ঢাকা, শুক্রবার ০১ আগস্ট ২০২৫
১৭ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৬ সফর ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ০১ আগস্ট ২০২৫
১৭ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৬ সফর ১৪৪৭
বিনিয়োগ ও রাজস্বে ব্যাপক ধস

বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৭১%

  • চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর)
মাসুদ রুমী
মাসুদ রুমী
শেয়ার
বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৭১%

দেশে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগে (এফডিআই) বড় ধরনের পতন হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে গত অর্থবছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় নিট বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে প্রায় ৭১ শতাংশ, যা গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বিনিয়োগ কমার পেছনে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাকে দায়ী করেছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা।

চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই দেশজুড়ে ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে তৈরি হয় নতুন পরিস্থিতি। এর পরও কাটেনি অস্থিরতা, নানা দাবিতে বিভিন্ন সংগঠন বারবারই পথে নেমেছে।

শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে বিনিয়োগের কোনো পরিবেশ নেই। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের ধারাবাহিকতার কারণে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।

তা ছাড়া বিনিয়োগের বাধার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যাংকের উচ্চ সুদহার। এমন পরিস্থিতিতে বাড়ছে বেকারত্বের হারও। নতুন বিনিয়োগে যাচ্ছেন না দেশীয় বিনিয়োগকারীরা। তাঁদের মতো নতুন বিনিয়োগকারীরাও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

দেশের মোট এফডিআইয়ের ৯০ শতাংশের প্রতিনিধিত্বকারী ফরেন ইনভেস্টর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) সভাপতি জাভেদ আখতার কালের কণ্ঠকে বলেন, দুই-তিন বছর ধরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার মধ্যে রয়েছে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল ছিল। এতে বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস কমে যায়। দেশের মাটিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁরা নিরুৎসাহিত হয়েছেন। ফলে এখন তাঁরা বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকছেন।

পরিস্থিতি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা বিনিয়োগের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করছেন। বলা যায়, ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ নীতি গ্রহণ করেছেন। ঘন ঘন নীতির পরিবর্তন বিদেশি বিনিয়োগ কমার অন্যতম কারণ।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ কালের কণ্ঠকে বলেন, গত দুই অর্থবছর ধরেই সামষ্টিক অর্থনীতির কিছু বিষয়ে সমস্যা সৃষ্টি করেছে। এই সমস্যাগুলোর মধ্যে মূল্যস্ফীতির কারণে অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যাওয়া, ডলারের বাজারে অস্থিতিশীলতার কারণে মূলধন কমে যাওয়া এবং আমদানিতে প্রভাব পড়া অন্যতম। এসবের সঙ্গে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে অভ্যুত্থান-পরবর্তী অস্থিরতা যোগ হয়। ফলে উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটে এবং সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়। সব মিলিয়ে আপাতত বিনিয়োগের পরিমাণ অনেক কমে গেছে।

 

১১ বছরে সর্বনিম্ন বিনিয়োগ

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে দেশে নিট সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ গত অর্থবছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় প্রায় ৭১ শতাংশ কমেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বিদেশ থেকে সরাসরি বিনিয়োগ আসে ৯৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আর এ সময় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ৮৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার নিয়ে গেছেন। তাতে নিট বিনিয়োগ দাঁড়ায় ১০ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বিদেশ থেকে সরাসরি বিনিয়োগ আসে ৯০ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এ সময় আগের বিনিয়োগের অর্থ পরিশোধ হয় ৫৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার। সে হিসাবে তখন নিট বিনিয়োগ দাঁড়ায় প্রায় ৩৬ কোটি ডলার। এতে এক বছরের ব্যবধানে বিনিয়োগ কমেছে ২৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার বা ৭১ শতাংশ।

গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিক এপ্রিল থেকে জুন সময়ে নিট বিনিয়োগ ছিল ২৭ কোটি ২২ লাখ ডলার। সে সময় ১০৮ কোটি ডলার দেশে এলেও আগের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পরিশোধ হয় ৮১ কোটি ১০ লাখ ডলার। সেই হিসাবে আগের প্রান্তিকের চেয়ে চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে নিট বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৬১.৭৪ শতাংশ।

