নতুন বছরের প্রথম দিন এবার বই পায়নি বেশির ভাগ শিক্ষার্থী। যারা পেয়েছে, তারাও সব বই পায়নি। তবে যেসব শিক্ষার্থী নতুন বই পেয়েছে, তারা খুশি মনে বাড়ি ফিরেছে। যারা বই পায়নি, তাদের মুখে হাসি নেই।
বই না পেয়ে হাসি নেই অনেক শিক্ষার্থীর
- শিক্ষা উপদেষ্টার দুঃখ প্রকাশ
বিশেষ প্রতিনিধি

বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে জানা গেছে, অনেক স্কুলে শিক্ষার্থীরা প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বই পেয়েছে। আবার কোনো কোনো স্কুলে তা-ও পায়নি।
সব শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেওয়া সম্ভব না হলেও গতকাল বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ‘পাঠ্য বইয়ের অনলাইন ভার্সন উদ্বোধন ও মোড়ক উন্মোচন’ করেন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। সেখানে তিনি বছরের প্রথম দিন বই দিতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, পাঠ্য বই ছাপার কাজটা এবার শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের মতো হয়েছে। পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান বলছেন ১৫ জানুয়ারি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলছেন ৩০ জানুয়ারির মধ্যে সব বই দেওয়া যাবে। আমি কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো কমিটমেন্ট দেব না। পাঠ্য বই কবে ছাপা শেষ হবে, তা নিয়ে আমি কিছু বলব না।
পাঠ্য বই ছাপার নানা জটিলতার কথা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, প্রথম সমস্যাটা হলো, আমরা বিদেশে বই ছাপব না।
উপদেষ্টা বলেন, বই দিতে এবার বেশ খানিকটা দেরি হচ্ছে, সে জন্য শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে একটা বিষয় আমরা বলতে চাই, বই একটু দেরিতে পেলেও সেটা ভালো বই পাবেন। বছরের মাঝামাঝি সময়ে বইয়ের পাতা ছিঁড়ে যাবে না।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, এনসিটিবিতে আগে যারা কাজ করেছে, তাদের অনেককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মুদ্রণ শিল্প সমিতির নেতাদের সঙ্গে কিভাবে বোঝাপড়া করতে হয়, এটা তাদের অভিজ্ঞতায় নেই। সেটা করতে গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমাকেও এর মধ্যে ঢুকতে হয়েছে। গল্পের একেবারে শেষে ছাড়া যেমন ষড়যন্ত্রকারী কে তা বোঝা যায় না, এখানেও তেমন। এ বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগামী দিনে আমরা একচেটিয়া ব্যবসা কমিয়ে আনব।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক এ বি এম রেজাউল করীমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ড. এম আমিনুল ইসলাম, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম, এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান প্রমুখ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ : বছরের প্রথম দিন গতকাল বুধবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনা মূল্যের আংশিক বই বিতরণ করা হয়। যারা বই পেয়েছে তারা আনন্দিত। আর যারা পায়নি, তাদের মন খারাপ করতে দেখা গেছে।
ভারপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মতিন বলেন, এবার বই উৎসবসংক্রান্ত কোনো চিঠি পাইনি। বই না দিয়ে উৎসবই বা কিভাবে হবে? তবে তিনি দ্রুত শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার আশা প্রকাশ করেন।
বরেন্দ্রাঞ্চলের বাবুডাইং আদিবাসী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী উজ্জামান বলেন, বছরের প্রথম দিন থেকে বই হাতে পেলে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে সুবিধা হয়। এখন শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ধারাবাহিকতা ছিন্ন হবে।
রংপুর : বই দিতে না পেরে অনলাইন থেকে ডাউনলোড করে বই পড়াতে বললেন রংপুর আঞ্চলিক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আব্দুর রশিদ। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদরাসা—সব প্রতিষ্ঠানে আমাদের আংশিক বই এসেছে। আমাদের ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের জানাতে চাই, এনসিটিবিতে ঢুকলে অনলাইন ভার্সনে যেকোনো বই পাওয়া যাবে, এটাকে প্রিন্ট করে নিয়ে বই আকারেও পড়া যাবে। অথবা ওখান থেকে পড়ালেখা শুরু করে দেওয়া যাবে।’
