বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের যে ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে চেয়েছিল, সেটিই প্রকারান্তরে ওই অভ্যুত্থানের তরুণ নেতাদের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) লক্ষ্য হিসেবে উঠে এসেছে বলে অনেকের ধারণা। গত শুক্রবার এনসিপির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে দলটির আহবায়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “আমাদের লক্ষ্য দেশে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠা করা। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের খসড়া ঘোষণাপত্রেও বলা হয়েছিল, ‘আমরা এই ঘোষণা প্রদান করলাম যে ১৯৭২ এবং ১/১১ কালের রাজনৈতিক বন্দোবস্তের পরিবর্তন ঘটানোর জন্য আমাদের একটি নতুন জনতন্ত্র (রিপাবলিক) প্রয়োজন, যা রাষ্ট্রে সকল ধরনের নিপীড়ন, শোষণ ও বৈষম্যের অবসান ঘটাবে এবং এ দেশের তরুণসমাজের প্রত্যাশাকে ধারণ করতে পারবে। আমরা এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করিলাম যে এই ঘোষণাপত্রকে উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ নিয়ে নানা প্রশ্ন
কাজী হাফিজ

এ ছাড়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ওই খসড়া ঘোষণাপত্রে আরো বলা হয়, ‘আমরা ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারকে লালন করার দলিল ১৯৭২ সালের সংবিধান সংশোধন বা প্রয়োজনে বাতিল করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করিলাম। আমরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুটপাটের অপরাধগুলোর উপযুক্ত বিচার করা হবে, এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করিলাম।
ঘোষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়নি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি গত ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এটি প্রকাশ করতে চেয়েছিল। সে সময়ও এর প্রয়োজন কী এবং এর প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন ওঠে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং প্রথমে এ উদ্যোগের সঙ্গে সরকার সম্পৃক্ত নয় বলে জানায়।
ঘোষণাপত্র নিয়ে সেদিনের বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রণয়নের বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন। সবাই বলেছেন এ ধরনের একটি ঘোষণাপত্র করার প্রয়োজন আছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ওই দিন বলেন, ‘আমরা প্রশ্ন করেছি, সাড়ে পাঁচ মাস পর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের কোনো প্রয়োজন আছে কি না? যদি থাকে, সেটার রাজনৈতিক গুরুত্ব, ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং আইনি গুরুত্ব কী; সেটা নির্ধারণ করতে হবে।’
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারও সেদিন বলেন, ‘মোটাদাগে বলতে পারি, একটি ঘোষণাপত্র হওয়া প্রয়োজন, সেটি প্রতিটি দল অনুভব করেছে, তবে তাড়াহুড়া করে নয়। তাড়াহুড়া করলে ভুলভ্রান্তি হতে পারে। এ জন্য সময় নিতে হবে। রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করতে হবে।’
