একের পর এক সংকট ও অভিঘাতে ধুঁকছে বড় বড় শিল্পগ্রুপ। নানা কারণে উৎপাদন সক্ষমতার পুরোটা কাজে লাগাতে পারছে না তারা। তাদের একদিকে বিরাট অঙ্কের ব্যাংকঋণ অন্যদিকে উচ্চ সুদের হার, ডলার সংকট, কর্মীদের বেতন-ভাতা, জ্বালানি সমস্যা, ইউটিলিটি বিলসহ বহুমুখী খরচের চাপ। এসব ধকলের মধ্যেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, শ্রমিক অসন্তোষ, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির মতো অসংখ্য সমস্যা।
টানা সংকটে ধুঁকছে শিল্প
মাসুদ রুমী

উদ্যোক্তারা বলছেন, ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম এখন ১২০ টাকা। বছর দুয়েক আগে ২০২২ সালের মে মাসেও ৮৬ টাকায় ডলার কেনা যেত।
সময়মতো এলসি করতে না পারা, জ্বালানির সংকটসহ নানা কারণে কারখানার উৎপাদন নেমেছে শূন্যের কোঠায়। জ্বালানির সংকটে উৎপাদন ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ বন্ধ ছিল। কারখানায় বিক্ষোভ, হামলা-মামলার কারণে ভারী শিল্প, পোশাক ও টেক্সটাইল খাত মারাত্মক সংকটের মধ্যে পড়েছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে।
প্রতিনিয়ত খরচ বেড়ে যাওয়ায় কারখানা সচল রাখা নিয়ে হিসাব করতে হচ্ছে। এই সংকট যে অর্থনীতিতে পড়েছে, সেটি সরকারি পরিসংখ্যানেও উঠে এসেছে। শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। বেসরকারি বিনিয়োগেও স্থবিরতা চলছে।
এদিকে ব্যাংকঋণের সুদহার বেড়ে ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। খেলাপি ঋণের নীতিমালা পরিবর্তনের ফলে নতুন করে ঋণখেলাপি হওয়াসহ নানামুখী চাপের মুখে ব্যবসায়ীসমাজ। এসব সংকটের কারণে অর্থনীতিতে বহুমুখী নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অনেকে ঋণ নিয়ে সেটার অপব্যবহার করেছে। এই অপকর্মের সঙ্গে অনেক ব্যাংক কর্মকর্তাও জড়িত। ব্যাংকগুলো তাদের কাজ ঠিকমতো করেনি। এতে আর্থিক খাতের অবস্থা ভঙ্গুর হয়েছে। খেলাপিদের বিরুদ্ধে হঠাৎ করে কঠোর হওয়ায় তাদের কম্পানিগুলো দাঁড়াতে পারছে না। অনেক ঋণখেলাপি টাকা নিয়ে বিদেশে চলে গেছে। ফলে কাঁচামাল নিয়ে আসার ক্ষেত্রেও কম্পানিগুলোকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। পরিস্থিতি দিন দিন আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে।’
কেমন চলছে বড় শিল্পগ্রুপ : বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান থার্মেক্স গ্রুপ। এর আওতায় বিভিন্ন স্তরের কারখানা রয়েছে ১৭টি। কাঁচামালের স্বল্পতায় কারখানাগুলো পূর্ণ সক্ষমতায় চলতে পারছে না। ১০টি কারখানা চলছে মাত্র ৩০ শতাংশ এবং সাতটি চলছে ৬০ শতাংশ সক্ষমতায়। এই রকম প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও গ্রুপটির মাধ্যমে ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকারও বেশি পণ্য। ২২ হাজার ৫০০ শ্রমিকের এই বিশাল গ্রুপকে প্রতি মাসে কর্মীদের বেতন দিতে হয় কমবেশি ২৮ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল দিতে হয় ১৭ কোটি টাকা। ওই অর্থবছরে গ্রুপটি সরকারকে শুধু আয়করই দিয়েছে প্রায় ৩৩ কোটি টাকা।
ব্যাংকঋণ নিয়ে ব্যবসার প্রসার ঘটাতে গ্রুপটি ১৯৯৬ সাল থেকে মোট ঋণ নিয়েছিল ৩৩ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা আর শোধ করেছে ৩১ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। এখন বকেয়া মূল ঋণ দুই হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। তবে কভিড ও পরবর্তী সময়ে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে উৎপাদন ও ব্যাবসায়িক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় সুদে-আসলে ঋণ দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কিছু কিছু করে টাকা সংগ্রহ করে অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের মন্দ ঋণের একটি অংশ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এবং সোনালী ও জনতা ব্যাংকের মন্দ ঋণের একটি অংশ আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে শোধ করা হবে বলে গ্রুপটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
দেশের টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস সেক্টরের শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান নোমান গ্রুপ জাতীয় অর্থনীতিতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফ্যাব্রিকস লিমিটেড বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে টানা ১২ বার দেশের সেরা রপ্তানিকারক হিসেবে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি পেয়েছে। অন্তত ৮০ হাজার শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত রয়েছেন, বার্ষিক টার্নওভার ১.৩ বিলিয়ন ডলার। নানামুখী সংকটে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি চিঠি দিয়েছে অন্তর্বতী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে।
