প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে ধর্মীয় নেতারা সাংবাদিকদের বলেছেন, আমাদের দেশের সংখ্যালঘুরা নিরাপদে আছে, এ লক্ষ্যে সরকার যেমন কাজ করছে, ধর্মীয় নেতারাও নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধান উপদেষ্টাকে আমরা এই বার্তাটি দিতে চেয়েছি যে আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার বৈঠক করেছেন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতারা। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে এর আলোচ্য বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ধর্মীয় নেতারা।
ইসলামী বক্তা ও আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, অনেক গণ্যমান্য আলেম ও ধর্মীয় নেতা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে ছিলেন। প্রায় প্রত্যেকে বলেছেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ, দেশে সম্প্রীতি কেউ নষ্ট করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে আইনজীবী আলিফ হত্যাকাণ্ড এবং ফরিদপুরে মসজিদের দুই নির্মাণ শ্রমিককে নির্মমভাবে হত্যা করা হলেও গোটা দেশের মুসলমান অত্যন্ত ধৈর্য ও সংযমের পরিচয় দিয়েছেন।
আমরা এটিকে সাধুবাদ জানিয়েছি, ঠিক তেমনি এটি ধরে রাখবার সংগ্রামও চালিয়ে যাচ্ছি।’ শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের ব্যাপারে আমাদের আলাদাভাবে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। যারা বিভেদ দেখানোর চেষ্টা করছেন, তাদের কথায় বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না।’
রামকৃষ্ণ মিশনের মহাজন স্বামী হরি প্রেমানন্দ বলেন, ‘বৈঠকে ধর্মীয় সম্প্রীতির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা নিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চাই। এই সম্প্রীতি রক্ষার বিষয়েই আলোচনা হয়েছে।’
রমনা হরিচাঁদ মন্দিরের সহসম্পাদক অবিনাশ মিত্র বলেন, বাইরে থেকে বিভেদ ছড়ানো হচ্ছে। বাইরের রাষ্ট্র যাতে হিন্দুদের ওপর চড়াও না হয়।
সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার হলে ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের স্বার্থ হাসিল করতে পারবে না। প্রধান উপদেষ্টা সবার কথাই শুনেছেন। সে অনুযায়ী তিনি কাজ করবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
কাকরাইল চার্চের প্রধান ব্রাদার আলবার্ট রোজারিও বলেন, ‘এই মুহূর্তে দেশ কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ইসকনের ব্যাপারে হিন্দু ভাইদের মনে ক্ষোভ রয়েছে। সেই ক্ষোভ নিরসনে কাজ করতে প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি।’ এ সময় চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুর জামিনের ব্যবস্থা করার দাবিও জানান তিনি।
বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক সম্মেলন করার কথা বলেছি, যাতে বিভিন্ন সংস্থা ও মিশন জানতে পারে, এ দেশ সম্প্রীতির দেশ।’
বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয় বলেন, ‘সবাই যেন মিলেমিশে থাকে এবং সম্প্রীতির ঐতিহ্য বজায় থাকে। ভারতের মিডিয়া কী প্রচার করল, তা আমাদের দেখার বিষয় নয়।’
গারো পুরোহিত জনসন ম্রি বলেন, যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারকে সাহায্য করার কথাও জানান তিনি।
হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব জুনায়েদ আল হাবিব বলেন, ‘আইনজীবী হত্যার পর ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে পরাজিত শক্তি দেশে ঢুকতে চাইছে। এর বিরুদ্ধে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকব।’
হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব সাজিদুর রহমান বলেন, পাশের দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নেই। এ দেশে মুসলমান হত্যার পরও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়নি। দেশের সম্প্রীতির ব্যাপারে প্রচার করুন। দেশের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ রয়েছি।
ভারতীয় মিডিয়ার প্রপাগান্ডার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে
সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ার প্রপাগান্ডার বিরুদ্ধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, ‘অল্পদিনের মধ্যেই ফলাফল দেখতে পাবেন। বিদেশিদের সব অপপ্রচার আমরা সম্প্রীতি দিয়ে জয় করব।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা ফ্যাসিস্ট ছিলেন এবং গণ-অভ্যুত্থানে তিনি পালিয়েছেন, এই স্বীকৃতি ভারতকে আগে দিতে হবে। শেখ হাসিনার গণহত্যার স্বীকৃতি দিতে হবে আগে। এরপর ভারতের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হবে।’
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) ৯ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে হবে। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘এই বৈঠকে আমরা সাম্প্রতিক সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।’