ঢাকা, বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫
১ শ্রাবণ ১৪৩২, ২০ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫
১ শ্রাবণ ১৪৩২, ২০ মহররম ১৪৪৭
বিশেষ লেখা

সশস্ত্র বাহিনীকে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতেই হবে

  • অদিতি করিম
শেয়ার
সশস্ত্র বাহিনীকে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতেই হবে
সেনাপ্রধান জে. ওয়াকার-উজ-জামান

বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী আমাদের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। আমাদের সার্বভৌমত্বের রক্ষক। সশস্ত্র বাহিনী আমাদের অহংকার ও গৌরবের প্রতিষ্ঠান। আর তাই এই সশস্ত্র বাহিনীকে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা আমাদের নাগরিক দায়িত্ব।

আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে যদি বিতর্কিত করা হয়, যদি হেয় প্রতিপন্ন করা হয় তাহলে আমাদের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা বিপন্ন হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বাংলাদেশ। সবার আগে দেশ, এটি আমাদের মনে রাখতে হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে আমরা লক্ষ করছি বাংলাদেশের গৌরবের প্রতীক, আমাদের অস্তিত্বের স্মারক সশস্ত্র বাহিনীকে নানাভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি নানা রকমভাবে সশস্ত্র বাহিনী সম্পর্কে নানা রকম মন্তব্য করছে, বিভিন্ন গুজব ছড়াচ্ছে বুঝে না বুঝে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনী, বিশেষ করে সেনাবাহিনীকে নিয়ে অনভিপ্রেত চর্চা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর মর্যাদা ক্ষুণ্নের শামিল। এর মাধ্যমে প্রকারান্তরে সশস্ত্র বাহিনীকে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী প্রধানসহ সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা রকম সত্য-মিথ্যা বিষোদগার করে রীতিমতো তর্কযুদ্ধ অনাকাঙ্ক্ষিত, অগ্রহণযোগ্য ও অনভিপ্রেত।
এসব তর্কযুদ্ধ কখনোই দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এই ধরনের বিতর্ক আমাদের জাতীয় ঐক্যকে শুধু বিনষ্ট করবে না, আমাদের সার্বভৌমত্বকেও হুমকির মুখে ফেলবে। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী একটি পেশাদার চৌকস বাহিনী হিসেবে সারা বিশ্বে সমাদৃত, পরিচিত। এই তো কয়েক দিন আগে গত অক্টোবরে সেন্ট্রাল আফ্রিকার বিদ্রোহী দমনে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডাররা গেলেন। সেখানে তাঁরা এক অসাধারণ অভিযানের মাধ্যমে বিদ্রোহ দমন করলেন।
শান্তি প্রতিষ্ঠা করলেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সেন্ট্রাল আফ্রিকায় শান্তি প্রতিষ্ঠার পর সেখানে সফরে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর উদ্যোগে একটি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র তিনি উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করা হচ্ছে গোটা আফ্রিকায়। শুধু সেন্ট্রাল আফ্রিকা নয়, সিয়েরা লিওন, সুদানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর অবদান সবাই গভীর আস্থার সঙ্গে স্বীকার করে। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী সারা বিশ্বে শান্তি রক্ষায় আস্থার প্রতীক। এ কারণেই আমাদের সশস্ত্র বাহিনী জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় অংশগ্রহণ করছে। এটি আমাদের জন্য এক বিরাট অর্জন। এটি শুধু বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী বা বিমানবাহিনীর সাফল্য নয়, এটি পুরো বাংলাদেশের গৌরব। এই গৌরবকে আমাদের সব সময় স্মরণ করতে হবে।

সশস্ত্র বাহিনীকে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতেই হবে
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাজশাহী সেনানিবাসে বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টারে সপ্তম কর্নেল অব দ্য রেজিমেন্ট হিসেবে অভিষেক অনুষ্ঠানে প্যারেড পরিদর্শন করেন।ছবি : আইএসপিআর


বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী সব দুর্যোগ, দুর্বিপাক এবং রাষ্ট্রীয় সংকটে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সব সময় জনগণের পক্ষে, শান্তির পক্ষে কাজ করেছে। ইতিহাস তাই বলে। আমরা যদি জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান পর্যালোচনা করি, তাহলে দেখব সেখানেও সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা ছিল গৌরবোজ্জ্বল। সশস্ত্র বাহিনী নিরীহ জনসাধারণের প্রতিপক্ষ হতে চায়নি। তারা জনগণকে অস্ত্র দিয়ে দমন করতে চায়নি। সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চেয়েছে। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের পর এখন নানা রকম ‘ব্লেম গেম’ শুরু হয়েছে, যেখানে সশস্ত্র বাহিনীকে বিতর্কিত করার এক গভীর ষড়যন্ত্র লক্ষ করা যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনী সম্পর্কে মনগড়া তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বিবিসিতে একটি সাক্ষাত্কারে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী সম্পর্কে কিছু অযাচিত অনভিপ্রেত এবং তাঁর দায়িত্বের বাইরে কথা বলেছেন। এই বক্তব্যগুলো কখনোই কাম্য নয়, কাঙ্ক্ষিত নয়। জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক তাঁর ম্যান্ডেটের বাইরে গিয়ে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়াটাকে অনেকেই ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করছে না। তিনি কেন এবং কোন প্রেক্ষাপটে এ ধরনের কথা বলেছেন, সেটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু গত ৭ মার্চ ‘বিবিসির হার্ডটক’ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী সম্পর্কে যে মন্তব্য তিনি করেছেন, তা তাঁর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা। কারণ বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী একটি ‘চেইন অব কমান্ড’-এর মধ্যে চলে। জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারও একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও পদ্ধতির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তাদের দায়িত্ব হলো বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার সংরক্ষণ এবং মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য প্রচারণা, জনমত সৃষ্টি করা ও মতামত ব্যক্ত করা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমরা দেখছি, মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা রকম ঘটনা ঘটেছে এবং সেসব ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রেই জাতিসংঘ ও জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন সীমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। বিশেষ করে গাজার গণহত্যার পর মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের পক্ষপাতিত্ব ও নমনীয় নীতি সারা বিশ্বে সমালোচিত হয়েছে। সেসব বাস্তবতা মাথায় না নিয়ে ভলকার তুর্ক কেন বাংলাদেশ প্রসঙ্গ নিয়ে আগ বাড়িয়ে অযাচিত কথা বলতে গেলেন, সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়। এমনিতেই বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লব নিয়ে মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন উঠেছে। বিভিন্ন মহল এর গ্রহণযোগ্যতা, তথ্য-উপাত্তের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষ করে সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে কি না, তা নিয়ে বড় বিতর্ক এখনো চলমান। এই প্রথম জাতিসংঘের একটি রিপোর্ট নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক উত্থাপিত হলো, এমনটি নয়। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের বহু রিপোর্টই খণ্ডিত, পক্ষপাতদুষ্ট ও বিতর্কিত হিসেবে সমালোচিত। সেই বিষয়ে মনোযোগী না হয়ে ভলকার তুর্ক কেন সেনাবাহিনীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করলেন, সেটি ভেবে দেখা দরকার। কারণ জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের এটি এখতিয়ারভুক্ত বিষয় নয়। ভলকার তুর্ক হার্ডটকে যেটি বলেছেন সেটি যদি আরো খোলাসা করে বলতেন, তাহলে হয়তো এই বিতর্ক হতো না। তিনি যদি বলতেন সুনির্দিষ্টভাবে তিনি সশস্ত্র বাহিনীর কাকে, কী সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন তাহলে প্রশ্ন উঠত না। জাতিসংঘের সঙ্গে একটি সদস্য রাষ্ট্রের যোগাযোগের ধরন সম্পর্কে যাদের ন্যূনতম ধারণা আছে, তারা জানেন জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন সেনাবাহিনী বা সশস্ত্র বাহিনীকে সরাসরি এ ধরনের সতর্কবার্তা দিতে পারে না, দেয়ও না। জাতিসংঘের এভাবে সতর্কবার্তা দেওয়ার কোনো পদ্ধতিও নেই। তিনি যদি কোনো সতর্কবার্তা দিয়ে থাকেন, তাহলে সেটি হয়তো বাংলাদেশের তত্কালীন সরকারকে দিয়েছেন অথবা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে দিয়েছেন। সেই বিষয়টি স্পষ্ট না করে তাঁর এই বক্তব্য সশস্ত্র বাহিনী সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করবে।
আশার কথা যে ভলকার তুর্ক এই বক্তব্যের পরপরই আইএসপিআর একটি দায়িত্বশীল বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে এই ধরনের কোনো ইঙ্গিত বা বার্তা সম্পর্কে সেনাবাহিনী অবহিত নয়। আইএসপিআরের বিবৃতিতে গণ-অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের মন্তব্যকে নাকচ করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মানবাধিকার তাত্পর্য যথাযথভাবে মূল্যায়ন করে এবং যেকোনো গঠনমূলক সমালোচনা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে। তবে অধিকতর সঠিকতা ও স্বচ্ছতার উদ্দেশ্যে ওই মন্তব্যের বিষয়ে কিছু স্পষ্টকরণ প্রয়োজন বলে মনে করে। বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার থেকে এ বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত বা বার্তা সম্পর্কে অবহিত নয়। যদি এসংক্রান্ত কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়, তবে তা তত্কালীন বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়ে থাকতে পারে, সেনাবাহিনীকে নয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতীয় নিরাপত্তা নির্দেশিকা অনুযায়ী কাজ করে এবং সর্বদা আইনের শাসন, মানবাধিকার নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে যে ভলকার তুর্কের এই মন্তব্য কিছু মহলের মধ্যে ভুলভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে, যা সেনাবাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি এবং পেশাদারিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আইএসপিআরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিরপেক্ষতা ও সততার মহান ঐতিহ্য ধারণ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বদা জনগণের পাশে থাকতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
উল্লেখ্য যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠার পর থেকে কখনোই এমন কোনো অবস্থান কোনো সময় গ্রহণ করেনি, যেটি জনগণের বিপক্ষে যায়। আমরা লক্ষ করেছি যে ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার পতনের সময় সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা ছিল অভাবনীয়, ইতিবাচক। সেই সময় তারা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতি অন্ধ আনুগত্য প্রদর্শন করে জনগণের মুখোমুখি দাঁড়ায়নি। সর্বশেষ ২০২৪ সালে গণ-অভ্যুত্থানের সময় সশস্ত্র বাহিনীর দায়িত্বশীল ও নিরপেক্ষ ভূমিকার কারণেই শেষ পর্যন্ত জনগণের বিজয় হয়েছে। মনে রাখতে হবে, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী আমাদের জনগণের প্রতিষ্ঠান। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। আমাদের রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্বের মহান দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশের তিন বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত সশস্ত্র বাহিনী। কাজেই কোনোভাবেই যেন আমরা সশস্ত্র বাহিনীকে বিতর্কিত না করি। অযাচিত দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করে এই বাহিনী সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করি। ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে যখন পুলিশ বাহিনী সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়েছিল, তখন সশস্ত্র বাহিনী বাংলাদেশের জনমালের হেফাজত করেছে। এখনো দেশে যেটুকু আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বলবত্ আছে সেটি সশস্ত্র বাহিনীর দৃঢ়চিত্ত ভূমিকার কারণে। মাসের পর মাস তারা এই দায়িত্ব পালন করছে। দীর্ঘদিন ধরে সশস্ত্র বাহিনীর এই দায়িত্ব পালন করা উচিত নয় বলে অনেকে মনে করে। কিন্তু জনগণের স্বার্থে এবং জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে তারা এই দায়িত্ব পালন করছে। এবারই প্রথম নয়, যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাকে সশস্ত্র বাহিনীর দেশপ্রেমিক সদস্যরাই প্রথম অসহায় মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ান। এ জন্য সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি দেশের সর্বস্তরের মানুষের অসীম আস্থা। এ রকম বাস্তবতায় আমাদের প্রধান দায়িত্ব হলো রাষ্ট্রের আস্থার প্রতীক এই প্রতিষ্ঠানটিকে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা। এই প্রতিষ্ঠানটিকে যদি বিতর্কিত করা হয় তাহলে আমরাই অস্তিত্বের সংকটে পড়ব। বিপন্ন হবে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব।