চিঠিতে নোমান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ জাবের বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে পরিশ্রম ও সততার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি এবং লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নই। ফলে ঐতিহাসিক পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে টার্গেট করেছে একটি চক্র। এই চক্রকে চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা না হলে দেশের রপ্তানি খাত মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে, যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।’
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ডহরগাঁ এলাকায় ৫০ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ফকির ফ্যাশন লিমিটেড। পোশাক রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অনন্য ভূমিকা রাখা এই প্রতিষ্ঠান সরকার পতনের পর আড়াইহাজার থানায় মামলায় এর মালিক পক্ষের তিনজনকে আসামি করা হয়। ফকির গ্রুপের এইচআর ও কমপ্লায়েন্সের মহাব্যবস্থাপক সুমন কান্তি সিংহ বলেন, ‘৫ আগস্টের পর আমাদের গ্রুপের পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল, অথচ বিগত সরকারের আমলে আমাদের কোনো ধরনের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততাই ছিল না। এই মামলার ফলে বিদেশি ক্রেতারা আমাদের সততা, নিষ্ঠা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’
শুধু থার্মেক্স, নোমান বা ফকির গ্রুপই নয়, এভাবে নানা সংকটে ধুঁকছে দেশের স্বনামধন্য ও বড় বড় শিল্পগ্রুপও।
জ্বালানির সংকটের কারণে বেশির ভাগ কারখানা এখন ৩০ শতাংশ সক্ষমতা নিয়ে চলছে। কয়েকটি কারখানার উৎপাদন পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দেখা যায়, ময়মনসিংহের ভালুকার একটি স্পিনিং মিলে বিদ্যুতের লোডশেডিং ছিল প্রায় ৮৪ ঘণ্টা। দিনে গড়ে ছয়বার বিদ্যুৎ চলে যায়। বস্ত্র খাতের শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) নেতারা সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে জ্বালানি সংকটের বিষয়গুলো তুলে ধরেন। তারা বলেন, তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে জ্বালানি সংকটের কারণে বস্ত্র খাত স্বাভাবিক উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। কয়েক মাস যাবৎ তীব্র গ্যাস সংকটের কারণে মিলগুলো উৎপাদনক্ষমতার ৪০ থেকে ৫০ শতাংশের বেশি ব্যবহার করতে পারছে না। ডলার সংকটের কারণে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল কমেছে।
বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় আসার জন্য বাংলাদেশ সত্যিই যোগ্য কি না তা পর্যালোচনা করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কয়েক মাস ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ঋণ পুনঃ তফসিল সুবিধা দিতে হবে। কারখানাগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি খুবই জরুরি।
সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, ‘তিলে তিলে গড়ে তোলা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আঘাত এসেছে। এ জন্য নিরাপত্তা জোরদারসহ যা করা দরকার, তা আগে করতে হবে। গত কিছুদিনে রপ্তানি আদেশের ২০ শতাংশ বাংলাদেশ থেকে অন্য দেশে চলে গেছে। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম দ্বিগুণ করা হয়েছে। তার পরও নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস ও বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। পাঁচ-ছয় ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে।’
বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও শাহরিয়ার স্টিল মিলসের এমডি শেখ মাসাদুল আলম মাসুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চার বছর ধরে সরকারি উন্নয়ন কার্যক্রম একরকম বন্ধ। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছি। ডলারের দাম ৮০ থেকে ১২০ টাকা হয়েছে। দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশ। ব্যাংকের যে লিমিট সেটা টাকায়। আমদানি করতে হয় ডলারে। এতে রানিং ক্যাপিটাল ৪০ শতাংশ কমে গেছে। ব্যাংকে ব্যবসায়ীদের যার যতটুকু লিমিট ছিল সব ৪০ শতাংশ কমে গেছে। এত কম চালান নিয়ে একটা শিল্প খাত চলতে পারে না।’
তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নীতি সুদহার বাড়া মানে ব্যাংকঋণের সুদহার বাড়া। নীতি সুদহার বাড়ানোর ফলে সেটা আরো বেড়ে গেছে। এখন নতুন বিনিয়োগ তো দূরের কথা, টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত ব্যবসায়ীসমাজ। যখন ব্যাংকের সুদহার বেড়ে যায় তখন সব হিসাব ওলটপালট হয়ে যায়। কারণ কিস্তির পরিমাণ বেড়ে যায় এবং মুনাফার হার কমে আসে। এত দিন ছয়টি কিস্তি দিতে না পারলে একজন গ্রাহক খেলাপিতে পরিণত হতো। এখন তিনটি কিস্তি পরিশোধ করতে না পারলে খেলাপি করার শর্ত দেওয়া হয়েছে। আবার আগামী মার্চ মাস থেকে একটি কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলেই খেলাপি করা হবে।’
