ঢাকা, শুক্রবার ১১ জুলাই ২০২৫
২৭ আষাঢ় ১৪৩২, ১৫ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শুক্রবার ১১ জুলাই ২০২৫
২৭ আষাঢ় ১৪৩২, ১৫ মহররম ১৪৪৭

সারা দেশে কারফিউ, সেনা মোতায়েন

  • নৈরাজ্য করলে দুর্বৃত্তদের দেখামাত্রই গুলির নির্দেশ। শুক্রবারের সংঘাতে নিহত ৩৯। বহু স্থাপনা ও যানবাহনে আগুন, ভাঙচুর
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সারা দেশে কারফিউ, সেনা মোতায়েন
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঢুকে রাজধানীতে গতকাল ব্যাপক সহিংসতা চালায় দুর্বৃত্তরা। তাদের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। রামপুরা এলাকা থেকে তোলা। ছবি : শেখ হাসান

কোটাবিরোধী আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট অরাজক পরিস্থিতি মোকাবেলায় গতকাল শুক্রবার মধ্যরাত থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি করেছে সরকার। একই সঙ্গে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর রাত ১২টা থেকেই কারফিউ শুরু হয়েছে।

নৈরাজ্য করলে দুর্বৃত্তদের দেখামাত্রই গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গণভবনে ১৪ দলের বৈঠকের পর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, সংঘাত নিরসনে জেলা প্রশাসকদের অধীনে কাজ করবে সেনাবাহিনী। জরুরি পরিষেবা কারফিউয়ের আওতামুক্ত থাকবে। নৈরাজ্য করলে দুর্বৃত্তদের দেখামাত্রই গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, প্রথম ধাপে আজ শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত কারফিউ চলবে। দ্বিতীয় ধাপে আজ দুপুর ২টা থেকে আগামীকাল রবিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত চলবে।

কারফিউ ও সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে গত রাতেই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

সেখানে বলা হয়েছে, অ্যাম্বুল্যান্স ও সংবাদপত্রসহ জরুরি পরিষেবা কারফিউয়ের আওতামুক্ত থাকবে। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। ফ্লাইটের যাত্রীদের চলাচলের সময় সঙ্গে টিকিট রাখতে হবে।

এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ঢুকে দুর্বৃত্তরা গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনেও সহিংস হয়ে উঠলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। রাত ৮টা পর্যন্ত পাওয়া খবরে সারা দেশে সংঘর্ষে ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

আহত হয়েছে দুই হাজারের বেশি। এর মধ্যে অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়েছে। অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বহু স্থাপনা ও যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রাজধানীর সড়কে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুব বেশি দেখা যায়নি। তবে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকের উপস্থিতি দেখা গেছে।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সরকারবিরোধীদের হাতে চলে গেছে। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের সমর্থক সন্ত্রাসীরা জ্বালাও-পোড়াও ও সহিংসতা চালাচ্ছে।

অন্যদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের একাধিক সমন্বয়ক দাবি করেছেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাঁদের ব্যানার ব্যবহার করে কেউ যদি রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে চায়, ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড, জ্বালাও-পোড়াও করতে চায়, এটা তাঁরা সমর্থন করবেন না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সার্জিস আলম গণমাধ্যমকে বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন অরাজনৈতিক। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের অপচেষ্টা আমরা সমর্থন করি না। 

গতকাল নিহত ৩৯ জনের মধ্যে ঢাকায়ই ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া সিলেটে দুজন, রংপুরে দুজন, বগুড়ায় একজন, কক্সবাজারে একজন, মাদারীপুরে একজন, নরসিংদীতে একজন এবং ময়মনসিংহে একজন নিহত হয়। পুলিশ ও বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ নিয়ে গত চার দিনে ৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ঢাকা মহনগরীতে সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। কিন্তু এসব উপেক্ষা করে রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ চলে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। একাধিক জায়গায় সাউন্ড গ্রেনেড, গুলি ও টিয়ার শেলের শব্দ শোনা যায়। মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পুরনো ভবনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। মালিবাগ থেকে শান্তিনগর পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় আগুন দেওয়া হয়। রাজধানীর বনশ্রীর পিবিআই কার্যালয়, মিরপুর-১০ নম্বর মেট্রো রেলের সিঁড়িতে আগুনের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ঢুকে দুর্বৃত্তরা গতকাল নরসিংদীতে কারাগার ভেঙে পাঁচ শতাধিক আসামি ছিনিয়ে নিয়েছে। কারাগারের অস্ত্র ও মালপত্র লুট হয়েছে। কারাগারের জেল সুপার আবুল কালাম আজাদ এই তথ্য জানিয়েছেন। এ ছাড়া নরসিংদী জেলা পরিষদ ভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। মাধবদী পৌরভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে।

