ঢাকা, রবিবার ০৩ আগস্ট ২০২৫
১৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৮ সফর ১৪৪৭

ঢাকা, রবিবার ০৩ আগস্ট ২০২৫
১৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৮ সফর ১৪৪৭
বিতর্কিত রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর

ওয়াকফ জমি দখল করে গড়ে তোলেন লাকি পার্ক

মনিরুজ্জামান, নরসিংদী
মনিরুজ্জামান, নরসিংদী
শেয়ার
ওয়াকফ জমি দখল করে গড়ে তোলেন লাকি পার্ক

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মরজাল এলাকার সিএস, এসএ ও আরএস রেকর্ডে জমির মালিক সবর আলী মোল্লা ও সিফর আলী ফকির। ১৯৮৯ সালের ২২ নভেম্বর তাঁদের বাবা মো. সায়েব আলী ফকিরের নামে মাজার নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২০৫ শতাংশ জমি ওয়াকফ করেন। সেই মাজারের দলিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত খাদেম মো. শাহাজ উদ্দিন। ২০০৪ সালে ওই মাজার জোর করে দখলে নেন রাজস্ব কর্মকর্তা ড. মতিউর রহমানের স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকি।

আর সেখানেই গড়ে তোলেন ওয়ান্ডার পার্ক, যা স্থানীয়ভাবে লাকি পার্ক নামে পরিচিত।

মাজারের খাদেম মো. শাহাজ উদ্দিনের ছেলে আশরাফুল আলম মুখলেছ কালের কণ্ঠকে বলেন, মাজার, সামাজিক কবরস্থান কোনো কিছুই রেহাই পায়নি রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর ও তাঁর স্ত্রী লাকির কাছ থেকে। সব দখল করেছেন। কেউ আপত্তি করলে তাদের নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে কিংবা মামলা দিয়ে শায়েস্তা করেছেন।

সায়েব আলী ফকিরের মাজারটি তাঁরা জাল কাগজপত্র তৈরি করে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ২০০৪ সালে জোর করে দখল করে নিয়েছেন। প্রতিবাদ করেও কাজ হয়নি। উল্টো হামলার শিকার হতে হয়েছে আমাদের।

 

স্বামীর অবৈধ অর্থে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হলে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ দেখান আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতারা।

তবে কৌশলে সবাইকে হটিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন লায়লা কানিজ লাকি। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, লায়লার স্বামী এনবিআর কর্মকর্তা ড. মতিউর রহমানের অবৈধ অর্থের জোরে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুস ছাদেক ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে পদটি শূন্য হয়। পরে স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজিউদ্দিন রাজুর সহযোগিতায় প্রথমে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নিয়ে নিজেকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ঘোষণা দেন লায়লা। ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ উপজেলা চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ হয়।

পরে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নও বাগিয়ে নিতে সক্ষম হন লায়লা কানিজ লাকি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাঁর চেয়ারম্যান হওয়ার স্বপ্নে বাদ সাধেন প্রতিদ্বন্দ্বী ছয় প্রার্থী। এক পর্যায়ে অর্থের জোরে প্রভাব বিস্তার করে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন অন্য ছয় প্রার্থীকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারে বাধ্য করে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন লায়লা।

 

নানা ছিলেন রাজাকার, নাতনির নামে সরকারি সড়ক

জানা গেছে, স্থানীয় মরজাল কাজী মো. বশির উচ্চ বিদ্যালয়ের টাকায় নিজ নামে জমি কেনেন লায়লা কানিজ লাকি। পরে সেই জমি ব্যবহার করে সরকারি টাকায় নিজ বাড়ির মূল ফটক পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করেন। পাশাপাশি ওই সড়কের নামকরণও করেন নিজ নামে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ আওয়ামী লীগের নেতারা।

