কক্সবাজারকে আধুনিক ও পরিকল্পিত পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)। আট বছর পরও সংস্থাটি পর্যটন শহর ঘিরে কোনো মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে পারেনি। মহাপরিকল্পনার জন্য কয়েক দফা কাটছাঁট করে ১৭৪ কোটি ৭২ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে কউক। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পর্যটন নগরীকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের মিলনমেলা হিসেবে গড়ে তুলতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধার সংযোজন জরুরি।
পর্যটনবান্ধব করতে দরকার আধুনিকায়ন
নিজস্ব প্রতিবেদক

পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, কক্সবাজারের নৈসর্গিক সৌন্দর্য সুদীর্ঘ ১২০ কিলোমিটার উপকূলজুড়ে ছড়িয়ে থাকলেও পর্যটকরা কেবল কয়েকটি সুপরিচিত এলাকাতেই বেশি ভ্রমণ করেন। অদেখা রয়ে যায় বেশির ভাগ অঞ্চল।
এ ছাড়া ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য গোয়া, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার আদলে পর্যটনকে আরো বেশি আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা যায়।
কক্সবাজার সি ক্রজ অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হুসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, পর্যটকরা শুধু সমুদ্রসৈকত ও হোটেলে ঘুমানোর জন্য আসেন না। তাঁদের বিনোদনের জন্য বাড়তি সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। এতে করে পর্যটন খাতে আয়ও বাড়বে।
তিনি বলেন, কক্সবাজারে ঘুরতে আসা ৯৮ শতাংশ পর্যটকই জানে না সমুদ্র থেকে পাহাড়ঘেরা কক্সবাজার দেখতে কেমন? পর্যটকদের জন্য ক্রুজ শিপ বা প্রমোদতরির ব্যবস্থা থাকা উচিত। তাঁরা গভীর সমুদ্রে রাত্রি যাপন করবেন, উল্লাস করবেন। কিন্তু কক্সবাজারে যাতায়াত করা শিপগুলোকে ১৮টি দপ্তরের অনুমোদন নিতে হয়, যা নতুন বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে নিরুৎসাহ করছে। অবশ্যই পর্যটন নগরীতে ওয়ান স্টপ লাইসেন্সিং সিস্টেম চালু করা উচিত।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ২০২৩-২৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমান বিশ্বে পর্যটন তার বহুমাত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে একক বৃহত্তম শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পর্যটনশিল্প অন্যতম অর্থনৈতিক খাত হিসেবে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বর্তমানে বৈশ্বিক জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান প্রায় ১০ শতাংশ ও প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান প্রায় ১১ শতাংশ। বাংলাদেশের জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান ৩.১ শতাংশ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান প্রায় ১.৭ শতাংশ, যা এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় তেমন আশাব্যঞ্জক নয়। একজন পর্যটক ১১ জন মানুষের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে থাকেন এবং স্বল্প বিনিয়োগের মাধ্যমে পর্যটনশিল্প অধিক রাজস্ব আহরণ করে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পর্যটনশিল্প অন্যতম অর্থনৈতিক খাত হিসেবে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।
সূত্র বলছে, ভ্রমণ ও পর্যটন সূচকে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক জরিপে দেখা গেছে, এই সূচকে বিশ্বের ১১৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯তম। এ ছাড়া এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার শেষে।
ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজমের (ডব্লিউটিটিসি) তথ্য মতে, ১৯৫০ সালে পৃথিবীতে পর্যটকের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৫ মিলিয়ন, যা ২০১৬ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় এক হাজার ২৩৫ মিলিয়নে। ধারণা করা হচ্ছে, এই বছর প্রায় ১৩৯ কোটি ৫৬ লাখ ৬০ হাজার পর্যটক সারা পৃথিবীতে ভ্রমণ করবেন। বিগত ৬৭ বছরে পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ৫০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছর বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে পর্যটনের অবদান এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২.১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১১.১ ট্রিলিয়ন ডলার। ২০১৯ সালের হিসাবে এই প্রবৃদ্ধি ৭.৫ শতাংশ। কিন্তু অবকাঠামো উন্নয়নে সীমাবদ্ধ বাংলাদেশের পর্যটন।
জানতে চাইলে হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, পর্যটকদের নাইট লাইফ নিশ্চিত করতে হবে। সি বিচ ও হোটেলে রাত্রি যাপনের মধ্যেই পর্যটনকে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। এ জন্য উন্নতমানের শপিং মল, সিনেপ্লেক্স, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক চালু করা উচিত। একই সঙ্গে বিদেশি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করতে সব ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়ন করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, দেশের অন্যান্য এলাকার মতোই পর্যটন নগরীতে আইন-কানুনের কড়াকড়ি হলে পর্যটকরা তাঁদের সময়কে উপভোগ করতে পারবেন না। তবে, অবশ্যই তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টি নজরে রাখতে হবে।
