ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৪ জুলাই ২০২৫
৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৮ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৪ জুলাই ২০২৫
৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৮ মহররম ১৪৪৭
বিশেষ লেখা

বেসরকারি খাতের গলা টিপে ঋণ নিয়ে চলবে দেশ?

বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
বেসরকারি খাতের গলা টিপে ঋণ নিয়ে চলবে দেশ?

ঋণ করে ঘি খাওচার্বাকের এই দর্শন আধুনিক অর্থনীতিতে অচল। ঋণের পরিণাম যে কত ভয়াবহ হয় তা সবাই জানে। ঋণ করে ঘি খাওয়ার দিন এখন আর নেই; বরং ঋণে জর্জরিত একজন ব্যক্তি বা একটি রাষ্ট্র সর্বস্ব হারায়। তার উন্নয়ন-অগ্রগতির সব পথ বন্ধ হয়ে যায়।

বাংলাদেশ কি সেই পথেই যাচ্ছে? আগামী ২ জুন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন। মাত্র ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশা করে এই বাজেট হচ্ছে পুরোপুরি ঋণনির্ভর। বাজেটের আকারও কমানো হয়েছে। আসন্ন বাজেটে বেসরকারি খাতকে উজ্জীবিত করার কোনো সুনির্দিষ্ট রূপরেখা নেই।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ঋণের লাগাম টেনে ধরার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু গত প্রায় ১০ মাসের সরকারের অর্থনৈতিক প্রবণতা শুধু ঋণমুখী। যেখান থেকে পারছে সরকার ঋণ করার চেষ্টা করছে। আর এই ঋণ করতে গিয়ে বিভিন্ন স্বার্থের জালে জড়িয়ে যাচ্ছে দেশ।

সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট ঋণের পরিমাণ ১০৩ বিলিয়ন ডলার। জনশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের যে জনসংখ্যা, জনপ্রতি মানুষের ঋণের পরিমাণ প্রায় ৭০০ ডলার। অর্থাৎ প্রায় এক লাখ টাকার কাছাকাছি ঋণ প্রতিটি মানুষের। আজ যে শিশু জন্মগ্রহণ করবে, তার কাঁধে এক লাখ টাকার ঋণের বোঝা আমরা চাপিয়ে দিচ্ছি। বাংলাদেশের জিডিপির ৪৫ শতাংশই এখন ঋণনির্ভর।
অর্থনীতিবিদরা বলে থাকেন যে একটি দেশের জিডিপির ৪০ শতাংশের বেশি যখন ঋণনির্ভর হয়, তখন সেটি অর্থনীতির জন্য খারাপ। ঋণ করে সরকারকে চলতে হচ্ছে, দায়দেনা মেটাতে হচ্ছে। বাজেট প্রণয়নের জন্য তীব্র অর্থসংকটে থাকা সরকার বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ আদায়ের চেষ্টা করছে। এই চেষ্টা করতে গিয়ে বেশ কিছু শর্তে আত্মসমর্পণ করেছে সরকার। এটিই হলো ঋণ গ্রহণের বিপদ।

যখন আপনি ঋণ গ্রহণ করবেন তখন ঋণদাতার শর্তগুলো আপনাকে মানতেই হবে। আর এ কারণেই ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ার চেয়ে দেশের অর্থনীতিকে স্বনির্ভর করা জরুরি। আর সেটা করার একমাত্র উপায় হলো বেসরকারি খাতকে বিকশিত করা। কিন্তু এই সরকার গত ১০ মাসে বাংলাদেশের উৎপাদন বৃদ্ধি, বেসরকারি খাতকে চাঙ্গা করা ইত্যাদির দিকে মনোযোগী না হয়ে বিদেশিদের কাছে ধরনা দিয়েছে। তাদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের জন্য চেষ্টা করছে। ঋণ দিয়ে দেশ চালানোর এক আত্মঘাতী নীতি গ্রহণ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এই নীতি গ্রহণ করতে গিয়ে অর্থনীতি আরো পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে।