রংপুরের একটি স্কুলের শিক্ষার্থীর অভিভাবক রেখা খাতুন বলেন, আমার ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে; কিন্তু সব বই দেওয়া হয়নি। সব বই না পেলে ছেলেমেয়েদের মনে আনন্দ থাকে না।
খুলনা : খুলনায় গতকাল সব শিক্ষার্থীর হাতে দেওয়া সম্ভব হয়নি নতুন বই। বই বিতরণ হয়েছে কিছু প্রতিষ্ঠানে। মাধ্যমিকে শুধু সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির তিনটি করে বই বিতরণ করা হয়েছে। তাও আবার সব উপজেলায় সম্ভব হয়নি। প্রাথমিকেও প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির বই এসেছে আংশিক। তবে এখনো আসেনি চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির কোনো বই।
টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বছরের প্রথম দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কারিগরি শিক্ষা, ইবতেদায়ি ও দাখিল মাদরাসার প্রায় ৪৬ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৫ হাজার শিক্ষার্থীর হাতে আংশিক বই তুলে দেওয়া হয়েছে। তাও আবার সপ্তম ও দশম শ্রেণির তিনটি বিষয়ের পাঠ্য বই দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে বছরের প্রথম দিন প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের অনেকে নতুন বই পেলেও চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন বই পায়নি। নতুন বছরের প্রথম দিন মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা প্রায়ই নতুন বই হাতে পায়নি। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা মাত্র ৩ শতাংশ নতুন বই পেয়েছে। অন্য শিক্ষার্থীরা হতাশ হলেও শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মকর্তারা বলছেন, আগামী সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে অবশিষ্ট বই চট্টগ্রামে আসবে।
সিলেট : সিলেটে বছরের প্রথম দিন নতুন ক্লাসের পাঠ্য বই হাতে পায়নি জেলার প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী। জেলায় প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে বইয়ের মোট চাহিদা ২১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৬০টি। সেখানে প্রাপ্ত বইয়ের সংখ্যা ১১ লাখ ১৬ হাজার ৭২টি। ফলে প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থীই প্রথম দিন বই হাতে পায়নি। এর মধ্যে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির সবাই বই পেলেও চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণির একজনও বই হাতে পায়নি।
সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির জন্য যে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে, তার একটি বইও আমাদের সরবরাহ করা হয়নি। ফলে এই দুই শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীও বই পায়নি।’
(প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিরা)
সম্পর্কিত খবর

ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ
দ্বিকক্ষ সংসদ, পিআর ও নারী আসন নিয়ে ঐকমত্য হয়নি দলগুলোর
নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষের আসন অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসনবণ্টন প্রস্তাবে অনড় রয়েছে বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি দল। অন্যদিকে জামায়াত, এনসিপিসহ কয়েকটি দল জানায়, কমিশনের প্রথম প্রস্তাব অনুযায়ী নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে (পিআর) উচ্চকক্ষের আসনবণ্টন হতে হবে। তারা উভয় কক্ষের পাশাপাশি সংরক্ষিত নারী আসনেও পিআর পদ্ধতি চায়। আবার পিআর পদ্ধতি চাইলেও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিরোধিতা করেছে সিপিবিসহ সমমনা কয়েকটি দল।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার সংলাপের ১৪তম দিনে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আগামী রবিবার আবারও সংলাপে বসবে কমিশন। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া।
সংলাপ শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আলোচনায় সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গেছে। যদি উচ্চকক্ষ গঠিত না হয় বা উচ্চকক্ষ হওয়ার আগ পর্যন্ত সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের প্রয়োজন হবে। তবে সুনির্দিষ্ট কিছু অনুচ্ছেদ, যেমন—প্রস্তাবনা, রাষ্ট্রের মূলনীতি, অনুচ্ছেদ ৪৮, ৫৬, ১৪২ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিষয়ক ৫৮খ, ৫৮গ, ৫৮ঘ এবং ৫৮ঙ অনুচ্ছেদের দ্বারা সংবিধানে যুক্ত হলে তা সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের প্রয়োজন হবে।
সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ও জোট দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সমর্থন দিয়েছে মন্তব্য করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল এই মত প্রকাশ করেছে। তবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আজও ঐকমত্য হয়নি।
ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর কাজের অংশীদার জানিয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘যদি আমরা কোথাও ব্যর্থ হই, সেই ব্যর্থতা আমাদের সবার। কমিশনের ব্যর্থতা যদি হয়, তাহলে এটা সবার ব্যর্থতা হবে। তাই ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যে দায়িত্ব আমাদের ওপর অর্পিত হয়েছে, সেই দায়িত্ব রাজনৈতিক দল হিসেবে আপনাদের। আমরা আপনাদের প্রচেষ্টার অংশীদার হয়েছি, আলাদা সত্তা হিসেবে যুক্ত হইনি।’ রাজনৈতিক দলগুলোকে এক বছর আগের পরিস্থিতি অনুধাবন করার অনুরোধ জানান তিনি।
দীর্ঘ আলোচনার পরও ঐকমত্যে পৌঁছা সম্ভব না হওয়ায় কমিশন কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সেটির ওপর ভিত্তি করে বিএনপি প্রতিক্রিয়া দেবে বলে জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের ব্যাপারে মোটামুটি বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল একমত। কিন্তু তার গঠনপ্রক্রিয়া কী রকম হবে এবং পাওয়ার ফাংশন কিভাবে হবে সেটি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক আছে। নিম্নকক্ষে নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে কারো দ্বিমত নেই। উচ্চকক্ষ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের দলের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, আমরা সেই জায়গাতেই আছি। আমাদের ৩১ দফার ভিত্তিতে আমরা যে আইডিয়া নিয়ে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে বলেছিলাম, সেটি হলো, যাঁরা দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজন, যাঁদের জাতি গঠনে অবদান আছে এবং যাঁরা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, তাঁদের মেধা, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার অবদান যেন জাতি গঠনের কার্যক্রমে প্রতিফলিত হয়। জাতি যাতে সমৃদ্ধ হয়, সেই আইডিয়া থেকেই আমরা এই প্রস্তাবটি রেখেছিলাম। সেখানে আমরা উচ্চকক্ষে ১০০টি আসন রাখার জন্য বলেছিলাম। আমরা বলেছি, নারীদের বিদ্যমান সংরক্ষিত আসনে যেভাবে আসনের অনুপাতে নির্ধারণ করা হয়, সেভাবে উচ্চকক্ষেও হবে। কিন্তু বিষয়টা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হচ্ছে। কেউ চান পিআর পদ্ধতিতে। এখানে আবার পাওয়ার ফাংশনের বিষয় আছে। সাধারণ বিল কিভাবে পাস হবে, সংবিধান সংশোধন হলে উচ্চকক্ষে কিভাবে পাস হবে ইত্যাদি। আবার এখন বাংলাদেশের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের প্রয়োজন আছে কি না সে প্রশ্নও অনেক দল তুলছে।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সব বিষয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্য কমিশনের একটা সিদ্ধান্তে আসার কথা। সেই সিদ্ধান্ত জানানোর পরই আমাদের প্রতিক্রিয়া বা সম্মতি-অসম্মতির বিষয়ে জানাতে পারব। সে জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’ সংবিধান সংশোধনের পদ্ধতি প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে যেসব মৌলিক ধারা রয়েছে, যেমন—প্রস্তাবনা ৮, ৪৮, ৫৬ ও ১৪২ নম্বর ধারা—এসব ক্ষেত্রে সংশোধন এলেই তা পাস হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের আগে গণভোটে দিতে হবে। এই ধারা অনুসারে আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, ভবিষ্যতে কেউ যেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সে জন্য তা গণভোট ছাড়া পরিবর্তন করা যাবে না—এমন একটি বিধান সংযুক্ত করা হোক। কমিশন এই প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।’
