ঢাকা, শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫
২৭ আষাঢ় ১৪৩২, ১৬ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫
২৭ আষাঢ় ১৪৩২, ১৬ মহররম ১৪৪৭
এপ্রিলে নির্বাচন ঘোষণা, লন্ডনে ড. ইউনূস-তারেক বৈঠক শুক্রবার

রাজনীতিতে নতুন মোড়

  • শীর্ষ বৈঠকে পরিস্থিতি পাল্টানোর আশা
  • নির্বাচনের ঘোষিত সময় নিয়ে রাজনীতিতে কালো মেঘ
কাজী হাফিজ
কাজী হাফিজ
শেয়ার
রাজনীতিতে নতুন মোড়

এবার ঈদুল আজহার ছুটিতে দেশবাসীর কাছে প্রায় আচমকা এই ঘোষণা পৌঁছে যায় যে আগামী এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ঈদের আগের দিন বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া ভাষণে এই ঘোষণায় রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ চলমান। বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোর জন্য এই ঘোষণা অস্বস্তির। বাম গণতান্ত্রিক জোটের দলগুলোর মধ্যেও ক্ষোভ।

ডিসেম্বরেই নির্বাচন চাই, তাদের এই দাবি উপেক্ষিত হয়েছে বলে দলগুলো মনে করে। বিএনপি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং প্রধান উপদেষ্টা শব্দ চয়নে রাজনৈতিক ভব্যতার সীমা অতিক্রম করেছেন বলে অভিযোগ করেন। বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার অভিলাষ ফুটে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন। অন্যদিক জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ইসলামী দল এবং এনসিপি নির্বাচনের ঘোষিত সময় সম্পর্কে শর্ত দিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে।

সার্বিক এই অবস্থায় কী হতে যাচ্ছে দেশের পরিস্থিতিএই প্রশ্ন এখন সর্বত্র।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা মনে করছেন, বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের আপত্তি উপেক্ষা করে প্রধান উপদেষ্টা যদি এপ্রিলেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অনড় থাকেন তাহলে দেশের রাজনীতিতে সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি হবে। ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের মিটিংয়ের পর আসলে বোঝা যাবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে বা যাবে। আবার কারো মত, রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত দেশের স্বার্থে মতপার্থক্য এড়িয়ে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুসারে এপ্রিলের প্রথমার্ধেই নির্বাচন হচ্ছেএই ধারণা মাথায় রেখে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া।

বিশেষজ্ঞ মত : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ মনে করেন, বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের আপত্তি উপেক্ষা করে প্রধান উপদেষ্টা যদি এপ্রিলেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অনড় থাকেন তাহলে দেশের রাজনীতিতে সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি হবে।

কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনকে উৎসবমুখর পরিবেশে দেখতে চায়। রাজনৈতিক দলগুলোও নির্বাচন এনজয় করে। এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন হলে রোজার মাস, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাএসব কারণে সাধারণ মানুষের কাছে নির্বানের আকর্ষণ নষ্ট হয়ে যাবে। বিএনপিসহ বিভিন্ন দল এসব বিবেচনা করেই এপ্রিলে নির্বাচনের বিরোধিতা করছে।

এসব দল মনে করছে, ডিসেম্বরে নির্বাচনের পর নতুন বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সরকার গঠন হোক। নির্বাচন কমিশনও ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে আছে। সেনাবাহিনীও ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর সেনানিবাসে ফিরতে চায়। এ অবস্থায় এপ্রিলে নির্বাচন করতে গেলে রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট হতে পারে। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে শত্রু বিবেচনা করবে। প্রধান উপদেষ্টার অন্য কোনো ডিজাইন যদি না থাকে তাহলে নির্বাচনের সময় আরো এগিয়ে আনতে পারেন। নির্বাচনের সময় একতরফাভাবে চাপিয়ে না দিয়ে দলগুলোর সঙ্গে বসে এটি করতে পারেন তিনি।   