লেখক : নাট্যকার ও কলাম লেখক
ই-মেইল: auditekarim@gmail.com

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ

দ্বিকক্ষ সংসদ, পিআর ও নারী আসন নিয়ে ঐকমত্য হয়নি দলগুলোর

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
দ্বিকক্ষ সংসদ, পিআর ও নারী আসন নিয়ে ঐকমত্য হয়নি দলগুলোর

জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষের আসন অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসনবণ্টন প্রস্তাবে অনড় রয়েছে বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি দল। অন্যদিকে জামায়াত, এনসিপিসহ কয়েকটি দল জানায়, কমিশনের প্রথম প্রস্তাব অনুযায়ী নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে (পিআর) উচ্চকক্ষের আসনবণ্টন হতে হবে। তারা উভয় কক্ষের পাশাপাশি সংরক্ষিত নারী আসনেও পিআর পদ্ধতি চায়। আবার পিআর পদ্ধতি চাইলেও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিরোধিতা করেছে সিপিবিসহ সমমনা কয়েকটি দল।

এ ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার অন্তর্ভুক্তিসহ সংবিধানের মৌলিক সংস্কারে গণভোটের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হলেও ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি দলগুলো।

গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার সংলাপের ১৪তম দিনে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আগামী রবিবার আবারও সংলাপে বসবে কমিশন। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া।

সংলাপে ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

সংলাপ শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আলোচনায় সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গেছে। যদি উচ্চকক্ষ গঠিত না হয় বা উচ্চকক্ষ হওয়ার আগ পর্যন্ত সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের প্রয়োজন হবে। তবে সুনির্দিষ্ট কিছু অনুচ্ছেদ, যেমনপ্রস্তাবনা, রাষ্ট্রের মূলনীতি, অনুচ্ছেদ ৪৮, ৫৬, ১৪২ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিষয়ক ৫৮খ, ৫৮গ, ৫৮ঘ এবং ৫৮ঙ অনুচ্ছেদের দ্বারা সংবিধানে যুক্ত হলে তা সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের প্রয়োজন হবে।

তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো রকম মতভিন্নতা নেই বলে এই ব্যবস্থা পরিবর্তনে গণভোটের কথা বলা হয়েছে। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অন্তর্ভুক্তির পর ভবিষ্যতে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গণভোটের প্রয়োজন হবে। আশা করি, আগামী সপ্তাহে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নিয়োগের ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হবে।

সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ও জোট দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সমর্থন দিয়েছে মন্তব্য করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল এই মত প্রকাশ করেছে। তবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আজও ঐকমত্য হয়নি।

এ ব্যাপারে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল বলছে, ভোটের সংখ্যানুপাতে যেন উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হয়। অন্যদিকে আসনের সংখ্যানুপাতেও উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব আছে। যেহেতু রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো এ বিষয়ে একাধিক আলোচনার পরও ঐকমত্যের জায়গায় পৌঁছতে পারেনি, সেহেতু দল ও জোটগুলোর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার কমিশনের ওপর অর্পণ করা হয়েছে। কমিশন দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট বিষয়ে নিজেদের মধ্যে, পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে আগামী সপ্তাহে একটি অবস্থানে আসবে।

ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর কাজের অংশীদার জানিয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, যদি আমরা কোথাও ব্যর্থ হই, সেই ব্যর্থতা আমাদের সবার। কমিশনের ব্যর্থতা যদি হয়, তাহলে এটা সবার ব্যর্থতা হবে। তাই ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যে দায়িত্ব আমাদের ওপর অর্পিত হয়েছে, সেই দায়িত্ব রাজনৈতিক দল হিসেবে আপনাদের। আমরা আপনাদের প্রচেষ্টার অংশীদার হয়েছি, আলাদা সত্তা হিসেবে যুক্ত হইনি। রাজনৈতিক দলগুলোকে এক বছর আগের পরিস্থিতি অনুধাবন করার অনুরোধ জানান তিনি।

দীর্ঘ আলোচনার পরও ঐকমত্যে পৌঁছা সম্ভব না হওয়ায় কমিশন কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সেটির ওপর ভিত্তি করে বিএনপি প্রতিক্রিয়া দেবে বলে জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের ব্যাপারে মোটামুটি বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল একমত। কিন্তু তার গঠনপ্রক্রিয়া কী রকম হবে এবং পাওয়ার ফাংশন কিভাবে হবে সেটি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক আছে। নিম্নকক্ষে নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে কারো দ্বিমত নেই। উচ্চকক্ষ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের দলের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, আমরা সেই জায়গাতেই আছি। আমাদের ৩১ দফার ভিত্তিতে আমরা যে আইডিয়া নিয়ে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে বলেছিলাম, সেটি হলো, যাঁরা দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজন, যাঁদের জাতি গঠনে অবদান আছে এবং যাঁরা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, তাঁদের মেধা, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার অবদান যেন জাতি গঠনের কার্যক্রমে প্রতিফলিত হয়। জাতি যাতে সমৃদ্ধ হয়, সেই আইডিয়া থেকেই আমরা এই প্রস্তাবটি রেখেছিলাম। সেখানে আমরা উচ্চকক্ষে ১০০টি আসন রাখার জন্য বলেছিলাম। আমরা বলেছি, নারীদের বিদ্যমান সংরক্ষিত আসনে যেভাবে আসনের অনুপাতে নির্ধারণ করা হয়, সেভাবে উচ্চকক্ষেও হবে। কিন্তু বিষয়টা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হচ্ছে। কেউ চান পিআর পদ্ধতিতে। এখানে আবার পাওয়ার ফাংশনের বিষয় আছে। সাধারণ বিল কিভাবে পাস হবে, সংবিধান সংশোধন হলে উচ্চকক্ষে কিভাবে পাস হবে ইত্যাদি। আবার এখন বাংলাদেশের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের প্রয়োজন আছে কি না সে প্রশ্নও অনেক দল তুলছে।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সব বিষয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্য কমিশনের একটা সিদ্ধান্তে আসার কথা। সেই সিদ্ধান্ত জানানোর পরই আমাদের প্রতিক্রিয়া বা সম্মতি-অসম্মতির বিষয়ে জানাতে পারব। সে জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। সংবিধান সংশোধনের পদ্ধতি প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে যেসব মৌলিক ধারা রয়েছে, যেমনপ্রস্তাবনা ৮, ৪৮, ৫৬ ও ১৪২ নম্বর ধারাএসব ক্ষেত্রে সংশোধন এলেই তা পাস হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের আগে গণভোটে দিতে হবে। এই ধারা অনুসারে আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, ভবিষ্যতে কেউ যেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সে জন্য তা গণভোট ছাড়া পরিবর্তন করা যাবে নাএমন একটি বিধান সংযুক্ত করা হোক। কমিশন এই প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, মেজরিটি সংখ্যক দলই পিআর পদ্ধতিকেই সাপোর্ট দিচ্ছে। শুধু এক লাইনে ব্যাখ্যা দিতে চাই, জনসমর্থনের দিক থেকে পাঁচটা-ছয়টা দল হলো বিএনপি, এনসিপি, চরমোনাই পীর, সব ইসলামী দল, গণ অধিকার পরিষদ। আমরা পিআরের পক্ষে আছি। দু-একটি দল না চাইলে কোনো প্রস্তাব আটকে যাওয়াটা ইনজাস্টিস হবে, বৈষম্য হবে। কারণ মেজরিটি তো পক্ষেই আছে। কোনো এক জায়গায় একটা সলিউশন দিতে হবে।