কক্সবাজার নাগরিক ফোরাম ও বাংলাদেশ পরিবেশ অ্যান্ড ডায়ভারসিটি কনভারসন ফাউন্ডেশনের সভাপতি এ এন এম হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত থাকার পরও আমাদের জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান সামান্য। শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল ও ভারতের মতো আমাদের দেশে পর্যাপ্ত বিদেশি পর্যটক নেই। আসলে আমরা তাঁদের এখনো আমন্ত্রণ জানাতে পারিনি।’
তিনি বলেন, প্রকৃতি ও পরিবেশকে রক্ষা করে পর্যটকবান্ধব পরিকল্পনা করতে হবে। এতে অর্থনীতিতে পর্যটনের অংশীদারি বাড়বে।
সম্পর্কিত খবর

ফিরে দেখা ২ আগস্ট ’২৪
প্রতিবাদে নানা পেশার মানুষ, সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা
নিজস্ব প্রতিবেদক

পূর্বঘোষিত শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছাড়াও গত বছরের এই দিনে (২ আগস্ট) পেশাজীবী, শিক্ষক, শিল্পী ও চিকিৎসকদের একাংশ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।
গণমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে এদিন দেশের ২৮ জেলায় ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি পালিত হয়। রাজধানীর উত্তরাসহ দেশের একাধিক স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে খুলনায় একজন পুলিশ সদস্য এবং হবিগঞ্জে একজন পথচারীর মৃত্যু হয়।
সারা দেশে ছাত্র-নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলার প্রতিবাদে পরদিন ৩ আগস্ট বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচির কথা ঘোষণা করা হয়। সেই সঙ্গে ৪ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়।
এদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক ডিবি হেফাজতে থাকা এবং সেখান থেকে আন্দোলন প্রত্যাহারের বিবৃতি দেওয়া বিষয়ে জানান, ডিবি অফিস থেকে তাঁরা স্বেচ্ছায় বিবৃতি দেননি, বাধ্য করা হয়।
অন্যদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সারা দেশে সহিংসতার অভিযোগে ২ আগস্ট পর্যন্ত আগের ১৪ দিনে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে খবর প্রকাশ করে সংবাদমাধ্যমগুলো।
বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, নিহত ২ : এদিন রাজধানীর উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে মাইলস্টোন কলেজের সামনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে অন্তত ছয় শিক্ষার্থী আহত হয়।
হবিগঞ্জে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় একজন পথচারী নিহত হন। সংঘর্ষে পুলিশ ও আন্দোলনকারীসহ শতাধিক লোক আহত হয়।
বিকেলে সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। আন্দোলনকারীরাও ইটপাটকেল ছোড়ে। সংঘর্ষে শিশু, সাংবাদিক, পুলিশসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়।
এদিন দুপুর ১২টার পর থেকে মোবাইল ইন্টারনেটে ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও রাশিয়াভিত্তিক মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রাম বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাঁচ ঘণ্টা পর সন্ধ্যার দিকে ফেসবুক ও মেসেঞ্জার আবার চালু করা হয়।
শিল্পী, চিকিৎসকসহ পেশাজীবীরাও শামিল প্রতিবাদে : রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষক ও নাগরিক সমাজের ডাকা ‘দ্রোহযাত্রা’ থেকে চার দফা দাবি তুলে ধরা হয়। চার দফার মধ্যে ছিল গণগ্রেপ্তার বন্ধ করা ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দেওয়া, কারফিউ তুলে নেওয়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া এবং সরকারের পদত্যাগ।
ধানমণ্ডিতে ‘গণহত্যা ও নিপীড়নবিরোধী শিল্পীসমাজ’ ব্যানারে ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ জানান শিল্পীরা। সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করে। বাংলামোটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ কবি-লেখক সমাজ’ ব্যানারে সমাবেশের আয়োজন করেন কবি-লেখকরা। বৃষ্টি উপেক্ষা করে সমাবেশ করেন শিক্ষক, চিকিৎসক ও মেডিক্যাল-ডেন্টাল শিক্ষার্থীরাও।
পলকের ক্ষমা প্রার্থনা : এদিন নাটোরে এক অনুষ্ঠানে তৎকালীন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহেমদ পলক বলেন, ‘অপপ্রচার বন্ধে ব্যর্থতা এবং ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হওয়ার সব দায়ভার আমার।...তরুণ প্রজন্মের কাছে যদি আমার কোনো ভুল হয়ে থাকে, আমি প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’
৮০ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর জামিন : ২ আগস্ট ছুটির দিন (শুক্রবার) হওয়া সত্ত্বেও এদিন দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৮০ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থীর জামিন হয়। আইন মন্ত্রণালয় জানায়, পরীক্ষার কথা বিবেচনা করে আইনমন্ত্রী তাদের জামিনের বিশেষ উদ্যোগ নেন।
সহিংসতায় অন্তত ৩২ শিশুর মৃত্যু, ইউনিসেফের নিন্দা : এদিন জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এক বিবৃতিতে জানায়, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় অন্তত ৩২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শিশুদের এই মৃত্যুকে ‘ভয়ানক ক্ষতি’ উল্লেখ করে সব ধরনের সহিংসতার নিন্দা জানান ইউনিসেফের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক সঞ্জয় উইজেসেকেরা।

