ব্যাটারিচালিত রিকশা নিষিদ্ধের প্রতিবাদে গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে দীর্ঘ চার ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন সংশ্লিষ্ট মালিক-শ্রমিকরা। সকাল ১০টা থেকে এই অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে তীব্র যানজটে জনদুর্ভোগ দেখা দেয়। পরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমাধানের আশ্বাসে দুপুর সোয়া ২টায় ফিরে যান বিক্ষোভকারীরা।
ব্যাটারি রিকশা চালকদের আন্দোলন
সড়ক অবরোধে জনদুর্ভোগ
- ব্যাটারি রিকশা এক মাস চলবে : চেম্বার আদালত
নিজস্ব প্রতিবেদক

এদিকে ঢাকা মহানগরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ অথবা বিধি-নিষেধ আরোপে হাইকোর্টের আদেশে গতকাল এক মাসের স্থিতাবস্থা দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। এতে ঢাকা মহানগর এলাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আপাতত চলবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা সকাল ১০টা থেকে আগারগাঁও মোড়ে অবস্থান নেন। পরে তারা আগারগাঁও মোড় থেকে পরিকল্পনা কমিশন পর্যন্ত মূল সড়ক বন্ধ করে দেন।
সড়ক অবরোধের কারণে আগারগাঁও থেকে মিরপুর-১০, শ্যামলী, বিজয় সরণিসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে মিরপুর-১০ নম্বর চত্বর থেকে আগারগাঁওগামী যানবাহন ঘুরিয়ে দিতেও দেখা যায়।
বিক্ষোভকারীদের একজন মো. ফয়সাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা রিকশা চালাইয়া পরিবারের খাবারের জোগাড় করি। রিকশা কিনতে গিয়া কেউ জমি বা বাড়ির গরু বেইচ্যা দিছে।
বিক্ষোভকারী ইয়াসিন মোল্লা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একটা ব্যাটারি কিনতে ৩০ হাজার টাকা লাগে। পুলিশ ধরলে সেই ব্যাটারি নিয়া যায়। এইটা ছাড়াও সড়কে নানাভাবে আমরা পুলিশি হয়রানির শিকার। আমাগোর দাবি, পুলিশ য্যান আমাগোর হয়রানি না করে। আইনের মাধ্যমে আমরা রাজধানীর অলি-গলিতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানোর অনুমতি চাই। মূল সড়কে কোনো রিকশা উঠলে জেল-জরিমানার বিধান রাখা যাইতে পারে।’
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রিকশাচালকদের সঙ্গে আলাপকালে তারা এসব দাবি উপস্থাপন করেন। ভবিষ্যতে তারা (রিকশাচালক) যেন সড়কে পুলিশি হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে আশ্বস্ত করেন উপস্থিত ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে আদালতের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এবং জনভোগান্তি লাঘবে সড়ক থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ জানান। পরে পুলিশের আশ্বাসে দুপুর সোয়া ২টায় সড়ক ছেড়ে ফিরে যান বিক্ষোভকারীরা।
ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ‘আদালতের সিদ্ধান্ত না এলে আমি কোনো কথা বলতে পারব না। আপনারা বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। এরপর আমরা আবার আলোচনায় বসব।’
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, অটোভ্যান, ইজি বাইকচালক ও ইউনিয়নের নেতাদের উদ্দেশে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আপনারা একটা লিয়াজোঁ কমিটি করেন। তাদের মাধ্যমে আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে আবার বসব।’
এক মাসের স্থিতাবস্থা
ঢাকা মহানগরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ অথবা বিধি-নিষেধ আরোপে হাইকোর্টের আদেশে এক মাসের স্থিতাবস্থা দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। এই সময়ের মধ্যে হাইকোর্টকে এসংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে।
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চাওয়া সরকারের আবেদনে শুনানির পর গতকাল চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক এই আদেশ দেন। ফলে ঢাকা মহানগর এলাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আপাতত চলবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।
আদালতে সরকারের আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ ও অনিক আর হক, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদ উদ্দিন, নূর মুহাম্মদ আজমী ও আখতার হোসেন মো. আবদুল ওয়াহাব। রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এইচ এম সানজিদ সিদ্দিকী। আদালতের অনুমতি পাওয়ার পর নাগরিকদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
আদালতে সরকারের আবেদনের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে দেওয়া-না দেওয়ার বিষয়টি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। আমরা চাই এই বাহনটির চলাচল আইন ও নীতিমালার মধ্যে আসুক। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি। ফলে হাইকোর্টের আদেশটি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য স্থগিত করা হোক।’
পরে আইনজীবী সানজীদ সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত তিন মাস ধরে ঢাকার সড়কে যত্রতত্র ব্যটারিচালিত রিকশা চলছে। চলাচলকারী বেশির ভাগ রিকশার নিবন্ধন নেই, ফিটনেস নেই। এতে জনসাধারণের নিরাপদ সড়কের আকাঙ্ক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। গত ১৯ নভেম্বর অটো রিকশার ধাক্কায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী তার ক্যাম্পাসে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু আদালতের কনসার্ন ছিল, অটোরিকশাচালকদের জীবন-জীবিকা নিয়ে। লাখ লাখ মানুষ এই বাহন চালিয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন। তাই আদালত হাইকোর্টের আদেশের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা দিয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে রুল নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
ঢাকা মহানগর এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল তিন কার্যদিবসের মধ্যে বন্ধ করতে গত ১৯ নভেম্বর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি), ঢাকার জেলা প্রশাসক, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার, ট্রাফিক বিভাগের দুই যুগ্ম কমিশনারকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এর পরই রাস্তায় নামেন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা।
সম্পর্কিত খবর

