বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াইয়ে জিয়াউর রহমান শাহাদাতবরণ করেছেন, সেই গণতন্ত্রের নিরবচ্ছিন্ন যাত্রা আজও পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে খুব শিগগির বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা দেখতে পাবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও আধুনিক স্বনির্ভর বাংলাদেশের রূপকার’ শীর্ষক আলোচনাসভায় খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করে বিএনপি।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন খালেদা জিয়া। সেখানে তাঁর রেকর্ড করা ভিডিও বক্তব্য প্রচার করা হয়।
একই অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, আগামী ডিসেম্বরের আগেই জাতীয় নির্বাচন দেওয়া সম্ভব। জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে সম্মান করে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানের বক্তব্যে জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী খালেদা জিয়া বলেন, ‘প্রতিবছর এই দিনটি (৩০ মে) আমাদের পরিবারে আসে এক বেদনাবিধুর স্মৃতি নিয়ে। এই দিনে শুধু আমাদের পরিবার নয়, সারা দেশের মানুষ হয়ে পড়েছিল বেদনাসিক্ত ও অভিভাবকহীন। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক অবিচ্ছেদ্য নাম শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। যিনি চট্টগ্রাম থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে দেশের সঙ্গে তাঁর নাম অবিচ্ছেদ্য করেছিলেন, সেই চট্টগ্রামেই এক সফল, সৎ, দূরদর্শী ও প্রকৃত দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।
এ দেশে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সংবাদপত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্বনির্ভরতা ও উন্নয়ন এবং নিজস্ব জাতীয়তাবাদ সৃষ্টির অনন্য রূপকার শহীদ জিয়া।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা আর সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াইয়ে তিনি (জিয়াউর রহমান) শাহাদাতবরণ করেছেন, সেই গণতন্ত্রের নিরবচ্ছিন্ন যাত্রা আজও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রতি পদে পদে। খুব শিগগির আমরা বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরায় প্রতিষ্ঠিত দেখতে পাব—এই হোক শহীদ জিয়ার শাহাদাতবার্ষিকীতে আমাদের অঙ্গীকার। এই লক্ষ্যে সুশৃঙ্খলভাবে এগিয়ে চলার জন্য বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আহবান জানাচ্ছি। মনে রাখবেন, সবার জন্য গণতন্ত্র ও উন্নয়নের মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধানের যে রাজনীতি শহীদ জিয়া রেখে গেছেন, তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে।
আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।’
অনুষ্ঠানে তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা মনে করি, প্রস্তাবিত সংস্কার শেষ করে, যদি তাঁদের ইনটেশন সঠিক থাকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেবেন, তবে ডিসেম্বরের আগেও নির্বাচন দেওয়া সম্ভব।’ এই সরকার ১০ মাসেও জাতীয় নির্বাচনের তারিখ দেয়নি। ফলে রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দেশে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ হচ্ছে না। ব্যাবসায়িক সংগঠনগুলো বলছে, শত শত কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধের উপক্রম এমন অনেক। তারা সরকারের কাছে তা তুলের ধরার সুযোগ পাচ্ছে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ নেই অভিযোগ করে তারেক রহমান বলেন, ‘জনগণের সঙ্গে সারাসরি যোগাযোগ ছাড়া প্রশাসন ও ফাইল দিয়ে সব সমস্যার সমাধান যদি করা যেত, তবে রাজনীতির প্রয়োজন হতো না। ’
সভায় ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আরো বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আব্দুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী প্রমুখ।