ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫
২৬ আষাঢ় ১৪৩২, ১৪ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫
২৬ আষাঢ় ১৪৩২, ১৪ মহররম ১৪৪৭
সাক্ষাৎকারে সাবেক কূটনীতিক সাকিব আলী

দূতাবাসগুলোকে প্রটোকল অফিস বানিয়েছিলেন শেখ হাসিনা

  • গণ-অভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার সরকারের সময় রাষ্ট্রদূতসহ দূতাবাসের কর্মীরা কখনো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেননি। কারণ শেখ হাসিনা দূতাবাসগুলোকে ক্ষমতাসীন দলের প্রটোকল অফিস হিসেবে দেখতেন। সম্প্রতি কালের কণ্ঠকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন সাবেক কূটনীতিক সাকিব আলী। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন তৌফিক হাসান
শেয়ার
দূতাবাসগুলোকে প্রটোকল অফিস বানিয়েছিলেন শেখ হাসিনা
সাকিব আলী

কালের কণ্ঠ : অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। এই সংস্কার নিয়ে আপনার  মতামত কী?

সাকিব আলী : চলতি বছর অর্থনীতিতে নোবেল পাওয়া অধ্যাপক ড্যারন আসেমোগলু তাঁর এক লেখায় বলেছেন, সরকার যদি প্রতিনিধিত্বশীল না হয় তাহলে দেশের উন্নয়ন হয় না। আমরা এখন রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে গণতন্ত্র, নির্বাচনসহ অনেক কিছুর কথাই বলতে পারি। তবে রাষ্ট্র সংস্কারের সবচেয়ে বড় বিষয় হলো সরকারকে প্রতিনিধিত্বশীল হতে হবে।

এটা কিন্তু আমরা এখনো বের করতে পারিনি যে কিভাবে সরকার প্রতিনিধিত্বশীল হবে। এর ফলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এখনো প্রতিনিধিত্বশীল হয়ে ওঠেনি।

 

কালের কণ্ঠ : তাহলে কি আপনি এই সংস্কারকাজে সমন্বয়ের কোনো ঘাটতি দেখছেন?

সাকিব আলী : হ্যাঁ, সমন্বয়ের অনেক ঘাটতি রয়েছে। এই সরকার প্রতিনিধিত্বশীল সরকার নয় বলে সমন্বয়ের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।

এর কারণ এই সরকারের বেশির ভাগ উপদেষ্টা এনজিও খাতে কাজ করে এসেছেন। এনজিওগুলো কী করে? তাদের জবাবদিহি কি জনগোষ্ঠীর কাছে, নাকি ডোনারের (দাতা) কাছে? এ ছাড়া এই সরকারের লক্ষ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি কোনোটাই ঠিক নেই। তারা যান্ত্রিকভাবে সব কিছু দেখছে। তাই এখানে সমন্বয়ে সমস্যা হবেই।

 

কালের কণ্ঠ : অনেক গুরুত্বপূর্ণ খাতে সংস্কারের চেষ্টা চলছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কী ধরনের সংস্কার প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?

সাকিব আলী : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নীতি ও গবেষণা বিষয়ক অনুবিভাগ রয়েছে। সেটি এখন ‘ডাম্পিং’-এ রূপান্তরিত হয়েছে। এখানে নতুন নতুন পরিকল্পনা যুক্ত করতে হবে। পরিকল্পনাগুলো যেন বাস্তবায়ন করা হয় তার ব্যবস্থাও করতে হবে।

আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর কখনো এই চিন্তা ছিল না যে আমরা কিভাবে আরো ভালো নীতি ও পরিকল্পনা তৈরি করতে পারি। আমাদের মন্ত্রণালয়ে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। এ ছাড়া আমাদের রাষ্ট্রদূতদের বিদেশি ডিগ্রি থাকা উচিত, গলফ খেলতে পারা উচিত, যাতে তাঁরা বাইরে গিয়ে বাংলাদেশকে ঠিকমতো উপস্থাপন করতে পারেন। আমাদের রাষ্ট্রদূতরা যেসব দেশে কাজ করেন সেসব দেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি দেখা করতে পারেন না। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্রদূতদের তো সেই ক্ষমতা দিতে হবে, যাতে তাঁরা যেকোনো বিষয়ে ওই সব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করতে পারেন। এ ধরনের কোনো পরিকল্পনাই আমরা করছি না।

 

কালের কণ্ঠ : আপনি রাষ্ট্রদূতদের ক্ষমতা ও শিক্ষা নিয়ে বললেন। কিন্তু গত ১৫ বছর কিংবা এখন কি রাষ্ট্রদূতরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন?