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান নির্বাচন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত দেশের স্বার্থে মতপার্থক্য এড়িয়ে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুসারে এপ্রিলের প্রথমার্ধেই নির্বাচন হচ্ছেএই ধারণা মাথায় রেখে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া। এর মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সময় যদি আরো কমে আসে তাতেও সমস্যা নেই। আর অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত নির্বাচনের আগে যে সময় রয়েছে তার মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করা। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক কে এম মহিউদ্দিন বলেন, জনমনে একটা আশঙ্কা রয়েছে নির্বাচন নিয়ে। এটা থাকা স্বাভাবিক। কারণ এখনো সুনির্দিষ্ট করে কোনো রোডম্যাপ পায়নি জনগণ। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন হওয়াটা জরুরি। কিন্তু কবে নাগাদ নির্বাচন হবে, সেটি এখনো বলা কঠিন। একেক সময় একেকটা তারিখ শোনা যাচ্ছে, কখনো ডিসেম্বর, কখনো জুন, এখন এপ্রিলের প্রথমার্ধের কথা আসছে। ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের মিটিংয়ের পর আসলে বোঝা যাবে যে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে বা যাবে। আমাদের জাতীয় নির্বাচনের ভবিষ্যৎ কী, সেটিও ওই মিটিংয়ের পর বোঝা যাবে।

নির্বাচন যত দেরিতে হবে বিএনপির জন্য ততই ক্ষতি। ডিসেম্বর পার হয়ে জানুয়ারি এলেই আরো নতুন ভোটার। কয়েকটি দলের ধারণা, তারা নতুন ভোটারদের সমর্থন পাবে। এ জন্য ডিসেম্বরেই জাতীয় নির্বাচনএই দাবি থেকে বিএনপির সরে আসাটা দলীয়ভাবে ক্ষতি হবে বলে দলটির নেতারা হয়তো ভাবছেন। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী মনে করছে, দেরি হলেই তাদের লাভ। এনসিপি আরেকটু সময় চাইবে, যাতে তারা তাদের দলটা গোছাতে পারে। শুরু থেকেই দেখা যাচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপি কিছুটা মুখোমুখি অবস্থায়। বিএনপির পক্ষ থেকে এই সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই সরকারের অধীনে শেষ পর্যন্ত নিরপেক্ষ একটা নির্বাচন হবে কি না, বিএনপি এটা বিশ্বাস করে কি নাএটার ওপর আসলে অনেক কিছু নির্ভর করছে। যদি বিশ্বাস না করে, পরিস্থিতি যদি জটিল হয়, তাহলে এই অন্তর্বর্তী সরকারের পর একটা কেয়ারটেকার সরকারের প্রয়োজন হবে। সংস্কার কমিশন যেসব সুপারিশ করেছে সেগুলোর বেশির ভাগ বিষয় বাস্তবায়ন করতে জাতীয় সংসদের প্রয়োজন। সে কারণে এ সরকারের মূল কাজটা ছিল একটা নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা, তারপর নির্বাচনটা দিয়ে দেওয়া।

ইউনূস-তারেক বৈঠকের অপেক্ষা : নির্বাচনের সময় নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে কী ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে যাচ্ছে, আগামী ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর তা অনেকটাই পরিষ্কার হতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ওই বৈঠকে নতুন ডাইমেনশন তৈরি হতে পারে। অনুষ্ঠেয় বৈঠকটিকে এ সময়ের বড় পলিটিক্যাল ইভেন্ট হিসেবে অভিহিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, অনেক সুযোগ তৈরি হতে পারে এ বৈঠকে। অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে। অনেক কিছু সহজ হয়ে যেতে পারে। নতুন ডাইমেনশন তৈরি হতে পারে এ বৈঠকে। নতুন একটা দিগন্তের উন্মোচন হতে পারে।

একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত নির্বাচনের সময়টা (আগামী এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো দিন) ভোটের জন্য ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, রমজানের আগে প্রচার-প্রচারণায় অনেক সমস্যা হবে। প্রতিদিনই ইফতার মাহফিল করা লাগবে। নির্বাচনী ব্যয় দ্বিগুণ হবে। প্রচণ্ড গরমের কারণে সমাবেশে লোকজন আনা যাবে না। রাতে প্রোগ্রাম করতে হবে।

