ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৮ আগস্ট ২০২৫
১৩ ভাদ্র ১৪৩২, ০৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৮ আগস্ট ২০২৫
১৩ ভাদ্র ১৪৩২, ০৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭
সুন্দরবন ও কক্সবাজার

জলদস্যুর উৎপাতে আবারও অশান্ত

ওমর ফারুক
ওমর ফারুক
শেয়ার
জলদস্যুর উৎপাতে আবারও অশান্ত

সুন্দরবন ও কক্সবাজার এলাকার দেড় শতাধিক জলদস্যু অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণের পর নতুন করে আবার দস্যুতায় জড়িয়ে পড়ছে। এদের অনেকে ফের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজি শুরু করেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এবার এই জলদস্যুরা সরাসরি নিজের নামে বাহিনী না গড়ে নতুন কাউকে সামনে রেখে তাদের নামে বাহিনী পরিচালনা করছে। আর এদের দিয়েই শুরু করা হয়েছে অপহরণ ও চাঁদাবাজি।

এরই মধ্যে সুন্দরবনে নতুন করে অন্তত ১০টি জলদস্যু বাহিনী গড়ে উঠেছে। তবে কোস্ট গার্ড সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, সুন্দরবনে নতুন করে তারা শুধু আলিফ ও কলিম শরীফ বাহিনীর তথ্য পেয়েছে।

জলদস্যুর উৎপাতে আবারও অশান্তগত বছর ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর আত্মসমর্পণ করা সুন্দরবন অঞ্চলের জলদস্যুদের প্রায় সবাই আবারও দস্যুতার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে বলে তথ্য মিলছে। এর মধ্যে চলতি বছরের গত দুই মাসে সুন্দরবনে অন্তত ১৫০ জন জেলেকে অপহরণ করে ১০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত মুক্তিপণ আদায় করেছে তারা।

সর্বশেষ গত বুধবার ছয়জন নারীসহ ৩৩ জন জেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। পরে কোস্ট গার্ড তৎপর হয়ে তাদের উদ্ধার করে। আত্মসমর্পণ করা জলদস্যুদের সঙ্গে নতুন জলদস্যু যুক্ত হওয়ায় তাদের শক্তি আরো বেড়েছে। ফলে এক ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সুন্দরবন, কক্সবাজারসহ বঙ্গোপসাগরের উপকূলে।
এই জলদস্যুদের কাছে পুলিশও অনেকটা অসহায়। কারণ বাধা পেলে গুলির ঘটনা ঘটাচ্ছে জলদস্যুরা।

কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম উল হক গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সুন্দরবন দস্যুমুক্ত ঘোষণা হওয়ায় এ অঞ্চলের জেলেরা ভালোই ছিল। কিন্তু সম্প্রতি আবারও বন ও জলদস্যুদের তৎপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের অধীন এলাকাগুলো মৎস্যজীবীদের নিরাপত্তা বিধান, জলদস্যু ও বনদস্যু দমন এবং নিরাপদ সুন্দরবন নিশ্চিত করতে ২৪ ঘণ্টা টহল অব্যাহত রাখা হয়েছে।

সবার সহযোগিতা নিয়ে আমরা আবারও জলদস্যু মুক্ত করব।

সূত্র জানায়, গত বছর ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর জলদস্যুরা আবারও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে শুরু করে। সুন্দরবনে বর্তমানে অন্তত ১০টি বাহিনী গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে রয়েছে কলিম শরীফ বাহিনী, আবদুল্লাহ বাহিনী, মজনু বাহিনী, দয়াল বাহিনী, রবিউল বাহিনী, মঞ্জুর বাহিনী, মাসুম বিল্লাহ ও ভাগ্নে বাহিনীসহ ১০টি বাহিনী। এসব বাহিনীর নেপথ্যে কাজ করছে আত্মসমর্পণ করা জলদস্যুদের অনেকে।

 