সাকিব আলী : রাষ্ট্রদূতসহ দূতাবাসে যাঁরা কাজ করেন তাঁরা কখনো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেননি। বিদেশে আমাদের তিনটি কাজ করতে হয়। প্রথমত, দেশকে এমনভাবে বিদেশের কাছে উপস্থাপন করা, যাতে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি ভালো হয়। দ্বিতীয়ত, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের দেখাশোনা করা। তৃতীয়ত, ওই দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অন্য কার্যক্রম বৃদ্ধি করা। কিন্তু শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোকে ক্ষমতাসীন দলের প্রটোকল অফিস হিসেবে দেখতেন। বিষয়টা এমন যে এখানে (ঢাকায়) যে সিদ্ধান্ত হবে দূতাবাসগুলোকে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। এর ফলে আমাদের দেশে বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা যতটুকু ক্ষমতাবান ছিলেন, বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতরা ততটা ক্ষমতাবান ছিলাম না। শুধু শেখ হাসিনা নয়, বিএনপির সময়ও দূতাবাসগুলোকে একইভাবে ব্যবহার করা হতো।

 

কালের কণ্ঠ : আপনি বলছেন, গত ১৫ বছর রাষ্ট্রদূতসহ দূতাবাসগুলোর কেউ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেননি। কর্মজীবনে আপনি কোন ধরনের অন্যায় বা বৈষম্যের শিকার হয়েছিলেন? আপনি কি আবারও কর্মক্ষেত্রে ফিরতে চান?

সাকিব আলী : আমি আর কর্মক্ষেত্রে ফিরতে চাই না। দেশের একটি বিশেষ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আমি পদত্যাগ করেছি। শেখ হাসিনার সরকার আমাকে রাখতে চেয়েছিল। ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত হিসেবে পাঠাতে চেয়েছিল। আমার সঙ্গে কখনো কোনো অন্যায় বা বৈষম্য করা হয়নি।

 

কালের কণ্ঠ : আপনি বলছেন আপনার সঙ্গে বৈষম্য করা হয়নি, তাহলে কোন প্রেক্ষাপটে আপনি কর্মজীবন ছেড়ে ‘ইনফ্লুয়েন্সার’ বা প্রভাবকের ভূমিকায় এলেন? এখন কি সেই প্রেক্ষাপট বদলেছে?

সাকিব আলী : আমি যখন প্রভাবকের ভূমিকা পালন করা শুরু করেছিলাম, তখন যে প্রেক্ষাপট ছিল বর্তমানে তা অনেক বদলেছে। এক ধরনের আধ্যাত্মিক কারণে আমি প্রভাবকের ভূমিকায় এসেছি। যখন পদত্যাগ করি তখন আমি লিখেছিলাম, আমি শেখ হাসিনার অধীনে আর কাজ করতে পারব না। এটি লেখার পর আমার আর পেছনে ফেরার পরিস্থিতি ছিল না। আমি আমার পরিবারকে বলেছিলাম, তোমরা বিদেশে চলে যাও, আমি আর যাচ্ছি না। আমি এখানেই থেকে গেলাম। আমার মধ্যে দায়বদ্ধতা তৈরি হয়েছে। তাই আমাকে সব সময় কথা বলতে হবে এবং আমি তাই করব।

 

কালের কণ্ঠ : বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে কতটা প্রভাব ফেলতে পেরেছেন বলে মনে করেন?

সাকিব আলী : সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারিনি। তবে দুর্নীতির সঠিক তথ্য তুলে ধরেছি, সত্য তুলে ধরেছি। সত্য কথাটা ছড়িয়ে গেছে। মানুষের ভাবনার সঙ্গে মিলে গেছে। ওই সময়টায় মানুষ কথা বলতে পারত না। ওই সময়টায় আমরা কয়েকজন কথা বলার চেষ্টা করেছি। এভাবেই আমরা জনমত তৈরি করতে পেরেছিলাম।

 

কালের কণ্ঠ : বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ছাত্র-জনতা-শ্রমিক এবং নিহতদের পরিবারের জন্য সরকার যে কার্যক্রম পরিচালনা করছে তা যথেষ্ট  বলে মনে করেন কি? এই কার্যক্রমে আপনি সন্তুষ্ট?