তাঁদের দাবি, লায়লার নানা আবদুল কাদির ছিলেন রাজাকার। আপন চাচা মফিজ উদ্দিন মরজাল ইউনিয়ন বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি। তাঁর আপন মামা এহসানুল হক কাদির জোট সরকারের আমলে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ছিলেন। তাঁর বাবা কফিল উদ্দিন ছিলেন খাদ্য অধিদপ্তরের দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা। বিয়ের পর গত দেড় দশকে স্বামীর অবৈধ টাকায় জোর করে মানুষের জমি দখল, সামাজিক কবরস্থান দখল করে মরজালে শত বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলেন লাকি পার্ক অ্যান্ড রিসোর্ট। স্বামীর অবৈধ অর্থে গড়ে তোলা পার্কে চলে অসামাজিক কার্যকলাপ।

রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। লায়লা কানিজ লাকির নানা আবদুল কাদির মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন। কষ্ট হয়, দুঃখ হয়, যখন দেখি এসব বিরোধী শক্তির পরিবারের লোকজন সমাজটাকে গ্রাস করে ফেলছে, যা খুব দুঃখজনক। 

মরজাল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সানজিদা সুলতানা নাছিমা কালের কণ্ঠকে বলেন, আমার কাছ থেকে ছয় কোটি টাকার জমি ক্রয় করেছেন। আমার স্বামী মোখলেসুর রহমান মোক্তার অসুস্থ থাকা অবস্থায় চিকিৎসার জন্য জমিগুলো বিক্রি করতে হয়েছিল। আমি চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় ও বর্তমানে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে অনেক অভিযোগ পেয়েছি। সুরাহা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি তাঁর প্রভাব প্রতিপত্তির কাছে।

রায়পুরা উপজেলা প্রকৌশলী মো. শামীম ইকবাল মুন্না কালের কণ্ঠকে বলেন, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২৩ মিটার সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছিল। তাদের দাবি ছিল, বিদ্যালয়ের মাঠের মধ্য দিয়ে পুরনো যে সড়ক রয়েছে সেটি বন্ধ করে দেওয়া। কিন্তু সরকারিভাবে একবার সড়ক হালটের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলে সেটি সরানো কিংবা বন্ধ করা যায় না। তাই বর্তমানে সড়কটি অনেকটা অকেজো।

 

স্কুলের টাকায় নিজ নামে জমি ক্রয়

২০১০ সালে মরজাল কাজী মো. বশির উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি নির্বাচিত হন লায়লা কানিজ লাকি। এর পর থেকে ১৪ বছর ধরে প্রভাব খাটিয়ে তিনি সভাপতির পদ দখল করে রেখেছেন। এর মধ্যে বিদ্যালয় থেকে চার লাখ ৩৭ হাজার টাকা উঠিয়ে নিজ নামে প্রায় পাঁচ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। পরে ধাপে ধাপে কিছু টাকা ফিরিয়ে দিয়েছেন বলে জানান বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, আমি অবসর নিয়েছি গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর। অনেক অনিয়ম হয়েছে। কিন্তু কিছুই করার ছিল না। হাত, পা, মুখ বাঁধা ছিল। এ ব্যাপারে আমি আর কিছু বলতে চাচ্ছি না।

বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মকবুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। তবে বিদ্যালয়ের অন্তত পাঁচজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে জানান, বিদ্যালয়ের টাকায় সভাপতি নিজের নামে জমি ক্রয় করেছেন। সেই জমি ও বিদ্যালয়ের জমির ওপর সরকারি টাকায় সড়ক নির্মাণ করিয়েছেন। আবার সেই সড়ক উনার নিজের নামে নামকরণ করেছেন।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

যাত্রীছাউনি

শেয়ার
যাত্রীছাউনি
বাসের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের জন্য রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে তৈরি করা হয়েছে যাত্রীছাউনি। কিন্তু প্রায় সব যাত্রীছাউনিই হকারদের দখলে চলে গেছে। তাঁরা বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে রীতিমতো মার্কেট বানিয়ে ফেলেছেন। গতকাল বিমানবন্দর সড়কের খিলক্ষেতে। ছবি : লুৎফর রহমান
মন্তব্য

৩৯ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
৩৯ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র