বিএনপির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে গত ৬ জুন রাতে অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা শেষে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ পর্যালোচনা করে সভায় সর্বসম্মতভাবে এই অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে যে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রদত্ত তাঁর বক্তব্য প্রসঙ্গকে অতিক্রম করে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে পরিণত হয়েছে। এই দীর্ঘ ভাষণে তিনি বন্দর, করিডর ইত্যাদি এমন সব বিষয়ের অবতারণা করেছেন, যা তাঁরই ভাষায় অন্তর্বর্তী সরকারের তিনটি ম্যান্ডেট-এর মধ্যে পড়ে না। ভাষণে তিনি শব্দ চয়নে রাজনৈতিক ভব্যতার সীমা অতিক্রম করায় সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।

এ ছাড়া বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যে সময়সীমা প্রস্তাব করেছেন তা পর্যালোচনা করে সভা মনে করে যে এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন হলে একদিকে আবহাওয়ার সংকট এবং অন্যদিকে রমজানের মধ্যে নির্বাচনী প্রচার ও কার্যক্রম এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে যা নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার কারণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। অধিকন্তু কেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়, এমন কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ তাঁর ভাষণে উল্লেখ করা হয়নি।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার বিপুল আত্মত্যাগের মাধ্যমে তার বিজয় অর্জিত হলেও নির্বাচন অনুষ্ঠানে অহেতুক বিলম্বে জনগণকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে উল্লেখ করে বলা হয়, ওই সভা রমজান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমপর্যায়ের পরীক্ষা, আবহাওয়া ইত্যাদি বিবেচনায় ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করছে। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার একটি ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার কথা বললেও একটি বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের মতামত অগ্রাহ্য করে নিজেদের নিরপেক্ষতাকেই যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, তাতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সম্ভাবনা নিয়ে দেশের জনগণ সংগতভাবেই শঙ্কিত হতে পারে বলে সভা মনে করে।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্বেগ : প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পরের দিন গত ৭ জুন বাম গণতান্ত্রিক জোট এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ঈদের আগের দিন দেওয়া ভাষণে সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়ার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি, বরং রাখাইনে করিডর, চট্টগ্রামের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালকে বিদেশিদের কাছে লিজ দেওয়ার বিষয়ে এবং ওই বিষয়ে বিরোধিতাকারীদের নিয়ে যা বলা হয়েছে এবং যে সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং দেশবাসীর জন্য গভীর উদ্বেগেরও বটে। বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সিপিবি সভাপতি মো. শাহ আলম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা রাখাইনে করিডর দেওয়ার প্রশ্নে যা বলতে চেয়েছেন তাতে এটা পরিষ্কার বোঝা যায় যে জনমত উপেক্ষা করে হলেও রাখাইনে করিডর দেওয়ার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের কাছে লিজ দেওয়ার বিষয়ে যেসব কথার অবতারণা করেছেন তা কোনো দেশপ্রেমিক মানুষ গ্রহণ করতে পারে না। এমনকি তিনি এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণকারী আন্দোলনকারীদের প্রতিরোধ করার যে ঘোষণা দিয়েছেন তা প্রকারান্তরে মব সন্ত্রাসকেই উসকে দিচ্ছে। সরকারের দায়িত্বপূর্ণ কোনো পদে থেকে এ ধরনের উসকানি জনগণ গ্রহণ করবে না, বরং প্রত্যাখ্যান করবে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, দেশের বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল ও মানুষ এ বছর ডিসেম্বরের মধ্যে এমনকি তারও আগে দ্রুততম সময়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর দেখতে চাইলেও প্রধান উপদেষ্টা ২০২৬ সালের এপ্রিলে নির্বাচনের কথা বলেছেন। রোজা, পরীক্ষা, ধান কাটা, বর্ষা ইত্যাদি বিষয় সার্বিক বিবেচনায় ওই সময়ে নির্বাচন মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা বলেছি, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করে এ বছরের মধ্যেই নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। আমরা মনে করি, এ বছরের মধ্যেই এটি ভালোভাবে সম্ভব। এ সময়ে ২০২৪-এর জুলাই-আগস্ট হত্যাযজ্ঞের বিচারের কাজ দৃশ্যমান করাও সম্ভব। কোনো অজুহাতে নির্বাচনকে বিলম্বিত করার অর্থ হলো কোনো দল বা গোষ্ঠীর বিশেষ স্বার্থ রক্ষা করা। দেশকে সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যবাদী শক্তির প্রভাববলয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘৃণ্য প্রচেষ্টা, যা দেশকে দীর্ঘমেয়াদি সংকটে ফেলতে পারে। ডিসেম্বরে না হয়ে এপ্রিলে কেন নির্বাচন, তা বোধগম্য নয়। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার অভিলাষ ফুটে উঠেছে। বেশির ভাগ দল ও জনগণের মতকে উপেক্ষা করে বিশেষ দল বা গোষ্ঠীর স্বার্থে এপ্রিলে নির্বাচন ঘোষণার মধ্য দিয়ে ড. ইউনূস নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন।