দেশে যে বিনিয়োগ কমছে তার চিত্র দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তথ্যেও। বিডার তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে এক হাজার ৮৩টি ব্যবসা প্রকল্পের জন্য এক হাজার ৩৩৪ কোটি ৫১ লাখ ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব নিবন্ধন হয়েছে। পরের বছর এক হাজার ৮১টি ব্যবসা প্রকল্প নিবন্ধনের মাধ্যমে এক হাজার ২৮৮ কোটি ৩৫ লাখ ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছিল। ২০২৩ সালে আরো কমে ব্যবসার ৯৯৮টি প্রকল্পে ৮৯৭ কোটি ৮৫ লাখ ডলার হয়। আর ২০২৪ সালে ব্যবসার ৭৪২টি প্রকল্পে এক হাজার ১৬৩ কোটি ডলার বিনিয়োগ নিবন্ধন হলেও এপ্রিল-জুন প্রান্তিকেই ২৫৪টি প্রকল্পে ৬৬৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার হয়। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সরকার পরিবর্তনকালীন জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে তা কমে ১৮৬টি প্রকল্পে মাত্র ১৮৬ কোটি ৭১ লাখ ডলার হয়।

 

মুলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে

বিনিয়োগ কমার চিত্র উঠে এসেছে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাস জুলাই-নভেম্বরে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ঋণপত্র বা এলসি খোলা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ শতাংশ কমেছে। একইভাবে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ঋণপত্র নিষ্পত্তি কমেছে প্রায় ২২ শতাংশ।

 

বাড়ছে বেকারত্ব

পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়ে এখন ২৬ লাখ ৬০ হাজার। আগের বছরের একই সময় দেশে বেকার জনগোষ্ঠী ছিল ২৪ লাখ ৯০ হাজার। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বেকার বেড়েছে এক লাখ ৭০ হাজার। পাশাপাশি বেকারত্বের হার বেড়ে হয়েছে ৪.৪৯ শতাংশ। গত বছর একই সময় তা ছিল ৪.০৭ শতাংশ।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বর্তমানে দেশে বিনিয়োগের কোনো পরিবেশ নেই। গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট, ব্যাংকের সুদের হার বেশি, নানা রকমের সমস্যা, ব্যাংকগুলোর চরম অসহযোগিতাসহ নানা কারণে একেবারেই বিনিয়োগ নেই।

 

উচ্চ সুদহারে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি তলানিতে

দেশের বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি তলানিতে নেমেছে। গত নভেম্বর মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.৬৬ শতাংশ। এই প্রবৃদ্ধি গত সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। 

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়ানোর কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য দফায় দফায় নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে। ফলে ব্যাংক ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমেছে। সুদের হার বৃদ্ধির কারণে অনেকে বিনিয়োগ থেকে পিছিয়ে যাচ্ছেন। 

দফায় দফায় ঋণের সুদহার বাড়ানোয় চরম সংকটে পড়েছে বেসরকারি খাত। ফলে ব্যবসা প্রসারসহ থমকে রয়েছে বিনিয়োগ। ব্যবসা ও বিনিয়োগে খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে রয়েছেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। তাঁরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি কমানোর একমাত্র উপায় সুদহার বৃদ্ধি নয়। আরো অনেক উপায় রয়েছে। দেশে এখন বিনিয়োগের কোনো পরিবেশ নেই। বরং ব্যবসায়ীরা টিকে থাকার লড়াই করছেন।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু কালের কণ্ঠকে বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি যা নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। একদিকে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যাংকগুলোর ওপর, আরেক দিক দিয়ে যদি কঠোর মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হয়, তাহলে অস্থিরতা সৃষ্টি হবেই। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যদি ঠিক না হয় তাহলে ব্যবসা-বাণিজ্য চালানো অসম্ভব। আর নতুন বিনিয়োগ তো হবেই না।

এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, যখন বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের কথা আসে তখন তারা দীর্ঘদিন ধরে সংকুচিত মুদ্রানীতি অনুসরণ করেছে। আবার যখন সরকারের ঋণের বেলায় আসে তখন কিন্তু সংকোচন নেই। নানা সংকটে ব্যবসা-বাণিজ্যে এখন বিরাট প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এর একটি হলো আইন-শৃঙ্খলাজনিত, আরেকটি ব্যাংকিং খাতের অস্থিরতাজনিত। সবটার মূলেই আছে রাজনীতি। তাই অর্থনীতি ঠিক করতে, বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে আগে রাজনীতি ঠিক করতে হবে।

ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান বলেন, দেশি বিনিয়োগকারীদের সুবিধা দিলে বিদেশি বিনিয়োগ এমনিই বাড়বে। কারণ বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করার আগে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের জিজ্ঞেস করেন, দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি কেমন।

তিনি বলেন, ১৫ বছর ধরে আমরা একই কথা বলে আসছি যে কেন বাংলাদেশে অনেক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বে বিনিয়োগ হচ্ছে না। বিনিয়োগকারীদের একটা কমন প্রশ্ন থাকে, বাংলাদেশে ট্যাক্স রেটটা আসলে কত? কোনো বেঞ্চমার্ক নেই। বিভিন্ন ধরনের ট্যাক্স রেট আরোপ করায় কার্যকর মৌলিক করহারের কাঠামো নেই। এটা হচ্ছে বিনিয়োগের প্রথম বাধা। এরপর উচ্চ করের সঙ্গে আছে অসংগত নীতি। নীতি চেঞ্জ করে দেওয়া হচ্ছে যখন-তখন। এতে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েন বিনিয়োগকারীরা।

 

অর্থনীতিসংক্রান্ত টাস্কফোর্সের ৩১ সুপারিশ

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে অর্থনীতিসংক্রান্ত টাস্কফোর্স ৩১টি সুপারিশ প্রণয়ন করেছে। সুপারিশগুলোতে উল্লেখযোগ্য কিছু প্রস্তাব রয়েছে, যেমন-১০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ পণ্য রপ্তানির সক্ষমতা রয়েছে এমন এক হাজার ৫০০ কম্পানিকে বিশেষ নীতির আওতায় আনা, এসএমই খাতকে সমর্থন করতে ঢাকা হাট প্রকল্প স্থাপন, আন্তর্জাতিকমানের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্য বিদেশি বিনিয়োগ উদ্বুদ্ধ করা এবং বিভিন্ন শিল্পে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির প্রয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ। এই প্রতিবেদনে দেশের বিনিয়োগযোগ্য খাতগুলোর বিশদ বিবরণ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের উন্নয়ন এবং সরকারি দপ্তরগুলোর প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে। সম্প্রতি টাস্কফোর্সের প্রধান কে এ এস মুরশিদ জানিয়েছেন, প্রতিবেদনটি সমাপ্তি পর্যায়ে রয়েছে এবং সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হবে।

 

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

এখন আলোচনায় ‘এক্সিট’

কাজী হাফিজ
কাজী হাফিজ
শেয়ার
এখন আলোচনায় ‘এক্সিট’

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের বয়স আগামী আগস্ট এক বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে গত ৩০ জানুয়ারি এই সরকারের বয়স যখন ছয় মাসের কাছাকাছি, তখন বেলজিয়ামভিত্তিক নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মধুচন্দ্রিমা এখন পুরোপুরি শেষ রাজনৈতিক দলগুলো এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ সংস্কার নিয়ে দর-কষাকষি এবং নির্বাচনী সুবিধার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠায় বছর রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ বাড়তে পারে তবে স্বদেশি বিশেষজ্ঞরা কেবল রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ দেখছেন না, অর্থনৈতিক, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও এই সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন

এরই মধ্যে বলা শুরু হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের বিদায়ের সময় এসেছে তাদের এক্সিট পলিসি কী হবে তা নিয়ে চিন্তা করার সময় এসে গেছে

গতকাল বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে ডেমোক্রেসি ডায়াস বাংলাদেশ-এর এক সেমিনারে মন্তব্য করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো . দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী . শাহদীন মালিকও মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের এখন এই বাস্তবতা মেনে নেওয়ার সময় এসেছে যে ভালো হোক, মন্দ হোক দেশটাকে রাজনীতিবিদদেরই চালাতে হবে

যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন দিয়ে এই সরকারকে বিদায় নিতে হবে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক . সাব্বীর আহমেদেরও বক্তব্য, নির্বাচন বিলম্বিত করে এই সরকারের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করার আর সুযোগ নেই সে কারণে নিজেদের বিদায় প্রক্রিয়াটি নিয়ে এই সরকারের চিন্তা-ভাবনার সময় এখনই

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনও দ্রুত জুলাই সনদ প্রস্তুতের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে

নির্বাচন কমিশনও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি দ্রুত সম্পন্ন করার পথে

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ১৮ মাসের যে সময়সীমার কথা বলা হয়েছিল, সে সময়ও শেষ হওয়ার পথে সেনাবাহিনী মনে করে, রাজনৈতিক সরকারের কাছে দ্রুত ক্ষমতা হস্তান্তর প্রয়োজন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বিভিন্ন বক্তব্যে বিষয়টি উঠে এসেছে তিনি মনে করেন, দীর্ঘ সময় ধরে সেনা সদস্যরা দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় মোতায়েন রয়েছেন, যা সার্বিকভাবে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে

তাই একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর যথাশিগগির সম্ভব সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে হবে গত ২১ মে ঢাকা সেনানিবাসের সেনা প্রাঙ্গণে অফিসার্স অ্যাড্রেসে সেনাপ্রধান তাঁঁর বাহিনীর সদস্যদের কাছে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে এই মনোভাব জানান বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়

সম্প্রতি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ সেমিনারে বিশিষ্টজন রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্যে সরকারের সমালোচনায় আর রাখ-ঢাক নেই। বিশেষ করে গত প্রায় এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের মূল্যায়ন এবং দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, অনির্বাচিত সরকারের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে দেশের সামগ্রিক বিনিয়োগ পরিবেশ ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এর সঙ্গে আরো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি সংকট, আমদানি জটিলতা এবং অর্থনৈতিক নীতির অনিশ্চয়তা। ফলে সরকারি-বেসরকারি খাত নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ প্রবাহ এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি। সরকারি পরিসংখ্যানে বিনিয়োগ বৃদ্ধির দাবি করা হলেও বাস্তবে মাঠ পর্যায়ে সেই প্রবাহে রয়েছে বড় ধরনের স্থবিরতা। নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত একটি জবাবদিহিমূলক ও স্থিতিশীল সরকার ছাড়া দেশে টেকসই বিনিয়োগ সম্ভব নয় এমন মত দিচ্ছেন দেশের খ্যাতনামা রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ ও শিল্পোদ্যোক্তারা। তাঁদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সর্বাগ্রে প্রয়োজন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। পাশাপাশি দরকার স্বচ্ছ ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক নীতি, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ-গ্যাস সরবরাহ এবং একটি প্রকৃত অর্থে উদ্যোক্তাবান্ধব পরিবেশ।

গতকালের ওই সেমিনারে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরো বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার যত দিন ক্ষমতায় থাকবে, সংকট ততই গভীর হবে। ক্ষমতা হস্তান্তর বিষয়ে দেবপ্রিয় বলেন, যখন কোনো রাজনৈতিক শক্তি সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে ব্যর্থ হয়, তখনই রাষ্ট্রব্যবস্থায় চরম দুর্বলতা দেখা দেয়। তখনই জরুরি হস্তক্ষেপের প্রয়োজন দেখা দেয়, যা কখনো কখনো অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে।