এক নারীসহ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩৯ জন বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল পৌনে ৭টায় একটি বিশেষ সামরিক বিমানে (সি-১৭) করে তাঁদের ফেরত পাঠানো হয়। দীর্ঘ ৬০ ঘণ্টার অবর্ণনীয় ক্লান্তি আর যাত্রা শেষে ঢাকার মাটিতে পা রেখে তাঁরা কেউ হন বিমর্ষ, কেউ বা বাকরুদ্ধ। দেশে ফেরার পর ব্র্যাকের পক্ষ থেকে তাঁদের পরিবহন সহায়তা দেওয়া হয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক থেকে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।

ফেরত আসা বাংলাদেশিদের অভিযোগ, দীর্ঘ বিমানযাত্রার পুরোটা সময় তাঁদের হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়। ফেরত আসা একজন বলেন, আমরা অপরাধী নই, আমরা তো আশ্রয় চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের সঙ্গে বন্দির মতো আচরণ করা হয়েছে। ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্মের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান বলেন, আমরা যতটা জেনেছি ঘরবাড়ি বিক্রি করেছেন, ধারদেনা করে এঁরা কেউ ৩০ লাখ, কেউ ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করে মেক্সিকো বা দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশ হয়ে অনিয়মিত পন্থায় পাড়ি জমিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে।

এরপর আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আদালত ও অভিবাসন কর্তৃপক্ষ তাঁদের সেই আবেদন খারিজ করে দেয়। এরপর তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় মার্কিন প্রশাসন।

মন্তব্য
এনসিপি-ছাত্রদলের সমাবেশ আজ

দুই দলেরই বড় জমায়েতের লক্ষ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
দুই দলেরই বড় জমায়েতের লক্ষ্য

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আজ রবিবার জাতীয় শহীদ মিনারে বড় সমাবেশ করবে। অন্যদিকে ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ এবং আহতদের স্মরণ ও সম্মানে বড় সমাবেশের আয়োজন করেছে বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এই সমাবেশ ঘিরে শাহবাগ ও আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হতে পারে। দুই পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে নগরবাসীর কাছে আগাম দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে।

রাজধানীর শাহবাগ ও শহীদ মিনারে এই দুই সমাবেশ হবে। এতে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, সায়েন্স ল্যাব, দোয়েল চত্বর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ব্যাপক জনসমাগম ঘটবে  বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।

নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার পাঠ করবে এনসিপি : শনিবার রাজধানীর বাংলামোটরে অবস্থিত এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ৩ আগস্ট শহীদ মিনার থেকে সরকার পতনের এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপের এক দফা দাবি ঘোষিত হয়েছিল।

যে এক দফার মধ্য দিয়ে আমরা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দাবি জানিয়ে এসেছিলাম। আমরা পদযাত্রার মধ্যেও তা স্পষ্ট করেছি, ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হলেও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার পতন হয়নি। ফলে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বা নতুন বাংলাদেশের বিনির্মাণের যে লড়াই, সেটি আমাদের এখনো চালিয়ে যেতে হচ্ছে। সে নতুন বাংলাদেশের জন্য আমাদের যে কর্মসূচি ও যে রাষ্ট্র ভাবনার রূপকল্প রয়েছে, সেটি আমরা আগামীকাল (রবিবার) প্রকাশ করব।
সেখানে আমাদের নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার পাঠ করা হবে।

গতকাল জাতীয় নাগরিক পার্টির সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ বলেন, আমরা পয়লা জুলাই থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশব্যাপী দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা নামক কর্মসূচি পালন করেছি। এ কর্মসূচির মাধ্যমে ৫৯টি জেলায় আমাদের পদযাত্রাটি হয়েছে। আমরা প্রতিটি জায়গায় গিয়েছি, মানুষের কথা শুনেছি। গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া পরিবারের সঙ্গে আমরা সাক্ষাৎ করেছি।

আহত যোদ্ধা, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। আমরা গণমানুষের কাছে গিয়েছি। গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা, দেশ নিয়ে তাদের ভাবনা এবং একটা নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের কাছে তাদের প্রত্যাশা আমরা শুনেছি।