ডা. তাহের বলেন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট নতুনভাবে ইন্ট্রোডিউস করার প্রস্তাব হচ্ছে। তবে পৃথিবীতে এটা নতুন নয়, বহু দেশে এই দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট আছে। কিছুসংখ্যক দল ছাড়া সবাই আমরা একমত হয়েছি, দ্বিকক্ষ পার্লামেন্ট চাই। তবে কিছুটা ডিফারেন্স হচ্ছে, কিভাবে এটা ফর্ম করবে এবং এটার ফাংশন কী হবে, সে নিয়ে কমিশনের প্রস্তাব আসছে। এগুলো কনক্লুড করা হয়েছে। কমিশন সব শুনেছে ও বক্তব্য রেখেছে এবং কমিশন বলেছে, আগামী রবিবার কমিশনই এ বিষয়টা চূড়ান্ত করবে। কমিশন এটি ফাইনাল সিদ্ধান্ত আকারে পেশ করবে।

তিনি আরো বলেন, সংবিধান সংশোধনটাকে একটু কঠিন করে দেওয়া হোক, যাতে কোনো একক দল একটু ইচ্ছামতো সংবিধান সংশোধন করতে না পারে।

নারীদের জন্য ১০০ আসনের পক্ষে একমত প্রকাশ করে জামায়াতে ইসলামীর এই নেতা বলেন, এ প্রক্রিয়ার ব্যাপারে আমাদের ভিন্নমত আছে। নারী আসনে নারীদের ভোটেই নির্বাচিত হতে হবে। পিআর পদ্ধতির নির্বাচন হলে এটা সহজ হবে।

তিনি আরো বলেন, উচ্চকক্ষ পিআর পদ্ধতিতে না হলে যদি সংসদীয় মেম্বারের আসনের সংখানুপাতিক হয়, তাহলে এটা তো আবার ডবলই হলো, সেম রিপ্রেজেন্টেশন, সেম সেন্টিমেন্ট, সেম ডিসিশন। যদি সব সেম সেম হয়, তাহলে দরকার কি?

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, নিম্নকক্ষের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসনবণ্টন হলে ক্ষমতার ভারসাম্য ও জবাবদিহি আসবে না। এমন উচ্চকক্ষ চাই, যেখানে ১ শতাংশ ভোট পাওয়া দলেরও প্রতিনিধিত্ব থাকবে। কার্যকর উচ্চকক্ষ থাকতে হবে। কিছু দলের মধ্যে উচ্চকক্ষকে দুর্বল করার প্রবণতা রয়েছে। আমরা সংবিধান সংশোধনে নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং কিছু কিছু অনুচ্ছেদ সংশোধনে গণভোটের প্রস্তাব করেছি।

মৌলিক সংস্কার প্রশ্নে বিএনপি বিরোধিতা করছে দাবি করে আখতার হোসেন বলেন, বেশির ভাগ দল উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির পক্ষে একমত হলেও বিএনপিসহ গুটিকয়েক দল আপত্তি জানিয়েছে। এখন উচ্চকক্ষের আলোচনা বাইরে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখতে পাচ্ছি। সংস্কারকে এখন সংখ্যাতাত্ত্বিক জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে; যেমন ২০টি সংস্কার প্রস্তাব, আমরা ১২টা মেনেছি, আটটা মানিনি। সবই কেন মানতে হবে, এমন কথা বলা হচ্ছে। যখন মৌলিক সংস্কারের কথা আসছে, তখন তারা বেঁকে বসছে। কিন্তু মৌলিক সংস্কারের প্রশ্নে এনসিপি কোনো ছাড় দেবে না। মৌলিক সংস্কার ছাড়া জুলাই সনদের দিকে নিয়ে যাওয়া হলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে না। সে ক্ষেত্রে সংস্কারের বিষয়টি যদি মাঠ পর্যায়ে নিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়, আমরা সেটাই করব।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, এ দেশের ভৌগোলিক বিবেচনায় দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের প্রয়োজন নেই। আমরা পিআর পদ্ধতি চাই। সংস্কার যা হয়েছে, তা নিয়ে জাতীয় সনদ হতে পারে। সময়ক্ষেপণ করলে দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হবে।

বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, যদি সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের সদস্য মনোনয়ন না হয় এবং গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলো উভয় কক্ষে পাস না হয়, তাহলে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের যৌক্তিকতা থাকবে না। বরং এতে রাষ্ট্র ও দেশের সম্পদের অপচয় হবে। আমরা বলেছি, যত দিন পর্যন্ত উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা না হবে, তত দিন সংবিধানের মৌলিক সংস্কারে নিম্নকক্ষের দুই-তৃতীয়াংশের মেজরিটি ও গণভোটের বিধান রাখতে হবে।

