<p> সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে কয়েক দশক আগেও জমজমাট থাকত বেইলি রোড। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। কবেই সরে গেছে সাংস্কৃতিক ব্যস্ততা। এর পরিবর্তে বেইলি রোড হয়ে উঠেছে নানা ফ্যাশন হাউসের জমজমাট বিকিকিনির স্থান। আর রয়েছে রকমারি ফাস্টফুডের নামিদামি অজস্র দোকান। পবিত্র রমজানে সেসবের সঙ্গে নতুন আরো কিছু দোকান যোগ হয়ে বেইলি রোড হয়ে ওঠে ইফতারসামগ্রী বিকিকিনির বড় কেন্দ্রস্থলে।<br /> রমজান মাসজুড়ে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাহারি ইফতারসামগ্রীর খোঁজে ঢাকার মানুষ ছুটে আসে বেইলি রোডে। দোকানিরাও ক্রেতার পছন্দের খাবারটির জোগান দিতে কার্পণ্য করেন না। সে সুবাদেই পুরান ঢাকার চকবাজারের ইফতারির সুনামে ভাগ বসাতে পেরেছে বেইলি রোডের আয়োজন। বরাবরের মতো এবারও বেইলি রোডে বসেছে নানা পদের ইফতারসামগ্রীর রমরমা বাজার।<br /> রমজানের প্রথম জুমা ছিল গতকাল শুক্রবার। একই সঙ্গে ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন। ফলে দুপুর থেকেই জমে ওঠে বেইলি রোডের ইফতারির বাজার। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এবার ফুটপাতে গজিয়ে ওঠা নতুন দোকান তুলনামূলক কম। ফলে দৃশ্যপট নিরিবিলি, মন্থর। ভিড়বাট্টা থাকলেও যানজটের তীব্রতা তেমন ছিল না। ফলে ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যেই পছন্দের ইফতারসামগ্রীটি কিনে নিতে পেরেছেন।<br /> দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেইলি রোডের ইফতারির বাজারের প্রধান আকর্ষণ নতুন নতুন খাবারের আইটেম। চকে যেমন ঐতিহ্যবাহী খাবার বেশি, এখানেও তাই। তবে এখানকার বিশেষত্ব হলো, ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবারের পাশে এখানে আধুনিক ও নিত্যনতুন আইটেমও থাকে। তাঁরা জানান, এখানের খাবারে ঝাল কম থাকে। মসলাও কম থাকে। প্রাচ্যের খাবারের সঙ্গে পশ্চিমা খাবারও সুলভ। ফলে অভিজাতপাড়ার মানুষই এখানে আসে বেশি।<br /> গতকাল বিকেলে ইফতারি কিনতে আসা মৌচাকের গৃহিণী শামসুন নাহার বেলি বলেন, 'এখানে দোকানপাটের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। খাবারের মানও স্বাস্থ্যসম্মত। পাশাপাশি নানা আইটেম পাওয়া যায়।' বেইলি রোডে ইফতারির সবচেয়ে বড় পসরা সাজায় ক্যাপিটাল কনফেকশনারি। শতাধিক পদ থাকে তাদের ইফতারির তালিকায়।<br /> ক্যাপিটালের মাংসের পদের মধ্যে আছে গরুর চপ, খাসির চপ, মগজ, খাসির আস্ত রানের রোস্ট, মুরগির রোস্ট, ফ্রাই, দোপেঁয়াজা, সুতি কাবাব, শিক কাবাব, টিক্কা, জালি কাবাব, রেশমি কাবাব ইত্যাদি। হালিম ২০০ থেকে ৭০০ টাকা বাটি, জিলাপি ২০০ টাকা কেজি, টানা পরোটা ২০ টাকা, পনির পরোটা ৬০ টাকা, তেহারি ১০০ টাকা, খাসির কাচ্চি ১৫০ টাকা এবং মাছের কাচ্চি ২০০ টাকা প্রতি প্লেট।<br /> ফখরুদ্দিনের দোকানে এবারও ভিড় বেশি। এখানে খাসির হালিম থেকে বাসমতির জর্দা পর্যন্ত ৩৮টি পদ পাওয়া যাচ্ছে। এসবের মধ্যে কদর রয়েছে কাচ্চি বিরিয়ানি, তেহারি, খাসির চপ ও হালিম।<br /> এখানে দেশি খাবার ছাড়াও পশ্চিমা ঘরানার খাবারের সম্ভার রয়েছে সুইস, স্কাইলার্ক, সসেজ, হ্যালভেশিয়া, গোল্ডেন ফুড ইত্যাদি দোকানে। তাদের ইফতারির তালিকায় রয়েছে বার্গার, পিৎজা, স্যান্ডউইচ, চিকেন ফ্রাই, চিকেন ললি, ফালুদা, ফিরনি, কাস্টার্ড ইত্যাদি।<br /> বেইলি রোডে ইফতারির অন্যান্য আয়োজনের মধ্যে রয়েছে- নিমকি, সমুচা, দই বুন্দিয়া, সবজি রোল, ব্যানানা রোল, চিকেন কাটলেট, চিকেন স্টিক, নিমকপাড়া, কচুরি, পিটি, দইবড়া, ছোলা ভুনা, ঘুগনি ভুনা, পিঁয়াজি, আলুর চপ, ফুলুরি, তেহারি, মুরগি টিক্কা, বড় মাছের কোপতা, গরুর চপ, মালাইকাপ, ফিরনি, মিষ্টি শিঙাড়া, বুন্দিয়া, মোগলাই পরোটা, কিমা পরোটা, টানা পরোটা, প্লেইন পরোটা, ঘোল, মাঠা, বোরহানি, বাখরখানি, লাবাং, চাটনি, খাজা, মালপোয়া, শাহি কাবাব, শিক কাবাব, বটি কাবাব, মুঠি কাবাব, তন্দুর, নান, বেগুনি ইত্যাদি।</p>