আমরা যদি গত ১০ মাসের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখব যে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যে খুব একটা আশার আলো দেখা যায়নি; বরং রপ্তানিতে বড় ধরনের ধাক্কার শঙ্কা তৈরি করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছে, সেটি যদি কার্যকর হয়, তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি বড় ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়বে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েনের কারণে ভারত বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যেগুলো সরাসরি আমাদের অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যেমনভারতের ওপর দিয়ে গার্মেন্টস রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেভেন সিস্টারে ভারত বাংলাদেশের পণ্য আমদানি বন্ধ করেছে। সামনের দিনগুলোতে যদি আমরা কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক না করতে পারি তাহলে এই সমস্যাগুলো বাড়তে থাকবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি হলো বেসরকারি খাত। মূলত আমাদের বেসরকারি খাতের ওপর ভর করেই অর্থনীতি সচল থাকে, অর্থনীতি এগিয়ে যায়। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বেসরকারি খাতকে বুলডোজার দিয়ে পিষ্ট করার প্রবণতায় মেতে উঠেছে কেউ কেউ। ৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে বেসরকারি খাত। হত্যা মামলা, হয়রানি, শিল্প-কারখানা ধ্বংস করা, ব্যবসায়ীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দসর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বেসরকারি খাতের বিরুদ্ধে। ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, ক্ষুুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাসহ যাঁরা অর্থনীতির সঙ্গে বিভিন্নভাবে সম্পৃক্ত, তাঁরা এখন সবচেয়ে বেশি সমস্যায় আছেন। ৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে সরকারি হিসাব অনুযায়ী ৭৭৩টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে আক্রমণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা মামলা হয়েছে। সেই আসামিদের মধ্যে ৩৫ হাজার ৭৭৩ জন হলেন ব্যবসায়ী। অর্থাৎ বাংলাদেশে এমন এক ব্যবসায়ী খুঁজে পাওয়া যাবে না, যাঁর বিরুদ্ধে কোনো হত্যা মামলা, হত্যাচেষ্টা মামলা বা অন্য কোনো মামলা নেই। শিল্প উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ীরা রীতিমতো আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে নেমে এসেছে এক অনিশ্চয়তা। বাংলাদেশে ৫ আগস্টের পর থেকে নতুন কোনো অভ্যন্তরীণ শিল্প উদ্যোগ লক্ষ করা যায়নি। যাঁরা বিভিন্ন শিল্প উদ্যোগ বা ব্যাবসায়িক উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন, তাঁরাও এখন অপেক্ষা করছেন, পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছেন, আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। লক্ষণীয় ব্যাপার, এই সময় বিএফআইইউয়ের হিসাব অনুযায়ী সাড়ে ছয় হাজার ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে চার হাজারই হলেন ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীদের যদি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়, তাহলে তাঁরা ব্যবসা করবেন কিভাবে? ব্যবসায়ীরা আক্রান্ত হলে শুধু তাঁরা আক্রান্ত হন না, তাঁদের সঙ্গে কোটি কোটি শ্রমিক-কর্মচারী আক্রান্ত হন।

গত ৫ আগস্টের পর থেকে গত ১০ মাসে প্রায় সাড়ে তিন হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে। ছোট, বড়, মাঝারি এসব প্রতিষ্ঠানে কয়েক লাখ কর্মচারী কাজ করতেন। তাঁরা এখন কর্মহীন। তাঁদের এই কর্মহীনতার মাসুল দিতে হচ্ছে অর্থনীতিতে। বেসরকারি খাতকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া এবং অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতকে আরো বেশি নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত করার কোনো উদ্যোগ গত ১০ মাসে অন্তর্বর্তী সরকার গ্রহণ করেনি। বাজেটেও এই আতঙ্কের অবস্থা থেকে উত্তরণের কোনো রূপরেখা নেই।