আগস্ট ঘিরে জনমনে আতঙ্ক পুলিশি তৎপরতা জোরদার
ওমর ফারুক

৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান দিবস কেন্দ্র করে দেশজুড়ে বিরাজ করছে অজানা এক আতঙ্ক। তবে পুলিশ ও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নিরাপত্তা নিয়ে বড় কোনো হুমকি নেই। তার পরও রাজধানীসহ সারা দেশে নজরদারি ও চিরুনি অভিযান চলছে।
পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র বলছে, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সংগঠিত হয়ে নতুন করে অরাজক পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছেন—এমন আশঙ্কায় নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
রাজধানীতে সহিংস কর্মকাণ্ডের আশঙ্কায় গত ২৪ ঘণ্টায় পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এক হাজার ২৬১ জনকে। এর মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের আট নেতাকর্মীকে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম জালাল (৫১), দক্ষিণ ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড ২ নম্বর ইউনিট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শিবলু (৪৮), কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য আফজালুন নেছা হাসান বাসেত (৪৫), কুলিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন ওরফে লিটন (৫০), ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নিষিদ্ধঘোষিত জসীম উদ্দিন হলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান (২৫), ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহাবুবুর রহমান হিরন, আওয়ামী লীগের সাবেক ৬৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সামসুদ্দিন ভূঁইয়া এবং গাজীপুর মহানগর মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের সভাপতি মো. মিজানুর রহমান (৫২)।
চিরুনি অভিযান ও চেকপোস্ট : ডিএমপির মুখপাত্র মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ডিএমপি কোনো গণগ্রেপ্তার করছে না।’ তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ডিএমপির ৫০টি থানায় ৪৮৯টি টহল টিম এবং ৬৬টি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এ সময়ে ২৫৪ জনকে বিভিন্ন অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে ২০টি মোবাইল ফোন, ছয়টি মোটরসাইকেল, একটি প্রাইভেট কার এবং বিভিন্ন প্রকার মাদক।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এসব অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন রাতভর তল্লাশি চলছে।
ষড়যন্ত্রমূলক বৈঠক ও সেনা কর্মকর্তা
ভাটারা থানা এলাকায় ৮ জুলাই একটি কনভেনশন সেন্টারে ‘ষড়যন্ত্রমূলক বৈঠক’ করার অভিযোগে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ ২২ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ডিএমপির ডিসি তালেবুর রহমান বলেন, ওই কনভেনশন সেন্টার ভাড়া নিয়েছিলেন শামীমা নাসরিন শম্পা নামের এক ব্যক্তি, যিনি বিদেশে লোক পাঠানোর একটি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু সেখানে গোপনে রাজনীতিসংশ্লিষ্ট লোকজন জড়ো হন।
এই বৈঠকে সেনাবাহিনীর মেজর পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা সাদেকুল হক সাদেকেরও সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁকে সেনাবাহিনীর হেফাজতে নেওয়া হয়েছে এবং তাঁর বিরুদ্ধে আলাদা তদন্ত চলছে।
গতকাল আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর সাদেকের বিরুদ্ধে সেনা আইনে ব্যবস্থা নিতে তদন্ত আদালত গঠন করেছে সেনাবাহিনী।
পুলিশ ও সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে অস্থিরতা রয়েছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা শাহাদত হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে মিরপুর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে যাত্রাবাড়ী ফেরার পথে অন্তত তিনটি চেকপোস্টে তল্লাশির মুখে পড়েন তিনি। তাঁর ভাষায়, ‘এর আগে এত কঠোর তল্লাশি দেখিনি। মনে হচ্ছে বড় কিছু ঘটতে যাচ্ছে।’
৫ নয়, ১৫ আগস্ট নিয়ে শঙ্কা
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট নিয়ে পুলিশ খুব বেশি উদ্বিগ্ন নয়। তবে ১৫ আগস্ট ঘিরে শঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে গোপালগঞ্জসহ কয়েকটি জেলায় উত্তেজনা তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ কারণে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে বাড়তি সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল শুক্রবার রাতে আইজিপি বাহারুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আতঙ্কিত হওয়ার মতো আমরা কিছু দেখছি না। পুলিশ যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে প্রস্তুত রয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী নিরাপত্তা শঙ্কা নাকচ করেছেন। তিনি বলেন, ‘৫ আগস্ট বা জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস ঘিরে কোনো নিরাপত্তা হুমকি নেই।’
