমূলক ভিডিও করেছে। তাদের ব্যানার পদদলিত করে আগুন জ্বালিয়েছে। যারা স্বৈরাচারের আমলে তাদের লুঙ্গির নিচে ছিল, তারাই এখন ঘোলা জলে মাছ শিকার করা চেষ্টা করছে। জনগণের কাছে তাদের অবস্থান না থাকার কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পেছনে থেকে গুপ্ত হামলা করার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, পুলিশের তদন্তে এসেছে ব্যাবসায়িক দ্বন্দ্ব থেকে সোহাগ হত্যাকাণ্ড। এর পরও আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে শোক জানিয়েছি, এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছি। একই সঙ্গে দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার জোর দাবিও জানিয়েছি।

মন্তব্য
বড় ধরনের সহিংস অপরাধের সংখ্যা বাড়েনি : প্রেস উইং

১০ মাসে ৩৫৫৪ খুন, ৪১০৫ ধর্ষণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
১০ মাসে ৩৫৫৪ খুন, ৪১০৫ ধর্ষণ

গত ১০ মাসে (২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত) দেশে তিন হাজার ৫৫৪ জন খুনের ঘটনা ঘটেছে। একই সময়ে ডাকাতি হয়েছে ৬১০টি, দস্যুতা এক হাজার ৫২৬টি, দাঙ্গা ৯৭টি, ধর্ষণ চার হাজার ১০৫টি, এসিড নিক্ষেপ পাঁচটি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১২ হাজার ৭২৬টি, অপহরণ ৮১৯টি, সিঁধেল চুরি দুই হাজার ৩০৪টি, চুরি সাত হাজার ৩১০টি এবং এই সময়ে রুজুকৃত মামলার সংখ্যা এক লাখ ৪৪ হাজার ৯৫৫টি।

গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ১০ মাসের অপরাধ পরিসংখ্যানে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এসব পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশে বড় ধরনের সহিংস অপরাধের সংখ্যা বাড়েনি। 

অপরাধ পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে দেশে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৩৬৭টি, খুন হয়েছে এক হাজার ৯৩৩টি এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে দুই হাজার ৭৪৪টি। এ সময় নারী নির্যাতন ছয় হাজার ১৪৪টি এবং শিশু নির্যাতনের দুই হাজার ১৫৯টি ঘটনা ঘটেছে।

এর আগের বছর ২০২৪ সালে ডাকাতি হয়েছিল ৪৯০টি, খুন চার হাজার ১১৪টি, ধর্ষণ চার হাজার ৩৯৪টি, নারী নির্যাতন ১০ হাজার ১৯৮টি এবং শিশু নির্যাতন দুই হাজার ৯৬৪টি।

২০২৩ সালে ডাকাতি হয়েছিল ৩১৯টি, খুন তিন হাজার ২৩টি, ধর্ষণ পাঁচ হাজার ১৯১টি, নারী নির্যাতন ১১ হাজার ২৭টি এবং শিশু নির্যাতন দুই হাজার ৭১৩টি। ২০২২ সালে ডাকাতি হয়েছিল ৪০৬টি, খুন তিন হাজার ১২৬টি, ধর্ষণ ছয় হাজার ৩২টি, নারী নির্যাতন ১২ হাজার ৫১৮টি এবং শিশু নির্যাতন তিন হাজার ২০৫টি। ২০২১ সালে ডাকাতি হয়েছিল ৩০৮টি, খুন তিন হাজার ২১৪টি, ধর্ষণ ছয় হাজার ৩৪১টি, নারী নির্যাতন ১২ হাজার ৮৫৫টি এবং শিশু নির্যাতন দুই হাজার ৯২৮টি। ২০২০ সালে ডাকাতি হয়েছিল ৩০২টি, খুন তিন হাজার ৫৩৯টি, ধর্ষণ ছয় হাজার ৫৫৫টি, নারী নির্যাতন ১৩ হাজার ৪৩১টি এবং শিশু নির্যাতন দুই হাজার ৫১৫টি।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, চলতি বছর দেশে অপরাধের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন খবরে জনমনে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সরকারি অপরাধ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছর বড় ধরনের অপরাধের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছেএমন দাবি সঠিক নয়। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ মাসে বড় ধরনের অপরাধের প্রবণতা স্থিতিশীল রয়েছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, পরিসংখ্যানে বড় ধরনের অপরাধের দ্রুত বাড়ার কোনো লক্ষণ নেই। বাস্তবে বেশির ভাগ গুরুতর অপরাধের হার কমছে বা একই পর্যায়ে রয়েছে।