বর্তমানে যা ঘটছে

গত বুধবার সকালে মাছ ও কাঁকড়া আহরণে খুলনার কয়রা থেকে সুন্দরবনের উদ্দেশে রওনা করেন ছয় নারীসহ ৩৩ জন জেলে। পথে তাঁদের অপহরণ করে জলদস্যু কলিম শরীফ বাহিনী। তাঁদের জিম্মি করে প্রতি জনের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরে এ খবর জানতে পেরে ওই দিনই বাগেরহাটের কোস্ট গার্ড সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। পরে করকরি নদীর মাল্লাখালী এলাকা থেকে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। অভিযানের সময় কোস্ট গার্ডের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতদল ফাঁকা গুলি ছুড়ে বনের মধ্যে পালিয়ে যায়।

এদিকে গত ২৬ জানুয়ারি দুবলার চরসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে জেলেদের অপহরণের চেষ্টাকালে তিন জলদস্যুকে মারধর করে আটক করেন জেলেরা। পরে আটক ব্যক্তিদের কোস্ট গার্ডের হাতে তুলে দেওয়া হয়। কোস্ট গার্ড তাদের শরণখোলা থানায় হস্তান্তর করে।

শরণখোলা থানার ওসি মো. শহিদুল্লাহ গতকাল কালের কণ্ঠকে জানান, মজনু বাহিনী বাগেরহাটের দুবলার চর থেকে জেলেদের অপহরণ করতে চাইলে জেলেরা একত্রিত হয়ে তিন জলদস্যুকে ধরে ফেলে।

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার খাজুরা ইউনিয়নের পিরোজপুর গ্রামের জেলে মো. ইয়াসিনকে গত ৪ মার্চ রাতে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনে শরীফ বাহিনী অপহরণ করে। তিনি সুন্দরবনের শ্যালার চর শুঁটকি পল্লীর মৎস্য ব্যবসায়ী খুলনার মিঠু কমিশনারের ট্রলারের মাঝি। দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সদস্য মৎস্য ব্যবসায়ী মিঠু কমিশনার জানান, রাত সাড়ে ১১টার দিকে সশস্ত্র জলদস্যুরা একটি ট্রলারে এসে জেলেদের ট্রলারে হানা দেয়। জলদস্যুরা প্রথমে মারপিট শুরু করে। পরে ট্রলারের মাঝি মো. ইয়াসিনকে তুলে নিয়ে যায়।

গত ২ এপ্রিল বরগুনা পাথরঘাটা এলাকা থেকে চারটি ফিশিং ট্রলারে ৬৭ জন জেলে মাছ শিকারের জন্য গভীর সমুদ্রে যায়। ৯ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে বরগুনার তালতলী উপজেলাধীন সকিনার মোহনাসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুরা ট্রলারগুলোতে আক্রমণ করে। এতে দুজন জেলে গুলিবিদ্ধ হন এবং চলে যাওয়ার সময় জলদস্যুরা ট্রলারগুলোর ইঞ্জিন বিকল করে দিয়ে যায়। পরে গত বৃহস্পতিবার ট্রলার মালিক সেলিম চৌধুরী বিষয়টি কোস্ট গার্ডকে অবহিত করে।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে কক্সবাজারের মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপের অদূরে সাগরে মাছ ধরার সময় জলদস্যুর কবলে পড়ে একটি মাছ ধরার ট্রলার। এ সময় ওই ট্রলারের জেলে বেলালের হাতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে দস্যুদল। এরপর অন্য জেলেদের হত্যার হুমকি দিয়ে ট্রলারটিতে থাকা মাছ, ব্যবহৃত মোবাইল ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে ইঞ্জিন ভেঙে দিয়ে পালিয়ে যায় দস্যুদল। পরে দস্যুদলের কবলে পড়া জেলেরা ৯৯৯-এ কল দিলে কক্সবাজারের উপকূলবর্তী সোনাদিয়া দ্বীপ সন্নিহিত সাগরে অভিযান চালিয়ে লুট করা মাছসহ ১৮ জলদস্যুকে আটক করে কোস্ট গার্ড।

গত ৬ এপ্রিল হাতিয়া উপজেলার হরণী ইউনিয়নের বয়রার চর টাংকির ঘাট এলাকার জলদস্যু আব্দুর রব ও তাঁর সহযোগী আহছান উল্লাহকে (৫২) আটক করেছে হাতিয়া থানা পুলিশ। 

