জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সেনানিবাসের অভ্যন্তরে প্রাণ রক্ষার্থে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের প্রসঙ্গে সেনাবাহিনীর অবস্থান সম্পর্কে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে আইএসপিআর। একই সঙ্গে এ বিষয়ে সবাইকে বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার থেকে সতর্ক থাকার আহবান জানানো হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার আইএসপিআর থেকে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বিগত সরকারের পতনের পর কতিপয় কুচক্রী মহলের তৎপরতায় সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়। ফলে সরকারি দপ্তর, থানাগুলোয় হামলা, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ওপর আক্রমণ ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, মব জাস্টিস, চুরি, ডাকাতিসহ বিবিধ বিশৃঙ্খলা দেখা যায়।
এ ধরনের সংবেদনশীল ও নাজুক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে দেশের নাগরিকদের মনে নিরাপত্তাহীনতার জন্ম নেয়।
এমতাবস্থায় ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব সেনানিবাসে প্রাণ রক্ষার্থে কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিরাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকরা আশ্রয় প্রার্থনা করেন। উদ্ভূত আকস্মিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সেনানিবাসে আশ্রয়প্রার্থীদের পরিচয় যাচাই-বাছাই করার চেয়ে তাদের জীবন রক্ষা করা প্রাধান্য পেয়েছিল। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, পাঁচজন বিচারক, ১৯ জন অসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা, ৫১৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাসহ বিবিধ ১২ জন ও ৫১ জন পরিবার পরিজনসহ (স্ত্রী ও শিশু) সর্বমোট ৬২৬ জনকে বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় প্রদান করা হয়েছিল।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, সে সময়ে শুধু মানবিক দায়বদ্ধতার কারণে আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড থেকে আশ্রয় প্রার্থীদের জীবন রক্ষা করাই ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য। পরিস্থিতি উন্নয়ন সাপেক্ষে, আশ্রয় গ্রহণকারীদের বেশির ভাগই এক-দুই দিনের মধ্যেই সেনানিবাস ত্যাগ করেন এবং এর মধ্যে পাঁচজনকে তাঁদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ-মামলার ভিত্তিতে, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেনানিবাসে অবস্থানকারী ও আশ্রয় প্রার্থীদের ব্যাপারে গত ১৮ আগস্ট আইএসপিআরের আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় এবং একই দিনে ১৯৩ জন ব্যক্তির একটি তালিকা (৪৩২ জন সাধারণ পুলিশ সদস্য ও একজন এনএসআই সদস্য ছাড়া) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়, যা ছিল একটি মীমাংসিত বিষয়। সেনানিবাসে আশ্রয়প্রার্থী এসব ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা ও জীবন রক্ষার্থে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সাময়িক আশ্রয় প্রদান করা হয়েছিল।
আইএসপিআর আরো উল্লেখ করে, তৎকালীন বিরাজমান নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে আশ্রয় প্রার্থীদের জীবন বিপন্ন হওয়ার সমূহ আশঙ্কা ছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তিকর সংবাদ ছড়িয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার পাশাপাশি জনগণের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে সেনানিবাসের অভ্যন্তরে প্রাণ রক্ষার্থে আশ্রয় গ্রহণকারী ৬২৬ জন ব্যক্তির একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা (৪৩২ জন সাধারণ পুলিশ সদস্য ও একজন এনএসআই সদস্যসহ) দেওয়া হয়। এ ছাড়া বলা হয়, সবাইকে এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার থেকে সতর্ক থাকার আহবান জানানো হচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি পেশাদারি, নিষ্ঠা ও আস্থার সঙ্গে জাতির পাশে থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছে।
তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে : রাজনীতিবিদদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক আইসিটি মন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী, সাবেক ডেপুটি স্পিকার সামসুল হক টুকু, খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য সায়েদুল হক সুমন, সাবেক সংসদ সদস্য নাজমা আকতার, সাবেক সংসদ সদস্য ছোট মনির, সাবেক সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম, সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান খান, বগুড়া-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রাগিবুল আহসান রিপু, বগুড়া-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন, সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, বাগেরহাট-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুন নাহার, হবিগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. আবু জহির, বরিশাল সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব, মিঠামাইন উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শরিফ কামাল ও ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত।
বিচারপতিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সাবেক বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম, বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা জজ কাজী মিজানুর রহমান, বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা জজ মো. আল আমিন এবং ময়মনসিংহের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মমতাজ পারভিন।
পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, র্যাবের সাবেক ডিজি হারুন উর রশিদ, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি খন্দকার লুত্ফুল কবির, এসবি চিফ মনিরুল ইসলাম ও সিটিটিসির চিফ মো. আসাদুজ্জামান প্রমুখ।