তবে কিছু নির্দিষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে সামান্য বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা গেলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

প্রেস উইং নাগরিকদের প্রতি সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে বলেছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ওপর আস্থা রাখতে হবে। কারণ অপরাধের হার মোটামুটি স্থিতিশীল, যাতে বোঝা যায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

মা-সন্তানসহ ৫ জেলায় সাতজনকে হত্যা

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
মা-সন্তানসহ ৫ জেলায় সাতজনকে হত্যা

ময়মনসিংহের ভালুকায় দুই সন্তানসহ মাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জে শিশুকে হত্যা করে ঘরে লুকিয়ে রেখেছে সত্মা। এ নিয়ে দেশের পাঁচ জেলায় সাতজনকে খুন করা হয়েছে। আর তিন জেলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে চারজনের লাশ।

কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত :

ভালুকা (ময়মনসিংহ) : পৌর এলাকার পনাশাইল রোডে এক ভাড়া বাসায় মা ও দুই সন্তানকে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলো নেত্রকোনার কেন্দুয়ার রফিকুল ইসলামের স্ত্রী ময়না বেগম (২৫), মেয়ে রাইসা (৭) ও ছেলে নীরব (২)।

স্থানীয় ও থানা সূত্রে জানা যায়, রফিকুল ইসলাম এখানে ভাড়া থেকে ভালুকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। রবিবার রাত ৮টার সময় তিনি কর্মস্থলে যান এবং গতকাল সকালে ফিরে বাসার বারান্দার দরজা তালাবদ্ধ দেখেন।

দীর্ঘ সময় ডাকাডাকি করেও সাড়াশব্দ না পেয়ে অন্য একজনকে নিয়ে তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে বিছানার ওপর স্ত্রী ও দুই সন্তানের গলাকাটা লাশ পড়ে থাকতে দেখেন।

রফিকুলের ভাই নজরুল ইসলাম একই বাসায় পাশাপাশি কক্ষে থাকেন। নিজ এলাকার একটি হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামি নজরুল ভালুকায় অটো চালাতেন। ঘটনার পর থেকে তিনি নিরুদ্দেশ, তাঁর মোবাইল ফোনটিও বন্ধ।

সিরাজগঞ্জ : কামারখন্দ উপজেলায় সাত বছর বয়সী এক কন্যাশিশুকে হত্যার পর বস্তাবন্দি করে ঘরে লুকিয়ে রেখে এক সত্মা পালিয়ে যান। রবিবার রাত ১০টার দিকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে ওই রাতেই সত্মাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নিহত শিশু হাজেরা খাতুন উপজেলার কুটিরচর এলাকার হারুনার রশিদের মেয়ে। শিশুটির দাদি মনোয়ারা খাতুন জানান, রবিবার দুপুরে শিশু হাজেরা স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।

এদিকে ছেলের বউ রুবি ওষুধ আনার কথা বলে তার নিজের দুই সন্তান রেখে বাড়ির বাইরে গেলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত সে বাড়ি ফিরেনি। তার যমজ শিশু দুটি নিজেদের ঘরের ভেতর যেতে ভয় পাচ্ছিল। সন্দেহ হলে ঘরের মধ্যে খোঁজাখুঁজি করে খাটের নিচ থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় হাজেরার মরদেহ পাওয়া যায়। 

এদিকে সিরাজগঞ্জ সদর ও তাড়াশ উপজেলা থেকে গতকাল সকালে দুই যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সদরে উদ্ধার হওয়া আনুমানিক ৩৫ বছর বয়সী যুবকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। সদর থানার এসআই শফিউল আলম জানান, তাঁর মাথা ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন আছে। 

অন্যদিকে তাড়াশে নিহত সেলুনকর্মী শান্ত (২০) ঈশ্বরপুর গ্রামের শরিফুল ইসলামের ছেলে। তাড়াশ থানার ওসি জিয়াউর রহমান জানান, সকালে নিজ ঘর থেকে শান্তর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। 