জামায়াতের সন্তুষ্টি ও প্রত্যাশা : জামায়াতে ইসলামী একসময় জানিয়েছিল যে তারা আগামী বছর রোজার আগে নির্বাচন চায়। সেই অবস্থান থেকে সরে এসে গত ২ জুন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে দলটি জানায়, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চায়। তারা নির্বাচনের তারিখের বিষয়ে কঠোর নয়, নমনীয় থাকতে চায়। প্রধান উপদেষ্টা এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন হবে জানালে গত ৬ জুন সন্ধ্যায় দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় জাতি আশ্বস্ত হয়েছে এবং ঘোষিত সময়ের মধ্যেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জাতি আশা প্রকাশ করছে।

জামায়াতে ইসলামীর আমির আরো বলেন, জাতির তীব্র আকাঙ্ক্ষাসংস্কার, বিচার ও নির্বাচনএই তিনটি বিষয়ের ভিত্তিতে এবং জুলাই সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশকে একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে।

এনসিপি যা চায় : জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য জায়েদ বিন নাসের কালের কণ্ঠকে বলেন, বড় কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে অনবরত চাপের ফলে নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ জানিয়েছে সরকার। তবে আমরা মনে করি, বিচার ও সংস্কারের দিকে এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া দরকার। আর নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান সুস্পষ্ট ও পরিষ্কার।

তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় যেকোনো রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে দেশে-বিদেশে বসতেই পারে। তবে গণ-অভ্যুত্থানের মূল্যবোধকে সব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং সরকারের সব কর্মধারা ও মিটিংয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিফলন থাকতে হবে। আমরা আলাপ-আলোচনা ও গঠনমূলক চর্চাকে ইতিবাচক হিসেবেই বিবেচনা করি এবং সরকারের ওপর সামগ্রিকভাবে আস্থা রাখতে চাই।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

মুন্সীগঞ্জে মসজিদ থেকে ফেরার পথে দুর্বৃত্তের ছুরিতে ব্যবসায়ী খুন

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
শেয়ার
মুন্সীগঞ্জে মসজিদ থেকে ফেরার পথে দুর্বৃত্তের ছুরিতে ব্যবসায়ী খুন

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে মসজিদ থেকে বাসায় ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে সাহেব আলী (৫৮) নামের এক ব্যবসায়ী খুন হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার মোড়াপাড়া মদিনা মসজিদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত সাহেব আলীর ছেলে সোহাগ বলেন, আমার বাবা রাতে মসজিদে এশার নামাজের পর বাসায় ফিরছিলেন। পথে দুর্বৃত্তরা তাঁকে ছুরিকাঘাত করে।

খবর পেয়ে আমরা ছুটে গিয়ে তাঁকে দ্রুত স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসক বাবাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, কারো সঙ্গে বাবার শত্রুতা ছিল না।
আমার বাবার মাছের ঘেরসহ আরো অন্যান্য ব্যবসা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক জানান, মরদেহ মর্গে রাখা আছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানায় জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে গতকাল শুক্রবার রাতে সিরাজদিখান থানার ওসি খন্দকার হাফিজুর রহমান বলেন, ময়নাতদন্তের পর জানাজা শেষে মরদেহ দাফন করা হয়েছে।

এ ঘটনায় এখনো থানায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। তবে আগামীকাল (শনিবার) থানায় মামলা হতে পারে। হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্তব্য

চাঁদপুরে মসজিদের ভেতর ইমামকে কুপিয়ে আহত

চাঁদপুর প্রতিনিধি
চাঁদপুর প্রতিনিধি
শেয়ার
চাঁদপুরে মসজিদের ভেতর ইমামকে কুপিয়ে আহত
নূরুর রহমান