তিনি আরো বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপকে পরবর্তী সরকার কী পরিমাণ বৈধতা দেবে, তা এখনই চিন্তা করতে হবে। বিশেষ করে যেসব সংস্কারকাজ হাতে নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে পরিপূর্ণ স্বচ্ছতা প্রয়োজন। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু নয়, আবার প্রয়োজনের কমও নয়এমন ভারসাম্যপূর্ণ সংস্কারনীতিই গ্রহণযোগ্য। নইলে আমরা আবারও অসংস্কার প্রক্রিয়ায় ফিরে যাব।

সেমিনারে ডেমোক্রেসি ডায়াস বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. আবদুল্লাহ আল মামুন ২৬টি দেশে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকাল, সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে একটি গবেষণার বিস্তারিত তুলে ধরেন।

গবেষণায় দেখা যায়, ২৬টি দেশের মধ্যে ১৬টি দেশেই খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা হয়েছে। এতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং দ্রুত সংস্কার কার্যকর করা সম্ভব হয়েছে।

সেমিনারে আলোচকরা বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সময় দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। সরকারের সংস্কার কার্যক্রমও কার্যত সময়ক্ষেপণ ছাড়া কিছু নয়।

গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল বাংলাদেশে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি (পিআর) কতটা বাস্তবসম্মত। এ নিয়ে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এখনো এই পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত নয়। যাঁরা এই পদ্ধতির দাবি তুলছেন, তাঁরা মূলত দলের স্বার্থে কথা বলছেন, দেশের স্বার্থে নয়। অনেকেই মনে করেন, সরকারকে সময় বাড়ানোর সুযোগ দিতেই এই দাবি তোলা হচ্ছে।

এ ছাড়া বক্তারা বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকায় দেশের অর্থনীতি, আইন-শৃঙ্খলা ও সামগ্রিক পরিস্থিতি দিন দিন ভঙ্গুর হয়ে পড়ছে। তাই দ্রুত নির্বাচনের মধ্য দিয়েই এ সংকটের সমাধান হওয়া উচিত।

গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ওই সেমিনারে বলেন, এই সরকারের অনেক সংস্কার কমিশন হয়েছে। সেটা তাদের উল্লেখযোগ্য কাজ। যদিও গঠনের মধ্যে সমস্যা ছিল। কিন্তু সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনগুলোর মধ্যে শুধু সংবিধান ছাড়া আর কোনো প্রতিবেদন নিয়ে কোনো মনোযোগ নেই। সংবিধান সংস্কার কমিশন নিয়ে একমাত্র আলোচনা। সেখানে সরকারের ঘনিষ্ঠ লোকজন, যাঁদের একমাত্র আগ্রহ সংবিধানের মধ্যে এমন পরিবর্তন, যাতে তাঁদের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া অন্য কোনো দিকে অগ্রগতি নেই।

বিশেষজ্ঞরা আরো যা বলছেন : সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, গত বছর আগস্টে যখন স্বৈরশাসক পালিয়ে যায়, তখন আমরা সবাই বিরাট প্রত্যাশা নিয়ে এগোতে চেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, কালো দিনগুলো চলে গেছে, এখন নতুন দিন এসেছে। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে তো আমরা দেশের সবাই অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখি। তাঁর নেতৃত্বের সরকারের কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু বছরপূর্তিতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, সে প্রত্যাশার খুব অল্প অংশই বাস্তবায়িত হয়েছে। জনগণের উন্নতি হয় সে ধরনের কোনো পদক্ষেপই চোখে পড়ছে না। যা চোখে পড়ছে তা হলো, দীর্ঘ সময় ধরে সংস্কারের সংলাপ। সে সংস্কারও বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এ অবস্থায় আমরা আশাহত হয়ে গেছি। এখন এটাও স্পষ্ট, প্রথম দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি যে সমর্থন ছিল, সেটিও আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। অতএব, এখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন না দিয়ে এই সরকারের আর কোনো গত্যন্তর নেই। নির্বাচন যত দেরি হবে, দেশের সার্বিক পরিস্থিতির ততই অবনতি হবে। এখন এই বাস্তবতা মেনে নেওয়ার সময় এসেছে, ভালো হোক, মন্দ হোক দেশটাকে রাজনীতিবিদদেরই চালাতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন দিয়ে এই সরকারকে বিদায় নিতে হবে। আর নির্বাচন হতে হবে অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য।