গত ২৮ মার্চ নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার চরগাশিয়ার কুখ্যাত জলদস্যু ফখরুল ইসলামের (ফকরা ডাকাত) প্রধান সহযোগী নাসির উদ্দিনকে (৩৪) আটক করেছে হাতিয়া কোস্ট গার্ড। পরে তাঁদের হাতিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়।

 

আত্মসমর্পণ করা জলদস্যুদের অনেকে ভিন্ন পেশায়

তবে আত্মসমর্পণ করা জলদস্যুদের কেউ কেউ সৎপথেও আছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তারা। তাঁদের কেউ কেউ মাছ শিকার, লবণ চাষ ও নাইট গার্ডের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। কেউ আবার জনপ্রতিনিধিও হয়েছেন। আত্মসমর্পণকারী জলদুস্যদের গতিবিধির ওপর নজর রাখছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।

সূত্র জানায়, একসময় আত্মসমর্পণকারীরা সুন্দরবনের শিবসা নদীসংলগ্ন বিভিন্ন খাল ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের কাটেশ্বর ও সাপখালীসংলগ্ন অঞ্চলের বনজীবী ও জলজীবী সাধারণ মানুষকে নিশানা করে চাঁদাবাজি ও ডাকাতি করত। এ ছাড়া অপহরণ করাও ছিল তাদের কাজ। এ অবস্থায় ২০১৬ সালে জলদুস্যরা র‌্যাবের মাধ্যমে আত্মসমর্পণের উদ্যোগ নেয়। এরপর ২০১৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর সুন্দরবনের কুখ্যাত জলদস্যু শান্ত বাহিনী ও আলম বাহিনীর প্রধানসহ ১৪ সদস্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। বরিশাল র‌্যাব-৮-এর কার্যালয়ে ১৪ বনদস্যু ২০টি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও এক হাজার আট রাউন্ড গোলাবারুদও জমা দেয় সেদিন।

এরপর ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি সুন্দরবনের কুখ্যাত জলদস্যু জাহাঙ্গীর বাহিনীর ২০ সদস্য আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। এরপর চট্টগ্রামের বাঁশখালী, কক্সবাজারের মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া উপকূলীয় এলাকায় ২০১৮, ২০২০ ও ২০২৪ সালে আত্মসমর্পণ করে ১২৭ জন জলদস্যু। তাঁরা একসময় বঙ্গোপসাগরের পেশাদার জলদস্যু হিসেবে পরিচিত ছিল। তাঁদের মধ্যে রহিমা বেগম নামের এক নারীও ছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার এলাকার আত্মসমর্পণ করা ১২৭ জনের বেশির ভাগ কক্সবাজার অঞ্চলে মাছ শিকার, লবণ চাষ, নাইট গার্ডসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত হয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে সুন্দরবন ও কক্সবাজার এলাকার আত্মসমর্পণকারী জলদুস্যুদের কেউ কেউ গোপনে নতুন করে জলদস্যুদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। তাদের দলকে গ্রেপ্তারে গোয়েন্দারা তৎপরতা চালাচ্ছেন।

চলতি বছর গত ২৩ মার্চ সকাল ১১টার দিকে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা পরিষদ হলরুমে র‌্যাবের মহাপরিচালকের পক্ষ থেকে আত্মসমর্পণ করা জলদুস্যদের ঈদ উপহার দেওয়া হয়। ওই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে জলদুস্য রানী খ্যাত রহিমা বেগম বলেন, অনেক মামলার আসামি হয়েছি, মামলাগুলো এখনো চলমান রয়েছে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পেরে ভালো লাগছে।

আত্মসমর্পণ করা জলদস্যু আবদুল হাকিম বাইশ্যা কালের কণ্ঠকে বলেন, ২০২০ সালে আত্মসমর্পণের পর আমাদের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ১১ মাস পর কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছি।