চাঁদপুর শহরে মসজিদের ভেতর দুর্বৃত্তের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ইমাম আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে শহরের প্রফেসরপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আহত ইমাম মাওলানা নূরুর রহমানকে (৬৫) চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত বিল্লাল হোসেন নামের একজনকে মুসল্লিরা পিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন মুসল্লি জানান, দুপুরে জুমার নামাজের পর মসজিদের ভেতরই মাঝবয়সী এক ব্যক্তি ইমাম মাওলানা নূরুর রহমানের ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালান। উপস্থিত মুসল্লিরা ওই ব্যক্তিকে আটক করে পিটুনি দিয়ে মসজিদের ভেতর বেঁধে রাখেন। পরে পুলিশ গিয়ে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। মুসল্লিরা জানান, হামলাকারী নিজেও মুসল্লিদের সঙ্গে নামাজ আদায় করেন।

চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি বাহার মিয়া জানান, আটক ব্যক্তির নাম বিল্লাল হোসেন (৫০)। কী কারণে তিনি ইমাম সাহেবের ওপর হামলা চালিয়েছেন, তা এখনো জানা যায়নি। আটক ব্যক্তি একেক সময় একেক কথা বলছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির কাছ থেকে ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

ইমাম মাওলানা নূরুর রহমানকে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সৈয়দ আহমেদ কাজল জানান, ওই ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম রয়েছে। আপাতত তিনি আশঙ্কামুক্ত বলেও জানান তিনি।

মসজিদের ইমামের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব রাত সাড়ে ১১টায় এই প্রতিবেদককে জানান, আহত ইমামকে দেখতে রাত ১১টার দিকে তিনি চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে যান এবং তাঁর সঙ্গে কথাও বলেন।

ইমাম মাওলানা নূরুর রহমানের কানের পাশে যেখানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত লেগেছে, সেখানে বেশ কিছু সেলাই দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সুপার জানান, ইমাম সাহেবের মাথার সিটি স্ক্যান করা হবে। আঘাত গুরুতর হলে প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে।

মন্তব্য

ছাত্রবিক্ষোভে উত্তাল ক্যাম্পাস

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ছাত্রবিক্ষোভে উত্তাল ক্যাম্পাস

নির্মম, নিষ্ঠুর ও নৃশংসভাবে পুরান ঢাকার এক সাধারণ ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়েছে। ওই ব্যবসায়ীর নাম লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ। গত বুধবার সংঘটিত এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, এনসিপি, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরাও পৃথক পৃথকভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন।

তাঁরা রাত ১১টার পর পর্যন্ত অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচ নেতাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। একই সঙ্গে তিন সদস্যের একটি কমিটি এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করতে নিহতের পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে থানায় যায়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ নেতারা এ ঘটনাকে বর্বরোচিত, নিষ্ঠুর ও মর্মান্তিক অভিহিত করেছেন।
একই সঙ্গে এর পেছনে তৃতীয় কোনো শক্তি কাজ করছে কি না সেই প্রশ্নও তোলেন। ডিএমপির উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানিয়েছেন, এই হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এরই মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই সঙ্গে অন্য আসামিদেরও ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

জানা যায়, বুধবার সন্ধ্যায় ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে মিটফোর্ড হাসপাতাল চত্বরে পিটিয়ে ও ইট-পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।

এরপর মরদেহের ওপর চলে এই বর্বরতা। সিসিটিভিতে দেখা যায়, ব্যস্ত সড়কে অনেক মানুষের সামনে এ ঘটনা ঘটছে। এ সময় উত্সুক লোকজন এই নিষ্ঠুরতা প্রত্যক্ষ করেছে। কেউ এগিয়ে আসেনি। হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যের ক্যাম্প পাশে থাকলেও তারাও এগিয়ে আসেনি।
ভিডিওতে হত্যা ও বীভৎসতায় জড়িতদের হাত উঁচিয়ে চিৎকার করে উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে কিছু বলতে শোনা যায়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়ার পর এই বর্বরতার বিষয়টি সামনে আসে। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2025/07.july/12-07-2025/kalerkantho-lt-9a.jpgছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল : গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে একটি তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) থেকে শুরু হয়ে সম্পূর্ণ ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে।