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, উচ্চকক্ষকে সাক্ষীগোপাল করা যাবে না। কিভাবে কার্যকর করা যায়, সেই পথ বের করতে হবে। দলের প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করা যাবে না। সংবিধান সংশোধন করতে নিম্নকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ মেজরিটির প্রয়োজন হবে।

মন্তব্য

কক্সবাজারে বিএনপি নেতা খুন জামায়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগ

    ৬ জেলায় ৩ খুন, আরো ৩ লাশ উদ্ধার
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
কক্সবাজারে বিএনপি নেতা খুন জামায়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগ

কক্সবাজারে জমির বিরোধ নিয়ে হামলায় আহত বিএনপি নেতার মৃত্যু হয়েছে। বিএনপি ও নিহতের পরিবারের অভিযোগ, এর জন্য দায়ী জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা। 

অন্যদিকে গাজীপুরের টঙ্গীতে পরকীয়া প্রেম দেখে ফেলায় প্রেমিকার স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন প্রেমিক। বরিশালে বাসায় ঢুকে সাবেক এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়।

এ ছাড়া গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে উদ্ধার হয়েছে আরো তিনজনের লাশ।

কালের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি, নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

কক্সবাজার : সদর উপজেলার ভারুয়াখালীতে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে হামলায় গুরুতর আহত বিএনপি নেতা রহিম উদ্দিন সিকদার (৫০) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে চট্টগ্রামের এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। নিহত রহিম উদ্দিন সিকদার ভারুয়াখালী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি।

স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দ, বিএনপির মিডিয়া সেল এবং নিহতের পরিবারের অভিযোগ, হামলায় নেতৃত্ব দেন কক্সবাজার পৌরসভার ফাতেরঘোনা ইউনিট জামায়াতে ইসলামীর আমির আব্দুল্লাহ আল নোমান। সেই সঙ্গে হামলায় অংশগ্রহণ করেন তাঁর জামাই মিজান, মুজিব, এনামসহ জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা।

নিহতের বড় ভাই ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান সিকদার জানান, গত রবিবার রাতে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে তাঁর ভাই রহিম উদ্দিনসহ পরিবারের সদস্যদের ওপর অতর্কিতভাবে লাঠি, রড ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় আহতদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

পরে অবস্থার অবনতি হলে রহিম উদ্দিনকে চট্টগ্রামের এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি ইলিয়াছ খান বলেন, আহত একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে থানায় মামলা করা হয়নি।

বরিশাল : বাকেরগঞ্জ উপজেলায় গতকাল দুপুরে বাসায় ঢুকে সাবেক এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে।

নিহত আব্দুস সাত্তার হাওলাদার (৬৫) ভরপাশা ইউনিয়নের দুধল মৌ গ্রামের গোলদারবাড়ির বাসিন্দা। তিনি অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিদর্শক।

ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তদন্ত না করে বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না। নিহতের পরিবারও কিছু বলতে পারছে না।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক জাহিদ হাসান জানান, নিহতের শরীরে একাধিক ছুরিকাঘাত করায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছে। হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা যান।

গাজীপুর (আঞ্চলিক) : টঙ্গীর দত্তপাড়া এলাকায় পরকীয়া প্রেম করার সময় দেখে ফেলায় স্বামীর হাতে পরকীয়া প্রেমিক খুন হয়েছেন। এ ঘটনায় গতকাল ভোররাতে পুলিশ প্রেমিকা সুলতানা বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে।

নিহত প্রেমিক কামরুল ইসলাম (২৬) টঙ্গীর এরশাদনগর এলাকার ৩ নম্বর ব্লকের দুলাল মিয়ার ছেলে। প্রেমিকা সুলতানা বেগম (৩০) এরশাদনগর ১ নম্বর ব্লকের পাখি মিয়ার মেয়ে এবং সাব্বির আহমেদের স্ত্রী।

এই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই কামাল হোসাইন বাদী হয়ে দুজনকে আসামি করে টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি মামলা করেন। পরে মামলার ২ নম্বর আসামি সুলতানা বেগমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১ নম্বর আসামি সাব্বির পলাতক।

দেবীদ্বার (কুমিল্লা) : নিখোঁজের আট দিন পর উপজেলার নির্জন এলাকার এক জঙ্গল থেকে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত হনুফা আক্তার (৪৫) দেবীদ্বার পৌর এলাকার বারেরা গ্রামের মৃত মজিবুর রহমানের স্ত্রী।

ঘটনাটি ঘটে উপজেলার ৭ নম্বর এলাহাবাদ ইউনিয়নের গৌরসার গ্রামের সাবেক সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন সুজাত আলীর পরিত্যক্ত বাড়ির পাশের একটি জঙ্গলে।