রাজধানীতে সকাল ১১টার পর থেকে এই সংঘর্ষ শুরু হয়ে দিনব্যাপী চলে। কোথাও কোথাও পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে মাঠে নামা দুর্বৃত্তদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে তাদের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনা ঘটে। এতে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, রামপুরা, বাড্ডা, পল্টন, মালিবাগ, শান্তিনগর, কাকরাইল, বাটা সিগন্যাল, এলিফ্যান্ট রোড, মোহাম্মদপুর, মিরপুর-২, মিরপুর-১০, মিরপুর-১১, সাভারসহ বিভিন্ন স্থানে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। 

ঢাকার বাইরে সিলেট, মুন্সীগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জের ভৈরব, হবিগঞ্জের বানিয়াচং, মাদারীপুর, পঞ্চগড়, নীলফামারী, বগুড়া, চট্টগ্রাম, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ একাধিক স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

গতকাল শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত সংঘর্ষে নিহত ২২ জনের লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে রাখা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীবাজার এলাকায় সংঘর্ষে নিহত হন কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক (২৩)। মিরপুর ১০-এর সংঘর্ষে নিহত হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ শিক্ষার্থী আকরাম খান রাব্বি (২৫), যাত্রাবাড়ী এলাকায় মোবারক (৩২) ও  আব্দুল মাজিদ (১৮), আফতাবনগরের মোহাম্মদ রাজিব হোসেন (২২), মুগদা এলাকার জাফর হাওলাদার (৪৫), যাত্রাবাড়ী এলাকার অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি (২৫), বাড্ডার আব্দুল গণি (৪৫), বাড্ডা লিংক রোডের সোহাগ (২০), পল্টন এলাকায় পাবেল (২৫), গত বৃহস্পতিবার আজিমপুরে সংঘর্ষে আহত ব্যাংকার মো. দুলালসহ আরো কয়েকজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির লাশ রাখা হয়েছে, যাঁরা চলমান সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন। 

রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গেও পাঁচজনের লাশ রয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, দুপুর পর্যন্ত ১৯৩ জন আহত রোগী চিকিৎসা নিলেও বিকেল নাগাদ তিন শ ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে দেড় শর মতো অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। মারা গেছেন চার-পাঁচজন। আরো কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে, তবে সঠিক সংখ্যা বলা যাচ্ছে না।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে কবি নজরুল কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী জিহাদ নিহত হয়েছেন। তিনি ছাত্র অধিকার পরিষদের কবি নজরুল কলেজের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। গতকাল সাভার বাসস্ট্যান্ডে সংঘর্ষে আলামীন (২২) নামের এক যুবক মারা গেছেন। গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের নিরাপত্তাকর্মী জুয়েল মোল্লা (৩২) দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হয়েছেন। 

সিলেট নগরের বন্দরবাজার এলাকায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষে এ টি এম তুরাব নামের এক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। তিনি স্থানীয় দৈনিক জালালাবাদে কর্মরত ছিলেন। সিলেটের বন্দরবাজার এলাকায় দায়িত্ব পালনকালে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় আহত হয়েছে পুলিশসহ শতাধিক ব্যক্তি।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে সংঘর্ষে পুলিশের স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত শিক্ষার্থী মারা গেছেন। তাঁর নাম রুদ্র সেন। তিনি কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড পলিমার সায়েন্স বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক তমিজ উদ্দিন।

বগুড়ায় গতকাল বিকেলে স্টেশন রোডে দফায় দফায় মিছিলের চেষ্টা করেছে আন্দোলনকারীরা। তবে পুলিশের বাধায় বারবার ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় তারা। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আন্দোলনকারীরা আবারও সমবেত হলে পুলিশের গুলিতে একজন আহত হয়। তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে বগুড়া নার্সিং হোমে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মরদেহ হাসপাতালেই রয়েছে।

কক্সবাজারে গত বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষে আহত এহসান হাবিব (২২) নামের একজন গতকাল চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। তিনি বিআরবি কেবলের কর্মী ছিলেন। তাঁর বাড়ি চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী গ্রামে। মাদারীপুর সদরের খাগদী এলাকায় আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে রুমান ব্যাপারী (৩২) নামের একজন পথচারী নিহত হয়েছেন। 

ময়মনসিংহ নগরের মিন্টু কলেজ এলাকায় গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে সরকারবিরোধী ও সরকার সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ভাঙচুরের সময় রেদোয়ান হাসান সাগর (১৮) নামের এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে।