এর আগে গত বুধবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস উদযাপন বা আগামী ৫ আগস্ট দেশে নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ধরনের হুমকি নেই। সবকিছু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

আইএসপিআর
সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত আদালত গঠন প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে নাশকতার পরিকল্পনায় আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের সঙ্গে গোপন বৈঠকে অংশ নেওয়ার অভিযোগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে আটক করে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে সেনা আইনে ব্যবস্থা নিতে তদন্ত আদালত গঠন করেছে সেনাবাহিনী।
গতকাল শুক্রবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী একটি সংস্থার কাছ থেকে সেনাবাহিনীর ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া যায়।
আইএসপিআর জানায়, ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে একটি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে এবং প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সেনা আইনে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হচ্ছে। এ ছাড়া তাঁর কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার ব্যত্যয়ের বিষয়েও আরেকটি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে সুপারিশ অনুযায়ী সেনা আইনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইএসপিআর জানিয়েছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি পেশাদার, শৃঙ্খলাবদ্ধ ও অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন ওই কর্মকর্তা, যিনি মেজর পদে কর্মরত এবং নাম সাদেকুল হক সাদেক। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সেনাবাহিনীর প্রচলিত বিধি অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মির্জা ফখরুল
ফ্যাসিস্টদের না ফেরা নিশ্চিত করতে হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা একটা বিরাট, ভয়ংকর ফ্যাসিবাদের হাত থেকে আপাতত মুক্তি পেয়েছি। এই মুক্তি তখনই চূড়ান্ত হবে, যখন তাদের আমরা রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারব।’ তিনি বলেন, ‘এই দেশটাকে বদলাতে হবে। আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা আমাদের দেশকে ধ্বংস করেছে, তাদের ঘৃণা করতে হবে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর উত্তরার আজমপুরের আমির কমপ্লেক্সের সামনে এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। ‘২৪ গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণ’ শীর্ষক এই সমাবেশের আয়োজন করে মহানগর উত্তর বিএনপি।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যারা লুটপাট করে, যারা ব্যাংক লুট করে, যারা চাঁদাবাজি করে, যারা মানুষের সম্পত্তি দখল করে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো রকমের আপস থাকবে না।
বর্তমান সরকারকে সাধুবাদ জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আজ একটা ভালো খবর আছে। কয়েক দিন আগে আপনারা দেখেছেন, আমেরিকা আমাদের পণ্যের ওপর ট্যারিফ আরোপ করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সবচেয়ে বড় ক্রাইসিস হচ্ছে, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবে। এই নির্বাচনটা আমরা চাই, দেশের মানুষ চায়। আমার তো যাওয়ারই জায়গা নেই। এখন আমার কোনো সমস্যা হলে আমি কার কাছে যাব? কোনো এমপি নেই তো? তাহলে আমি যাব কার কাছে? আমার সমস্যাটা পার্লামেন্টে কে তুলে ধরবে? লোক নেই। কে পার্লামেন্টে আমার দাবি নিয়ে কথা বলবে? লোক নেই। এ জন্যই দ্রুত নির্বাচন দরকার, খুব দ্রুত পার্লামেন্ট দরকার।’
তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ওপর জনগণ যে আস্থা রেখেছিল, একইভাবে তারা তারেক রহমানের ওপর আস্থা রাখছে। অপেক্ষা করছি, কবে তারেক রহমান দেশে আসবেন। কবে নেতৃত্ব দেবেন। আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করছি, তারেক রহমান অতি দ্রুত দেশে আসেন, আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে নেতৃত্ব দেন, সেটাই আমাদের কামনা। তারেক রহমান বারবার প্রতিদিন কথা বলছেন। প্রতিদিন তিনি বিভিন্ন জায়গায় মিটিং করছেন। তিনি বলছেন, ‘আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ তৈরি করব। যে বাংলাদেশে সব মানুষের সমান অধিকার থাকবে, যে বাংলাদেশে মানুষ ভোট দিতে পারবে, যে বাংলাদেশে সাধারণ গরিব মানুষ সে গরিব থাকবে না, ধীরে ধীরে সে উন্নতির দিকে যাবে।’ বারবার করে বলেছেন যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হবে। তিনি নতুন বাংলাদেশ গড়তে প্রান্তিক মানুষের জন্য ফার্মার্স কার্ড, স্বাস্থ্য কার্ড, ফ্যামিলি কার্ড ইত্যাদি পরিকল্পনা নিয়েছেন।”
ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হকের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম আহ্বায়ক এ বি এম এ আবদুর রাজ্জাকের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মনি, জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান বর্ষপূর্তি পালন জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুল আলম নিরব, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব মোস্তফা জামান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি রাজিব আহসান প্রমুখ।