সাকিব আলী : আমি এই কার্যক্রমে অসন্তুষ্ট। স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে একবার সাক্ষাৎ করার সুযোগ পেয়েছিলাম আমি। তাঁকে আমার অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছি। আমি বলেছি, আপনি বলছেন তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, কিন্তু কোনো বাজেট দেননি। যেহেতু বাজেট দেননি, তার মানে আপনার কাছে এটি অগ্রাধিকারমূলক কাজ নয়।

 

কালের কণ্ঠ : গণ-আন্দোলনে হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারকাজ হাতে নিয়েছে। অনেকে সংবিধান পুনর্লিখন করতে বলছেন। সংবিধান সংস্কার নাকি পুনর্লিখন, কোনটি প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?

সাকিব আলী : বাহাত্তরের সংবিধানকে আমি এক ধরনের ষড়যন্ত্রের দলিল হিসেবে দেখি। এই দলিল দিয়ে আওয়ামী লীগ একজনের হাতে সব ক্ষমতা, স্বাধীন বিচার বিভাগ ধ্বংস এবং আমলাদের ক্ষমতাসীন দলের অধীন করে রেখেছিল। ফলে সংবিধান পুনর্লিখন নাকি সংস্কার হবে—এটি ইস্যু নয়, ইস্যু হচ্ছে চূড়ান্ত ফলাফলটা কী হবে। আমি দেখব চূড়ান্ত ফলাফল জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতে পারে কি না।

 

কালের কণ্ঠ : বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করছে। আপনি কি এর সঙ্গে একমত?

সাকিব আলী : আমি চাই না দ্রুত নির্বাচন হোক। আগে সব কটি সংস্কার কমিটির কাছ থেকে সংস্কারের প্রস্তাব আসুক। তার ভিত্তিতে এই সরকারকে একটা সুন্দর ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। বর্তমান সরকার যেমন অনেক কাজ করতে পারছে না, আবার বেশ কিছু কাজ তারা করেছেও। ফলে দেশের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে না।

কালের কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।

সাকিব আলী : কালের কণ্ঠকেও ধন্যবাদ।

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ আজ

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হবে আজ বৃহস্পতিবার। দুপুর ২টা থেকে যেকোনো মোবাইলে এসএমএস, শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট এবং নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফল জানতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এই ফল প্রকাশের মাধ্যমে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৯ লাখ শিক্ষার্থীর অপেক্ষার অবসান হবে।

এ বছর আগের মতো ফলাফল প্রকাশের কোনো আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না।

তবে আন্ত শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে দুপুর ২টায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সম্মেলনকক্ষে সাংবাদিকদের কাছে ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।

শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার গতকাল বলেছেন, এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তরে আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না। দুই মাসের কম সময়ের মধ্যেই সব বোর্ডের ফলাফল প্রকাশিত হচ্ছে। সব বোর্ড নিজেদের মতো করে ফল প্রকাশ করবে।

 

যেভাবে জানা যাবে ফল : যেকোনো মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল জানতে মোবাইলের এসএমএস অপশনে গিয়ে ঝঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে পরীক্ষার বছর লিখে তা ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে ফল জানিয়ে দেওয়া হবে।

দাখিলের ফল পেতে উধশযরষ লিখে স্পেস দিয়ে গধফ লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২৫ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। কারিগরি বোর্ডের ক্ষেত্রে ঝঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে ঞবপ লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে ২০২৫ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে।

শিক্ষা বোর্ডগুলোর সমন্বিত ওয়েবসাইট  http://www.educationboardresults.gov.bd -এর মাধ্যমে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল জানা যাবে। আন্ত শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি জানিয়েছে, ওয়েবসাইটে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, পরীক্ষার নাম, বছর ইনপুট দিয়ে ও শিক্ষা বোর্ড সিলেক্ট করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করে ফল জানা যাবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় নিয়মিত-অনিয়মিত মিলিয়ে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন শিক্ষার্থী। দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয় দুই লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন।

