রাষ্ট্র সংস্কারে সমঝোতার পথসন্ধান

নিখিল ভদ্র
নিখিল ভদ্র
শেয়ার
রাষ্ট্র সংস্কারে সমঝোতার পথসন্ধান

রাষ্ট্র সংস্কারে সমঝোতায় পৌঁছতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৬৬টি প্রস্তাবের একটি তালিকা তৈরি করে। এর ভিত্তিতে দেশের ৩৯টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে গত ফেব্রুয়ারি মাসে লিখিত মতামত আহবান করা হয়। পরে জোট ও দলগুলোর কেউ নির্দিষ্ট ফরমে আবার কেউ আলাদা কাগজে লিখে তাদের মতামত জানায়। ওই মতামতের আলোকে জোট ও দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশন গত ২০ মার্চ প্রথম দফা সংলাপ শুরু করে শেষ করে ১৫ মে।

যদিও ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যেকোনো সময় যেকোনো দলের সঙ্গে সংলাপ করতে রাজি তারা। প্রথম দফা সংলাপে অংশ নেয় ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোট।  

তবে রাজনৈতিক জোট ও দলগুলোর সঙ্গে প্রথম দফা সংলাপে বেশ কিছু প্রস্তাবে ঐকমত্য হলেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবে উভয় পক্ষের পরস্পরবিরোধী মত রয়েছে। আবার কিছু কিছু প্রস্তাবে রাজনৈতিক জোট ও দলগুলো একমত হয়েও নতুন করে শর্ত জুড়ে দিয়েছে।

ফলে নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন, ঠিক কতগুলো প্রস্তাবে জোট ও দলগুলো একমত কিংবা দ্বিমত পোষণ করেছে। 

প্রায় দুই মাস ধরে চলা সংলাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালসহ বেশ কিছু বিষয়ে একমত হলেও জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ ক্রিয়াশীল দলগুলো সংবিধানের মূলনীতি, সাংবিধানিক কাউন্সিল, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব, এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুইবার প্রধানমন্ত্রী, সংসদ ও সরকারের মেয়াদ চার বছর করা, গণপরিষদ নির্বাচন এবং ভোটার ও প্রার্থীর বয়সসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু প্রস্তাব নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি। এ পরিস্থিতিতে আগামী সপ্তাহ থেকে আবারও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

সূত্রগুলো জানায়, ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে রাজনৈতিক জোট ও দলগুলো জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের পক্ষে মত দিয়েছে।

নারীর উন্নয়ন ও সংসদে নারী প্রতিনিধি বাড়াতে বিদ্যমান ৫০টি সংরক্ষিত আসন বাড়িয়ে ১০০টিতে উন্নীত করার পক্ষে মত দিয়েছে তারা। বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও নির্দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়েও একমত হয়েছে দলগুলো। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে জোট ও দলের পক্ষ থেকে একমত হলেও সংসদের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের সদস্য কোন প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত হবে, তা নিয়ে রয়েছে ভিন্নমত।

সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক ব্যবহার করতে পারবেন না, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছে বিএনপি। সংবিধানে বহুত্ববাদ নিয়ে সংশোধনীতেও কমিশনের সঙ্গে একমত বিএনপি।

এ ছাড়া বিদ্যমান সংবিধানের ৭ (ক) ও ৭ (খ) ধারা বিলুপ্ত করা, সংসদের উভয় কক্ষে ডেপুটি স্পিকারের একটি পদ বিরোধী দল থেকে দেওয়া, রাষ্ট্রপতির অভিশংসন প্রক্রিয়া, অধস্তন আদালত শব্দের পরিবর্তে স্থানীয় আদালত ব্যবহার করা, অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যসংখ্যা ১৪ জনে সীমাবদ্ধ রাখার বিষয়গুলোতে একমত বিএনপি।

আবার জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সব সংসদীয় কমিটির সভাপতির পদ বিরোধী দলকে দেওয়ার প্রস্তাব করলেও বিএনপি কিছু কমিটির পদ বিরোধী দলকে দেওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছে।

সংবিধানের বেশির ভাগ মৌলিক পরিবর্তনের প্রস্তাবে বিএনপি ও তাদের সমমনা দল এবং বাম দলগুলো বিরোধিতা করেছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রের নাম ও সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তনে আপত্তি জানিয়েছে অধিকাংশ দল।

তবে সংবিধান, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচনব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে যেসব সুপারিশ করা হয়েছিল সেগুলোর অধিকাংশের সঙ্গে এনসিপি একমত হলেও আংশিক একমত হয়েছে জামায়াত।

দেশে ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা এবং বিচার বিভাগএই তিনটি বিভাগের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন করার বিষয়ে কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে একমত নয় বিএনপি, জামায়াত ও বাম জোটসহ অধিকাংশ দল।

ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে একই ব্যক্তি দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন নাএমন প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রস্তাবে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, গণ অধিকার পরিষদ ও ইসলামী আন্দোলন একমত। তবে এ সুপারিশের সঙ্গে একমত হয়নি দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি, ১২ দলীয় জোটসহ কয়েকটি দল। তারা চাইছে একই ব্যক্তি টানা দুবারের পর বিরতি দিয়ে আবাবও প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সংসদ সদস্যদের ফ্লোর ক্রসিংয়ের সুযোগ প্রদানের বিষয়ে দলগুলোর নানা মত রয়েছে। প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা চালুর প্রস্তাবেও আপত্তি জানিয়েছে অধিকাংশ দল।

ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে সংবিধানে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানকে এক কাতারে আনার বিষয়ে জামায়াত ও এনসিপি একমত হলেও ভিন্নমত পোষণ করেছে বিএনপি ও তাদের মিত্র দল এবং বাম দলগুলো। এ ছাড়া সংবিধানের মূলনীতি ও রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাবেও একমত হয়নি তারা। সংবিধানে বহুত্ববাদ সংযোজনে আপত্তি জানিয়েছে ইসলামী দলগুলো। সংবিধান ইস্যুতে বিএনপি পরবর্তী সংসদে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া যৌক্তিক বলে মত দিয়েছে। তারা মনে করে, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালু ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত হলে বেশির ভাগ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

জামায়াতে ইসলামী সংবিধানের মূলনীতিতে আল্লাহর প্রতি অবিচল ঈমান-আস্থা পুনঃস্থাপনের প্রস্তাব করেছে। তারা সংবিধানে সাম্য, গণতন্ত্র, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচারের নীতিগুলো বজায় রাখার পক্ষে। আর বাহাত্তর সালের সংবিধানের চার মূলনীতি ও পরবর্তী সময়ে সংশোধনীর মাধ্যমে গৃহীত মূলনীতি বাদ দেওয়ার পক্ষে এনসিপি।

কমিশনের প্রস্তাব ছিল, সংসদের মেয়াদ চার বছর এবং একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান হতে পারবেন না। এই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়নি বিএনপি। তারা সংসদের মেয়াদ বিদ্যমান পাঁচ বছর রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেছে, একটি দলের প্রধান কে হবেন, তারা ক্ষমতায় গেলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, কে সংসদ নেতা হবেন, এসব ঠিক করার বিষয়টি দলের একান্ত নিজস্ব বিষয়। এসব সংবিধানে ঠিক করে দেওয়া যাবে না। তবে কমিশনের এ প্রস্তাবের সঙ্গে একমত এনসিপিসহ কয়েকটি দল। আর জামায়াত ও বাম দলগুলো সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছরের পক্ষে মত দিয়েছে।

বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদ সদস্যদের ভোটে। তবে সংবিধান সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নতুন পদ্ধতির প্রস্তাব দিয়ে বলেছে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন নির্বাচকমণ্ডলীর (ইলেকটোরাল কলেজ) সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে। আইনসভার উভয় কক্ষের সদস্যদের প্রত্যেকের একটি করে ভোট, জেলা সমন্বয় কাউন্সিল সামষ্টিকভাবে একটি করে ভোট (৬৪টি জেলা সমন্বয় কাউন্সিল থাকলে ৬৪টি ভোট), সিটি করপোরেশন সমন্বয় কাউন্সিল সামষ্টিকভাবে একটি করে ভোট দেবে। কমিশনের এ প্রস্তাবের সঙ্গে এনসিপি একমত হলেও দ্বিমত পোষণ করেছে বিএনপিসহ অধিকাংশ দল।

সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ এবং দলগুলোর প্রাপ্য ভোটের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের সুপারিশ করেছে। এ প্রস্তাবের সঙ্গে জামায়াত ও এনসিপি একমত হলেও আংশিক দ্বিমত পোষণ করেছে বিএনপি। তাদের প্রস্তাবপ্রাপ্য ভোটের ভিত্তিতে নয়, নিম্নকক্ষে প্রাপ্ত আসনের সংখ্যানুপাতে উচ্চকক্ষে প্রতিনিধি মনোনয়ন করা। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিসহ কয়েকটি দলের পক্ষ থেকে সংসদের উভয় কক্ষের জন্য সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত এনসিপিসহ কয়েকটি দল। তবে দ্বিমত পোষণ করেছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে জানিয়েছেন, বিতর্কিত নিয়োগ যাতে না হয়, সে লক্ষ্যে আপিল বিভাগের দুই থেকে তিনজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতির মধ্য থেকে একজনকে বাছাই করে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব করছে বিএনপি।