বিষয়টি সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বীর আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে আনার বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল একমত। তবে এবারের নির্বাচন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই হতে পারে। নির্বাচন হওয়ার আগে এই সরকারের যেসব উদ্যোগ, অর্জন, সুবিধা গ্রহণ সেগুলোর সুরক্ষার ব্যবস্থা হওয়া দরকার। এই সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় যে দল গঠন হয়েছে বলে শোনা যায়, সে দলটির সেটলমেন্টও দরকার। পতিত স্বৈরাচার যাতে না ফিরতে পারে তারও ব্যবস্থা করে যাওয়া প্রয়োজন। এসবের ব্যবস্থা দ্রুত হওয়া দরকার। কারণ, নির্বাচন বিলম্বিত করে এই সরকারের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করলে জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

 

মন্তব্য
ফিরে দেখা ৩১ জুলাই ’২৪

মার্চ ফর জাস্টিসে পুলিশের বাধা, ১৪ দিন পর ফেসবুক চালু

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
মার্চ ফর জাস্টিসে পুলিশের বাধা, ১৪ দিন পর ফেসবুক চালু

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় সারা দেশে গ্রেপ্তার, হামলা-মামলা ও হত্যার প্রতিবাদ এবং ৯ দফা দাবি আদায়ে গত বছরের এই দিনে (৩১ জুলাই) ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি পালন করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

বিভিন্ন স্থানে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে আন্দোলনকারীরা। টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ এবং লাঠিপেটার ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) বলেছে, এদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকসহ আহত হন অন্তত ৯০ জন।

আটক করা হয় শতাধিক বিক্ষোভকারীকে।

১৪ দিন বন্ধ থাকার পর ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও টিকটক চালু করা হয়। ইন্টারনেট ও ফেসবুক বন্ধ থাকায় দেশের অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা খাতে প্রায় এক হাজার ৭৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানায় ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)।

দুপুরে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে হাইকোর্ট এলাকায় জড়ো হতে শুরু করে।

প্রেস ক্লাব সংলগ্ন কদম ফোয়ারার সামনে পুলিশ তাদের পেছনে হটিয়ে দেয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের দিক থেকে শিক্ষক, অভিভাবক এবং বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা হাইকোর্ট মোড়ের দিকে এগোলে শিশু একাডেমির সামনে আটকে দেয় পুলিশ। একটু পর বুয়েট শিক্ষার্থীদের একটি দল মিছিল নিয়ে আন্দোলনে যোগ দেয়।

দুপুরে উই ওয়ান্ট জাস্টিস স্লোগান দিতে দিতে ব্যারিকেড ভেঙে সুপ্রিম কোর্ট আঙিনার ভেতরে ঢুকে পড়ে আন্দোলনকারীরা।

এ সময় সুপ্রিম কোর্টের সাধারণ আইনজীবীরাও আন্দোলনে যোগ দেন। মিরপুর ১০ নম্বরে আন্দোলনকারীরা ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়েন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরাও মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচিতে অংশ নেন।

এদিন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদকে দায়িত্ব থেকে বদলিসহ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ছয় শীর্ষ কর্মকর্তাকে রদবদল করা হয়।

সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে আন্দোলনকারীরা দুপুর ১২টার দিকে শহরের উদ্দেশে পদযাত্রা শুরু করে।

সুবিদবাজার পয়েন্টে তারা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সামনে এগোতে শুরু করলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।

