আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং আইন সংশোধন করে দলটিকে বিচারে নেওয়া সরকারের পদক্ষেপ সঠিক বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। দলটি বলেছে, এ দাবি বিএনপি আগেই জানিয়েছিল এবং তখন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সরকারকে বিব্রতকর ও অনভিপ্রেত অবস্থায় পড়তে হতো না। দেরিতে হলেও সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তে তারা আনন্দিত।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি কিছু সংশয়ও প্রকাশ করা হয়েছে।
দলের নেতাদের কেউ কেউ মনে করেন, বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন যাতে না হয়, সেই দাবিও তোলা হতে পারে। এতে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হবে। শনিবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে এই বৈঠক হয়। এতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সভাপতিত্ব করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে, এটা বুঝা গেছে। কিন্তু বিচার করতে কত দিন লাগবে তা সরকার এখনো বলেনি। তাহলে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত কি নির্বাচনও হবে না? ছাত্ররা যদি এমন দাবি তোলে তাহলে কি সরকার তাও মেনে নেবে? ওই নেতা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ওই অবস্থায় যদি বিএনপি নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে নামে তাহলে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। তাই এখনই সংসদ নির্বাচন বিষয়ে সরকার তার অবস্থান স্পষ্ট না করলে নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা আরো বাড়বে।
গতকাল রবিবার এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন। বিবৃতিতে প্রশাসনিক আদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান আবারও স্পষ্ট করেছে দলটি।
বিবৃতিতে ফখরুল বলেন, ‘আমরা আনন্দিত, বিলম্বে হলেও শনিবার অন্তর্বর্তী সরকার ফ্যাসিবাদী সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার দ্রুত করার এবং বিচারকার্য নির্বিঘ্ন করার স্বার্থে ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগ ও এর সঙ্গে যুক্ত সব সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রাসঙ্গিক আইন সংশোধন করে বিচারিক প্রক্রিয়ায় গুম, খুন, নিপীড়ন ও জনগণের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন অপশাসন চালনাকারী, ফ্যাসিবাদী দলের বিচার করার সিদ্ধান্তকে আমরা সঠিক বলে মনে করি।’
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির বৈঠকে দুই দফা (১০ ফেব্রুয়ারি ও ১৬ এপ্রিল) ফ্যাসিবাদী সরকার ও তাদের দোসরদের বিচারের দাবি জানানো হয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেন তিনি।
বিবৃতিতে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি পুনর্ব্যক্ত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ১৬ বছর ধরে ভোটাধিকার বঞ্চিত জনগণ তাদের ভোটাধিকার তথা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই ফ্যাসিবাদের পতনের জন্য গুম, খুন, জেল, জুলুম সহ্য করেও অব্যাহত লড়াই করেছে। তাদের সেই দাবি এখনো অর্জিত হয়নি।
শাহবাগে যেতে হবে কেন : সালাহউদ্দিন
আওয়ামী লীগের বিচারের জন্য আইন সংশোধনের পর এর সুষ্ঠু প্রয়োগের জন্য আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘আমি আইন উপদেষ্টাকে অনুরোধ জানাব যে আইনটা যেন সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করা হয়। যেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে এটা বলতে না পারে যে, এটা সুষ্ঠুভাবে বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি, সেই বদনাম যেন আমাদের না হয়।’
গতকাল রবিবার রাজধানীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সংবিধান সংস্কার বিষয়ে নাগরিক জোট আয়োজিত আলোচনাসভায় আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা কেন শাহবাগে যাব। আমাদের দাবি তো বহু আগেই লিখিতভাবে প্রধান উপদেষ্টাকে দিয়েছি। আমরা সরকারকে বলব, বিএনপি এই রকম যেসব পরামর্শ দিয়েছে দেশ ও জনগণের পক্ষে তা যেন যথাসময়ে আমলে নেয়। সরকার ও দেশ পরিচালনায় আমরা সরকারকে সহযোগিতা করব।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ও গণমানুষের কথাগুলো বলেছিলাম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নজির আছে, যেসব ফ্যাসিবাদী দল গণহত্যার জন্য দায়ী তাদের বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে এসে নিষিদ্ধ করা হয়। এর উদাহরণ সারা পৃথিবীতে আছে। সুতরাং দেরিতে হলেও অন্তর্বর্তী সরকার আইনিপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করবে—এই ঘোষণা দেওয়ার জন্য স্বাগত জানাই।’