বেসরকারি খাতকে শত্রু বানানো হচ্ছে। বেসরকারি খাতের মধ্যে কারা ফ্যাসিস্টের দালাল, কারা বিগত সরকারের সুবিধাভোগী ইত্যাদি খোঁজা হচ্ছে। সরকারে যাঁরা বিভিন্ন দায়িত্বে আছেন, তাঁরা খুব ভালোমতোই জানেন, যাঁরা ব্যবসা করেন তাঁদের সব সময় সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ থাকতে হয়। সরকারের ঘনিষ্ঠ না থাকলে এ দেশে কোনো কিছুই করা যায় না। বিশেষ করে গত ১৫ বছর ব্যবসায়ীরা কী পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছেন তা সবাই জানে। এ দেশে মন্ত্রী, উপদেষ্টাদের না ধরলে একটি গ্যাসের লাইন পাওয়া যায় না। একটি ট্রেড লাইন্সেস করতেও তদবির লাগে। ব্যবসায়ীরা তাঁদের ব্যবসাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারের সঙ্গে যদি সম্পর্ক রাখেন তাহলে কি তাঁরা ফ্যাসিস্টের দালাল হবেন? একজন ব্যবসায়ী তাঁর নিজের স্বার্থে কিছু করেন না। তিনি কাজ করেন তাঁর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য। তিনি কাজ করেন সাধারণ মানুষের জন্য, দেশের জন্য।

বিশ্বের যে দেশগুলো উন্নত হয়েছে, তারা বেসরকারি খাতকে আস্থায় নিয়ে, বেসরকারি খাতের সঙ্গে একটি সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ৫ আগস্টের পর আমরা সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র লক্ষ করছি। এ রকম একটি পরিস্থিতির মধ্যে দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বেএটা স্বাভাবিক। বেসরকারি খাতকে রীতিমতো পঙ্গু করে ঋণের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দিচ্ছেন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা। আইএমএফ তো আছেই, বিশ্বব্যাংক, এডিবি, চীন, জাপানের কাছে টাকার জন্য হাত পাতছে সরকার। ঋণ পেতে আত্মসমর্পণ করতে হচ্ছে। এই সরকার দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতে বিভিন্ন মহল থেকে ব্যাপক ঋণ দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে টাকা কোনো সমস্যা হবে না। ড. ইউনূস ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তিনি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে সরাসরি যেন দ্রুতগতিতে অর্থ ছাড় দেওয়া হয়। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার এই আহ্বানেও খুব একটা সাড়া দেওয়া হয়নি; বরং আইএমএফের ঋণ আটকে দেওয়া হয়েছিল। আমরা কিস্তির টাকা সময়মতো পাইনি। এরপর অর্থ উপদেষ্টা নিজেই ছুটে যান আইএমএফের কাছে। আইএমএফের শর্ত মানতে তিনি বাধ্য হন। এই শর্তের মধ্যে একটি অন্যতম শর্ত ছিল ডলার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া। এই সিদ্ধান্তটি আত্মঘাতী। এমনিতে বেসরকারি খাতের বারোটা বাজার অবস্থা। তার মধ্যে ডলার ছেড়ে দেওয়ার ফলে এটার প্রভাব আস্তে আস্তে বাজারে পড়তে শুরু করেছে। খোলাবাজারে ডলারের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।

আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী এনবিআরকে বিলুপ্ত করে দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। সেটি নিয়েও এখন চলছে উত্তেজনা। এক ধরনের টানাপড়েনে সরকার এনবিআরের দাবির মুখে সেখান থেকে সাময়িকভাবে সরে এসেছে। কিন্তু আইএমএফের টাকা পেতে গেলে এটা সরকারকে করতে হবে। আমরা যদি বিদেশি ঋণের জন্য ভিক্ষায় নামি তাহলে হয়তো টাকা পাব ঠিকই, কিন্তু আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে পারব না। জুলাই বিপ্লবের স্বপ্ন পূরণ হবে না। কারণ তারা যেসব শর্ত দেবে, সেই শর্তগুলো হবে বেশির ভাগ গণবিরোধী এবং জনগণের ওপর সেগুলো নানা রকম চাপ সৃষ্টি করবে। নতুন নতুন করের বোঝায় পিষ্ট করবে জনগণকে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সবচেয়ে সহজ উপায় হলো বাংলাদেশের বেসরকারি খাতকে সাহস দেওয়া, তাদের পাশে দাঁড়ানো। অবিলম্বে ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে সব হয়রানি বন্ধ করা উচিত। হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন ভিত্তিহীন মামলা প্রত্যাহার করতে হবে অবিলম্বে। ব্যবসায়ীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ, দুদকে ডেকে মিডিয়া ট্রায়াল বন্ধ করতে হবে দেশের স্বার্থে। কারো ব্যক্তিগত এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য অর্থনীতিকে ধ্বংস করা উচিত হবে না।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