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘মেজরিটি সংখ্যক দলই পিআর পদ্ধতিকেই সাপোর্ট দিচ্ছে। শুধু এক লাইনে ব্যাখ্যা দিতে চাই, জনসমর্থনের দিক থেকে পাঁচটা-ছয়টা দল হলো বিএনপি, এনসিপি, চরমোনাই পীর, সব ইসলামী দল, গণ অধিকার পরিষদ। আমরা পিআরের পক্ষে আছি। দু-একটি দল না চাইলে কোনো প্রস্তাব আটকে যাওয়াটা ইনজাস্টিস হবে, বৈষম্য হবে। কারণ মেজরিটি তো পক্ষেই আছে। কোনো এক জায়গায় একটা সলিউশন দিতে হবে।’
ডা. তাহের বলেন, ‘দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট নতুনভাবে ইন্ট্রোডিউস করার প্রস্তাব হচ্ছে। তবে পৃথিবীতে এটা নতুন নয়, বহু দেশে এই দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট আছে। কিছুসংখ্যক দল ছাড়া সবাই আমরা একমত হয়েছি, দ্বিকক্ষ পার্লামেন্ট চাই। তবে কিছুটা ডিফারেন্স হচ্ছে, কিভাবে এটা ফর্ম করবে এবং এটার ফাংশন কী হবে, সে নিয়ে কমিশনের প্রস্তাব আসছে। এগুলো কনক্লুড করা হয়েছে। কমিশন সব শুনেছে ও বক্তব্য রেখেছে এবং কমিশন বলেছে, আগামী রবিবার কমিশনই এ বিষয়টা চূড়ান্ত করবে। কমিশন এটি ফাইনাল সিদ্ধান্ত আকারে পেশ করবে।’
তিনি আরো বলেন, সংবিধান সংশোধনটাকে একটু কঠিন করে দেওয়া হোক, যাতে কোনো একক দল একটু ইচ্ছামতো সংবিধান সংশোধন করতে না পারে।
নারীদের জন্য ১০০ আসনের পক্ষে একমত প্রকাশ করে জামায়াতে ইসলামীর এই নেতা বলেন, ‘এ প্রক্রিয়ার ব্যাপারে আমাদের ভিন্নমত আছে। নারী আসনে নারীদের ভোটেই নির্বাচিত হতে হবে। পিআর পদ্ধতির নির্বাচন হলে এটা সহজ হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘উচ্চকক্ষ পিআর পদ্ধতিতে না হলে যদি সংসদীয় মেম্বারের আসনের সংখানুপাতিক হয়, তাহলে এটা তো আবার ডবলই হলো, সেম রিপ্রেজেন্টেশন, সেম সেন্টিমেন্ট, সেম ডিসিশন। যদি সব সেম সেম হয়, তাহলে দরকার কি?’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘নিম্নকক্ষের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসনবণ্টন হলে ক্ষমতার ভারসাম্য ও জবাবদিহি আসবে না। এমন উচ্চকক্ষ চাই, যেখানে ১ শতাংশ ভোট পাওয়া দলেরও প্রতিনিধিত্ব থাকবে। কার্যকর উচ্চকক্ষ থাকতে হবে। কিছু দলের মধ্যে উচ্চকক্ষকে দুর্বল করার প্রবণতা রয়েছে। আমরা সংবিধান সংশোধনে নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং কিছু কিছু অনুচ্ছেদ সংশোধনে গণভোটের প্রস্তাব করেছি।’
মৌলিক সংস্কার প্রশ্নে বিএনপি বিরোধিতা করছে দাবি করে আখতার হোসেন বলেন, ‘বেশির ভাগ দল উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির পক্ষে একমত হলেও বিএনপিসহ গুটিকয়েক দল আপত্তি জানিয়েছে। এখন উচ্চকক্ষের আলোচনা বাইরে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখতে পাচ্ছি। সংস্কারকে এখন সংখ্যাতাত্ত্বিক জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে; যেমন— ২০টি সংস্কার প্রস্তাব, আমরা ১২টা মেনেছি, আটটা মানিনি। সবই কেন মানতে হবে, এমন কথা বলা হচ্ছে। যখন মৌলিক সংস্কারের কথা আসছে, তখন তারা বেঁকে বসছে। কিন্তু মৌলিক সংস্কারের প্রশ্নে এনসিপি কোনো ছাড় দেবে না। মৌলিক সংস্কার ছাড়া জুলাই সনদের দিকে নিয়ে যাওয়া হলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে না। সে ক্ষেত্রে সংস্কারের বিষয়টি যদি মাঠ পর্যায়ে নিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়, আমরা সেটাই করব।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘এ দেশের ভৌগোলিক বিবেচনায় দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের প্রয়োজন নেই। আমরা পিআর পদ্ধতি চাই। সংস্কার যা হয়েছে, তা নিয়ে জাতীয় সনদ হতে পারে। সময়ক্ষেপণ করলে দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হবে।’
বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, ‘যদি সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের সদস্য মনোনয়ন না হয় এবং গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলো উভয় কক্ষে পাস না হয়, তাহলে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের যৌক্তিকতা থাকবে না। বরং এতে রাষ্ট্র ও দেশের সম্পদের অপচয় হবে। আমরা বলেছি, যত দিন পর্যন্ত উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা না হবে, তত দিন সংবিধানের মৌলিক সংস্কারে নিম্নকক্ষের দুই-তৃতীয়াংশের মেজরিটি ও গণভোটের বিধান রাখতে হবে।’