হনুফা বেগমের আত্মীয় স্কুল শিক্ষক লিপি আক্তার বলেন, আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাশের ছবি এবং দৈনিক কালের কণ্ঠের অনলাইনে নিউজটি দেখতে পাই। লাশের পরনের শাড়ি দেখে চিনতে পারি। পরে নিহতের ছেলেদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হই যে এটা হনুফা বেগমের লাশ।

কাউখালী (রাঙামাটি) : উপজেলার সুগারমিল আদর্শগ্রাম থেকে অপহরণের ৯ দিন পর পোলট্রি খামারি মামুনের (৩৫) বস্তাবন্দি দ্বিখণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করেছে কাউখালী থানা পুলিশ। গতকাল সকালে কাউখালীর মাঝেরপাড়া এলাকা থেকে ওই মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

মামুন সুগারমিল আদর্শগ্রাম এলাকার আলী আহম্মেদের একমাত্র ছেলে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিহত মামুনের সাবেক কর্মচারী মূল ঘাতক কামরুল ইসলাম (৩০), তাঁর স্ত্রী ও আনোয়ার (২০) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কামরুলের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে তাঁর দেখানো স্থান থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় মাটিতে পুঁতে রাখা মামুনের লাশ উদ্ধার করে কাউখালী থানা পুলিশ।

ময়মনসিংহ : গফরগাঁও উপজেলার পাঁচবাগ ইউনিয়নে শনিবার সকালে চর শাঁখচূড়া গ্রামের জনৈক আব্দুর রশিদের মজা পুকুর থেকে নিখোঁজ হওয়া শিশু সিফাতের (১১) লাশ উদ্ধার হয়েছিল। নিখোঁজ অন্য শিশু আয়মান সাদাবের (৫) লাশ গতকাল সকালে দীঘিরপার গ্রামের প্রতিবেশী আত্মীয় গোলাম হোসেনের মজা পুকুরপার থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। দুই শিশুই গত শুক্রবার নিজ নিজ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়েছিল।

মন্তব্য
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

ফটো সাংবাদিকের চোখে সেই দিন

আদর রহমান, রংপুর
আদর রহমান, রংপুর
শেয়ার
ফটো সাংবাদিকের চোখে সেই দিন

কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাধারণ শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর রাখছিলাম। কারণ ওই সময় রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সূতিকাগার ছিল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ফলে যোগাযোগ রক্ষা করছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়টির কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সাংবাদিকদের সঙ্গে। কালের কণ্ঠের ফটো সাংবাদিক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রায় সব কটি বিক্ষোভ মিছিল, সড়ক অবরোধের ছবি তোলার পাশাপাশি নিউজ কাভার করেছি।

কোটা সংস্কারের দাবিতে ৬ জুলাই ২০২৪ প্রথম কাভার করেছিলাম শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা ও বিক্ষোভ মিছিলের ছবি ও নিউজ।

এর দুই দিন পর ৮ জুলাই সাধারণ শিক্ষার্থীরা আবারও কোটা সংস্কারের দাবিতে ক্যাম্পাসে পদযাত্রা ও সমাবেশ করে সেখান থেকে বেরিয়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে।

১১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়টির সাধারণ শিক্ষার্থীরা সকাল ১১টায় কোটা সংস্কারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। ওই দিন পুলিশ ও ছাত্রলীগের বাধার মুখে পণ্ড হতে বসেছিল অবস্থান কর্মসূচি।

তবে শেষ পর্যন্ত সব বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে মডার্ন মোড়ের দিকে যেতে চাইলে ছাত্রলীগ ও প্রক্টরের বাধার কারণে ক্যাম্পাস থেকে বের হতে পারেনি। ওই দিন বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রলীগের হাতে মারধরের শিকার হন শিক্ষার্থী আবু সাঈদ।

এরপর আবার ১৪ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন শেষে রংপুর জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়টির ১ নম্বর গেটে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে আবারও বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেন। কিন্তু ওই দিন শিক্ষার্থীদের দাঁড়াতে দেননি বেরোবি শাখা ছাত্রলীগ, রংপুর মহানগর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা। তাঁদের ধাওয়ায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করতে না পেরে ফের ১৬ জুলাই বেরোবির ১ নম্বর গেটে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেন।

সিদ্ধান্ত হয় ১৬ জুলাই রংপুর নগরীর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সকাল ১১টায় রংপুর জিলা স্কুলের সামনে জড়ো হয়ে মিছিল নিয়ে বেরোবির ১ নম্বর গেটের সামনে যাবেন।