তিনি জানান, কারাগার থেকে বের হওয়ার পর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হয়। এলাকার লোকজন তাঁকে মেম্বার পদে নির্বাচনের জন্য বলে। তিনি বাশখালী সনুয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে মেম্বার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জীবিকা হিসেবে তিনি ও তাঁর মতো অনেকে এখন মাছ ধরার কাজ করেন। তিনি বলেন, ভালো মানুষ হয়ে যাওয়ার পর এখন অনেক সুখে দিন চলছে আমাদের। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুনেছি কক্সবাজার এলাকায় আত্মসমর্পণকারীদের মাঝে কেউ কেউ নতুন করে জলদস্যুতায় জড়াচ্ছে।

বাগের হাটের এসপি তৌহিদুল আরিফ বলেন, জলদস্যুরা আবারও সংগঠিত হচ্ছেএমন খবর পাওয়া যাচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি রোধ করার জন্য।

সাতক্ষীরার এসপি মনিরুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবন বিশাল এরিয়া। শুধু পুলিশ নয়, র‌্যাব ও কোস্ট গার্ড দায়িত্ব পালন করে। আমরা চেষ্টা করছি কোনো জলদুস্য যাতে কোনো কর্মকাণ্ড চালাতে না পারে।

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

আফ্রিদির তিন ডিভাইসে ভয়ংকর তথ্য!

মাসুদ রানা
মাসুদ রানা
শেয়ার
আফ্রিদির তিন ডিভাইসে ভয়ংকর তথ্য!

হত্যা মামলার আসামি কনটেন্ট ক্রিয়েটর ব্যাডবয় তৌহিদ আফ্রিদির তিন ডিভাইসে ভয়ংকর তথ্য থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীর বেপরোয়া ছেলে তৌহিদ আফ্রিদি যাত্রাবাড়ী থানার হত্যা মামলায় এখন রিমান্ডে রয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। সেই তথ্য যাচাই-বাছাই করছে পুলিশ।

সেই সঙ্গে তাঁর কাছ থেকে জব্দ করা তিনটি ডিভাইস ফরেনসিক পরীক্ষার প্রক্রিয়া চলছে। এসব ডিভাইসে রাষ্ট্রবিরোধী অনেক ভয়ংকর তথ্য-প্রমাণ থাকার প্রাথমিক প্রমাণ মিলছে।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক খান মো. এরফান কালের কণ্ঠকে বলেন, তাঁর কাছ থেকে মোবাইল ফোন, হার্ডডিস্ক ও ম্যাকবুক (তিনটি ডিভাইস) জব্দ করা হয়েছে। এসব ডিভাইস ফরেনসিক পরীক্ষা করা হবে।

এখন তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আপাতত এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রোসিকিউটর মুহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন বলেন, আসামি তৌহিদ লাইভে এসে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগকে আন্দোলনকারীদের নারকীয় হত্যা করতে উৎসাহিত করেন। তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়।

তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ডিভাইসে অবশ্যই ভয়ংকর তথ্য-প্রমাণ আছে। এগুলো ফরেনসিক পরীক্ষা করলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ষড়যন্ত্র, কার কী ভূমিকা এবং আন্দোলন দমনে কী ধরনের যোগসাজশ ছিল তা জানা যাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, উদ্ধার হওয়া ডিভাইসগুলোতে এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে একাধিক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে যোগাযোগের প্রমাণ রয়েছে। এসব চ্যাটে আন্দোলনের সময় কোথায় কিভাবে আন্দোলন দমন করা করা, সেইসব পরিকল্পনার তথ্য রয়েছে।