তিনি বলেন, এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি এবং আমাদের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা আমরা তৈরি করেছি। শহীদ মিনারে আমরা সেই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা এবং আমাদের কর্মসূচি ঘোষণা করব। বিকেল ৪টায় শহীদ মিনারে জনসমাবেশের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হবে। আমরা সাধারণ মানুষকে আহবান জানাচ্ছি, আগামীকাল (রবিবার) ঢাকার এই সমাবেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের জন্য।

জুলাই ঘোষণাপত্রে উদ্যোগ নেওয়ায় সরকারকে সাধুবাদ জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা জানতে পেরেছি যে, সরকারের পক্ষ থেকে ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের সব শক্তি ও রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে জুলাই ঘোষণাপত্র ঘোষণা করতে যাচ্ছে। আমরা সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। পাশাপাশি আমাদের দাবি ছিল, ৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদের বিষয়টিও যাতে সুরাহা হয়। জুলাই সনদে বেশির ভাগ জায়গায় ঐকমত্য হয়েছে, কিছু জায়গায় দ্বিমত রয়েছে। ঐকমত্য কমিশন থেকে এখনো জানানো হয়নি যে বিষয়গুলো নিয়ে দ্বিমত রয়েছে, সে বিষয়গুলো নিয়ে তাদের পরিকল্পনা কী। এটার বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়েও ঐকমত্য কমিশন কথা বলেনি। ফলে বাস্তবায়ন পদ্ধতির সুরাহা হয়ে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা হবে। আমরা বলেছি যে, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি থাকতে হবে। জুলাই সনদের ভিত্তিতেই পরবর্তী নির্বাচনটি হতে হবে। আমরা নির্বাচিত সংসদের ওপরই সংস্কার কার্যক্রম ছেড়ে দিব না। বরং জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামীর সংসদ গঠিত হবে, গণপরিষদ গঠিত হবে। এবং এই অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ই জুলাই সনদটি কার্যকর করতে হবে। আমাদের জুলাই সনদের দাবিও থাকবে আমাদের আগামীকালকের কর্মসূচিতে। বিচার-সংস্কার এবং নতুন সংবিধানের দাবিও থাকবে। সরকার যাতে ৫ আগস্টের মধ্যেই জুলাই সনদের বিষয় একটা সুরাহা করে। জুলাই সনদ রচিত হয়। এটি সারা দেশের মানুষের দাবি। গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে আমাদের এই পরিবর্তনের রূপরেখাটি আমরা যাতে একসঙ্গে সবাই উদযাপন করতে পারি।

নতুন বাংলাদেশের ইশতেহারে কী থাকছে, জানতে চাইলে এনসিপির এই নেতা বলেন, আমরা আগামীকাল তরুণদের নিয়ে পরিকল্পনা, অর্থনীতি নিয়ে পরিকল্পনা এবং দেশের আইন-শৃঙ্খলা পুলিশ-প্রশাসন নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা ইশতেহারের মাধ্যমে জানাব। গত এক বছরের সফলতা-ব্যর্থতা নিয়ে আমরা কথা বলব। একই সঙ্গে আমাদের পার্টির পক্ষ থেকে যে পরিকল্পনা রয়েছে, সে পরিকল্পনাও আমরা প্রকাশ করব।

 