ওই দিন দুপুর ১টার দিকে অফিস থেকে বের হয়ে মোটরসাইকেলে রওনা করি বেরোবির দিকে।

সঙ্গে ছিলেন দৈনিক যুগান্তরের রংপুর অফিসের ফটো সাংবাদিক উদয় চন্দ্র বর্মন। সেখানে পৌঁছে আমরা অবস্থান করছিলাম বেরোবির ১ নম্বর গেটে। কিছুক্ষণ পর শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আসা শিক্ষার্থীদের মিছিলে যোগ দিয়ে বেরোবির শিক্ষার্থীরা ১ নম্বর গেটের সামনে বিক্ষোভ করতে করতে ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। কিন্তু আগে থেকেই ১ নম্বর গেটের সামনে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে ছিল।

তখন দুপুর ২টা ৯ মিনিট। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। একটি ইটের টুকরা এসে আমার বাঁ হাতে লাগলে সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হই। এক পর্যায়ে পুলিশ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা শুরু করে। পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পুলিশ ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি অবস্থান নেন। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।

দুপুর ২টা ১৬ মিনিটের দিকে শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে বেধড়ক পেটাতে থাকে পুলিশ। চারজন পুলিশ তাতে অংশ নেয়। এক পর্যায়ে আবু সাঈদের মাথা ফেটে রক্ত বের হতে থাকে। বেরোবির ১ নম্বর গেট পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দমাতে পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয় ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীরা।

সংঘর্ষের এক পর্যায়ে দুপুর ২টা ১৯ মিনিটে আবু সাঈদ পুলিশের সামনে বুক পেতে দেন। খুব কাছ থেকে পুলিশ তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করে। ছররা গুলি বুকে লাগার পর আবু সাঈদ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সহপাঠীরা সঙ্গে সঙ্গে আবু সাঈদকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে আন্দোলনরত বেরোবির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ পার্কের মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেয় সাধারণ মানুষ। আবু সাঈদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বেরোবির ১ নম্বর গেট ভেঙে ঢুকে পড়ে ক্যাম্পাসে। বিকেল ৪টা ৩৬ মিনিটে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে একটি কার এবং কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন দেন। এরপর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বেরোবির ভিসির বাড়ি অবরুদ্ধ করে নিচে রাখা একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে বাড়িটিও ভাঙচুর করেন। পরে পুলিশ ও র্যাব এসে ভিসির বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া কয়েকজন শিক্ষকসহ ভিসিকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। 

মন্তব্য

প্রথমবারের মতো আজ ‘জুলাই শহীদ দিবস’

    পালিত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় শোক
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
প্রথমবারের মতো আজ ‘জুলাই শহীদ দিবস’

আজ বুধবার প্রথমবারের মতো দেশজুড়ে পালিত হবে জুলাই শহীদ দিবস। গত বছরের এই দিনে (১৬ জুলাই) সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থা বিলোপের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের গুলিতে শহীদ হন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। একই দিনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে শহীদ হন আরো পাঁচজন।

দিবসটি উপলক্ষে আজ রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। দেশের সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশের বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। শহীদদের মাগফিরাত কামনায় মসজিদে বিশেষ দোয়া ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।

দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো আজ দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে জুলাই শহীদ দিবস। এই দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের শৃঙ্খল থেকে জাতিকে মুক্ত করার আন্দোলনে আত্মোৎসর্গকারী সব শহীদকে।

জুলাই শহীদরা বৈষম্যহীন, দুর্নীতি ও স্বৈরাচারমুক্ত নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বপ্ন দেখেছিলেন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া এই সুযোগকে কাজে লাগাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। জুলাইয়ের চেতনা ধারণ করে নতুন বাংলাদেশের পথে দৃপ্ত পদভারে একযোগে সবাই এগিয়ে যাবআজকের দিনে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

 

কর্মসূচি

জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে জুলাই শহীদ দিবসে আজ থাকছে নানা আয়োজন। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যে স্থানগুলোতে শহীদরা প্রাণ হারান, সেসব স্থানে শহীদদের নামে স্ট্রিট মেমোরি স্ট্যাম্প স্থাপনের কাজ শুরু হচ্ছে আজ থেকে। এই কাজ চলবে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত।

আয়োজনের মধ্যে থাকছে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে শহীদ আবু সাঈদ স্মরণে জুলাইয়ের গান ও ড্রোন শো। জুলাইয়ের গান ও ড্রোন শো থাকছে চট্টগ্রামেও।

শিল্পকলার মঞ্চে থাকছে জুলাইয়ের গল্প বলা অনুষ্ঠান।

কর্মসূচিতে আরো রয়েছে ১৬ জুলাই স্মরণে মিউজিক্যাল ভিডিও শেয়ার। এর থিম মিউজিক হবে কথা ক। সেই সঙ্গে আজ একটি শহীদ পরিবারের সাক্ষ্য প্রামাণ্যচিত্রের তৃতীয় খণ্ড প্রচার এবং একজন জুলাই যোদ্ধার স্মৃতিচারণার ভিডিও শেয়ার করা হবে। সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে। পাশাপাশি সব মোবাইল গ্রাহকের কাছে ভিডিওর ইউআরএল পাঠানো হবে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