ফল প্রকাশের পর তা পুনর্নিরীক্ষণের সময়ও জানিয়েছে আন্ত শিক্ষা বোর্ড। ১১ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। আবেদন পদ্ধতি শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট এবং টেলিটক বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে আজ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।

 

মন্তব্য
ভারতীয় জেনারেলের দাবি

চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশের জোট ভারতের নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলতে পারে

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশের জোট ভারতের নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলতে পারে

ভারতের প্রতিরক্ষা সর্বাধিনায়ক (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান বলেছেন, চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ নিজেদের স্বার্থে একে অন্যের প্রতি ঝুঁকছে। এই ঘনিষ্ঠতা ভারতের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। গত মঙ্গলবার ভারতের চিন্তক প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অনিল চৌহান এ কথাগুলো বলেন।

জেনারেল চৌহান বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনৈতিক সংকট বহিরাগত শক্তিদের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ করে দিচ্ছে।

ঋণ-কূটনীতির সাহায্যে প্রভাব বিস্তারের মধ্য দিয়ে তারা ভারতের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। পাশাপাশি ঘন ঘন সরকার পরিবর্তন এবং সেই সঙ্গে তাদের আদর্শচ্যুতি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।

জেনারেল চৌহান বলেন, এই প্রবণতা ভারতের জন্য বড় এক সমস্যা। সম্প্রতি চীনের কর্মকর্তারা সে দেশে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সম্মেলনে মিলিত হয়েছিলেন।

তিনটি দেশই নিজেদের স্বার্থে একে অন্যের কাছাকাছি আসছে। এই নৈকট্য ভারতের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে তাঁর ধারণা।

চীন ও পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা বহু পুরনো। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদল, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগ এবং তাঁর ভারতে আশ্রয়লাভ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

এই পরিস্থিতিতে চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশের কাছাকাছি আসা জেনারেল চৌহানকে সন্দিহান করে তুলেছে। তিনি মনে করছেন, এই তিন দেশের ঘনিষ্ঠতা ভারতের চিন্তা বাড়াতে পারে। স্থিতিশীলতার পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে।

অনুষ্ঠানে সিডিএস জেনারেল চৌহানকে পাকিস্তান-ভারত সাম্প্রতিক সংঘাতের সময় চীনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। জবাবে তিনি বলেন, ওই সংঘাতে পাকিস্তানকে চীন কতটা ও কিভাবে সমর্থন দিয়েছে, সহায়তা করেছে, তা বলা খুবই কঠিন।

ওই সংঘাতের সময় উত্তর সীমান্তে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা যায়নি।

জেনারেল চৌহান বলেন, তবে ঘটনা হলো পাকিস্তান তাদের প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের বেশির ভাগটাই চীন থেকে নেয়। সে কারণে পাকিস্তানে চীনের উপস্থিতি থাকার কথা। বিশেষ করে সংঘাত ও সংঘর্ষের সময়। সেটা কতটা ছিল এবং সমর্থন বা সহায়তার চরিত্র কেমন ছিল, তা বলা সহজ নয়।

অপারেশন সিন্দূর নাম দিয়ে পাকিস্তানে হামলার প্রসঙ্গে ভারতের উপসেনাপ্রধান লে. জেনারেল রাহুল আর সিং অবশ্য গত শুক্রবার বলেছিলেন, সংঘাতের সময় পাকিস্তানকে চীন শুধু সাহায্যই করেনি, সংক্ষিপ্ত ওই যুদ্ধকে তারা তাদের অস্ত্রের পরীক্ষাগার করে তুলেছিল।

ওই কর্মকর্তার দাবি, ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান ওই যুদ্ধে যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে, সেগুলোর ৮১ শতাংশই চীনের তৈরি। সেসব অস্ত্র প্রকৃত যুদ্ধের সময় কতটা কার্যকর, সে পরীক্ষাও চীন করে ফেলেছে। ওই সংঘাতকে চীন তার অস্ত্রসম্ভারের পরীক্ষাগার হিসেবে ব্যবহার করেছে। সূত্র : ডেকান হেরাল্ড

 

 