সংবিধান সংশোধনে দুই কক্ষের অনুমোদনের পর গণভোট করার প্রস্তাবেও একমত হয়নি বিএনপি। সংবিধানে মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা নামে আলাদা অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং নিম্নকক্ষে তরুণদের জন্য ১০ শতাংশ আসনে মনোনয়ন দেওয়া, সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রার্থীর ন্যূনতম বয়স ২১ বছর এবং ১৮ বছরে ভোটার করার প্রস্তাবে এনসিপি একমত হলেও দ্বিমত পোষণ করেছে বিএনপিসহ তাদের মিত্র দলগুলো। সংবিধান সংস্কার কমিশন রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতার অবসানের প্রস্তাব করেছে। তাদের মতে, বর্তমান ব্যবস্থায় সব কিছুই প্রধানমন্ত্রী নিয়ন্ত্রণ করেন এবং তাঁর পরামর্শেই রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাচন করেন। ফলে রাষ্ট্রপতির কোনো কার্যকর ভূমিকা থাকে না। এ প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়নি বিএনপি।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কেউ অভিযুক্ত হলে তাকে নির্বাচনের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করার বিষয়ে কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে এনসিপি একমত হলেও দ্বিমত পোষণ করেছে বিএনপিসহ অধিকাংশ দল। বিএনপির মতে, কাউকে অভিযুক্ত করলেই তাকে দোষী বলা যায় না, আর শুধু অভিযোগের ভিত্তিতে কাউকে অযোগ্য ঘোষণা করা যুক্তিসংগত নয় বলেও দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। শুধু আদালতের রায়ে প্রাথমিকভাবে দোষী সাব্যস্ত হলে তবেই তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা উচিত বলে মনে করে বিএনপি।

কমিশন সূত্র জানায়, বিএনপিসহ ক্রিয়াশীল দলগুলো সংবিধান ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে একমত হতে না পারায় চিন্তিত ঐকমত্য কমিশন। কমিশন আশা করেছিল, ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে যে আওয়াজ উঠেছিল, তাতে দলগুলো সংস্কার ইস্যুতে একমত হবে। কিন্তু বড় দলগুলো একমত হতে না পারায় জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংশয় তৈরি হবে। তার পরও কমিশনের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপের পাশাপাশি অনলাইনে সাধারণ নাগরিকদের মতামত নেওয়া হবে। সংলাপ ও অনলাইনে পাওয়া মতামতের ভিত্তিতে যেসব বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে, তা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতিতে জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হবে।

এসব বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার কালের কণ্ঠকে বলেন, সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মতানৈক্য থাকলেও তা অপরিবর্তনীয় নয়। সদিচ্ছা থাকলে পরস্পরের প্রস্তাবগুলো খোলা মনে বিশ্লেষণ করে ভিন্নমতের অবসান ঘটিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব।

তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তেমন একটি সহনশীল ও আলোচনাভিত্তিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। দ্বিতীয় দফা আলোচনার পর যেসব প্রস্তাবে ঐকমত্য হবে সেগুলো নিয়ে একটি জাতীয় সনদ বা জুলাই সনদ প্রণয়ন করা হবে। ওই সনদ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সব দল স্বাক্ষর করবে। এই প্রক্রিয়া আগামী জুলাইয়ে শেষ হবে বলে আশা করছি।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

জুলাই শহীদদের আত্মা আজ কষ্ট পাচ্ছে : ইশরাক

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
জুলাই শহীদদের আত্মা আজ কষ্ট পাচ্ছে : ইশরাক
ইশরাক হোসেন

বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশে এমন কোনো নির্বাচনী এলাকা নেই যে এনসিপির কেউ জয়লাভ করবে। তাই তারা পিআর পদ্ধতির নামে নির্বাচন পেছানোর চক্রান্ত করছে।

তিনি বলেন, জুলাই শহীদদের আত্মা আজ কষ্ট পাচ্ছে। কারণ শহীদরা কেউ জানত না তাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে কারো মধ্যে ক্ষমতার লোভ জাগবে।

গতকাল রবিবার রাজধানীর নয়াবাজারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কটূক্তি, অন্তর্বর্তী সরকারের নির্লিপ্ততায় সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে এক মশাল মিছিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। নয়াবাজার মোড় থেকে মশাল মিছিলটি তাঁতীবাজার, গুলিস্তান, পল্টন হয়ে নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়।

ইশরাক হোসেন বলেন, প্রতিটি মানুষের ব্যক্তি-বাক স্বাধীনতা আছে, তার মানে এই নয় যে আরেকজনের স্বাধীনতা হরণ করবেন, সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করবেন। এনসিপি আজকে যেভাবে শিষ্টাচারবহির্ভূত কথা বলছে, সেটিকে গণতন্ত্র বলে না।

কক্সবাজারে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ সম্পর্কে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী যে শিষ্টাচারবহির্ভূত কথা বলেছেন তার জন্য তাঁকে ক্ষমা চাইতেই হবে। নতুবা চকরিয়ার মতো সারা দেশে জনগণ তাঁদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করবে।

তিনি বলেন, আজকে দেশে কিছু হলেই এনসিপি-জামায়াত বিএনপির দিকে আঙুল তোলে। তারা ভালোভাবেই জানেদেশে নির্বাচন হলে বিএনপি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে।