রংপুরেও চলমান সংঘর্ষে দুজনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নগরীর গণেশপুরে সংঘর্ষে মিলন মিয়া (২৬) নামের এক দোকান কর্মচারী এবং কাচারিবাজার এলাকায় সাজ্জাদ (২৮) নামের এক পথচারী নিহত হয়েছেন। নরসিংদীর মাধবদীতে সংঘর্ষে শাওন নামের একজন আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি সংঘর্ষ

গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা, বনশ্রীসহ মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের আশপাশ এলাকা, মহাখালীর রেলগেটকেন্দ্রিক কাঁচাবাজার ও মিরপুর এলাকায় বেশি তাণ্ডব চালায় দুর্বৃত্তরা। এসব এলাকায় হতাহতের ঘটনাও বেশি। প্রতিটি এলাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সড়কের পাশের দোকানেও আগুন দিয়েছে হামলাকারীরা। তারা থানাও ঘেরাও করেছে। এসব এলাকায় পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে হামলাকারীদের। এতে সকাল থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত একটি শিশু, ব্যাংক কর্মকর্তাসহ ১৪ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

 

রামপুরা থেকে বাড্ডায় ব্যাপক সহিংসতা

সকাল থেকে রাজধানীর রামপুরা, বনশ্রী, মেরুল বাড্ডা, উত্তর ও মধ্যবাড্ডা, শাহজাদপুরসহ ভাটারা থানার আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেয় কয়েক শ লোকজন। তাদের হাতে ছিল লাঠি, রডসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম। এ সময় তাদের আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ ছিল। তারা সাউন্ড গ্রেনেডের পাশাপাশি টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এতে অন্তত দুই শতাধিক লোকজন আহত হয়। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে শিক্ষার্থী ছিল কম। এ সময় বিক্ষোভকারীদের মধ্যে উঠতি কিশোর ছিল বেশি। তারা রামপুরা ব্রিজের পুলিশ ফাঁড়িতে অবস্থানকারী পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্য করে ইট ও পাথর ছুড়তে থাকে। তখন পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছুড়তে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বনশ্রীতে বিক্ষোভকারীদের অবস্থান ছিল বেশি। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ব্যাপকভাবে ইট ও পাথর ছুড়তে থাকে। সেই সঙ্গে তারা সড়কে টায়ার ও বাঁশের খুঁটিতে আগুন ধরিয়ে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। এভাবে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলতে থাকে। বিক্ষোভকারীরা হাতিরঝিলের আশপাশেও আগুন দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এ সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হেলিকপ্টার থেকেও বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়। এতে কয়েক শ লোক আহত হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য কের গুলিও করে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে অনেকে হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যায় বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

বিক্ষোভকারীরা সড়কের আইল্যান্ডের লোহার ব্যারিকেড ভেঙে সড়কে রেখে দেয়। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম নিয়ে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করে। তখন পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছোড়ে।

 

পল্টনে বিক্ষোভ

গতকাল জুমার পর রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড় থেকে দৈনিক বাংলার মোড় পর্যন্ত ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। এ সময় একজন যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। আহত হয় অনেকে। তবে তাত্ক্ষণিকভাবে নিহত যুবকের পরিচয় জানা যায়নি। এ সময় ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা ডেইলি অবজারভারের আজিজুর রহমান মিলন, খবরের কাগজের মাসুদ পারভেজসহ (ফটোগ্রাফার) বেশ কয়েকজন দায়িত্ব পালনকালে আহত হয়েছেন। অন্যদিকে পুরানা পল্টন থেকে বিজয়নগর পর্যন্ত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীসহ শিশুও ছিল।

এদিকে রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত চারজন গুলিবিদ্ধসহ অনেকে আহত হয়। গতকাল সকাল থেকে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের পাশাপাশি বসিলা, শিয়া মসজিদ ও আশপাশের এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা মোহাম্মদপুর থানা ঘেরাওয়েরও চেষ্টা করে। তারা সড়কের বিভিন্ন সরঞ্জামে আগুন দেয়।

চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট ও বাদুড়তলা সড়কে গতকাল পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের সময় মো. ওসমান নামের এক দোকান কর্মচারী গুলিবিদ্ধ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বিকেল সাড়ে ৫টায় শুরু হওয়া এই সংঘর্ষ রাতেও চলছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষে চারজন আহত হয়ে চমেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। পরে তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে যায়। হাসপাতালের পরিচালক ব্রি. জে. তসলিম উদ্দিন এই তথ্য জানিয়েছেন।