মন্তব্য
গণ-অভ্যুত্থানে মানবাধিকার লঙ্ঘন

বিচার আইসিসিতে পাঠানোর অনুরোধ অ্যামনেস্টিরf

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
বিচার আইসিসিতে পাঠানোর অনুরোধ অ্যামনেস্টিরf

২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনা আইসিসিতে পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এ আহ্বান জানিয়েছে ব্রিটেনভিত্তিক এই মানবাধিকার সংগঠন।

গতকাল বুধবার সংগঠনটির সাউথ এশিয়া বিষয়ক ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এসংক্রান্ত একটি পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনার বিচার রোম সনদের ১৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

গতকাল বুধবার ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে আন্দোলনকারীদের ওপর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি গুলির নির্দেশের একটি ফোনকল নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত সব অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

এর আগে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের একটি তথ্য-উপাত্তভিত্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে আন্দোলন চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে প্রায় এক হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই সহিংসতায় নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কর্তৃক ব্যবহৃত ধাতব পেলেটযুক্ত অস্ত্রের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন।

এ ছাড়া হাজার হাজার মানুষ গুরুতর ও স্থায়ীভাবে আহত হয়েছেন।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের ব্যবস্থা করা এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে একটি ন্যায্য বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে সব অপরাধীকে জবাবদিহির আওতায় আনা।

 

 

মন্তব্য

সরকারের উদ্যোগেই জুলাই ঘোষণাপত্র, ইতিবাচক বিএনপি

    দায়িত্বে আছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা দু-এক দিনের মধ্যে মতামত জানাবে বিএনপি
হাসান শিপলু
হাসান শিপলু
শেয়ার
সরকারের উদ্যোগেই জুলাই ঘোষণাপত্র, ইতিবাচক বিএনপি

ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে আবার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই অংশ হিসেবে প্রধান কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) চাপের মুখে সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে।

এর আগে কয়েক দফা ঘোষণাপত্র দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি।

তবে এবারের উদ্যোগকে বিএনপি বেশ ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও মনে করছেন, এ বিষয়ে দ্রুত একটি ঐকমত্য হওয়া প্রয়োজন।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ঘোষণাপত্রের একটি খসড়া সম্প্রতি তাদের দলের একজন শীর্ষ নেতার কাছে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গত দুই দিন দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করা হয়।

ঘোষণাপত্রটি কার্যকরের সময়কালসহ কয়েকটি বিষয়ে বিএনপির দ্বিমত আছে।

ঘোষণাপত্রে ১৯৭২ সালের সংবিধান উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় সংশোধন, পুনর্লিখন বা প্রয়োজনে বাতিল করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করার কথা বলা আছে। এ বিষয়ে বিএনপির আপত্তি রয়েছে। দলটি পরবর্তী সংসদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংবিধান সংশোধনের পক্ষে থাকলেও সংবিধান বাতিল করে তা পুনর্লিখনের বিপক্ষে।

সরকারসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে ঘোষণাপত্রের খসড়া প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিএনপির একজন শীর্ষ নেতার কথা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, এ নিয়ে অগ্রগতি হচ্ছে। খসড়া ঘোষণাপত্র তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এ যৌথ প্রচেষ্টার জন্য আরো মতামত দরকার, যাতে এটি ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য হয় এবং জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারে।

সরকারের পক্ষ থেকে একটি খসড়া ঘোষণাপত্র পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, সরকারের খসড়া ঘোষণাপত্রের ওপর ভিত্তি করে গত ফেব্রুয়ারিতে আমরা মতামত দিয়েছিলাম। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আর যোগাযোগ করা হয়নি। এখন আবার একটি খসড়া দেওয়া হয়েছে। আমরা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে মতামত জানাব।

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর গণ-অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারী সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হঠাৎ করে এই ঘোষণাপত্রের বিষয়টি সামনে আনে। তখন এর প্রভাব কী হতে পারে, তা বুঝতে চাইছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ঘোষণাপত্রের পক্ষে-বিপক্ষে তর্কবিতর্কের পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিতে এক ধরনের উত্তাপ তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে সরকার থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সরকার সর্বদলীয় বৈঠক করে, কিন্তু তাতে ঐকমত্য হয়নি। ওই সময় বিএনপি এত দিন পর ঘোষণাপত্রের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এরপর গত ১৬ জানুয়ারি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই ইস্যুতে সরকারের কার্যক্রম ধীরগতিতে চলতে থাকে।