এ ক্ষেত্রে ওই ঘোষণাপত্রের মতোই এনসিপির সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য পূরণ কিভাবে এবং কত দিনে সম্ভব বা আদৌ সম্ভব কি না, সে বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনে অন্যতম আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
এনসিপি যা বলছে : এ বিষয়ে এনসিপির যুগ্ম আহবায়ক সারোয়ার তুষার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার মানে হচ্ছে আমরা গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে চাই। এ লক্ষ্যে আমরা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ এবং দলকে সেদিকে সম্প্রসারণ করার চেষ্টা করব। আর আমরা যদি সামনের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাই, তাহলে আমরা ওই সংসদকে গণপরিষদ ঘোষণা করব।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এ দাবিতে জণগণের মতামত অর্জন করার চেষ্টা করব। আমরা মনে করি, আগামী নির্বাচনটি গণপরিষদ নির্বাচন হওয়া দরকার। কারণ সংবিধান প্রণয়ন কিংবা সংস্কার করতে হবে। সংবিধান প্রণয়ন আর সংস্কার তো সংসদে করা যায় না। তাই গণপরিষদ নির্বাচন প্রয়োজন।’
একাধিক রিপাবলিকের উদাহরণ : বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে একাধিক রিপাবলিকের উদাহরণ রয়েছে ফ্রান্সে। ঘানা, উগান্ডা, মাদাগাস্কার, নাইজার, ভিয়েতনাম, মালদ্বীপ, পর্তুগাল, পোল্যান্ড, কোস্টারিকাসহ আরো কয়েকটি দেশের ইতিহাসের সঙ্গেও মিশে আছে রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা বদলের এই রাজনৈতিক ধারণাটি। সার্বিকভাবে এমন ধারণায় কোনো দেশে পূর্ববর্তী শাসনব্যবস্থার বদল ঘটিয়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বা শাসনকাঠামো গ্রহণ করাকে বোঝায়। বিপ্লব, অভ্যুত্থানসহ নানাভাবেই আসতে পারে এমন পরিবর্তন। ফ্রান্স একসময় রাজতন্ত্রের অধীন ছিল। ১৭৮৯ থেকে ১৭৯৯ সাল পর্যন্ত ফরাসি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে রাজতন্ত্রের পতন ঘটে। ওই বিপ্লব চলার মধ্যেই ১৭৯২ সালে ফ্রান্সে প্রথম রিপাবলিক ঘোষণা করা হয়। ১৮০৪ সাল পর্যন্ত প্রথম রিপাবলিক টিকে ছিল। এরপর আবার রাজতন্ত্র শুরু হয়। এ পর্ব চলে ১৮৪৮ সাল পর্যন্ত। ওই বছর ফ্রান্সে দ্বিতীয় রিপাবলিক ঘোষণা করা হয়। এটি টিকে ছিল ১৮৫২ সাল পর্যন্ত। দফায় দফায় শাসনব্যবস্থা বদলে ফ্রান্সে এখন চলছে পঞ্চম রিপাবলিক; যেটি ১৯৫৮ সালের ৪ অক্টোবর ঘোষণা হয়েছিল।
বিএনপির প্রশ্ন : এনসিপির ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ ছাড়াও ‘গণপরিষদ নির্বাচন’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তনে এক আলোচনাসভায় তিনি বলেন, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টির অন্যতম লক্ষ্য সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠায় গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন। আমি সমালোচনা করতে চাই না। প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই নিজস্ব কর্মপন্থা থাকবে, আদর্শ থাকবে, গঠনতন্ত্র এবং ঘোষণাপত্রে এ রকম ঘোষণা থাকে। কেউ সমাজতন্ত্র চায়, কেউ অন্য কিছু চায়, কেউ হয়তো ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আমি নতুন বন্ধুদের বলতে চাই, সেকেন্ড রিপাবলিক কেন? আমাদের বর্তমান রিপাবলিক কি অসুস্থ হয়ে গেছে?
সালাহউদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, ‘গণপরিষদ কেন হবে? এর মধ্যে তো আরো একটি উদ্দেশ্য আছে? যাঁরা গণপরিষদের বিষয় সামনে আনছেন, যাঁরা সেকেন্ড রিপাবলিকের বিষয় সামনে আনছেন, হয় তাঁরা বোঝেন না অথবা বুঝেই আমাদের এই রাষ্ট্রব্যবস্থাকে আরো দীর্ঘায়িত অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্রের মধ্যে যাচ্ছেন। আপনারা গণপরিষদ কেন বললেন বুঝলাম না। গণপরিষদ তখনই হয়, যখন দেশে কোনো সংবিধান থাকে না। যখন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়, তখন গণপরিষদের প্রয়োজন হয়। গণপরিষদের সদস্যরা সংবিধান প্রণয়ন করেন, যে সংবিধানের ভিত্তিতে পরে পার্লামেন্ট ইলেকশন হয়। আমাদের এখানে গণপরিষদ নির্বাচনের জন্য আমরা কি নতুনভাবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি? রাষ্ট্র তো স্বাধীন আছে। আমাদের বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র।’
জামায়াত যা বলছে : জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘প্রতিটি রাজনৈতিক দল তাদের নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী দল পরিচালনার অধিকার রাখে। তবে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ বলতে তারা কী বোঝাতে চেয়েছেন এবং কোন কোন ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে চান, তা এখনো স্পষ্ট নয়।’
তিনি বলেন, “এই দলটি মূলত দুটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। প্রথমত, তারা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিজ’—এমন একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। দ্বিতীয়ত, তারা কোনো ধরনের দুর্নীতিকে বরদাশত করবে না। কেননা দুর্নীতিই পুরো বাংলাদেশকে বিভিন্ন ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আমি মনে করি, যদি তারা সত্যিই ভালো কাজ করে, তবে অবশ্যই এই দলটিকে স্বাগত জানানো উচিত।”
বাম দলগুলোর প্রতিক্রিয়া : বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ (মার্ক্সবাদী) নেতা মাসুদ রানা বলেন, ‘দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র বা সেকেন্ড রিপাবলিক বলতে নতুন দলের নেতারা কী বোঝাতে চাচ্ছেন, সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছিলাম। স্বাধীন দেশে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল। ২০২৪ সালে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা স্বৈরশাসকের পতন ঘটিয়েছি। এখন নতুন সংবিধানের কী আছে? আর এই সরকার তো বিদ্যমান সংবিধানের অধীনেই শপথ নিয়েছে। সেই সংবিধানের অগণতান্ত্রিক ধারাগুলো সংশোধনের দাবি আমাদেরও। কিন্তু সেটা রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে হতে হবে।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা আকবর খান বলেন, ‘কোনো দল ঘোষণা দিলে বা দাবি জানালেই দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র হবে না। গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে যেকোনো সিদ্ধান্ত জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে হতে হবে। এ বিষয়ে আমাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব রয়েছে। এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনগুলো প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। দ্রুতই প্রতিবেদন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে। সেখানেই ঠিক হবে, দেশ কোন দিকে যাবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমান সরকারের দায়িত্ব প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর। এর বাইরে কিছু করতে চাইলে দেশ অস্থিতিশীল হবে।’
সম্পর্কিত খবর

আজ রাজপথে নামছে বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগ হত্যাকাণ্ডের ‘অপপ্রচার ষড়যন্ত্রের’ প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণভাবে আজ থেকে রাজপথে থাকবে বিএনপি। বিএনপি মনে করছে, এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে জামায়াতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাজপথ দখল করার চেষ্টা করছে বলে মনে করছে বিএনপি। এ জন্য রাজপথে বিএনপিও শক্তি ও জনসমর্থন দেখাবে।
এখন পর্যন্ত এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দিচ্ছে না দলটি।
মাঠে নামছে ছাত্রদল : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, গোপন তৎপরতায় দীর্ঘদিন ধরে অভ্যস্ত গুপ্ত সংগঠন কর্তৃক মব সৃষ্টির অপচেষ্টা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করা এবং সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আজ রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল করবে। গুপ্ত সংগঠন বলতে ইসলামী ছাত্রশিবির ও তাদের সহযোগী সংগঠনকে বোঝানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির।
ছাত্রদলের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আজ দুপুর ২টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শাহবাগ পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি সারা দেশের সব জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