গভীর রাতে হাসপাতালে খালেদা জিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
গভীর রাতে হাসপাতালে খালেদা জিয়া
খালেদা জিয়া

জরুরি ভিত্তিতে শারীরিক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১টা ১৮ মিনিটে তিনি গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খালেদা জিয়ার শারীরিক কিছু জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাঁকে গুলশানের বাসা ফিরোজা থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হবে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, হার্ট, চোখের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। গত ২৩ জুন তাঁর সফল অস্ত্রোপচার হয়।

২০২১ সালের নভেম্বরে খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বারবার আবেদন জানালেও শেখ হাসিনার সরকার তা আমলে নেয়নি।

রাতে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে রাখা হবে কি না, এমন প্রশ্নে শায়রুল কবির বলেন, আশা করছি, জরুরি পরীক্ষা শেষে তিনি আবার বাসায় ফিরে আসবেন।

মন্তব্য
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা

নারী কর্মীদের ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক, লেগিংস নিষেধ

    পুরুষদের জিন্স বা গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করতে হবে যৌন হয়রানির অভিযোগ ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারিত কমিটির কাছে পাঠাতে হবে নির্দেশনা না মানলে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
নারী কর্মীদের ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক, লেগিংস নিষেধ

বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কী ধরনের পোশাক পরতে হবে, তা ঠিক করে দিয়েছে। নারীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ ও ওড়না এবং অন্যান্য পেশাদার শালীন পোশাক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস অর্থাৎ ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক এবং লেগিংস পরিহার করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনায় ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা, সাদামাটা হেডস্কার্ফ বা হিজাব পরতে বলা হয়েছে।

গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ এ নির্দেশনা দিয়েছে। নির্দেশনায় পুরুষদের পোশাকের ক্ষেত্রে লম্বা হাতা বা হাফ হাতার ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) শার্ট ও ফরমাল প্যান্ট পরতে বলা হয়েছে। জিন্স বা গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করতে হবে। পরতে হবে ফরমাল জুতা।

নির্দেশনা না মানলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ব্যাংকে নবীন কর্মকর্তাদের সংখ্যা বাড়ছে, যাঁদের অনেকে এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের ধারাবাহিকতায় চলাফেরা করছেন। অফিসে এক ধরনের পেশাদার সাম্য ও ঐক্য নিশ্চিত করতেই এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, শালীন পোশাক যেকোনো প্রতিষ্ঠানের নারী-পুরুষের জন্য বাধ্যতামূলক।

নারীদের ক্ষেত্রে শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস এবং লেগিংস পরিহার করতে বলা হয়েছে। তবে কাউকে হিজাব পরতে বাধ্য করা হয়নি। যাঁরা পরবেন তাঁদের সাদামাটা রঙের হিজাব পরতে হবে।

আরিফ হোসেন খান আরো বলেন, কারো ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ নয়, বরং অফিস-সংস্কৃতিতে শৃঙ্খলা আনতেই এই সিদ্ধান্ত। ব্যক্তিগত পরিসরে কে কী পোশাক পরবেন, সেটা একান্তই তাঁদের বিষয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২-এর (বেনিফিটস অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন উইং) একটি বিভাগীয় মাসিক সভার এজেন্ডা ও কার্যবিবরণীতে নিয়মিত অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেসব সিদ্ধান্তের একটি ছিল পোশাক নিয়ে। গৃহীত সিদ্ধান্তের ১১(ঘ) নম্বরে বলা হয়, বাংলাদেশ সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের (সি ও ডি শ্রেণিভুক্ত কর্মচারীর নির্ধারিত পোশাক ব্যতীত) সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় পেশাদার ও মার্জিত পোশাক পরিধান করতে হবে। যেমনপুরুষ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে ফরমাল শার্ট লম্বা হাতা বা হাফ হাতা, ফরমাল প্যান্ট (জিন্স বা গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করতে হবে) এবং ফরমাল জুতা। মহিলা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ ও ওড়না, অন্যান্য পেশাদার শালীন পোশাক অবশ্যই সাদামাটা এবং পেশাদার রঙের হতে হবে (শর্ট স্লিভ ও লেন্থের ড্রেস, লেগিংস পরিহার করতে হবে) ও ফরমাল স্যান্ডেল-জুতা, সাদামাটা হেডস্কার্ফ-হিজাব।