বিএনপি সূত্র জানায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘটনাটি জানার পর তাৎক্ষণিকভাবে জড়িত সন্দেহে যাদের নাম এসেছে তাদের দ্রুত বহিষ্কারের নির্দেশ দেন। এর পরই সংগঠনের পক্ষ থেকে চার নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। তবে ভিডিও ফুটেজে কোনো একজন সোহাগকে পাথর নিক্ষেপ করতে দেখা গেলেও তার বিরুদ্ধে মামলা কিংবা গ্রেপ্তার হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অভিযোগ উঠেছে যে এ ঘটনার পেছনে তৃতীয় কোনো পক্ষও জড়িত থাকতে পারে।

আজীবন বহিষ্কৃত পাঁচ নেতা : এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল পুরান ঢাকার এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচজনকে সংগঠন থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে। তাঁরা হলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক জলবায়ুবিষয়ক সহসম্পাদক রজ্জব আলী (পিন্টু) ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক সাবাহ করিম (লাকি), চকবাজার থানা ছাত্রদলের সদস্যসচিব অপু দাস, মাহমুদুল হাসান মহিন ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু।

জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম এক বিবৃতিতে বলেছেন, বহিষ্কৃত নেতাদের কোনো ধরনের অপকর্মের দায়দায়িত্ব সংগঠন নেবে না। যুবদলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বহিষ্কৃত নেতাদের সঙ্গে কোনো ধরনের সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে কোনোরূপ শৈথিল্য না দেখিয়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যস্থা নেওয়ার আহবান জানান।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত নেতা অপু দাসের বিষয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ এবং অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

ঢাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ : সোহাগকে পিটিয়ে ও মাথা থেঁতলে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গতকাল রাত ৮টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। তাঁরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়া থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে ভিসি চত্বরে এসে সমাবেশ করে এবং রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে শেষ হয়।

বুয়েটে বিক্ষোভ : এদিকে রাত ১১টার দিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আসেন। এ সময় তাঁরা লিখিত বক্তব্যে সোহাগ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচ দফা দাবি জানান। তাঁদের দাবিগুলো হলো : সোহাগ হত্যার ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ বিচার নিশ্চিত করতে হবে। অভিযুক্ত মহিন, রবিনসহ সব খুনিকে গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সমগ্র বাংলাদেশে চাঁদাবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজনৈতিক পরিচয়ের অপব্যবহার করে অপরাধীদের রক্ষা করার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিন্দা, প্রতিবাদ ও শোক বিবৃতি : বর্বরোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ এবং তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়ে শোক জ্ঞাপন করে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রাতে এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই পৈশাচিক ঘটনা কেবল একটি জীবনহানিই নয়এটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, নাগরিক অধিকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় গভীর হতাশার বহিঃপ্রকাশ। আমাদের সংগঠনের নীতি, আদর্শ ও রাজনীতির সঙ্গে সন্ত্রাস ও বর্বরতার কোনো সম্পর্ক নেই। অপরাধী যে-ই হোক, তার স্থান কখনোই আইন ও ন্যায়বিচারের ঊর্ধ্বে হতে পারে না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, মিটফোর্ডের ঘটনায় সিরিয়াস ব্যবস্থা নেওয়ার পরও বিচ্ছিন্ন ঘটনায় দায় বিএনপির ওপর চাপানো অপরাজনীতি, এটা নোংরা রাজনীতির চর্চা। বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন কোনো অপরাধীকে কখনো প্রশ্রয় দেয় না, কোনো দিন দেবেও না। এ ক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান জিরো টলারেন্স

জামায়াতের গভীর উদ্বেগ ও শোক : সোহাগ হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও শোক এবং নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে মাথায় পাথর মেরে শত শত মানুষের সামনে এই হত্যার ঘটনায় মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এভাবে পাশবিক কায়দায় মানুষ হত্যা সভ্য সমাজে বিরল।

তিনি বলেন, নিহত সোহাগের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। সেই সঙ্গে এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় এনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।

জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি এনসিপির : সোহাগ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুব উইং জাতীয় যুবশক্তি। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি এ দাবি জানায়।

জাতীয় যুবশক্তির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) আসাদুর রহমান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চকবাজারের (মিটফোর্ডের সামনে) নির্মম হত্যাকাণ্ডে আমরা স্তম্ভিত, ক্ষুব্ধ এবং গভীরভাবে শোকাহত। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে জাতীয় যুবশক্তি।

অন্যদিকে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শুক্রবার রাতে টিএসসি চত্বরে এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। দেশব্যাপী ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, সহিংসতা এবং সম্প্রতি ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এই কর্মসূচি পালিত হয়।

এদিকে সোহাগ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার মাহমুদুল হাসান মহিনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। একই ঘটনায় করা অস্ত্র মামলায় আসামি তারেক রহমান রবিনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল রানার আদালত রিমান্ডের এ আদেশ দেন। গতকাল আদালতের কোতোয়ালি থানার প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক তানভীর মোর্শেদ চৌধুরী এ তথ্য জানান।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, হত্যা মামলায় মাহমুদুল হাসান মহিনের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক নাসির উদ্দিন। আর অস্ত্র মামলায় তারেক রহমান রবিনের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন একই থানার উপপরিদর্শক মো. মনির। আসামিদের পক্ষে তাঁদের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে।

পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃত তারেক রহমান রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ব্যাবসায়িক দ্বন্দ্ব এবং পূর্বশত্রুতার জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, গত বুধবার সন্ধ্যায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) ও হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে পাকা রাস্তায় একদল লোক ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে ও কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরো ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা হয়েছে। মামলার বাদী নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম।  আর পুলিশ অস্ত্র মামলা করে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অপারেশনস) এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনার সব আসামিকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

পুলিশ ও নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে পুরান ঢাকার কয়েক যুবক সোহাগকে বুধবার দুপুরে ডেকে নেন। সন্ধ্যায় তাঁকে হত্যা করা হয়। সোহাগ পুরনো তামার তার, অ্যালুমিনিয়াম শিটসহ ভাঙ্গারি জিনিসের ব্যবসা করতেন।

পারিবারিক সূত্র জানায়, সোহাগ একসময় যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদরে। তাঁর ১৪ বছর বয়সী মেয়ে সোহানা ষষ্ঠ শ্রেণিতে এবং ১১ বছর বয়সী ছেলে সোহান চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে।

পুলিশ জানিয়েছে, ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধের জের ধরে সোহাগকে হত্যা করে তাঁর পূর্বপরিচিতরা। নিহতের স্ত্রী লাকী বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, স্থানীয় মহিনসহ বেশ কয়েকজন মিলে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আশপাশে অনেক লোক থাকলেও কেউ তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে যায়নি।

নিহতের ভাগনি সাদিয়া আক্তার মীম জানান, কেরানীগঞ্জের কদমতলী মডেল টাউন এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকতেন সোহাগ। তিনি অনেক বছর ধরে ভাঙ্গারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। আগে তিনি পলাশ নামের একজনের অধীনে কাজ করতেন। তিনি ভাঙ্গারি এনে ওই ব্যক্তির কাছে বিক্রি করতেন। চার-পাঁচ বছর আগে সোহাগ আলাদা ব্যবসা শুরু করেন। সর্বশেষ কিছুদিন ধরে ব্যবসার অর্ধেক ভাগ দাবি করে আসছিলেন স্থানীয় যুবদল নেতা পরিচয় দেওয়া মহিন। সোহাগ তাতে রাজি হননি। এ নিয়ে তাঁকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। হত্যার আগের দিন তাঁর গুদামে গুলি চালানো হয়। বুধবার দুপুরে মীমাংসা করার কথা বলে সোহাগকে ডেকে নেন মহিন। মিটফোর্ড এলাকার রজনী বোস লেনে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম সোহানা মেটাল।

আসামিদের মধ্যে মহিন ও রবিন ছাড়াও রয়েছে সারোয়ার হোসেন টিটু, মনির ওরফে ছোট মনির, আলমগীর, মনির ওরফে লম্বা মনির, মো. নান্নু, সজীব, রিয়াদ, টিটন গাজী, রাজীব, সাবা করিম লাকী, কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু, রজব আলী পিন্টু, সিরাজুল ইসলাম, মিজান, অপু দাস, হিম্মত আলী ও আনিসুর রহমান হাওলাদার।