বারহাট্টা থানার ওসি কামরুল হাসান জানান, আহাদুলের সঙ্গে প্রতিবেশী মনহর আলী ও তাঁর চার ছেলে আলমগীর, অনিক, নির্ঝর ও বাবুর জমিসংক্রান্ত বিরোধ ছিল। তার জেরেই ওরা ঢাকা থেকে এসে হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

চট্টগ্রাম : পতেঙ্গা থানার কাটগড় এলাকায় পারিবারিক কলহের জেরে ছুরিকাঘাতে ফেরদৌসী আক্তার নামের এক নারী খুন হয়েছেন। রবিবার রাত ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত ফেরদৌসী এলাকার লোকমান হোসেনের স্ত্রী। নিহতের স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিক কলহের জেরে ফেরদৌসীর দেবর তাঁর ঘাড়, পিঠ ও পেটে ছুরিকাঘাত করে।

নিহতের ভাই মামুন খান বলেন, বিয়ের পর থেকে আমার বোনকে তাঁর স্বামী, শাশুড়ি পরিবারের লোকেরা নির্যাতন করে আসছিল। আমরা একটি সিসিটিভির ফুটেজে দেখেছি, লোকমানের বড় ভাই সোলেমান ও ছোট ভাই রনির হাতে ছুরি। আমরা খুনিদের বিচার চাই।

ঘটনার পর ফেরদৌসীর স্বামী লোকমানকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। শ্বশুরবাড়ির বাকি লোকজন পলাতক।

বারহাট্টা (নেত্রকোনা) : জমিসংক্রান্ত বিরোধে আহাদুল মিয়া (২৬) নামের এক যুবককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল দুপুরে তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে রবিবার রাতে উপজেলার বাউশী ইউনিয়নের শাসনউড়া গ্রামে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। আহাদুল মিয়া ওই গ্রামের সিদ্দিক মিয়ার ছেলে।

নরসিংদী : এক মাদক কারবারির বাড়ি থেকে সাজিদ হোসেন (২২) নামে এক তরুণের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের বাগহাটা টেকপাড়া গ্রামে দুলালের বাড়ি থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ বলছে, নিহত যুবকের বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। আবার  যার বাড়ি থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে তারাও চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তবে নিহতর পরিবারের অভিযোগ, মাদক ব্যবসায়ী দুলালের বাড়িতে নির্যাতন করে সাজিদকে হত্যা করা হয়েছে।

পাবনা : পুকুরে ভাসমান অবস্থায় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে শহরের লাইব্রেরি বাজার এলাকার কলাবাগান কলোনির মিঠুর পুকুর থেকে এ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত যুবকের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তবে আনুমানিক বয়স হবে ৪০ বছর।

গাজীপুর : নিখোঁজের ছয় দিন পর এক শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বিকেলে মহানগরীর ধীরাশ্রম এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত নাবিলা কানিজ সাবা ধীরাশ্রমের দাখিনখান এলাকার নাসির মিয়ার মেয়ে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার শিশুটি বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে সন্ধান না পেয়ে রাতে শিশুটির মা খাদিজা বেগম সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। গতকাল বাড়ির পাশে ঝোপের ভেতর থেকে দুর্গন্ধ বের হতে থাকলে স্থানীয়রা বস্তাটির সন্ধান পায়। বস্তা খুলে সাবার গলিত লাশ পাওয়া যায়।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
ফাঁকিবাজদের আতঙ্ক আয়কর গোয়েন্দা

হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন ১৮৩ ভিআইপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন ১৮৩ ভিআইপি