এর আগে রবিবার রাতে বরিশাল থেকে তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পরদিন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকেন্দ্রিক রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার আসাদুল হক বাবু হত্যা মামলায় তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক খান মো. এরফান তাঁকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। ওই আবেদনে বলা হয়, আসামি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশ ও বিদেশে একজন আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর এবং মাই টিভি চ্যানেলের পরিচালক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিগত পতিত সরকারের বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ও আজ্ঞাবহ হয়ে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। ২৪ জুলাইয়ে স্বৈরাচারীর পক্ষ নিয়ে তিনি সেলিব্রিটি ও অন্যান্য কনটেন্ট ক্রিয়েটর দিয়ে আন্দোলন বন্ধের জন্য প্ররোচিত করেছেন এবং যাঁরা দ্বিমত পোষণ করেছেন, তাঁদের বিভিন্ন হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে সরাসরি একজন মিডিয়া সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালী কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে এবং ওই টিভি চ্যানেলের পরিচালক হয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলেনের বিপক্ষে লাইভ প্রচার করে উসকানিমূলক বক্তব্য ও প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে ছাত্র-জনতার দাবি উপেক্ষা করে আন্দোলনবিরোধীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ জোগান। আসামির উসকানিমূলক কার্যক্রমে অনুপ্রাণিত হয়ে স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসী, রাজনৈতিক নেতা, কর্মী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী নির্বিচারে গুলিবর্ষণে মামলার ভিকটিম আসাদুল হক বাবু মৃত্যুবরণ করেন বলে তদন্তে প্রকাশ পায়। মামলার প্রকৃত ঘটনা, অজ্ঞাতনামা আসামিদের পরিচয় শনাক্তকরণ ও রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে আসামিকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য সাত দিনের রিমান্ড প্রয়োজন। শুনানি শেষে আদালত তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেন মো. আসাদুল হক বাবু। দুপুর আড়াইটার দিকে আসামিদের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গত বছরের ৩০ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা জয়নাল আবেদীন। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় আসামির তালিকায় নাসির উদ্দিন ও তৌহিদ আফ্রিদির নামও রয়েছে। এর আগে ১৭ আগস্ট রাজধানীর গুলশান থেকে মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরের দিন ১৮ আগস্ট এই মামলায় তাঁর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে গত ২৩ আগস্ট তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

মন্তব্য

নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা আজ

    অক্টোবরে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা আজ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা বা রোডম্যাপ আজ বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান। গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে চার নির্বাচন কমিশনার কমিশনের বৈঠকে এই কর্মপরিকল্পনা অনুমোদন করেন।

এদিকে গতকালই সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে ইসির খসড়া প্রস্তাবের ওপর দাবি-আপত্তির শুনানি শেষ হয়েছে।

ইসি সচিবালয় জানায়, টানা চার দিনে ৩৩টি জেলার ৮৪টি আসনের সর্বমোট এক হাজার ৮৯৩টি দাবি-আপত্তির ওপর ইসি শুনানি গ্রহণ করে। ইসির প্রস্তাবের বিপক্ষে এক হাজার ১৮৫টি এবং পক্ষে ৭০৮টি পরামর্শমূলক আবেদনের শুনানি হয়।

নির্বাচনের রোডম্যাপ সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে গতকাল ইসি সচিব বলেন, আমরা যে কর্মপরিকল্পনা করেছি, সে কর্মপরিকল্পনা আপনাদের জানাব। আমি ঢাকার বাইরে থাকায় একটু পিছিয়ে পড়েছি।

এটা আমার টেবিলে এখন আছে। আগামীকাল পর্যন্ত একটু অপেক্ষা করুন।

এ বিষয়ে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, কর্মপরিকল্পনার সব কিছু চূড়ান্ত হয়ে গেছে। অনুমোদন হয়েছে, এখন শুধু টাইপিং চলছে।

২০০৭-০৮ সাল থেকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কর্মপরিকল্পনা প্রকাশের রেওয়াজ চলে আসছে। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দেড় বছর আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রোডম্যাপ প্রকাশ করে তৎকালীন ইসি। বর্তমান ইসিও এ ধরাবাহিকতা বজায় রাখছে।

বর্তমান ইসি ২০২৪ সালের নভেম্বরে দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে ভোট ধরে একটি প্রথমিক কর্মপরিকল্পনা সাজিয়েছিল। পরে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে রোজার আগে ভোটের সময়সীমা নির্ধারণ হওয়ার পর নতুন সময় ধরে কর্মপরিকল্পনাটি পরিমার্জন করা হয়।

ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কর্মপরিকল্পনায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগের এবং পরের কার্যক্রমের ধারাবাহিক বর্ণনা ও সাম্ভাব্য সময়সীমা উল্লেখ থাকছে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সংলাপের জন্য এক মাস সময় রাখা হচ্ছে। অক্টোবরে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে। সম্প্রতি প্রকাশিত ভোটার হালনাগাদের খসড়া তালিকা ৩১ আগস্ট চূড়ান্ত হবে। এরপর আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে তাদের ভোটার তালিকায় যুক্ত করে সম্পূরক ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে কমিশন। সেপ্টেম্বরের মধ্যে নতুন দলের নিবন্ধন দিয়ে এসংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হতে পারে। নির্বাচনী আইন সংস্কার; ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ চূড়ান্ত করা; নির্বাচনী প্রশিক্ষণ এবং প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করার সময়সীমা, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার সম্ভাব্য সময়এসব কর্মপরিকল্পনায় উল্লেখ থাকবে।

আসনবিন্যাস চায় পাবনা, আগের আসন পুনর্বহাল চায় সিরাজগঞ্জ : এদিকে সীমানা পুনর্নির্ধারণ বিষয়ে গতকালের শুনানিতে পাবনায় সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের দাবি ওঠে। আর সিরাজগঞ্জবাসী আগের আসন পুনর্বহালের দাবি জানায়। পাবনার প্রতিনিধি জামায়াতে ইসলামীর প্রয়াত আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেন বলেন, বর্তমানে সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলার চারটি ইউনিয়ন নিয়ে পাবনা-১ আসন রয়েছে। বেড়া উপজেলার অপরাংশ ও সুজানগর উপজেলা নিয়ে পাবনা-২ আসন রয়েছে। আমরা শুধু সাঁথিয়া উপজেলা নিয়ে পাবনা-১ আসন চাই।

তিনি আরো বলেন, একই সঙ্গে বেড়া ও সুজানগর নিয়ে পাবনা-২ আসন চাই। এই দুটি আসন বিন্যাসের প্রস্তাব ২০১৮ সালেও ছিল, কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি।

সিরাজগঞ্জের প্রতিনিধি আবদুল মান্নান বলেন, সিরাজগঞ্জ জেলায় ২০০১ সাল পর্যন্ত সাতটি আসন ছিল। ২০০৮ সালে একটি আসন কমিয়ে ছয়টি আসন করা হয়। আমাদের দাবি, আগে চৌহালী উপজেলা ও শাহজাদপুর উপজেলার পূর্ব অঞ্চলের চারটি ইউনিয়ন মিলে যে সিরাজগঞ্জ-৬ আসন ছিল তা আমরা ফিরে চাই।

তিনি আরো বলেন, আমরা বর্তমানে বেলকুচি ও চৌহালী নিয়ে যে আসনে আছি এই আসনে আমরা থাকতে চাই না। দুর্গম ও নদীভাঙন এলাকা হিসেবে আমাদের একটিই দাবি, আমরা আগের আসনে ফিরে যেতে চাই।

 

মন্তব্য

রাকসুতে ভোট ২৫ সেপ্টেম্বর

রাবি প্রতিনিধি
রাবি প্রতিনিধি
শেয়ার
রাকসুতে ভোট ২৫ সেপ্টেম্বর

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল বুধবার রাত ৯টার দিকে এ তথ্য জানান রাকসু প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজার মহাষষ্ঠীর বিষয়টি বিবেচনা করে ২৮ সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে ২৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশনের জরুরি বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এর আগে গতকাল সকালে নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে ২৮ সেপ্টেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে নির্বাচন কমিশনের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দুপুর ২টায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন ছাত্রশিবিরের  নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া দুর্গাপূজার মহাষষ্ঠী থাকায় ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয় নির্বাচন কমিশন। পরে সন্ধ্যা ৭টায় এক জরুরি বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা করে নির্বাচন তিন দিন এগিয়ে আনা হয়।

সংশোধিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে ৩১ আগস্ট বিকেল ৫টা পর্যন্ত; মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে ১ থেকে ৪ ও ৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত; মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর, প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে ১১ সেপ্টেম্বর এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৫ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত। প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে ১৬ সেপ্টেম্বর। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টা পর্যন্ত একাডেমিক ভবনে ভোট চলবে এবং একই দিন ভোট গণনা শেষে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।

এ ছাড়া গতকাল দুপুরে নির্বাচন কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রাকসু, হল সংসদ ও সিনেটের সব প্রার্থীকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারে ২৮ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ডোপ টেস্ট সম্পন্ন করে তার প্রতিবেদন মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে।

মন্তব্য
বিএনপি মহাসচিব

নির্বাচন বানচাল করতে নিত্যনতুন দাবি তোলা হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
নির্বাচন বানচাল করতে নিত্যনতুন দাবি তোলা হচ্ছে
মির্জা ফখরুল

পরিকল্পিতভাবে নির্বাচন বানচাল করার জন্য কিছুসংখ্যক রাজনীতিকের পক্ষ থেকে নিত্যনতুন দাবি তোলা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরেই একটি অংশ সচেতনভাবে দেশের গণতান্ত্রিক শক্তিকে ক্ষমতায় আসতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। গতকাল বুধবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে রাজনীতিক কাজী জাফর আহমদের দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে কিছুসংখ্যক রাজনৈতিক মহল অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে নির্বাচন বানচাল করার জন্য, নির্বাচন ব্যাহত করার জন্য নিত্যনতুন দাবি তুলে চলছে।

এমন দাবি তুলছে, যার সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ পরিচিত নয়। সংস্কারের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলো সব ধরনের সহযোগিতা করছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তাঁরা কোথাও বাধা সৃষ্টি করেননি। কখনো বড় ধরনের দাবি তুলে রাজপথে নেমে সরকারকে বিব্রত করেননি। বিএনপির মহাসচিব বলেন, সংস্কার শব্দের সঙ্গে সাধারণ মানুষ পরিচিত নয়।
সেখানে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি (পিআর) বুঝতে সময় লাগবে। এটা মানুষকে বোঝানো খুবই কঠিন। আবার কাকে ভোট দেওয়া হচ্ছে, সেটা জানা যাবে না। কিন্তু এসব বাস্তবায়নে অনেকে কথা বলছেন এবং হুমকি দিচ্ছেন।

গণ-অভ্যুত্থানের সাত থেকে আট দিন পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক অনুষ্ঠানে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনের দাবি তুলেছিলেন বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। এ নিয়ে তাঁকে অনেক সমালোচনাও সহ্য করতে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যখনই একটা পরিবর্তন হয়, সেই পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে নেয় অন্যরা।

মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, অনেক চেষ্টা চলছে একাত্তরের কথা ভুলিয়ে দেওয়ার; কিন্তু সেটা ভোলা সম্ভব নয়। গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে, এ কারণে সরকারের ভেতরের একটা মহল সচেতনভাবে চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, লক্ষ্য অর্জনের জন্য আরো অনেক কাজ করতে হবে।

এস আলম গ্রুপ ভারতে থাকা কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে আড়াই হাজার কোটি টাকা দিয়েছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, তারা পরিকল্পনা করছে, কিভাবে ওই টাকা ব্যবহার করে বাংলাদেশে নির্বাচন বন্ধ করা যায় এবং শেখ হাসিনাকে আবার দেশে ফিরিয়ে আনা যায়।

মির্জা ফখরুল বলেন, এখন কেমন যেন হতাশার ছায়া ঘোরাঘুরি করছে। বেশির ভাগ মানুষ নষ্ট হয়ে গেছে। দুর্নীতি আর দুর্নীতি। যেদিকে তাকাবেন, সেখানেই দুর্নীতি। দুঃখজনক যে রাজনৈতিক নেতারা জড়িত হয়ে পড়ছেন।

জটিলতা না বাড়িয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জুলাই সনদ প্রণয়নের কাজ শেষ করাসহ ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে দাবি জানান মির্জা ফখরুল।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