তাই একেক সময় একেক অযৌক্তিক দাবি জানিয়ে নির্বাচন পেছানোর পাঁয়তারা করছে তারা।

বিএনপির এই নেতা বলেন, আজকে জুলাই শহীদদের নিয়ে ফায়দা লোটা হচ্ছে। আমি জানতে চাইজুলাই আন্দোলনে এনসিপি-জামায়াতের কতজন শহীদ হয়েছেন? এনসিপি নেতারাও ভালোভাবে জানেন, পর্দার আড়ালে এই আন্দোলন তারেক রহমান তত্ত্বাবধান করেছেন এবং বিএনপি ও ছাত্রদল-যুবদলের নেতারা মৃত্যুর অগ্রভাগে ছিলেন। আজকে ক্ষমতার লোভে তাঁরা তা বেমালুম ভুলে গেছেন। শুধু তাই নয়, তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতেও তাঁদের বিবেক একটুও কাঁপে না।

তিনি বলেন, গোপালগঞ্জে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় বিএনপির তিনজন নিহত হলো। তখন কেন এত প্রতিবাদ হলো না, রাষ্ট্রযন্ত্র কেন নিশ্চুপ ছিল? এনসিপির সমাবেশ ঘিরে যে পাঁচটি জীবন গেল তার দায়ভার কে নেবে?

ইশরাক বলেন, মুরাদনগরে উপদেষ্টা আসিফ সজীব ভূঁইয়া কী করছেন তা সবাই অবগত। একের পর খুন হচ্ছে। হত্যা হলেই যাচাই-বাছাই না করেই বিএনপির ওপর দোষ চাপানো হয়। আর যখন দেখে এখানে নতুন একটি দলের সম্পৃক্ততা রয়েছে তখন মিডিয়াও নিশ্চুপ হয়ে যায়। মুরাদনগরে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর এখন যত নির্যাতন চলছে তা আওয়ামী লীগ আমলেও হয়নি।

মন্তব্য
অ্যামচেমের নীতি সংলাপে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

পাল্টা শুল্ক নিয়ে উদ্বেগের কারণ নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
পাল্টা শুল্ক নিয়ে উদ্বেগের কারণ নেই

ট্রাম্পের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপিত হবে। পাল্টা শুল্ক আরোপিত হলেও এসব কথা বারবার বলে উদ্বেগ তৈরির দরকার নেই বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, সরকার যা যা করার সেটা করছে।

গতকাল রাজধানীর বনানীর শেরাটন হোটেলে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম) আয়োজিত টেকসই বিনিয়োগ বিষয়ক এক নীতি সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন উপদেষ্টা।

সংলাপের উদ্বোধনী বক্তব্যের পর জ্বালানি, পোশাক ও তামাক খাত নিয়ে আলাদা তিনটি উপস্থাপনা তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে পোশাক খাত নিয়ে উপস্থাপনা দেন বেসরকারি রিকভারি গ্রুপের প্রধান রূপান্তর কর্মকর্তা ফাহমি মুহসিন। তামাক খাতের টেকসই বিনিয়োগ নিয়ে উপস্থাপনা দেন ফিলিপ মরিস গ্রুপের এদেশীয় ব্যবস্থাপক রেজওয়ানুর রহমান মাহমুদ এবং জ্বালানি খাতের টেকসই বিনিয়োগ নিয়ে উপস্থাপনা তুলে ধরেন শেভরন বাংলাদেশের পরিচালক ইমরুল কবির। উপস্থাপনা শেষে শুরু হয় মূল আলোচনা পর্ব।

আলোচনা শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে উপস্থিত অতিথিদের বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পরও পোশাক খাত ধ্বংস হয়ে যাবে বলা হয়েছিল; কিন্তু সরকার ও ব্যবসায়ীরা একসঙ্গে কাজ করায় এই খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। একসঙ্গে চললে সব বাধা দূর হবে। টেকসই বিনিয়োগ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, টেকসই বিনিয়োগের ধারণাটি বিশ্বের সব দেশের জন্য হওয়া উচিত।

কিন্তু আমরা দেখছি, যারা দূষণের জন্য বেশি দায়ী, তারা এ ধরনের বিনিয়োগে এগিয়ে আসছে না। টেকসই পৃথিবী বিনির্মাণে শুধু টেকসই বিনিয়োগে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না; জীবনধারণের পদ্ধতিও টেকসই হতে হবে। ভোগপ্রবণতাও কমাতে হবে। পানি কম ব্যবহার করতে হবে।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, দেশের বস্ত্র খাতে আমরা বেশ কিছু টেকসই বিনিয়োগ দেখতে পাচ্ছি, যেখানে কম পানি ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে।

শিল্পের ক্ষেত্রে বিনামূল্যে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। এ বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করছে সরকার। জ্বালানির মিশ্রণ নিয়েও আমরা কাজ করছি, যাতে কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান জ্বালানিসংকটে না থাকে। সরকারি সব প্রতিষ্ঠানের ছাদে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা উৎপাদন খাতে ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করতে চাই।