সারা দেশে কারফিউ, সেনা মোতায়েন

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে মাঠে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হয়েছেন ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক মেহেদী। তাঁর মরদেহ আনতে গতকাল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী নিপা, কোলে তাঁদের শিশুকন্যা নিশা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম

 

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

স্থায়ী কমিটির বৈঠক

ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক নয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চায় বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক নয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চায় বিএনপি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে নয় বিএনপি। এটিকে রাজনৈতিক দলিল হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির বিষয়ে মত দিয়েছে দলটি। গত বুধবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। এরই আলোকে ঘোষণাপত্রের ওপর বিএনপির মতামতে এই দলিলকে আর্কাইভে (সংরক্ষণ) রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকে বিএনপির কাছে পাঠানো জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া নিয়ে দলীয় মতামত চূড়ান্ত করতে বুধবার রাতে স্থায়ী কমিটির এ বৈঠক হয়। ওই রাতেই খসড়ায় প্রয়োজনীয় সংযোজন-বিয়োজন এনে তাতে চূড়ান্ত মতামত দিয়েছে বিএনপি। বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

জানা গেছে, বৈঠকে বিএনপি নেতারা বলেছেন, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান সংবিধানে স্থান দেওয়া হলে তাতে ভবিষ্যতে জটিলতা বাড়তে পারে।

কেউ কেউ নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানকেও সংবিধানে রাখার দাবি তুলতে পারে। এ জন্য তাঁরা রাজনৈতিক দলিল হিসেবে রাষ্ট্রীয় আর্কাইভে ২০২৪ সালের ঘোষণাপত্র সংরক্ষণের পক্ষে মত দিয়েছেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এই ঘোষণাপত্র সংবিধানে যুক্ত করার দাবি তোলে।

স্থায়ী কমিটি বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন নেতা বলেন, খসড়া ঘোষণাপত্র ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর বলা হলেও বিএনপি তাতে দ্বিমত জানিয়েছে।

গণ-অভ্যুথানের ১১ মাস পর এসে এই ধরনের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। বৈঠক সূত্র জানায়, খসড়ার শুরুতে উল্লিখিত বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের এ ভুখণ্ডের মানুষ স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যুগের পর যুগ সংগ্রাম করেছিল এবং এর ধারাবাহিকতায় পাকিস্তান আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ১৯৪৭ সাল থেকে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল’—এই অংশ অপ্রয়োজনীয় বিবেচনা করে তা বিএনপি বাদ দিয়েছে।

দলটির নেতারা বলেছেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধে গৌরবময় বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেই স্বাধীনতাযুদ্ধকেই প্রধান অর্জন হিসেবে উল্লেখ করে ঘোষণাপত্র শুরু হওয়া উচিত।

খসড়া ঘোষণাপত্রে আছে, যেহেতু পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন শাসনামলের রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিনির্মাণের ব্যর্থতা ও অপর্যাপ্ত ছিল এবং এ কারণে বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও শাসকগোষ্ঠীর জবাদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা যায়নি’—বিএনপি এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন শাসনামলের জায়গায় আওয়ামী শাসনামলের কথা উল্লেখ করেছে।

  খসড়ায় এক-এগারোসংশ্লিষ্ট প্রসঙ্গে ক্ষমতার সুষ্ঠু রদবদলের রাজনৈতিক ব্যর্থতার সুযোগে কথাগুলো পরিবর্তন করে দেশি-বিদেশি চক্রান্তের সুযোগে লেখার মতামত দিয়েছে  বিএনপি।

এ ছাড়া দলটি ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনর্লিখন বা প্রয়োজনে বাতিল করার অভিপ্রায় বাদ দিয়ে সংবিধানের বিদ্যমান সংস্কার উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় সংশোধন করার পক্ষে মত দিয়েছে। জানা গেছে, ঘোষণাপত্রের খসড়া থেকে সেকেন্ড রিপাবলিক প্রসঙ্গটি বাদ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত জানুয়ারি মাসে প্রস্তুত করা ঘোষণাপত্রের খসড়ার শেষ অংশে সেকেন্ড রিপাবলিক কথাটি উল্লেখ ছিল। জানা গেছে, এর বাইরেও খসড়ায় আরো কিছু শব্দগত সংযোজন-বিয়োজন করেছে বিএনপি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে চেয়েছিল। এ ঘোষণাপত্র নিয়ে তখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা তৈরি হয়। হঠাৎ ঘোষণাপত্রের বিষয়টি কেন সামনে আনা হলো, এর প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন ওঠে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং তখন এ উদ্যোগের সঙ্গে সরকার সম্পৃক্ত নয় বলে উল্লেখ করেছিল। অবশ্য পরে ৩০ ডিসেম্বর রাতে জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানিয়েছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওই রাতে বৈঠক করে ৩১ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে মার্চ ফর ইউনিটি (ঐক্যের জন্য যাত্রা) কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। ওই কর্মসূচি থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়।