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল
সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে আবারও ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে
বিশেষ প্রতিনিধি

প্রায় দুই দশক পর জাতীয় সমাবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আগামীকাল শনিবার ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সমাবেশ হবে। বৃহৎ পরিসরে আয়োজিত এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত দলটির নেতাকর্মীরা।
সমাবেশ উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জামায়াত।
তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মৌলিক সংস্কার জরুরি। কোনো ষড়যন্ত্র যেন এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। অংশ নেবেন ইসলামী দলগুলোর নেতারা, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা, জুলাই আন্দোলনে শহীদদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিরা।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে আমাদের দল নানা নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসের রাজনৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে বাকস্বাধীনতা ও সাংবিধানিক অধিকার কিছুটা ফিরে এসেছে।
তিনি জানান, নির্বাচন সামনে রেখে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে ফ্যাসিবাদী হামলায় নিহত ব্যক্তিদের বিচারে দৃশ্যমান অগ্রগতি চান তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে একটি ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াত। দলটির পক্ষ থেকে এ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।
জুলাই মাসে নিহত ও আহতদের পুনর্বাসন এখনো সম্পূর্ণ হয়নি বলেও দাবি করেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল।
তিনি জানান, সমাবেশ সফল করতে একটি বাস্তবায়ন কমিটিসহ আটটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। লিফলেট, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ছাড়াও ভ্রাম্যমাণ মাইক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে সমাবেশের প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
সমাবেশে থাকবে ২০টি পয়েন্টে প্রায় ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক। ঢাকার আশপাশ থেকে আগতদের জন্য ১৫টি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
সমাবেশস্থলের ভেতরে ও বাইরে ১৫টি মেডিক্যাল বুথ থাকবে, প্রতিটিতে থাকবেন দুজন করে চিকিৎসক, জরুরি ওষুধ এবং অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা থাকবে।
ড্রোন ও ক্যামেরার মাধ্যমে ভিডিও ধারণ ও সরাসরি সম্প্র্রচারেরও আয়োজন থাকবে—এলইডি স্ক্রিন ছাড়াও ফেসবুক ও ইউটিউবেও সম্প্রচার করা হবে।
সমাবেশের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলেও জানান গোলাম পরওয়ার।
সংবাদ সম্মেলন শেষে তিনি বলেন, ‘সারা দেশ থেকে মানুষ রেল, সড়ক ও নৌপথে সমাবেশে অংশ নিতে আসবে। এতে নগরবাসীর কিছুটা দুর্ভোগ হতে পারে। আমরা তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।’ তিনি জানান, সমাবেশ শুরু হবে দুপুর ২টায়। তবে সকাল ১০টা থেকেই সাংস্কৃতিক পরিবেশনা চলবে।
এ সময় গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনারও নিন্দা জানান গোলাম পরওয়ার। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ব্যর্থতার অভিযোগও করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের সাত দফা দাবিও তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো—অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ; সব গণহত্যার বিচার; মৌলিক রাষ্ট্রীয় সংস্কার; ‘জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র’ বাস্তবায়ন; ‘জুলাই শহীদ’ ও আহতদের পুনর্বাসন; পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন এবং এক কোটির বেশি প্রবাসী ভোটারের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মা’ছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, মোয়াযযম হোসাইন হেলাল, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, মতিউর রহমান আকন্দ, নূরুল ইসলাম বুলবুল, মো. সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।

তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোটার তালিকা (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এর মাধ্যমে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ পাবেন যোগ্য নাগরিকরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদে খসড়াটি অনুমোদন দেওয়া হয়। তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক।
সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ আহম্মদ বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায় বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, অর্থাৎ যাঁদের বয়স ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ১৮ বছর হয়, তাঁরা পরবর্তী জানুয়ারি মাসের হালনাগাদ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। নির্বাচন কমিশন প্রতিবছরের ২ জানুয়ারি ওই খসড়া ভোটার তালিকা এবং ২ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, পরবর্তী নির্বাচনের আগে যেসব নাগরিকের বয়স ১৮ বছর হয়, অর্থাৎ ভোটার হওয়ার জন্য যোগ্য হন, তাঁরা ওই নির্বাচনে ভোটাধিকারের সুযোগ পান না।
ফয়েজ আহম্মদ আরো বলেন, এই বাস্তবতায় নির্বাচন কমিশন ভোটের তফসিল ঘোষণার আগে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে যাঁরা ভোটার হওয়ার উপযোগী হন, তাঁদের ভোটার তালিকায় নিয়ে আসাকে যৌক্তিক মনে করে। এ বিষয়ে উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ধরুন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন। তার সর্বোচ্চ দুই মাস আগে তফসিল ঘোষিত হয়।
ফয়েজ আহম্মদ বলেন, ‘আজ যে অধ্যাদেশের খসড়াটি অনুমোদন করা হলো, এর ফলে যখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে, তার অন্তত এক মাস আগ পর্যন্ত যেসব ব্যক্তির বয়স ১৮ বছর হবে, তাঁরা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন।’
মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ : গতকাল সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন করেছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, অনেকের কিডনি ড্যামেজ হয়, অনেকে চোখে দেখতে পায় না, কর্নিয়া সংযোজন হলে অন্ধত্ব দূর করা যায়, এসব বিষয়ে বাংলাদেশের যে আইন ছিল সেটা অনেক দিন থেকে আপডেট হয়নি।
তিনি বলেন, নতুন এই অধ্যাদেশের ফলে অঙ্গ প্রতিস্থাপনটা খুব সহজ হবে। আগে যেমন ছিল অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য খুবই কাছের যেমন—ভাই, বোন, মা-বাবা থেকে নিতে পারতেন, এখন এটাকে একটু সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
অঙ্গ দান করার ক্ষেত্রে নতুন করে কাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, আগে যেমন ভাতিজা, ভাগিনা তারা অঙ্গ দান করতে পারত না। এখন তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, মানে পরিধি বাড়ানো হয়েছে।
প্রেস সচিব আরো বলেন, ‘এর ফলে আমরা মনে করি, বাংলাদেশের অনেককেই এখন কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের জন্য আর বিদেশে যাওয়া লাগবে না। বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোও এই সার্ভিস দিতে পারবে। আমরা মনে করি, এটা বাংলাদেশের জন্য যুগান্তকারী আইন।’
একই সভায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
গোয়েন্দা তথ্য ছিল, তবে এত পরিমাণ যে হবে সে তথ্য হয়তো ছিল না
নিজস্ব প্রতিবেদক

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রাকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি এখন অনেকটা শান্ত ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গোপালগঞ্জে গত বুধবার যে ঘটনা ঘটেছে, সে সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য ছিল কি না, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গোয়েন্দা তথ্য ছিল। তবে এত পরিমাণ যে হবে, ওই তথ্য হয়তো ছিল না।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা এসব তথ্য জানান।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গতকাল (বুধবার) এনসিপির সমাবেশে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার পর গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তিনি বলেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৫ জনকে আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এ ঘটনায় আমাদের ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে এনসিপি নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে এ বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ভবিষ্যতে আর যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, যত দিন পর্যন্ত সব অপরাধী ধরা না পড়বে, তত দিন পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। উপদেষ্টা এ সময় গোপালগঞ্জের ঘটনা লাইভ করায় সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট টিভি চ্যানেলগুলোকে ধন্যবাদ জানান। এর আগে উপদেষ্টা রাজধানীর রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে গোপালগঞ্জের ঘটনায় আহত পুলিশ সদস্যদের শারীরিক অবস্থা দেখতে যান।

আ. লীগ আমলের ৯৬ পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল
নিজস্ব প্রতিবেদক

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিবন্ধিত ৯৬টি পর্যবেক্ষক সংস্থার সব নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. শরিফুল আলম।
তিনি বলেন, নতুন নীতিমালা জারি করা হয়েছে এবং আগের নীতিমালা বাতিল হয়েছে। তাই আগের নীতিমালার অধীন নিবন্ধিত সব পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল হয়ে গেছে।
২০২৩ সালে দুই দফায় ৯৬ সংস্থাকে নিবন্ধন দিয়েছিল তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ নিবন্ধন দেওয়া হয়। এসব সংস্থার বেশির ভাগই ছিল নতুন। আগে কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা ছিল না।
একাধিক সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ছিল। সে সময় বেশ কিছু অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন পেতে উৎসাহ বোধ করেনি বা আবেদন করলেও নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সে সময় ব্যাপক সমালোচনা হয়।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে স্বচ্ছতা আনতে আগের সব পর্যবেক্ষক সংস্থাকেই বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে নতুন করে নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়। গতকাল সেই নতুন নীতিমালা-২০২৫ জারি ও ২০২৩ সালের নীতিমালা বাতিল করা হয়েছে। ফলে আগের নীতিমালা অনুসারে নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর নিবন্ধনও বাতিল করা হয়েছে।