যাত্রা শুরুর মাত্র সাত মাসের মধ্যেই কর ফাঁকিবাজদের আতঙ্ক হয়ে উঠেছে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। এ সময় ১৮৩ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এক হাজার ৮৭৪ কোটি টাকার কর ফাঁকি উদঘাটন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে আদায় হয়েছে ১১৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বাকি টাকা আদায়ের প্রচেষ্টাও চলছে বলে জানা গেছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, এক হাজার ৭৮৮টি বিভিন্ন শ্রেণির ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি ও অর্থপাচার মামলা তদন্ত করছে আয়কর গোয়েন্দা। এঁদের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, খেলোয়াড়, অভিনেতা-অভিনেত্রী, ডাক্তার, আইনজীবী, প্রকৌশলী, শিক্ষক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সব পর্যায়ের দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি রয়েছেন। এনবিআরের অধীন ৪১টি কর অঞ্চল ও দেশের ৬৪ জেলার করদাতারাও এ কার্যক্রমের আওতায় রয়েছেন।

এয়ার টিকিট সিন্ডিকেট, পরিবহন ব্যবসায়ী, শেয়ারবাজার, আমদানি ও মজুদকারী, চালান জালিয়াতকারী, জুয়াড়ি, ক্ষমতার অপব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির পাশাপাশি কমেছে জনদুর্ভোগ।

কর ফাঁকির তথ্য পাওয়ায় শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ করে রেখেছে আয়কর গোয়েন্দা। এই গোয়েন্দা ইউনিটে চালুর অপেক্ষায় ডিজিটাল অফিস ম্যানেজমেন্ট ও ডেটা এনালিসিস ব্যবস্থা।

আয়কর গোয়েন্দার প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের ১৮ জানুয়ারি। তবে কর্মচারী নিয়োগ ও ভাড়া অফিসে স্থানান্তরের পর মূল কার্যক্রম চালু হয়েছিল ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর।

প্রতিষ্ঠানটির কমিশনার হিসেবে শুরু থেকেই যুক্ত আছেন আয়কর ক্যাডারের ১৮ ব্যাচের কর্মকর্তা মো. আবদুর রকিব। তাঁর নেত্বত্বে বিভিন্ন পর্যায়ের মেধাবী আয়কর কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে আয়কর গোয়েন্দারা তাঁদের লক্ষ্য অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছেন।

কর প্রশাসনে দক্ষ গোয়েন্দা গঠন, কর ফাঁকি, অর্থপাচার, বিভিন্ন আর্থিক অপরাধ শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া, রাজস্ব পুনরুদ্ধার করা, স্বচ্ছতা-জবাবদিহি, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, কর ফাঁকির তদন্তে অর্থের উৎস যাচাই করা ও দায়িত্বশীল অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে যৌথ কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্যে এই বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

জানা গেছে, বিশেষায়িত এই গোয়েন্দা ইউনিট অল্প সময়ের ব্যবধানে সফলতা দেখালেও তার নেই প্রয়োজনীয় জনবল ও স্থায়ী অফিস ভবন। শুরুতে এনবিআর ভবনে অস্থায়ী কার্যালয় থাকলেও পরে ভাড়া করা অফিসে যাবতীয় কাজ করছে রাজস্ব ফাঁকি ঠেকিয়ে দেওয়া প্রতিষ্ঠানটি।

এ ছাড়া লজিস্টিক সীমাবদ্ধতা, যানবাহন, গোয়েন্দা কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থারও ঘাটতি আছে এই ইউনিটে।

জানতে চাইলে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের কমিশনার মো. আবদুর রকিব কালের কণ্ঠকে বলেন, আয়কর গোয়েন্দা অল্প সময় ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই ইউনিটের সদস্যসংখ্যা কম হলেও তাঁরা মেধাবী ও পরিশ্রমী। তাঁদের কাজের প্রতি একাগ্রতা থাকায় আমরা সামগ্রিকভাবে ভালো করতে পারছি। তবে জনবল সংকট, প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট পেলে এই ইউনিট দেশের জন্য আরো অনেক কিছু করতে পারবে। আমরা চাই দেশে একটি নতুন কর সংস্কৃতি। যেখানে কেউ কর ফাঁকি দিতে পারবেন না।

জানা গেছে, ভবিষ্যতে এই ইউনিটের জন্য ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপনের চিন্তা করা হচ্ছে। কর ফাঁকি-অর্থপাচার রোধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক, প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে। এ ছাড়া কর ফাঁকিবাজদের ডেটাবেইস তৈরি, নিয়মিত তল্লাশি-জব্দকরণ অভিযান পরিচালনা, কর নেটের বাইরে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কাজও করবে এই ইউনিট।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