এর মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়। বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো তখন ওই খসড়ার ওপর তাদের মতামত দেয়। পরবর্তী সময়ে ছাত্রদের দেওয়া সময়সীমা শেষ হওয়ার পরদিন গত ১৬ জানুয়ারি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই ইস্যুতে সরকারের কার্যক্রম ধীরগতিতে চলতে থাকে। এনসিপি সম্প্রতি সরকারকে আগামী ৩ আগস্টের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। অন্যথায় তাদের পক্ষ থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয়।

সরকার ও রাজনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যেই জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। আর এটি চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে।

এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সরকার যে প্রস্তাব দিয়েছিল, আমরা তার ওপর মতামত গতকাল (বুধবার) দিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধকালে প্রবাসী সরকার একটা ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে সব কার্যক্রম চালিয়েছে। কিন্তু ৭২-এর সংবিধানে তা অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ২৪-এর মহত্ত্ব ও গুরুত্বের প্রতি বিএনপি যথাযথ মর্যাদা দেয়। সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ও বর্তমান সরকারকে বৈধতা দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু ঘোষণাপত্র সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ নেই।

 

মন্তব্য
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক

ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস স্থাপনের খসড়া অনুমোদন

বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস স্থাপনের খসড়া অনুমোদন

ঢাকায় তিন বছরের জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের একটি মিশন স্থাপনের বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের ৩৩তম বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। জানা গেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের ভিত্তিতে বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়-এর মিশন স্থাপনসংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত ২৯ জুন ওই খসড়া উপদেষ্টা পরিষদে তোলা হলে তাতে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।

ওই দিন এক সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছিলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক যে অফিস ওএইচসিএইচআর, সে অফিসের একটা মিশন শাখা বাংলাদেশে ওনারা খুলতে চাইছিলেন। এ লক্ষ্যে ওনারা আলোচনা করছিলেন। এ আলোচনার একটা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এর সমঝোতা স্মারক, সেটা উপদেষ্টা পরিষদের সভায় নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিষয়টি নিয়ে হেফাজতে ইসলামসহ একাধিক সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এদিকে অতিবৃষ্টির কারণে সম্প্রতি ফেনী ও নোয়াখালী জেলায় সৃষ্ট বন্যা ও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আলোচনা হয়েছে। সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারা বন্যা ও তদ-পরবর্তী গৃহীত ব্যবস্থা নিয়ে তাঁদের মতামত ও করণীয় তুলে ধরেন।

বৈঠকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে মুসাপুর রেগুলেটর ও বামনি ক্লোজারের নকশা চূড়ান্তকরণ, ফেনীতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প চূড়ান্তকরণ এবং নোয়াখালীর খাল ও ড্রেনেজ অবমুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে আলোচনা হয়।

এর পাশাপাশি, দুর্যোগ মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এই দুই জেলার ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত, তীর প্রতিরক্ষা ও পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে বলেও উপদেষ্টামণ্ডলীকে জানানো হয়। সভায় দুই জেলায় চলমান বন্যা ও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতিতে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা তুলে ধরা হয়।

বৈঠকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও মহেশখালী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নতুন অধ্যাদেশ অনুমোদনের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি প্রস্তাব পাস হয়।

বৈঠকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করা হয়, যা লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিংয়ের পর কার্যকর হবে।

আন্তর্জাতিক পরিসরে গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশ জাতিসংঘের অপশনাল প্রোটোকল টু দ্য কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট টর্চারে (ওপি-ক্যাট) পক্ষভুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

প্রটোকলটি ২০০২ সালে গৃহীত হয়, যার লক্ষ্য হলো নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক অথবা মর্যাদা হানিকর আচরণ বা শাস্তির বিরুদ্ধে সুরক্ষা জোরদার করা। বাংলাদেশ ১৯৯৮ সালেই মূল কনভেনশনের পক্ষভুক্ত হয়েছিল। এবার প্রোটোকলে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে সেই প্রতিশ্রুতি আরো শক্তিশালী করা হলো।

মালয়েশিয়ার জোহর বাহরুতে বাংলাদেশের একটি নতুন কনস্যুলেট জেনারেল স্থাপনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়।

বৈঠকে মহেশখালীকে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়নের আওতায় আনতে মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা ও বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

 

মন্তব্য
মির্জা ফখরুল

দেশের মানুষ নির্বাচন চায়, তাহলে কেন হবে না?

