চলতি ফেব্রুয়ারি মাসেই ছাত্রদের নেতৃত্বে নতুন দল আসছে বলে ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
দলের নাম ও প্রতীক নির্ধারণে সর্বস্তরের মানুষের মতামত সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে সংগঠন দুটি। এ জন্য ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ শিরোনামে জনমত জরিপ কর্মসূচি শুরু হচ্ছে।
নতুন দলের কাছে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রত্যাশা কী এবং নতুন বাংলাদেশ কেমন হতে পারে, সে বিষয়ে সংগঠন দুটি এই জরিপ পরিচালনা করবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা প্রতিটি জেলায় এই মতামত সংগ্রহ করবেন। জেলাগুলোয় জনমত জরিপের জন্য ফরম সরবরাহ করা হয়েছে। অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইনে এই জনমত জরিপ হবে।
জরিপ শেষ হলে ফলাফল জানানো হবে। নতুন রাজনৈতিক দল সম্পর্কে মতামত সংগ্রহের জন্য অফলাইনে প্রায় এক লাখ মানুষের মতামত সংগ্রহের লক্ষ্য ঠিক করেছে দুই সংগঠন।
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মুখে গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটাতে পেরেছি। কিন্তু ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের পতন ঘটলেও রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী উপাদানের বিলোপ ঘটেনি।
গণ-অভ্যুত্থানের এক দফা তথা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়ন, নতুন রাষ্ট্রকাঠামো গঠন, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ প্রদান এবং সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের বাংলাদেশ গড়ার কাজ এখনো অসমাপ্ত রয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘এই ভূখণ্ডের মানুষ ১৯৪৭-এর পাকিস্তান আন্দোলন, ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০-এর অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি জুলুম-শোষণহীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা বারবার ব্যক্ত করেছে। কিন্তু বিদ্যমান রাজনৈতিক কাঠামো ও দলগুলো এই আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে ও বাস্তব রূপ দিতে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে সংঘটিত অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করা দেশের সর্বস্তরের নাগরিকদের; বিশেষত তরুণ জনগোষ্ঠীর নতুন আকাঙ্ক্ষা ও রাষ্ট্রকল্প ধারণ করে ফ্যাসিবাদবিরোধী জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আমরা একটি রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি।’
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ স্লোগানের আওতায় পরামর্শমূলক উদ্যোগের লক্ষ্য সারা দেশে সব কমিটি এবং তাদের কর্মীদের বিস্তৃত নেটওয়ার্ককে যুক্ত করা হবে।
রিকশাচালক, দোকানদার, দিনমজুর, গৃহকর্মী, শিক্ষক, ঝাড়ুদার এবং সর্বস্তরের এক লাখেরও বেশি মানুষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন রাজনৈতিক দলের ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনার বিষয়ে তাদের মতামত চাওয়া এই কর্মসূচির লক্ষ্য।’
তিনি বলেন, ‘নতুন দলটি শুধু কিছু মানুষের নয়, অনেকের কণ্ঠস্বর হতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, “অফলাইনে এক লাখের বেশি মানুষের কাছে যাওয়া হবে। ‘আপনার দল আপনি গঠন করবেন’—এই স্লোগানে এই কর্মসূচি পরিচালিত হবে। এই জরিপের প্রশ্নে দলের নাম ও প্রতীক কী হতে পারে, সেই প্রশ্ন থাকবে। মানুষ নতুন দলের কাছে কোন সমস্যার সমাধান চায়, কোন তিনটি কাজ করলে দেশ বদলে যাবে, প্রত্যাশ্যা কী ইত্যাদি প্রশ্ন থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটি নতুন রাজনৈতিক দল কর্তৃক জনমত গ্রহণের উদ্দেশ্যে গৃহীত সবচেয়ে বড় পরামর্শমূলক প্রচেষ্টা। আমরা শুধু একটি দল শুরু করছি না, আমরা এমন একটি আন্দোলন শুরু করছি, যেখানে একজন পোশাক শ্রমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পর্যন্ত প্রত্যেক নাগরিকের তাদের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন নীতিগুলো গঠনে মতামত রয়েছে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পাটোয়ারী বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে ফেব্রুয়ারিতেই ছাত্রদের নেতৃত্বে দলটি হবে। তবে উপদেষ্টা থেকে দলে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে না। দলে অংশগ্রহণ করতে হলে অবশ্যই তাকে উপদেষ্টার পদ ছাড়তে হবে।’
প্রশ্নোত্তর পর্বে নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী আরো বলেন, রাজনৈতিক দল গঠনের সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই। যেসব রাজনৈতিক দল এটা নিয়ে ভয়ের মধ্যে রয়েছে এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে, তাঁরা সেসব নিয়ে কুতর্কের মধ্যে যেতে চান না। এটা কিংস পার্টি, সরকার সমর্থিত দল—এই ধারণা যাঁদের মাথা থেকে আসে, তাঁদের পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। তরুণরা জনগণের মধ্যে রয়েছেন, সেখান থেকেই এই দল হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখপাত্র সামান্তা শারমিনসহ অন্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।