কর্মসূচির বিষয়ে ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, ‘গুপ্ত সংগঠন হিসেবে সেসব সংগঠনকেই বোঝানো হয়েছে, যারা প্রকাশ্যে নিজেদের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার বদলে গোপনে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও সহিংসতা ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। গত ৫ আগস্টের পর একটি মুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও তাদের এহেন গুপ্ত কার্যক্রম এ দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে অসহনশীল করে তুলছে এবং রাজনৈতিক বিষয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে তুলছে। এ রকম কুচক্রী কার্যক্রমের বিরুদ্ধেই জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল তার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, যেন দেশবাসীকে এসব বিভ্রান্তিকর বিষয়ে সচেতন করে তোলা যায়।’
গুপ্ত সংগঠন বলতে কাদের বোঝানো হচ্ছে জানতে চাইলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ‘ছত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর যারা ক্যাম্পাসগুলোতে মব সৃষ্টি করে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ নামে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করছে, তারাই গুপ্ত সংগঠন। ছাত্রশিবির এবং গুপ্তভাবে সংগঠন পরিচালনা করতে ছাত্রশিবিরকে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করে, আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় তারা।’

সশস্ত্র বাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির মেয়াদ আরো দুই মাস বাড়ল
বিশেষ প্রতিনিধি

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও এর ওপরের সমপদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরো দুই মাস (৬০ দিন) বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল রবিবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর আগে গত ১৩ মে থেকে তাঁদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির ক্ষমতার মেয়াদ দুই মাস বাড়ানো হয়েছিল। সেই মেয়াদ গতকাল শেষ হয় ।
মেয়াদ বাড়ানোর আদেশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও এর ওপরের সমপদমর্যাদার কমিশন্ড কর্মকর্তাদের (কোস্ট গার্ড ও বিজিবিতে প্রেষণে নিয়োজিত সমপদমর্যাদার কর্মকর্তারাসহ) ‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮’-এর ১২(১) ও ১৭ ধারা অনুযায়ী স্পেশাল এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা অর্পণ করা হলো। এর মেয়াদ হবে ১৪ মার্চ থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত। সারা দেশে তাঁরা এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ‘ফৌজদারি কার্যবিধি-১৮৯৮’-এর ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৮৬, ৯৫(২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ ও ১৪২ ধারার অপরাধগুলো বিবেচনায় নিতে পারবেন।
প্রথমে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরে ৩০ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদের (সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও এর ওপরের সমপদমর্যাদার কর্মকর্তা) এই ক্ষমতা দেওয়া হয়। অর্থাৎ শুধু সেনাবাহিনী নয়, বিমান ও নৌবাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদেরও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হয়। তখন ৬০ দিনের জন্য এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল।

শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ বিএনপির
নিজস্ব প্রতিবেদক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক পুলিশপ্রধান (আইজিপি) বেনজীর আহমেদসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে গুমের অভিযোগ দিয়েছে বিএনপি।
গতকাল রবিবার দুপুরে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে নিয়ে এই অভিযোগ দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য এবং তথ্য সেলের সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন খান।
অভিযোগ তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গুমের ঘটনায় ১১ জন ভুক্তভোগীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে লিখিত অভিযোগে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় এসব ভুক্তভোগীকে অপহরণের পর আয়নাঘরে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। গত বছর ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পলায়নের পর মোহাম্মদ আলীকে হাত ও চোখ বেঁধে পূর্বাচলের শেষ প্রান্তে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ফেলে আসা হয়। পাঁচ বছর তিন মাস ১৩ দিন পর তিনি মুক্তি পান।
তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১১ জন ভুক্তভোগীর নাম উল্লেখ করে আবেদনটি করা হয় বলে জানান সালাহউদ্দিন খান।
সালাহউদ্দিন খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভুক্তভোগীরা শেখ হাসিনাসহ ১৬ জন এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরো ৩০ থেকে ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে ন্যায়বিচারের আশায় আবেদন করেছেন। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, শুধু বিএনপি করার অপরাধে বিগত সরকারের নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাঁদের।

সোহাগের পরিবারের পাশে তারেক রহমান
বরগুনা প্রতিনিধি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে পুরান ঢাকায় নিহত ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম মনি। গতকাল রবিবার বিকেলে তিনি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের সোহাগের গ্রামের বাড়িতে যান। তিনি স্থানীয় কাকচিড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত সভায় বক্তব্য দেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে তিনি নিহত সোহাগের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।