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
দেশের মানুষ নির্বাচন চায়, তাহলে কেন হবে না?

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশে কেন নির্বাচন হবে না? দেশের মানুষ নির্বাচন চায়। নির্বাচিত প্রতিনিধি চায়। এ জন্য তারা জীবন দিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতার পরিবর্তন হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনাসভায় তিনি এসব কথা বলেন। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনাসভাটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।

অনুষ্ঠানে গত ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধীসহ জুলাই আন্দোলনে শহীদ ৬৪ জন সাংবাদিকের ওপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন ডিইউজের সহসভাপতি রাশেদুল হক। বিএফইউজের প্রয়াত সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর পরিবার এবং জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ছয় সাংবাদিকের পরিবারের হাতে সম্মাননা তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব।

আলোচনাসভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বেশির ভাগ মানুষ মনে করেন নির্বাচন হবে না।

তাঁর এই বক্তব্যের জবাবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমি খুব আশাবাদী মানুষ। অনেকে বলেছেন যে, হবে না। কেন হবে না? নির্বাচন তো এ দেশের মানুষ চায়, নির্বাচনের জন্য তো এ দেশের মানুষ প্রাণ দিয়েছে।

কারণ মানুষ একটি নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব চায় পার্লামেন্টের মধ্য দিয়ে। এ জিনিসগুলো নিয়ে আমি মনে করি কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হলো, যত দ্রুত সম্ভব আমরা সংস্কারের কাজগুলো শেষ করে নির্বাচিত সরকারের দিকে যাওয়া, গণতন্ত্র উত্তরণের পথে যাওয়া। আমরা সোজা কথায় বিশ্বাস করি লিবারেল ডেমোক্রেসিতে। আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতার পরিবর্তন হবে।
সেই নির্বাচিত সরকারই দেশ চালাবে ও সমস্যাগুলোর সমাধান করবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সব কাজ গুছিয়ে ফেলতে তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) নির্দেশ দিয়েছেন। এটা অত্যন্ত ইতিবাচক ব্যাপার। আমরা আশা করব, নির্বাচন কমিশন এই কাজ খুব দ্রুততার সঙ্গে শেষ করে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবেন। আমরা দাবি করছি, যেন এই নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আপনাদের কি মনে হয় দেশে নির্বাচন হবে? অনেক মানুষ জিজ্ঞেস করে, নির্বাচন কি হবে? গতকাল প্রেস সেক্রেটারি যে বক্তব্য রাখলেন, তাতে কি মনে হয় নির্বাচন হবে? বেশির ভাগ মানুষ মনে করে নির্বাচন হবে না। তাহলে কী হবে? আমাদের ভাবনার দরকার আছে।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আওয়ামী লীগ তো নেই, দুঃশাসন কি বিদায় নিয়েছে? না। আমাদের আত্মতৃপ্তির কিছু নেই। আমাদের সামনে এখনো ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো বিরাজমান। রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বত্র ফ্যাসিবাদের প্রেতাত্মারা, দিল্লির আধিপত্যের কালো থাবা চতুর্দিকে ছেয়ে বসছে। ব্যবসা-বাণিজ্য-রাজনীতি-আন্তর্জাতিক নীতি-কূটনীতি ইভেন সামনের নির্বাচনে জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে কিভাবে ধুলায় মিশিয়ে দেওয়া যায় তার চক্রান্ত এখনো বিদ্যমান।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, স্বৈরাচার পালিয়েছে। কিন্তু স্বৈরাচারী মানসিকতা বিরাজমান। আজকেও যদি দেখেন, এটা যদি না হতে পারে, ওটা হতে পারবে না। এ রকম বক্তব্য দিচ্ছেন আমাদের তরুণ নেতৃত্বের কতিপয় নেতা। আপনি আপনার চাহিদা বলতেই পারেন, এটা আপনার স্বাধীনতা। কিন্তু আপনি এটা বলতে পারেন না যে, এটা না হলে, ওইটাও হবে না। এই অধিকার আপনার নেই। এই মানসিকতা আর স্বৈরাচারের মানসিকতা একই।

তিনি বলেন, ৬৪ জন সাংবাদিক শহীদ হয়েছেন। মাহমুদুর রহমান, শফিক রেহমানের মতো বয়োজ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা নিগৃহীত হয়েছেন। সংগ্রামের সম্পাদক আসাদ ভাই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শুধু লেখনীর কারণে। এখনো তো আপনাদের কণ্ঠে একই ধরনের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এটি কি ঠিক?

বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, গত ১৭ বছরে সাংবাদিকদের ভূমিকা বর্তমান সরকার স্বীকার করতে চায় না। এই সরকারের যারা সুবিধাভোগী, তারা এক-দেড় মাস লড়াই করেছেন। আমরা সাংবাদিকরা ১৭টি বছর ঢাকার রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি, অনেকে খুন হয়েছেন। তারপর স্বৈরাচারী সরকারের চূড়ান্ত পতনের জুলাই বিপ্লব এসেছে। সেখানে শুধু পেশাজীবী নয়, সাংবাদিকদেরও অবদান রয়েছে। আজকে মাঝে মাঝে কিছু শিশুকে দেখি সাংবাদিকদের হুমকি দিতে। তোমরা দেড় মাসের নেতা। আমরা ১৭ বছর লড়াই করে ফ্যাসিবাদের তক্ততাউস কাঁপিয়ে তুলেছিলাম। দেড় মাস নেতৃত্ব দিয়ে, ১৭ বছরের সংগ্রামকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তোমরা সাংবাদিকদের হুমকি দাও, এটা মেনে নেব না।

অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠ সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ বলেন, একটা ফ্যাসিবাদের ভাষা আমরা দেখতে পাচ্ছি। এটার নিন্দা করছি। মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ, হুমকি দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ করছি, সেটা খুবই অমঙ্গলসূচক। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। কোনোভাবে মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে, হুমকি দিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করা যায় না।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ইলিয়াস খান, এ কে এম মহসিন, ইরফানুল হক জাহিদ, সাঈদ খান, দিদারুল আলম, খন্দকার আলমগীর হোসেন ও প্রবাসী সাংবাদিক ইমরান আনসারী প্রমুখ।

মন্তব্য

‘ক্ষমা’ পেতে পারেন সাবেক আইজিপি

মেহেদী হাসান পিয়াস
মেহেদী হাসান পিয়াস
শেয়ার
‘ক্ষমা’ পেতে পারেন সাবেক আইজিপি

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিচার শুরু হয়েছে। এ মামলায় অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হতে আবেদন করেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।

গতকাল বৃহস্পতিবার চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আবেদনটি মঞ্জুর করে তাঁকে সাক্ষী হিসেবে গণ্য করে সাক্ষ্য উপস্থাপনের অনুমতি দেন। এর পরই প্রশ্ন উঠেছে, মামুন কি রাজসাক্ষী হয়েছেন? হয়ে থাকলে তিনি ট্রাইব্যুনালের কাছ থেকে কী প্রতিকার পাবেন বা পেতে পারেন?

 

মামুনের দোষ স্বীকার

রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রধানমন্ত্রী পদে থেকে অপরাধ করায় শেখ হাসিনাকে এই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে।

প্রসিকিউশনের দাবি, শেখ হাসিনা ছিলেন জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মাস্টারমাইন্ড। ফলে অপরাধের সর্বোচ্চ দায় শেখ হাসিনারই। এ মামলায় সহ-আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। অপরাধ সংঘটনের সময় তিনি রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশের সর্বোচ্চ পদে ছিলেন।
তিন আসামির মধ্যে মামুনই একমাত্র গ্রেপ্তারকৃত আসামি। গতকাল মামলার অভিযোগ গঠনের আদেশের আগে তাঁকে ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় তোলা হয়। এরপর বিচারিক কাজ শুরু হলে ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী আমলে নেওয়া পাঁচ অভিযোগ পড়ে শোনান। অভিযোগ পড়া শেষ হলে বিচারক মোহিতুল আসামি মামুনকে সরাসরি জিজ্ঞেস করেন, উত্থাপিত অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি নিজেকে দোষী না নির্দোষ মনে করেন।
তখন সাবেক আইজিপি মামুন দাঁড়িয়ে বলেন, আমি দোষ স্বীকার করছি। এই মামলাসংশ্লিষ্ট প্রকৃত সত্য ও সমস্ত পরিস্থিতি স্বেচ্ছায় সম্পূর্ণ প্রকাশ করতে চাই। এরপর এই আসামিকে মামলার সাক্ষী এবং তাঁর বক্তব্য সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ। একই সঙ্গে আরজি জানান, আবেদনটি মঞ্জুর করা হলে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ট্রাইব্যুনাল যেন তাঁকে কারাগারে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। ট্রাইব্যুনাল তখন আবেদনটি মঞ্জুর করে সাবেক আইজিপি মামুনকে সাক্ষী হিসেবে তাঁর বক্তব্য উপস্থাপনের অনুমতি দেন।

 

রাজসাক্ষী নিয়ে যা বলা আছে ট্রাইব্যুনাল আইনে? 