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘উচ্চকক্ষকে সাক্ষীগোপাল করা যাবে না। কিভাবে কার্যকর করা যায়, সেই পথ বের করতে হবে। দলের প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করা যাবে না। সংবিধান সংশোধন করতে নিম্নকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ মেজরিটির প্রয়োজন হবে।’

কক্সবাজারে বিএনপি নেতা খুন জামায়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগ
- ৬ জেলায় ৩ খুন, আরো ৩ লাশ উদ্ধার
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

কক্সবাজারে জমির বিরোধ নিয়ে হামলায় আহত বিএনপি নেতার মৃত্যু হয়েছে। বিএনপি ও নিহতের পরিবারের অভিযোগ, এর জন্য দায়ী জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা।
অন্যদিকে গাজীপুরের টঙ্গীতে পরকীয়া প্রেম দেখে ফেলায় প্রেমিকার স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন প্রেমিক। বরিশালে বাসায় ঢুকে সাবেক এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়।
কালের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি, নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
কক্সবাজার : সদর উপজেলার ভারুয়াখালীতে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে হামলায় গুরুতর আহত বিএনপি নেতা রহিম উদ্দিন সিকদার (৫০) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে চট্টগ্রামের এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। নিহত রহিম উদ্দিন সিকদার ভারুয়াখালী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি।
স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দ, বিএনপির মিডিয়া সেল এবং নিহতের পরিবারের অভিযোগ, হামলায় নেতৃত্ব দেন কক্সবাজার পৌরসভার ফাতেরঘোনা ইউনিট জামায়াতে ইসলামীর আমির আব্দুল্লাহ আল নোমান। সেই সঙ্গে হামলায় অংশগ্রহণ করেন তাঁর জামাই মিজান, মুজিব, এনামসহ জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা।
নিহতের বড় ভাই ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান সিকদার জানান, গত রবিবার রাতে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে তাঁর ভাই রহিম উদ্দিনসহ পরিবারের সদস্যদের ওপর অতর্কিতভাবে লাঠি, রড ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় আহতদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি ইলিয়াছ খান বলেন, ‘আহত একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে থানায় মামলা করা হয়নি।’
বরিশাল : বাকেরগঞ্জ উপজেলায় গতকাল দুপুরে বাসায় ঢুকে সাবেক এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে।
নিহত আব্দুস সাত্তার হাওলাদার (৬৫) ভরপাশা ইউনিয়নের দুধল মৌ গ্রামের গোলদারবাড়ির বাসিন্দা। তিনি অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিদর্শক।
ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তদন্ত না করে বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না। নিহতের পরিবারও কিছু বলতে পারছে না।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক জাহিদ হাসান জানান, নিহতের শরীরে একাধিক ছুরিকাঘাত করায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছে। হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা যান।
গাজীপুর (আঞ্চলিক) : টঙ্গীর দত্তপাড়া এলাকায় পরকীয়া প্রেম করার সময় দেখে ফেলায় স্বামীর হাতে পরকীয়া প্রেমিক খুন হয়েছেন। এ ঘটনায় গতকাল ভোররাতে পুলিশ প্রেমিকা সুলতানা বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে।
নিহত প্রেমিক কামরুল ইসলাম (২৬) টঙ্গীর এরশাদনগর এলাকার ৩ নম্বর ব্লকের দুলাল মিয়ার ছেলে। প্রেমিকা সুলতানা বেগম (৩০) এরশাদনগর ১ নম্বর ব্লকের পাখি মিয়ার মেয়ে এবং সাব্বির আহমেদের স্ত্রী।
এই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই কামাল হোসাইন বাদী হয়ে দুজনকে আসামি করে টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি মামলা করেন। পরে মামলার ২ নম্বর আসামি সুলতানা বেগমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১ নম্বর আসামি সাব্বির পলাতক।
দেবীদ্বার (কুমিল্লা) : নিখোঁজের আট দিন পর উপজেলার নির্জন এলাকার এক জঙ্গল থেকে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত হনুফা আক্তার (৪৫) দেবীদ্বার পৌর এলাকার বারেরা গ্রামের মৃত মজিবুর রহমানের স্ত্রী।
