সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও ধ্বংসাত্মক কাজে জড়িতদের বিষয়েও ধারণা দেওয়া হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। তাদের খুঁজে বের করে গ্রেপ্তারের কথাও বলেন। সরকার থেকে গত রবিবার পর্যন্ত ১৪৭ জনের মৃত্যুর তথ্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে আরো তিনজনকে যুক্ত করায় মোট সংখ্যা এখন ১৫০।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বৈঠক শেষে কালের কণ্ঠকে বলেন, চলমান কারফিউর বিষয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এসংক্রান্ত বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কোনো নির্দেশনাও দেননি। চলমান পরিস্থিতি নিয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেই।
নিহতদের স্মরণে আজ দেশব্যাপী শোক
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে আজ মঙ্গলবার দেশব্যাপী শোক পালন করবে সরকার। শোক পালনের অংশ হিসেবে কালো ব্যাজ ধারণ করা হবে। মসজিদে দোয়া মাহফিল এবং মন্দির-গির্জা-প্যাগোডায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে। সরকারি-বেসরকারি সব নাগরিক এই কর্মসূচি পালন করতে পারবে। গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। পরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বৈঠকের এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান।
মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। বৈঠকে কোটা আন্দোলন নিয়ে যে পরিস্থিতি হয়েছিল, সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। পরে এ নিয়ে আলোচনা হয়। সেই আলোচনার ভিত্তিতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় এবং আগামীকাল (আজ) দেশব্যাপী শোক পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকারি সব নাগরিক এই কর্মসূচি পালন করতে পারবে। তবে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৬৫%
চলতি বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল থেকে জুন) মন্ত্রিসভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৬৫ শতাংশ। মন্ত্রিসভা বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে ২০২৪ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক (এপ্রিল-জুন) প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
মন্ত্রিপরিষদসচিব জানান, গত এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সাতটি মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়। এতে ৬০টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে ৩৯টি। সে অনুযায়ী এই হার ৬৫ শতাংশ। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকে চারটি নীতি বা কর্মকৌশল, ৯টি চুক্তি বা প্রটোকল অনুমোদিত হয়েছে এবং সংসদে চারটি আইন পাস হয়েছে।
মাহবুব হোসেন বলেন, ‘২০০০ সালে শেখ হাসিনা যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তিনি একটি নির্দেশনা দিয়েছিলেন, ব্রিটিশ আমলে যেসব আইন করা হয়েছিল সেগুলো যেন পর্যায়ক্রমে আমরা বাংলায় রূপান্তর করি। যেসব আইনের প্রয়োজন নেই, সেই আইনগুলো যেন আমরা বাতিল করি। পরে ২০১৫ সালে তিনি আবার সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। ২০২৪ সালে দ্বিতীয় সভায় এ রকম একটি নির্দেশনা দিয়েছিলেন। নির্দেশনা পাওয়ার পর আমরা সিরিয়াসলি এটি নিয়ে এনগেজ হই। আমরা ২৪৪টি আইন চিহ্নিত করি, যেগুলো ব্রিটিশ আমলে করা হয়েছিল। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে এর মধ্যে ২৫টি বাতিল করা হয়েছে। ১৯৯টির আসলে কিছুই হয়নি। কোনটি কোন মন্ত্রণালয় করবে, এটি নিয়ে একটা অস্পষ্টতা ছিল। এবার মন্ত্রিসভা থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা লেজিসলেটিভের মাধ্যমে এগুলো এক্সারসাইজ করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে ভাগ করে দেব, যাতে দ্রুত কাজটি শেষ হয়।’
ভারতের সঙ্গে বিমান চলাচল চুক্তি সংশোধন
মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের বিমান চলাচলের একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ছিল, সেটি ১৯৭৮ সালে করা। এখন দুই দেশ সম্মত হয়েছে যে এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইকাও) নতুন একটি ফরম্যাট তৈরি করেছে চুক্তির জন্য। সেই ফরম্যাট অনুযায়ী দুই দেশ চুক্তি সইয়ের জন্য সম্মত হয়েছে। শর্ত একই আছে, ফ্রিডমসহ যেটা আগেও ছিল। চুক্তিটি নতুন ফরম্যাটের জন্য শুধু অনুমোদন চাওয়া হয়েছে, মন্ত্রিসভায় সেটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ভিসা ছাড়াই থাইল্যান্ড যেতে পারবেন বাংলাদেশের অফিশিয়াল পাসপোর্টধারীরা। এ জন্য একটি চুক্তি অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে অফিশিয়াল পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ভিসা ছাড়াও তারা ৩০ দিন সেখানে অন অ্যারাইভাল ভিসা নিতে পারবে, এটার চুক্তি হয়েছে। আগে ২৯টি দেশের সঙ্গে ছিল, এ নিয়ে আমাদের ৩০টি দেশ হলো।’
মহেশখালী-কুতুবদিয়া সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন
নাম পরিবর্তন করে ‘মহেশখালী-কুতুবদিয়া সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রস্তাবিত নাম ছিল ‘মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন-২০২৪’। গতকাল এটি পরিবর্তন করে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মাহবুব হোসেন বলেন, গত ১৭ এপ্রিল মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনের নীতিগত অনুমোদন হয়। মহেশখালীতে যে উন্নয়ন হচ্ছে, ওখানকার কার্যক্রম যাতে সমন্বয় করা যায়, সে জন্য অথরিটি করা হয়েছিল। নীতিগত অনুমোদনের পর চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে। তবে সামান্য পরিবর্তন আছে। আগে নাম ছিল ‘মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’। এখন প্রস্তাব করা হয়েছে ‘মহেশখালী-কুতুবদিয়া সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’। কুতুবদিয়া শব্দটি যোগ হবে। কারণ যে জমির এলাকা নিয়ে এই অথরিটি হবে, সেখানে কুতুবদিয়ার জমি আছে।