আলোচনা শেষে ট্যানারিশিল্প নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এখানে যৌথ ব্যর্থতা ছিল। এই ব্যর্থতার জন্য এককভাবে কাউকে দায়ী করা যাবে না। সরকার বিনিয়োগ করেছে। আবার ব্যবসায়ীরা সক্ষমতার চাহিদা দিয়েছিল। এখন এই শিল্প নিয়ে নতুনভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

সভাপতির বক্তব্যে অ্যামচেম সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, পাল্টা শুল্ক নিয়ে ভালোভাবে আলোচনা হলে কিছু না কিছু ছাড় পাওয়া যাবে। এ ধরনের আলোচনা শুধু আমাদের সঙ্গে হচ্ছে না। বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আমরা আমেরিকা থেকে তুলা আনার কথা বলছি। কাস্টমসের সংস্কার নিয়ে কথা বলেছি।

অ্যামচেম সভাপতি আরো বলেন, দূষণ এখন শুধু পরিবেশগত কোনো বিষয় নয়। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রায় ৩.৪ শতাংশ দূষণের কারণে ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। তবে অনেক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশে এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব কারখানা রয়েছে।

সংলাপে অ্যামচেমের সদস্য প্রতিষ্ঠান রিকভার, ফিলিপ মরিস বাংলাদেশ লিমিটেড ও শেভরন বাংলাদেশ তাদের টেকসই উদ্যোগ তুলে ধরে।

মন্তব্য

বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও পিআরের নামে প্রতারণার জাল

শরীফুল আলম সুমন
শরীফুল আলম সুমন
শেয়ার
বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও পিআরের নামে প্রতারণার জাল

অনেক শিক্ষার্থীর পছন্দের তালিকায় এখন বিদেশে উচ্চশিক্ষা। আবার অনেকেই উন্নত জীবনযাপনের আশায় বিদেশে পার্লামেন্ট রেসিডেন্সি (পিআর) ও সিটিজেনশিপ পেতে চান। আর এই সুযোগই নিচ্ছে রাজধানীতে গড়ে ওঠা অনেক কনসালটেন্সি ফার্ম। তারা তাদের ওয়েবসাইটে আকর্ষণীয় নানা তথ্য তুলে ধরে।

এরপর ফেসবুকসহ নানা সামাজিক মাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপন দেয়। এমনকি তাদের অফিস খুবই পরিপাটি করে সাজায়। ফলে আগ্রহী প্রার্থীদের একবার অফিসে নিতে পারলে অনেকটাই পটিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়। আর একবার একটি ধাপ শুরু করলে পরে আর বের হওয়ার সুযোগ থাকে না।
আর এভাবেই হাজার হাজার মানুষের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একাধিক কনসালটেন্সি ফার্ম।

ইউনেসকোর গ্লোবাল ফ্লো অব টারশিয়ারি লেভেল এডুকেশন শীর্ষক প্রতিবেদন বলছে, প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে শুধু ৫০ থেকে ৬০ হাজার শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমান। তাঁদের বেশির ভাগই বিভিন্ন কনসালটেন্সি ফার্মের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিপ্রক্রিয়া ও ভিসা প্রসেসিং সম্পন্ন করে। বিনিময়ে ফার্মগুলো ক্ষেত্রভেদে একেকজনের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে।

সূত্র জানায়, সারা দেশে নামে-বেনামে দুই হাজারের মতো কনসালটেন্সি ফার্ম গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগই রাজধানীতে। তবে তাদের অনেকেই কিছুদিন পর পর অফিস পরিবর্তন করে। সরকারের মনিটরিং না থাকায় ভয়ংকর প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করেছে কয়েকটি চক্র। আর তাদের ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তাঁর পরিবার।

ওয়েবসাইটে অনেকটা চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে আগ্রহী প্রার্থীদের আকর্ষিত করছে এডুএইড নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখা যায়, তারা অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও নিউজিল্যান্ডে স্কিলড মাইগ্রেশন প্রোগ্রামে কনসালটেন্সি করে। সিটিজেনশিপ ও পাসপোর্টের ব্যবস্থা করে দেয় তার্কি, ভানুয়াতু এবং অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডায়। আর রেসিডেন্সির ব্যবস্থা করে হাঙ্গেরি, লাটভিয়া, ইউএই ও সৌদি অ্যারাবিয়ায়। আর বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য তাদের আছে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইউকে, ইউএসএ, আয়ারল্যান্ড ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। এ ছাড়া তারা বিভিন্ন দেশে স্কুলিং ভিসার মাধ্যমে পরিবারকে বিদেশে পিআরের ব্যবস্থা করে দেয়। এ ছাড়া তারা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রতিনিয়িত আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। বিভিন্ন সেমিনার ও মেলারও আয়োজন করছে। তাদের গুলশান-১, ধানমণ্ডিসহ দেশের বাইরে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার অফিসের ঠিকানা দেওয়া আছে।