মন্তব্য

খুলনায় যুবদল নেতাকে রগ কেটে হত্যা

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
খুলনায় যুবদল নেতাকে রগ কেটে হত্যা
মাহবুবুর রহমান

খুলনা মহানগরের দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুর রহমানকে (৪০) নিজ বাড়ির সামনে গুলি করে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শুক্রবার দুপুর দেড়টায় নগরের মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জে গত বৃহস্পতিবার রাতে ছুরিকাঘাতে এক ব্যবসায়ী খুন হন। গতকাল আরো তিন জেলায় তিন ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

খুলনা অফিস জানায়, খুলনা মহানগরের দৌলতপুর থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুর রহমানকে (৪০) নিজ বাড়ির সামনে গুলি করে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে নগরের মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, মাহবুবুর রহমানকে খুব কাছ থেকে প্রথমে গুলি করা হয়। পরে পায়ের রগ কেটে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায় দুর্বৃত্তরা।

স্থানীয়রা দ্রুত তাঁকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক মাহবুবুরকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তাঁর লাশ খুমেক হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়। আজ শনিবার লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে। নিহত মাহবুবুর রহমান মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়ার মো. আব্দুল করিম মোল্লার ছেলে।

খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) দৌলতপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী বলেন, দুপুরে বাসার সামনে নিজের প্রাইভেট কার পরিষ্কার করছিলেন মাহবুবুর। ওই সময় হেলমেট পরা তিনজন একটি মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকে। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে পরে মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার জন্য দুর্বৃত্তরা তাঁর দুই পায়ের রগ কেটে দেয়।

তিনি আরো জানান, মাদক বিক্রি নিয়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপের সঙ্গে মাহাবুবুুরের দ্বন্দ্ব চলছিল। এর জেরে এ ঘটনা ঘটল কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়েছে।

ওসি জানান, ঘটনাস্থল থেকে চারটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লেগেছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। নিহত মাহবুবুরের বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে।

এদিকে মাহবুবুরের হত্যার খবর পেয়ে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনাসহ বিএনপি, যুবদলসহ অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে মসজিদ থেকে বাসায় ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে সাহেব আলী (৫৮) নামের এক ব্যবসায়ী নিহত হন গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায়। উপজেলার মোড়াপাড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সাহেব আলীর ছেলে সোহাগ জানান, আমার বাবা রাতে এশার নামাজ পড়ে বাসায় ফিরছিলেন। পথে দুর্বৃত্তরা তাঁকে ছুরিকাঘাত করে। পরে আমরা খবর পেয়ে তাঁকে দ্রুত স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসক বাবাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, কুষ্টিয়ায় একটি করে তিন ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। জামালপুর প্রতিনিধি জানান, গতকাল শুক্রবার বিকেলে জামালপুর শহরের দাপুনিয়ার ধানক্ষেতে কচুরিপানার ভেতর থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। জামালপুর সদর থানার ওসি আবু ফয়সল মো. আতিক বলেন, লাশের পরিচয় এখনো শনাক্ত হয়নি। কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জে নিখোঁজের পাঁচ দিন পর গতকাল রোজা মনি (৬) নামে এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বাড়ির পেছনে একটি পাটক্ষেত থেকে শিশুটির অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত রোজা মনি সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নের চরমারিয়া গ্রামের মোহাম্মদ সুমন মিয়ার মেয়ে। কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

কুষ্টিয়া থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান,  গত বৃহস্পতিবার রাতে নিখোঁজ রফিকুল ইসলাম (৪৫) নামের ইজি বাইকচালকের ঝুলন্ত লাশ গতকাল শুক্রবার সকালে উদ্ধার করেছে পুলিশ। সদর উপজেলার মোল্লাতেঘরিয়ার একটি গাছ থেকে তাঁর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। রফিকুল ইসলাম কুষ্টিয়া পৌরসভার  মোল্লাতেঘরিয়ার আদর্শপাড়ার মৃত দবির উদ্দিনের ছেলে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