বরিশাল নগরের সদর রোডের অশ্বিনীকুমার হল ও ফজলুল হক এভিনিউ এলাকায় আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। এ সময় সাংবাদিকদেরও মারধর করা হয়। এতে চার সাংবাদিকসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়। ২০ জনকে আটক করে পুলিশ।

রাজশাহী নগরীর মহিষবাথান এলাকায় পুলিশের গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। পরে আশপাশে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ।

কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ শিক্ষার্থীসহ ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। যশোরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা করে পুলিশ। সেখান থেকে অন্তত ছয় শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়।

এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ভর করে দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফরিদপুর, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এদিন সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগের নিন্দা জানায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। বাংলাদেশের সঙ্গে নতুন অংশীদারি ও সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে আলোচনা স্থগিত করে ইইউ।

 

মন্তব্য
দুর্নীতি ও জাল রায় তৈরির অভিযোগ

সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক সাত দিনের রিমান্ডে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক সাত দিনের রিমান্ডে
এ বি এম খায়রুল হক

সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে জিজ্ঞাসাবাদে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল বুধবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্লাহ রিমান্ডের এ আদেশ দেন। এর আগে বিচারক হিসেবে দুর্নীতি ও বিদ্বেষমূলকভাবে বেআইনি রায় প্রদানসহ জাল রায় তৈরির অভিযোগে রাজধানীর শাহবাগ থানায় করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

রিমান্ড শুনানিতে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য দেওয়া হয়।

তখন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা খায়রুল হক বলেন, নট কারেক্ট।

এদিন কারাগার থেকে খায়রুল হককে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তাঁর উপস্থিতিতে সকাল ১০টা ১ মিনিটে শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁকে গ্রেপ্তার দেখান।

পরে এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডে  নেওয়ার আবেদন করেন মামলার তদন্ত  কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খালেক মিয়া।

শুনানিতে প্রসিকিউশন বিভাগের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আসামি খায়রুল হক অবসরে যাওয়ার পর ফেব্রিকেটেড (বানোয়াট) রায় প্রদান করেছেন। তখন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা খায়রুল হক দুইবার বলেন, নট কারেক্ট (সঠিক নয়)।

এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আজিজুল হক দিদার ও মুহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন।

আজিজুল হক দিদার বলেন, শেখ হাসিনা অবৈধ সরকার। তাঁকে স্বৈরাচার, দীর্য়মেয়াদি করার ব্যবস্থাটা খায়রুল হকই করেছিলেন। সারা পৃথিবীর মানুষ উনার কর্মকাণ্ড দেখেছেন, আপনারাও দেখেছেন।

আইনজীবী শামছুদ্দোহা সুমন বলেন, তিনি শেখ মুজিবের চেয়েও বড় আওয়ামী লীগার ছিলেন। তিনি শেখ মুজিবের চেয়েও বেশি আওয়ামী লীগের জন্য করেছেন।

ত্রয়োদশ সংশোধনীসংক্রান্ত রায় বাতিল করেন। বিচারব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করেছেন। তাঁর এমন ব্যবস্থার কারণে ৫ আগস্টের মতো ঘটনা ঘটেছে। হাসিনাকে পালিয়ে যেতে হয়েছে। শত শত তরুণ-যুবককে প্রাণ দিতে হয়েছে। হাজার হাজার তরুণ আহত হয়েছে।

শুনানি শেষে আদালত তাঁর সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। শুনানি শেষে ১০টা ১৬ মিনিটে তাঁকে আদালত থেকে বের করা হয়। এরপর পুলিশ পাহারায় তাঁকে আদালতের হাজতখানায় নেওয়া হয়।

গত মঙ্গলবার তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়। আদালত খায়রুল হকের উপস্থিতিতে শুনানির জন্য ৩০ জুলাই তারিখ ধার্য করেন। গত ২৭ আগস্ট রাতে শাহবাগ থানায় মামলাটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুহা. মুজাহিদুল ইসলাম।