গত মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিকেলে পরিচয় গোপন করে এই প্রতিবেদক এডুএইডের গুলশান অফিসে যান। সেখানে প্রথমে রিসেপশনে জানতে চাওয়া হয়, আপনি হায়ার এডুকেশন, স্কিলড মাইগ্রেশন, পিআর, না সিটিজেনশন কোন ব্যাপারে আলোচনা করতে চান। স্কিলড মাইগ্রেশন ও পিআরের কথা বললে একজন কনসালট্যান্টের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি বিভিন্ন দেশের স্কিলড মাইগ্রেশনের কথা বলেন। একজনের জন্য তাঁরা আট লাখ টাকা ফি নেন। এর সঙ্গে স্ত্রী যুক্ত হলে ১০ লাখ, আবার একজন সন্তান যুক্ত হলে ১১ লাখ টাকা নেন বলে জানান। এই ফি তাঁরা স্টেজ বাই স্টেজ নেন। তৃতীয় স্টেজ পর্যন্ত গেলে আর ফির টাকা ফেরত দেওয়া হয় না বলে জানান।

এরপর পিআর ও সিটিজেনশিপের জন্য এডুএইডের আরেকজন কনসালট্যান্টের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি জানান, বর্তমানে জাপানে পিআর খুবই ইজি। এ জন্য প্রথমে একবার ওখানে গিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট করে ৩৫ হাজার ডলার জমা রাখতে হয়। তাঁরা তৃতীয় কোনো দেশ থেকে ওই অর্থ ট্রান্সফারের ব্যবস্থা করে দেবেন। আর তাঁদের ফি একজনের জন্য আট থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত দেওয়া লাগতে পারে। আর তুরস্কে পিআরের জন্য পাঁচ কোটি টাকার ইনভেস্টমেন্ট লাগবে। সেটিও তাঁরা তৃতীয় দেশ থেকে ট্রান্সফারের ব্যবস্থা করে দেন। এরপর তাঁরা তুরস্কের পাসপোর্টেরও ব্যবস্থা করে দেবেন। তবে তাঁদের কত টাকা ফি দিতে হবে, সেটি আলোচনা সাপেক্ষে বলে জানান।

তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিদেশে উচ্চশিক্ষার আবেদনের তৃতীয় স্টেজ খুবই সাধারণ ধাপ। অর্থাৎ অনেকটা প্রাথমিক আবেদনের মতো। সেখানে সহজেই যাওয়া যায়। ফলে যাঁরা ফি দেন, তাঁদের ভিসা না হলেও তা আর ফেরত পান না। আর এডুএইড ইউএই, সৌদি আরব, তার্কি, লাটভিয়া, ক্যারিবিয়ানসহ অন্য বেশ কিছু দেশে যে পিআরের কথা বলছে, তা এখন অনেকটাই বন্ধ। আবার তারা তৃতীয় দেশের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে মানি লন্ডারিংয়ের মতো অপরাধ করছে। 

জানা যায়, চটকদার প্রচারণার মাধ্যমে অসাধু এজেন্সিগুলো প্রধানত তিন ধরনের প্রতারণা করে থাকে। এক. শিক্ষার্থীদের টাকা আত্মসাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিপ্রক্রিয়া অসম্পন্ন রাখা ও বিদেশে না পাঠানো। দুই. আগ্রহী প্রার্থীদর ভুয়া কাগজ তৈরি করে টাকা আত্মসাৎ করা। তিন. ভিসা করে বাইরে পাঠিয়ে প্রতিশ্রুত সুযোগ-সুবিধা না দেওয়া। উচ্চশিক্ষা গ্রহণে দেশের বাইরে গমনেচ্ছু শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতারকচক্রগুলো এখন লাগামহীন। এটিকে মানবপাচার ও মানি লন্ডারিংয়ের নতুন ক্ষেত্র বলছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।

সূত্র জানায়, কনসালটেন্সি ফার্মগুলোর কর্মকাণ্ড তদারকির কোনো ব্যবস্থা সরকারের নেই। কেবল পরামর্শক হিসেবে একটি ট্রেড লাইসেন্স বা কম্পানি করেই প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। ফলে বিপুল অঙ্কের টাকা লোপাট করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন ফার্মসংশ্লিষ্ট প্রতারকরা। মামলা বা অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। তবে আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বেশির ভাগ মামলা হয় ৪২০ ধারায়। ফলে আসামিদের বেশির ভাগ জামিনে বের হয়ে যায়।

বিদেশে ভর্তির নামে স্টুডেন্ট কনসালটেন্সি করা এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ফরেন অ্যাডমিশন অ্যান্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট কনসালট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ফ্যাডক্যাব)-এর সদস্যসংখ্যা চার শর মতো। অথচ রাজধানীর ফার্মগেট, পল্টন, মতিঝিল, ফকিরাপুল, কাকরাইল, উত্তরা, গুলশান, মহাখালীসহ সারা দেশে এই সংখ্যা দুই হাজারের মতো।

জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর কালের কণ্ঠকে বলেন, বিভিন্ন কন্সালটেন্সি ফার্মের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার যাঁরা হন, তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তদন্তসাপেক্ষ অভিযান পরিচালনা করে প্রতারকদের আইনের আওতায় এনে থাকি। এ ছাড়া আমাদের নিজস্ব কিছু নজরদারি থাকে। এতে যদি কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি প্রতারণা করে এমন পাওয়া যায়, তাদের সুনির্দিষ্ট আইনের আওতায় আনা হয়।