সম্প্রতি এনসিপি জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে আবার সরব হয়ে ওঠে। গত ৪ জুলাই দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঠাকুরগাঁওয়ে এক পথসভায় এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জুলাই-আগস্টের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি এও বলেন, এই ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক ভিত্তি থাকবে। অন্যথায় তাঁদের পক্ষ থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দেওয়া হবে বলে সরকারকে সতর্ক করেন নাহিদ। 

সরকারসংশ্লিষ্ট একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলেন, ঘোষণাপত্রের মূল অংশীজন হলো বিএনপি ও এনসিপি। তাদের মধ্যে ঐকমত্য হলে দ্রুত ঘোষণাপত্র দেওয়া যাবে।

ঘোষণাপত্রে উল্লেখযোগ্য যা আছে : খসড়া ঘোষণাপত্রে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থান, ওয়ান-ইলেভেনের প্রেক্ষাপট এবং ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিষয় তুলে ধরা হয়। কোন পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়, সে বিষয়টিও উঠে আসে। 

এতে ১৯৭২ সালের সংবিধানের কাঠামোগত দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগের কথাও বলা হয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থতা এবং গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকারিতা ক্ষুণ্ন করার কথাও তুলে ধরা হয়। 

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকার সাংবিধানিকভাবে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে মত প্রকাশ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করার ফলে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার বিপ্লব সংগঠিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র, মত প্রকাশ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাা পুনঃপ্রবর্তনের পথ সুগম হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক কালের কণ্ঠকে বলেন, স্বাধীনতা-উত্তর সিপাহি-জনতার বিপ্লব বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আবার ওয়ান-ইলেভেনের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। মূলত তখন থেকে শেখ হাসিনার একচ্ছত্র ক্ষমতা, আধিপত্য ও কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদের পথ সুগম হয়। এই বিষয়গুলো যুক্ত করার ফলে ঘোষণাপত্র বেশ সমৃদ্ধ হয়েছে।

খসড়ায় স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে জনতার অবিরাম সংগ্রাম এবং এর মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থান এবং পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ সৃষ্টির বিষয়টিও উঠে আসে।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ধারাবাহিক তিনটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে।

তবে বিএনপি নেতাদের কয়েকজন ২০০৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনকেও এর সঙ্গে যুক্ত করার পরামর্শ দেন দলীয় ফোরামে।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে বলা হয়, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বলে প্রদত্ত সুপ্রিম কোর্টের মতামত অনুসারে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকার অনুমোদিত হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা : গত মঙ্গলবার এবং গতকাল বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খসড়া ঘোষণাপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ করে কিছুটা সংযোজন-বিয়োজন করে বিএনপি তাদের মতামত দিয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বিএনপি এ বিষয়ে তাদের মতামত সরকারকে জানাবে।

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

 

আরো যেসব বিষয়ে আলোচনা : মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্ক আরোপ, নারী আসন, নির্বাচনে পিআর পদ্ধতিসহ সংস্কারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ মার্কিন শুল্ক আরোপের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি। একই সঙ্গে এই শুল্কনীতি পুনর্বিবেচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে দলটি।

জানা গেছে, বৈঠকে সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের প্রতিবেদন তুলে ধরেন সালাহউদ্দিন আহমদ। এরপর সংস্কারের বিভিন্ন ইস্যুতে মতামত দেন বিএনপি নেতারা। ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এর মধ্যে সংসদে নারীদের আসন ৫০ থেকে ১০০-তে উন্নীত করার ব্যাপারে রাজনৈতিক ঐকমত্য হয়েছে। তবে তাঁরা কিভাবে নির্বাচিত হবেন, সে ব্যাপারে এখনো ঐকমত্য হয়নি। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, তাঁরা প্রচলিত পদ্ধতিতে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নির্বাচিত করার পক্ষে অবস্থান নেবেন। পাশাপাশি কোনোভাবেই পিআর পদ্ধতি মানবেন না তাঁরা।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