ঘটনাটি ঘটে উপজেলার ৭ নম্বর এলাহাবাদ ইউনিয়নের গৌরসার গ্রামের সাবেক সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন সুজাত আলীর পরিত্যক্ত বাড়ির পাশের একটি জঙ্গলে।
হনুফা বেগমের আত্মীয় স্কুল শিক্ষক লিপি আক্তার বলেন, ‘আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাশের ছবি এবং দৈনিক কালের কণ্ঠের অনলাইনে নিউজটি দেখতে পাই। লাশের পরনের শাড়ি দেখে চিনতে পারি। পরে নিহতের ছেলেদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হই যে এটা হনুফা বেগমের লাশ।’
কাউখালী (রাঙামাটি) : উপজেলার সুগারমিল আদর্শগ্রাম থেকে অপহরণের ৯ দিন পর পোলট্রি খামারি মামুনের (৩৫) বস্তাবন্দি দ্বিখণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করেছে কাউখালী থানা পুলিশ। গতকাল সকালে কাউখালীর মাঝেরপাড়া এলাকা থেকে ওই মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মামুন সুগারমিল আদর্শগ্রাম এলাকার আলী আহম্মেদের একমাত্র ছেলে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিহত মামুনের সাবেক কর্মচারী মূল ঘাতক কামরুল ইসলাম (৩০), তাঁর স্ত্রী ও আনোয়ার (২০) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কামরুলের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে তাঁর দেখানো স্থান থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় মাটিতে পুঁতে রাখা মামুনের লাশ উদ্ধার করে কাউখালী থানা পুলিশ।
ময়মনসিংহ : গফরগাঁও উপজেলার পাঁচবাগ ইউনিয়নে শনিবার সকালে চর শাঁখচূড়া গ্রামের জনৈক আব্দুর রশিদের মজা পুকুর থেকে নিখোঁজ হওয়া শিশু সিফাতের (১১) লাশ উদ্ধার হয়েছিল। নিখোঁজ অন্য শিশু আয়মান সাদাবের (৫) লাশ গতকাল সকালে দীঘিরপার গ্রামের প্রতিবেশী আত্মীয় গোলাম হোসেনের মজা পুকুরপার থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। দুই শিশুই গত শুক্রবার নিজ নিজ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়েছিল।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
ফটো সাংবাদিকের চোখে সেই দিন
আদর রহমান, রংপুর

কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাধারণ শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর রাখছিলাম। কারণ ওই সময় রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সূতিকাগার ছিল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ফলে যোগাযোগ রক্ষা করছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়টির কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সাংবাদিকদের সঙ্গে। কালের কণ্ঠের ফটো সাংবাদিক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রায় সব কটি বিক্ষোভ মিছিল, সড়ক অবরোধের ছবি তোলার পাশাপাশি নিউজ কাভার করেছি।
এর দুই দিন পর ৮ জুলাই সাধারণ শিক্ষার্থীরা আবারও কোটা সংস্কারের দাবিতে ক্যাম্পাসে পদযাত্রা ও সমাবেশ করে সেখান থেকে বেরিয়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে।
১১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়টির সাধারণ শিক্ষার্থীরা সকাল ১১টায় কোটা সংস্কারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। ওই দিন পুলিশ ও ছাত্রলীগের বাধার মুখে পণ্ড হতে বসেছিল অবস্থান কর্মসূচি।
এরপর আবার ১৪ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন শেষে রংপুর জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়টির ১ নম্বর গেটে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে আবারও বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেন। কিন্তু ওই দিন শিক্ষার্থীদের দাঁড়াতে দেননি বেরোবি শাখা ছাত্রলীগ, রংপুর মহানগর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা। তাঁদের ধাওয়ায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করতে না পেরে ফের ১৬ জুলাই বেরোবির ১ নম্বর গেটে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেন।
সিদ্ধান্ত হয় ১৬ জুলাই রংপুর নগরীর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সকাল ১১টায় রংপুর জিলা স্কুলের সামনে জড়ো হয়ে মিছিল নিয়ে বেরোবির ১ নম্বর গেটের সামনে যাবেন।
ওই দিন দুপুর ১টার দিকে অফিস থেকে বের হয়ে মোটরসাইকেলে রওনা করি বেরোবির দিকে।