সম্প্রতি অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এ রকম তিনজনের প্রতারিত হওয়ার কথা জানিয়েছে। উত্তরার ট্রাভেলার এজ বিডি নামের একটি প্রতিষ্ঠান সাব্বির হোসেন (২১), শামীমুল হক ও আমিনুল ইসলাম নামের তিনজনকে পড়াশোনার জন্য কানাডায় পাঠানোর কথা বলে যথাক্রমে ২০ লাখ, ১৫ লাখ ও ১৭ লাখ টাকা নেয়। এরপর তাঁদের কানাডায় না পাঠিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় পাঠানো হয়। সেখানে শুরু হয় তাঁদের মানবেতর জীবন। ভিসার মেয়াদ শেষ হলে ইন্দোনেশিয়া পুলিশ তাঁদের আটক করে এবং ১৭ দিন তাঁরা জেলহাজতে থাকেন।

বিদেশে উচ্চশিক্ষার নামে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান এম কে খায়রুল বাশারকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।

সিআইডির প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত খায়রুল বাশার তাঁর স্ত্রী খন্দকার সেলিমা রওশনকে সঙ্গে নিয়ে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র গড়ে তোলেন। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ, স্কলারশিপ ও ভিসা প্রক্রিয়ার প্রলোভন দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আদায় করে তারা। প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞাপনে চটকদার প্রতিশ্রুতি থাকলেও বহু শিক্ষার্থীর নামে কোনো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনই করা হয়নি। ভুয়া অফার লেটার তৈরি করে তারা নিজেরাই টাকা আত্মসাৎ করেছে। আবার অনেককে পাঠাতে পারলেও তাঁরা বিদেশে গিয়েও নানাভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৪৪৮ জন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তাঁদের প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ জমা দিয়েছেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রুমন আলী লস্কর বলেন, বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, স্কলারশিপ ও ভিসার নামে আমাদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ আদায় করে। আমার মতো ভুক্তভোগীর সংখ্যা এক হাজারের বেশি। গড়ে প্রত্যেকের ২০ লাখ টাকা করে হিসাব করলে অন্তত ২০০ কোটি টাকার প্রতারণা করা হয়েছে।

মন্তব্য
ফিরে দেখা ২১ জুলাই ২৪

কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায় বাতিল সংঘর্ষে সারা দেশে আরো ১৯ জন নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায় বাতিল সংঘর্ষে সারা দেশে আরো ১৯ জন নিহত

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয় ২০২৪ সালের ১ জুলাই। শুরুতে অহিংস থাকলেও ১৫ জুলাই থেকে এই আন্দোলন সহিংস রূপ নেয়। ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ ছয়জন নিহত হন। নজিরবিহীন সহিংসতা ও সংঘর্ষে পরের মাত্র চার দিনে (২০ জুলাই পর্যন্ত) নিহতের এই সংখ্যা দাঁড়ায় দেড় শর কাছাকাছি।

দেশজুড়ে কারফিউ জারি করেও থামানো যাচ্ছিল না মৃত্যুর মিছিল।

এমন পরিস্থিতিতে গত বছরের ২১ জুলাই প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে এবং ৭ শতাংশ কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে সরকারকে নির্দেশ দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সাত শতাংশ কোটার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ; ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।

তবে আগের দিনের মতো গত বছর ২১ জুলাইও কারফিউয়ের মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়।

সংঘর্ষে ঢাকাসহ সারা দেশে এদিন ১৯ জন নিহত হন। এর মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০ জন, নরসিংদীতে চার, গাজীপুরে দুই, নারায়ণগঞ্জে এক, সাভারে এক ও চট্টগ্রামে একজনের মৃত্যুর খবর জানায় গণমাধ্যমগুলো। 

 

অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় ঝরেছে অনেক প্রাণ

২০১৮ সালে ৫৬ শতাংশ কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হাইকোর্টের রায় বাতিল করে ২০২৪ সালের ২১ জুলাই রায় দেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। তবে নির্ধারিত কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সংশ্লিষ্ট কোটার শূন্য পদে সাধারণ মেধাতালিকা থেকে পূরণ করতে হবে।

এই নির্দেশনার আলোকে সরকারের নির্বাহী বিভাগকে অবিলম্বে গেজেট জারির নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে এই নির্দেশনার পরও সরকার প্রয়োজনে আদালত নির্ধারিত কোটা বাতিল, সংশোধন বা সংস্কার করতে পারবে বলে উল্লেখ করা হয় রায়ে।

 

শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া

কোটা ইস্যুতে আপিল বিভাগের রায়কে স্বাগত জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম জানান, আপিল বিভাগের রায়কে শিক্ষার্থীরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তবে নির্বাহী বিভাগের সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) তথ্য অনুযায়ী, রায়ের পর শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তবে চার দফা দাবি পূরণে আন্দোলনের সমন্বয়করা ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। চার দফা দাবির মধ্যে ছিলকারফিউ তুলে দেওয়া, ইন্টারনেট চালু করা, বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হল খুলে দেওয়া এবং আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

এ ছাড়া আন্দোলনে সংঘটিত গত্যাকাণ্ডের বিচারসহ আট দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে সরকারকে আহবান জানানো হয়। সেই সঙ্গে পরদিন ২২ জুলাই গায়েবানা জানাজা কর্মসূচির ঘোষণাও দেন শিক্ষার্থীরা।

তবে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ। তাদের মতে, ভবিষ্যতে কোটার পরিমাণ নিয়ে সরকারের যথেচ্ছ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। তারা এক সপ্তাহের মধ্যে সংসদের জরুরি অধিবেশন ডেকে স্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে এ সংক্রান্ত আইন পাস করার দাবি জানায়।

 

রাজধানীসহ সারা দেশের পরিস্থিতি

এদিন ভোরে রাজধানীর পূর্বাচল এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে পাওয়া যায়। পরে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে ১৯ জুলাই দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে রাজধানীর নন্দীপাড়ার এক বন্ধুর বাসা থেকে নাহিদ ইসলামকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ করে তার পরিবার।

২১ জুলাই ছিল সরকারঘোষিত দুই দিন সাধারণ ছুটির প্রথম দিন। এদিনও সারা দেশ ছিল ইন্টারনেটবিহীন, বলবৎ ছিল কারফিউ। জরুরি পরিষেবা রোগীবাহী অ্যাম্বুল্যান্স, গণমাধ্যমের গাড়ি এবং আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ গন্তব্যের যাত্রীরা টিকিট দেখিয়ে যাতায়াতের সুযোগ পায়।

তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানান, পরের দিনও দেশে কারফিউ বলবৎ থাকবে। দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে। ঢাকা জেলা ও মহানগর, গাজীপুর জেলা ও মহানগর এবং নারায়ণগঞ্জে কারফিউয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অন্য জেলাগুলোতে জেলা প্রশাসকরা পরিস্থিতি বিবেচনা করে কারফিউয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন। দু-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

কারফিউয়ের মধ্যেও এদিন রাজধানীর বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, কুড়িল ও মিরপুর এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। যাত্রাবাড়ী এলাকার বিভিন্ন সড়কে জড়ো হয় বিক্ষোভকারীরা। সংঘর্ষ বাধলে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে আহত হয় শতাধিক ব্যক্তি।

দুপুরে রাজধানীর কুড়িল চৌরাস্তা ও নর্দা সড়ক অবরোধ করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে হেলিকপ্টার থেকে সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়।

মিরপুরে বিক্ষোভকারীরা মেট্রো রেলের কাজে ব্যবহৃত তিনটি গাড়ি ভাঙচুর করে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে রামপুরা ও বাড্ডা এলাকায়ও।

রাজধানীর খিলগাঁও, মালিবাগ ও চৌধুরীপাড়া এলাকা ছিল থমথমে। আগের দিনের তুলনায় এসব এলাকার সড়ক ও অলিগলিতে মানুষ ও যানবাহনের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়ভাবে কম।

তবে বিকেল ৩টায় দুই ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল হলে সড়ক ও অলিগলিতে মানুষ ও রিকশার উপস্থিতি ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে।

এদিন রাজধানীর বাইরে বড় ধরনের সংঘর্ষ হয় নরসিংদীতে। দুপুরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ বাধলে চারজন নিহত হন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে কয়েক শ আন্দোলনকারী আহত হন। এদিন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১৯ গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

বাসস বলছে, রাজধানীর সেতু ভবন ভাঙচুর, রামপুরার বিটিভি ভবনে আগুন দেওয়া ও বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগের ঘটনার ভিন্ন ভিন্ন মামলায় এদিন বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নিপুণ রায় ও গণ-অধিকার পরিষদের নেতা নুরুল হক নুরকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।

এদিন এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) পক্ষ থেকে বলা হয়, ৩১ জুলাই পর্যন্ত পিএসসির সব ধরনের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

 

বিদেশি কূটনীতিকদের সরকারের ব্রিফিং, আন্দোলন ছিনিয়ে নিয়েছে বিএনপি ও জামায়াত-শিবির

এদিন রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিদেশি কূটনীতিকদের চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্রিফিংকালে সরকারের পক্ষে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, কোটা বাতিল ও সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছিনিয়ে নিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে পুঁজি করে স্বাধীনতাবিরোধী, রাষ্ট্রবিরোধী ও ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠী সামপ্রতিক সহিংসতা চালিয়েছে। ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে স্বাধীনতাবিরোধী ও উগ্রবাদী গোষ্ঠীর সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের একটি ভিডিও দেখানো হয়।

 

দেশের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক

২১ জুলাই রাতে দেশের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে সামরিক-বেসামরিক শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