এই মামলায় তিন আসামির বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি বা ঊর্ধ্বতনের নির্দেশনার দায়সহ হত্যা, হত্যা চেষ্টা, ব্যাপক মাত্রায় পদ্ধতিগত হত্যা, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণ, সংঘটিত অপরাধ প্রতিরোধ না করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এসব অপরাধের বিচার হচ্ছে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে। আইনটির ১৫ ধারায় একজন রাজসাক্ষীর ক্ষমা বিষয়ে বলা আছে। ধারার ১ উপধারায় বলা হয়েছে, বিচারের যেকোনো পর্যায়ে, ধারা ৩-এ উল্লিখিত যেকোনো অপরাধের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত বা গোপনে জড়িত বলে মনে করা হয় এমন যেকোনো ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণের উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল, অপরাধের সাথে সম্পর্কিত তার জ্ঞানের মধ্যে থাকা সম্পূর্ণ পরিস্থিতি এবং সংশ্লিষ্ট অন্য সকল ব্যক্তির কাছে, প্রধান বা সহায়তাকারী হিসেবে সম্পূর্ণ এবং সত্য প্রকাশ করার শর্তে, এই ক্ষমা প্রদান করতে পারে।

২ উপধারায় বলা আছে, এই ধারার অধীনে অভিযোগ গ্রহণকারী প্রত্যেক ব্যক্তিকে বিচারে সাক্ষী হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর ৩ উপধারায় বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই ব্যক্তিকে হেফাজতে আটক রাখা হবে বলা আছে।

 

রাজসাক্ষী হলে আইনের শর্ত পূরণ করতে হবে : রাজসাক্ষী হতে চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মামুনের আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, এই মামলায় আদালত তাঁকে সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। সাক্ষ্য-জেরার পর আদালত যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে তিনি সব সত্যি বলেছেন, কোনো কিছু গোপন করেননি বা তাঁর সাক্ষ্যের পর প্রকৃত সত্য উদঘাটন হয়েছে, তখন আদালত তাঁকে রাজসাক্ষী হিসেবে স্বীকৃতি দেবেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ১৫ ধারায় যেসব শর্তের কথা বলা আছে, সেই সব শর্ত তাঁকে পূরণ করতে হবে। শর্ত পূরণ করতে পারলে ট্রাইব্যুনাল তাঁকে রাজসাক্ষী হিসেবে ঘোষণা করবেন। রাজসাক্ষী হতে পারলে ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার আছে তাঁর অপরাধ ক্ষমা করার।

প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম বলেন, আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন দোষ স্বীকার করেছেন ট্রাইব্যুনালের কাছে। তিনি বলেছেন, এই মামলার সম্পূর্ণ সত্যি এবং সব পরিস্থিতি তুলে ধরতে চান। এই মর্মে একটি আবেদনও দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদনটি মঞ্জুর করেছেন এবং মামলার সাক্ষী হিসেবে তাঁর বক্তব্য উপস্থাপনের অনুমতি দিয়েছেন।

 

ট্রাইব্যুনালে রাজসাক্ষী হওয়ার এটিই প্রথম নজির : প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম বলেন, ফৌজদারি অপরাধের মামলায় রাজসাক্ষী হওয়ার অসংখ্য উদাহরণ থাকলেও আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের ইতিহাসে আর কোনো আসামি রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেননি। মামুনকে কারাগারে আলাদা সেলে রাখা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু তিনি অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করে রাজসাক্ষী হতে চেয়েছেন এবং যেসব আসামির বিরুদ্ধে তিনি বলতে পারেন বা তাঁর বক্তব্যে যেসব আসামির সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে, সেসব আসামি তাঁকে বায়াস (পক্ষে আনার) করার চেষ্টা করতে পারেন, তাঁর নিরাপত্তার ঘাটতি হতে পারে, এই জন্য কারাগারে তিনি যেন আইসোলেটেড (বিচ্ছিন্ন) থাকেন অর্থাৎ আলাদা সেলে রাখা হয়, সেই আবেদন করেছেন। আবেদনটি মঞ্জুর করা হয়েছে। কারাগারে আলাদা সেলে থাকলেও সাবেক আইজিপি হিসেবে মামুন যে ডিভিশন সুবিধা পেয়ে আসছিলেন, তার বাইরে বাড়তি কোনো সুবিধা তিনি পাবেন না বলেও জানান প্রসিকিউটর তামিম।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