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের ব্যাংক খাতে ব্যাপক লুটপাটে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে এসেছে। লুটপাটের টাকার বড় অংশ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। ওই সব টাকা এত দিন খেলাপি করা হয়নি। এখন সেগুলো খেলাপি হচ্ছে। আগে খেলাপি ঋণের প্রকৃত তথ্য আড়াল করে কমিয়ে দেখানো হতো। এখন সব তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। এতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে খেলাপি ঋণ।
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘খেলাপি ঋণের ব্যাপারটি কৌশলগতভাবে ঠিক করা গেলে তা সবার জন্যই ভালো। তবে প্রেক্ষাপটটাও একটু দেখতে হবে। করোনা মহামারির পর যে ক্ষতি হয়েছে সেটা থেকে আমরা কেউ বের হতে পারিনি। বিশ্ব অর্থনীতি, বাংলাদেশের অর্থনীতি কোনোটাই তো স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অনেক কম্পানি ধুঁকে ধুঁকে চলছে।’
এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘খেলাপিদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর হওয়ার ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে সুদের হারটা আসলেই বেশি হয়ে গেছে। সুদের হার বেশি হলে উৎপাদন কমে যায়। বিনিয়োগ করা কঠিন হয়ে যায়। খেলাপি ঋণের শর্তও কঠোর হয়ে গেছে। এই সময়টা নাজুক। ফলে ব্যবসায়ীরা কিছুটা ছাড় পেতেই পারেন।’
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভালো নেই ব্যবসা-বাণিজ্য। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদের হার এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির সার্বিক প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতে। গত ১৫ বছরে গোষ্ঠীতন্ত্র তৈরি হয়েছিল যেখানে ব্যবসা-বাণিজ্যের সমতা ছিলনা। যাঁরা সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন, ব্যাংকের টাকা পাচার করেছেন, তাঁরা দেশের বাইরে চলে গেছেন। এখন দেশে যে চার কোটি ব্যবসায়ী আছেন তাদের বেশিরভাগই কোন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়। তাদের সবাইকে ঢালাওভাবে বিগত সরকারের দোসর হিসেবে চিহ্নিত করা ঠিক হবে না। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হবে।'
বিটপি গ্রুপের প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম আজাদ বলেন, ‘বিজিএমইএ নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। এমনকি আমার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধেও এমন মামলা করা হয়েছে। অথচ যে অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছে, সেই অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সময় আমি দেশের বাইরে ছিলাম।’
সম্পর্কিত খবর

আজ রাজপথে নামছে বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগ হত্যাকাণ্ডের ‘অপপ্রচার ষড়যন্ত্রের’ প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণভাবে আজ থেকে রাজপথে থাকবে বিএনপি। বিএনপি মনে করছে, এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে জামায়াতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাজপথ দখল করার চেষ্টা করছে বলে মনে করছে বিএনপি। এ জন্য রাজপথে বিএনপিও শক্তি ও জনসমর্থন দেখাবে।
এখন পর্যন্ত এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দিচ্ছে না দলটি।
মাঠে নামছে ছাত্রদল : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, গোপন তৎপরতায় দীর্ঘদিন ধরে অভ্যস্ত গুপ্ত সংগঠন কর্তৃক মব সৃষ্টির অপচেষ্টা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করা এবং সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আজ রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল করবে। গুপ্ত সংগঠন বলতে ইসলামী ছাত্রশিবির ও তাদের সহযোগী সংগঠনকে বোঝানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির।
ছাত্রদলের ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আজ দুপুর ২টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শাহবাগ পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি সারা দেশের সব জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
কর্মসূচির বিষয়ে ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, ‘গুপ্ত সংগঠন হিসেবে সেসব সংগঠনকেই বোঝানো হয়েছে, যারা প্রকাশ্যে নিজেদের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার বদলে গোপনে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও সহিংসতা ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। গত ৫ আগস্টের পর একটি মুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও তাদের এহেন গুপ্ত কার্যক্রম এ দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে অসহনশীল করে তুলছে এবং রাজনৈতিক বিষয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে তুলছে। এ রকম কুচক্রী কার্যক্রমের বিরুদ্ধেই জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল তার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, যেন দেশবাসীকে এসব বিভ্রান্তিকর বিষয়ে সচেতন করে তোলা যায়।’