তখন দুপুর ২টা ৯ মিনিট। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। একটি ইটের টুকরা এসে আমার বাঁ হাতে লাগলে সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হই। এক পর্যায়ে পুলিশ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা শুরু করে। পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পুলিশ ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি অবস্থান নেন। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।
দুপুর ২টা ১৬ মিনিটের দিকে শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে বেধড়ক পেটাতে থাকে পুলিশ। চারজন পুলিশ তাতে অংশ নেয়। এক পর্যায়ে আবু সাঈদের মাথা ফেটে রক্ত বের হতে থাকে। বেরোবির ১ নম্বর গেট পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দমাতে পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয় ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীরা।
সংঘর্ষের এক পর্যায়ে দুপুর ২টা ১৯ মিনিটে আবু সাঈদ পুলিশের সামনে বুক পেতে দেন। খুব কাছ থেকে পুলিশ তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করে। ছররা গুলি বুকে লাগার পর আবু সাঈদ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সহপাঠীরা সঙ্গে সঙ্গে আবু সাঈদকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে আন্দোলনরত বেরোবির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ পার্কের মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেয় সাধারণ মানুষ। আবু সাঈদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বেরোবির ১ নম্বর গেট ভেঙে ঢুকে পড়ে ক্যাম্পাসে। বিকেল ৪টা ৩৬ মিনিটে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে একটি কার এবং কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন দেন। এরপর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বেরোবির ভিসির বাড়ি অবরুদ্ধ করে নিচে রাখা একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে বাড়িটিও ভাঙচুর করেন। পরে পুলিশ ও র্যাব এসে ভিসির বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া কয়েকজন শিক্ষকসহ ভিসিকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়।

প্রথমবারের মতো আজ ‘জুলাই শহীদ দিবস’
- পালিত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় শোক
নিজস্ব প্রতিবেদক

আজ বুধবার প্রথমবারের মতো দেশজুড়ে পালিত হবে ‘জুলাই শহীদ দিবস’। গত বছরের এই দিনে (১৬ জুলাই) সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থা বিলোপের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের গুলিতে শহীদ হন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। একই দিনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে শহীদ হন আরো পাঁচজন।
দিবসটি উপলক্ষে আজ রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
জুলাই শহীদরা বৈষম্যহীন, দুর্নীতি ও স্বৈরাচারমুক্ত নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বপ্ন দেখেছিলেন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া এই সুযোগকে কাজে লাগাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। জুলাইয়ের চেতনা ধারণ করে নতুন বাংলাদেশের পথে দৃপ্ত পদভারে একযোগে সবাই এগিয়ে যাব—আজকের দিনে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
কর্মসূচি
জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে জুলাই শহীদ দিবসে আজ থাকছে নানা আয়োজন। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যে স্থানগুলোতে শহীদরা প্রাণ হারান, সেসব স্থানে শহীদদের নামে স্ট্রিট মেমোরি স্ট্যাম্প স্থাপনের কাজ শুরু হচ্ছে আজ থেকে। এই কাজ চলবে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত।
আয়োজনের মধ্যে থাকছে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে শহীদ আবু সাঈদ স্মরণে জুলাইয়ের গান ও ড্রোন শো। জুলাইয়ের গান ও ড্রোন শো থাকছে চট্টগ্রামেও।
কর্মসূচিতে আরো রয়েছে ১৬ জুলাই স্মরণে মিউজিক্যাল ভিডিও শেয়ার। এর থিম মিউজিক হবে ‘কথা ক’। সেই সঙ্গে আজ ‘একটি শহীদ পরিবারের সাক্ষ্য’ প্রামাণ্যচিত্রের তৃতীয় খণ্ড প্রচার এবং একজন জুলাই যোদ্ধার স্মৃতিচারণার ভিডিও শেয়ার করা হবে। সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে। পাশাপাশি সব মোবাইল গ্রাহকের কাছে ভিডিওর ইউআরএল পাঠানো হবে।