গত ২৪ জুলাই সকালে ধানমণ্ডির বাসা থেকে খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। জুলাই আন্দোলনের সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে যুবদলকর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ হত্যা মামলায় ওই দিন রাতে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। ২৯ জুলাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে বেআইনি রায় দেওয়া ও জাল রায় তৈরির অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় করা মামলায় তাঁকে ভার্চুয়ালি গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

 

 

মন্তব্য
প্রধান বিচারপতির মন্তব্য

তথ্য যাচাইয়ে সাংবাদিকদের আরো সতর্ক হতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
তথ্য যাচাইয়ে সাংবাদিকদের আরো সতর্ক হতে হবে
সৈয়দ রেফাত আহমেদ

আইন, বিচার সংবিধান নিয়ে সংবাদ-প্রতিবেদন করার ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ তিনি বলেছেন, আইন, বিচার, সংবিধান বা বিচারাধীন বিষয় নিয়ে রিপোর্ট করা জটিল এবং কঠিন বিষয় এসব বিষয়ে সংবাদ-প্রতিবেদন তৈরির আগে তথ্য যাচাইয়ে সাংবাদিকদের আরো মনোযোগী সতর্ক হতে হবে

গতকাল বুধবার সুপ্রিম কোর্ট রিপোর্টার্স ফোরামের (এসআরএফ) বার্ষিক প্রকাশনা জাগরণ-এর মোড়ক উন্মোচনের সময় কথা বলেন বিচার বিভাগের প্রধান

সুপ্রিম কোর্টের খবর সংগ্রহকারী নিয়মিত সংবাদকর্মীদের সংগঠন এসআরএফ গত ২১ জুন সংগঠনটির প্রথম বার্ষিক সাধারণ সভার পর কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয় সে সময় জাগরণ নামের একটি বার্ষিক প্রকাশনা বের করে এসআরএফ; যেটির মোড়ক উন্মোচন করলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ

মোড়ক উন্মোচনের সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর গত প্রায় এক বছরে দেশের সংবাদমাধ্যমগুলোতে বিচার বিভাগ নিয়ে যত খবর-প্রতিবেদন প্রচার-প্রকাশ হয়েছে, সেসব খবর-প্রতিবেদনে বস্তুনিষ্ঠতার কোনো ঘাটতি বা বিচ্যুতি আমার চোখে পড়েনি।

তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রকাশিত খবর-প্রতিবেদন আরো সমৃদ্ধ হতে পারত। সে জন্য সংবাদকর্মীদের আরো সচেষ্ট থাকতে হবে।

সুপ্রিম কোর্ট বিটের সাংবাদিকদের প্রশংসা করে প্রধান বিচারপতি বলেন, প্রায় প্রতিদিনই আমি খেয়াল করি সাংবাদিকরা এজলাসে উপস্থিত থাকছেন। শুনানি, আদেশ বা রায় ঘোষণার সময় তাঁরা নোট নিচ্ছেন।

শুধু তাই না, দ্রুততার সঙ্গে প্রচার ও প্রকাশ করছেন। স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠায় সংবাদমাধ্যম-সাংবাদিকদের ভূমিকা কোনো অংশে কম নয়। ক্ষেত্র আলাদা হলেও বিচার বিভাগের সম্মান, মর্যাদা ও ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রেখে সবাইকে কাজ করে যেতে হবে। ভবিষ্যতে সাংবাদিকদের সঙ্গে বিচার বিভাগের যোগাযোগ আরো দৃঢ় হবে বলে আশা করি। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই পেশাদারি বজায় রাখতে হবে।

বিচার বিভাগ সংস্কারে ঘোষিত রোডম্যাপ ও প্রধান বিচারপতির বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে এসআরএফের সভাপতি ও চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মাসউদুর রহমান বলেন, স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গত এক বছরে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তার বেশির ভাগই বাস্তবায়ন হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা, প্রধান বিচারপতির ঘোষণা অনুযায়ী বিচার বিভাগের জন্য একটি স্বতন্ত্র সচিবালয়ও প্রতিষ্ঠা করা হবে।

এর আগে এসআরএফের নতুন কমিটির পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