গুপ্ত সংগঠন বলতে কাদের বোঝানো হচ্ছে জানতে চাইলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ‘ছত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর যারা ক্যাম্পাসগুলোতে মব সৃষ্টি করে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ নামে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করছে, তারাই গুপ্ত সংগঠন। ছাত্রশিবির এবং গুপ্তভাবে সংগঠন পরিচালনা করতে ছাত্রশিবিরকে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করে, আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় তারা।’

সশস্ত্র বাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির মেয়াদ আরো দুই মাস বাড়ল
বিশেষ প্রতিনিধি

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও এর ওপরের সমপদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরো দুই মাস (৬০ দিন) বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল রবিবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর আগে গত ১৩ মে থেকে তাঁদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির ক্ষমতার মেয়াদ দুই মাস বাড়ানো হয়েছিল। সেই মেয়াদ গতকাল শেষ হয় ।
মেয়াদ বাড়ানোর আদেশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও এর ওপরের সমপদমর্যাদার কমিশন্ড কর্মকর্তাদের (কোস্ট গার্ড ও বিজিবিতে প্রেষণে নিয়োজিত সমপদমর্যাদার কর্মকর্তারাসহ) ‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮’-এর ১২(১) ও ১৭ ধারা অনুযায়ী স্পেশাল এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা অর্পণ করা হলো। এর মেয়াদ হবে ১৪ মার্চ থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত। সারা দেশে তাঁরা এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ‘ফৌজদারি কার্যবিধি-১৮৯৮’-এর ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৮৬, ৯৫(২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ ও ১৪২ ধারার অপরাধগুলো বিবেচনায় নিতে পারবেন।
প্রথমে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরে ৩০ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদের (সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও এর ওপরের সমপদমর্যাদার কর্মকর্তা) এই ক্ষমতা দেওয়া হয়। অর্থাৎ শুধু সেনাবাহিনী নয়, বিমান ও নৌবাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদেরও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হয়। তখন ৬০ দিনের জন্য এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল।

শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ বিএনপির
নিজস্ব প্রতিবেদক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক পুলিশপ্রধান (আইজিপি) বেনজীর আহমেদসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে গুমের অভিযোগ দিয়েছে বিএনপি।
গতকাল রবিবার দুপুরে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে নিয়ে এই অভিযোগ দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য এবং তথ্য সেলের সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন খান।
অভিযোগ তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গুমের ঘটনায় ১১ জন ভুক্তভোগীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে লিখিত অভিযোগে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় এসব ভুক্তভোগীকে অপহরণের পর আয়নাঘরে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। গত বছর ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পলায়নের পর মোহাম্মদ আলীকে হাত ও চোখ বেঁধে পূর্বাচলের শেষ প্রান্তে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ফেলে আসা হয়। পাঁচ বছর তিন মাস ১৩ দিন পর তিনি মুক্তি পান।
তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১১ জন ভুক্তভোগীর নাম উল্লেখ করে আবেদনটি করা হয় বলে জানান সালাহউদ্দিন খান।
সালাহউদ্দিন খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভুক্তভোগীরা শেখ হাসিনাসহ ১৬ জন এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরো ৩০ থেকে ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে ন্যায়বিচারের আশায় আবেদন করেছেন। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, শুধু বিএনপি করার অপরাধে বিগত সরকারের নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাঁদের।

সোহাগের পরিবারের পাশে তারেক রহমান
বরগুনা প্রতিনিধি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে পুরান ঢাকায় নিহত ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম মনি। গতকাল রবিবার বিকেলে তিনি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের সোহাগের গ্রামের বাড়িতে যান। তিনি স্থানীয় কাকচিড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত সভায় বক্তব্য দেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে তিনি নিহত সোহাগের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।