১১ ক্রমিক নম্বরে আরো তিনটি নির্দেশনা রয়েছে। ১১(ক) নম্বরে নারী কর্মীদের প্রতি আচরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ রেগুলেশন ২০০৩-এর ৩৯ ধারায় বর্ণিত নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে। যৌন হয়রানিসংক্রান্ত অভিযোগগুলো ঘটনা ঘটার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মানবসম্পদ বিভাগ-১-এর নির্দিষ্ট পরিপত্রের মাধ্যমে গঠিত কমিটির কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।

১১(খ) নম্বরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের বিষয়ে মানবসম্পদ বিভাগ-২-এর অফিস নির্দেশ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।

১১(গ) নম্বরে ইতিবাচক কর্মপরিবেশ তৈরির জন্য দাপ্তরিক শিষ্টাচার ও আচরণবিধি তথা সততা, নৈতিকতা, সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ, অর্পিত দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে নিষ্ঠা ইত্যাদি, সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ ও আন্তরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক (পারস্পরিক সম্মান, সৌজন্যবোধ, সহযোগিতামূলক মনোভাব ইত্যাদি) মেনে চলতে বলা হয়েছে।

গৃহীত সিদ্ধান্তের ১২ নম্বরে বলা হয়েছে, ১১ নম্বর ক্রমিকে দেওয়া নির্দেশনা পরিপালনের জন্য অফিস, বিভাগ, প্রকল্প, সেল, ইউনিটভিত্তিক পর্যবেক্ষণের জন্য একজন কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দিতে হবে। ওই নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি করবেন মনোনীত কর্মকর্তা। এর ব্যত্যয় হলে বিভাগীয় প্রধানকে অবহিত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে নির্দেশনা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়ে অভিযোগ পাঠাবেন।

 

মন্তব্য

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত

শেয়ার
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত
রাজধানীর মাণ্ডা এলাকার ছোট শিশু সাফিন হাসান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। শ্বাসকষ্ট হওয়ায় তাকে নেবুলাইজার দেওয়া হচ্ছে। গতকাল তোলা। ছবি : মোহাম্মদ আসাদ
মন্তব্য
ফিরে দেখা ২৪ জুলাই ২০২৪

কারফিউ ৭ ঘণ্টা শিথিল, চিরুনি অভিযান গ্রেপ্তার ১৪০০

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
কারফিউ ৭ ঘণ্টা  শিথিল, চিরুনি অভিযান গ্রেপ্তার ১৪০০

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ব্যাপক সহিংসতা ও প্রাণহানির জেরে ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই রাত ১২টায় সারা দেশে কারফিউ জারি করা হয়। দুই দিন পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। এতে করে কারফিউ শিথিলের সময়ও প্রতিদিন একটু একটু করে বাড়ানো হচ্ছিল। ১৯ জুলাই কারফিউ জারির পর ২৪ জুলাই প্রথমবারের মতো টানা সাত ঘণ্টা কারফিউ শিথিল করা হয়।

এদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রাজধানীতে কারফিউ শিথিল ছিল।

দিনের বেশির ভাগ সময় কারফিউ শিথিল থাকায় এবং অফিস খোলায় এদিন নগরবাসীর জীবনে অনেকটা স্বাভাবিক কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও টানা কয়েক ঘণ্টা কারফিউ শিথিল থাকায় জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসে। টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর এদিন সচিবালয়সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা ছিল।

ব্যাংকগুলোতে ছিল গ্রাহকদের ভিড়। উৎপাদনে ফেরে শিল্প-কারখানাগুলো। চলেছে দূরপাল্লার বাস। তবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল এদিনও বন্ধ ছিল।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) বলছে, সহিংসতায় নতুন করে মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষে আহত হয়ে এদিন চিকিৎসাধীন আরো চারজনের মৃত্যু হয়। ২৪ জুলাই সারা দেশে চিরুনি অভিযানে আন্দোলনকারীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রায় এক হাজার ৪০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে ঢাকায় গ্রেপ্তার হয় ৬৪১ জন। এ নিয়ে ১৭ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত আট দিনে সারা দেশে গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে চার হাজার। গ্রেপ্তারদের বেশির ভাগই বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদের খোঁজ পাওয়া যায় এদিন। নিখোঁজ হওয়ার পাঁচ দিন পর আসিফ ও বাকেরকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে যাওয়া হয় বলে দুজনই ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানান। কোটা সংস্কার আন্দোলনে ১৬ জুলাই আবু সাঈদসহ ছয়জন নিহতের ঘটনা তদন্তে ২৪ জুলাই বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে ১৬ জুলাই সংঘর্ষের ঘটনাগুলোর বিষয়ে জানতে গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জনগণের কাছে তথ্য চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তদন্ত কমিটি।

রাজধানীসহ সারা দেশের পরিস্থিতি : কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এদিন অনেকটা স্বাভাবিক ছিল। তবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সড়কের মোড়ে মোড়ে ছিল পুলিশের চেকপোস্ট। বিকেল ৫টার পর আবারও কারফিউ শুরু হলে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ নেয় সড়কের। এদিন দেশে সহিংসতায় নতুন করে কারো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। টানা পাঁচ দিন পর এদিন চার ঘণ্টার জন্য সচিবালয় খোলা হলেও সচিবালয়ে প্রবেশে ব্যাপক তল্লাশি করা হয়। অন্য সময়ের তুলনায় নিরাপত্তাব্যবস্থাও ছিল জোরদার। সচিবালয়ের সামনে সেনা সদস্যরা মোতায়েন ছিলেন। প্রবেশপথে ছিল বাড়তি পুলিশ।

টানা তিন দিন পর ব্যাংক খোলায় টাকা তোলার চাপ বাড়ে রাজধানীর ব্যাংকগুলোতে। এটিএম বুথে ভিড় ছিল অন্য দিনের তুলনায় বেশি। সকাল ১১টা থেকে লেনদেন শুরু হয়ে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলে। এ সময় ব্যাংকগুলোতে সীমিত পরিসরে সেবা দেওয়া হয়। বেশির ভাগ ব্যাংকে অর্থ লেনদেন ছাড়া অন্য কোনো কার্যক্রম তেমন হয়নি।

এদিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও নৃশংসতার কথা উল্লেখ করে বলেন, আশঙ্কা ছিল এ ধরনের একটা আঘাত আসবে। সমৃদ্ধির পথে দেশের অগ্রযাত্রা রুখে দিতে বিএনপি-জামায়াত জোট এ ধরনের হামলা করতে পারে।

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সরকার যত দিন চাইবে, সেনাবাহিনী তত দিন বেসামরিক প্রশাসনের সহযোগিতায় দায়িত্ব পালন করবে।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতা, সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ প্রসঙ্গে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, একটি অচল অবস্থা তৈরির জন্য স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-বিএনপি শক্তি ও জঙ্গিরা একত্র হয়ে এ ঘটনাগুলো একের পর এক ঘটিয়েছে। আমরা কোনো সময়ই দেখিনি থানা ভবন আক্রমণ করতে, কারাগার আক্রমণ করতে।

পরদিন থেকে ট্রেন চলাচলের ঘোষণা : পরদিন ২৫ জুলাই থেকে সীমিত পরিসরে ট্রেন চলাচলের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। তবে শুরুতে আন্তনগর ট্রেন চালানো হবে না বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত স্বল্প দূরত্বের লোকাল-কমিউটার ট্রেন চলবে বলে জানায় রেলওয়ে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