ছাত্রদলের বড় সমাবেশের আয়োজন

২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্মরণ ও সম্মানে বড় সমাবেশের আয়োজন করেছে ছাত্রদল। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। প্রধান বক্তার বক্তব্য দেবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ছাত্রদলের পক্ষে জানানো হয়েছে, সংগঠনটির দেশের সব ইউনিটের নেতাকর্মীরা যেন উপস্থিত থাকেন। নিজ নিজ সুবিধা মতো তাঁরা যেন উপস্থিত হন, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কিছু কঠোর নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের নেতাকর্মীরা ট্রেন ভাড়া করে ঢাকায় আসবেন। দেশের অন্য বিভাগগুলো থেকে নেতাকর্মীরা ইউনিটভিত্তিক সুবিধামতো পরিবহনে আসবেন। সমাবেশ নিয়ে ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খলিল কালের কণ্ঠকে বলেন, মঞ্চ তৈরি করা হবে শাহবাগ থেকে বাংলা মটরের দিকে যাওয়ার মুখে। আর শাহবাগ থেকে কাটাবন, শাহবাগ থেকে মৎস্য ভবন ও শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেবেন। আশা করছি, এই পুরো জায়গায় নেতাকর্মী ভরে যাবে। কয়েক লাখ লোকের সমাগম হবে বলে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এ দিন আমরা শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছিলাম। সেখান থেকে এক দফা ঘোষণা করা হয়েছিল। একই সঙ্গে জুলাই আন্দোলনে যাঁরা শহীদ হয়েছিলেন, আমাদের পক্ষ থেকে তাঁদের স্মরণ করে সম্মান জানানো হবে।

ঢাকাবাসীর প্রতি ছাত্রদলের দুঃখ প্রকাশ : সমাবেশকে কেন্দ্র করে যে যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে, এ জন্য ঢাকাবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছে ছাত্রদল। গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত জুন মাসে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে ৩৬ দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করি। শুরুতে জাতীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের অনুরোধে সমাবেশের স্থান শহীদ মিনার থেকে পরিবর্তন করে শাহবাগে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ব্যস্ত রাজধানীতে কর্মদিবসে সমাবেশের জনভোগান্তি সম্পর্কে আমরা অবগত। যেকোনো ধরনের জনদুর্ভোগের জন্য আগাম দুঃখ প্রকাশ করছি। সম্মানিত নগরবাসী বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করবেন।

 

মন্তব্য

রিয়াদ চাঁদাবাজিতে জড়িত : অপু

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
রিয়াদ চাঁদাবাজিতে জড়িত : অপু
জানে আলম অপু

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে রাজধানীর গুলশানে সাবেক এমপির বাসায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির মামলায় জানে আলম অপুর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল শনিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তারের আদালত শুনানি শেষে রিমান্ডের এ আদেশ দেন। তবে শুনানি চলাকালে আসামি অপু বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক (বহিষ্কৃত) আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। আমরা কেউ চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত না।

অপুকে গতকাল বিকেল ৩টায় আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পুলিশ পরিদর্শক মোখলেছুর রহমান তাঁর ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। ওই আবেদনে বলা হয়, আসামিরা সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ দলের সদস্য। তাঁরা দেশে বিরাজমান পরিস্থিতিতে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে এই মামলার বাদীসহ বিভিন্ন মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চাঁদা নেন।
এরই মধ্যে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে তাঁদের এ রকম কার্যকলাপ প্রচারিত হচ্ছে। এ ছাড়া ভুক্তভোগী আরো কিছু মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় চাঁদা দাবি করেছেন মর্মে বিভিন্ন থানায় অভিযোগ আছে বলে জানা যায়। এ আসামিকে ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ডে এনে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মামলার মূল রহস্য উদঘাটনসহ ঘটনায় জড়িত অপরাপর আসামি ও তাঁদের গডফাডারদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে। এ ছাড়াও বাদীর কাছ থেকে গত ১৭ জুলাই গ্রহণ করা চাঁদার টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
পরে বিকেল ৩টা ২৮ মিনিটে অপুকে কাঠগড়ার নেওয়ার জন্য হাজতখানা থেকে বের করা হয়। তাঁর মাথায় হেলমেট, বুলেটপ্রুভ জ্যাকেট ও হাতে হাতকড়া ছিল। পরে তাঁকে লিফটে করে আদালতের কাঠগড়ায় নেওয়া হয়। তখন তিনি অঝোরে কাঁদতে থাকেন। পরে তাঁর উপস্থিতিতে রিমান্ড শুনানি শুরু হয়।
এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী সাজিদুল ইসলাম রুবেল ও শাহ আলম অভি জামিন চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর কাইয়ুম হোসেন নয়ন জামিনের বিরোধিতা করেন। আসামি অপু বিচারকের উদ্দেশ্যে উচ্চস্বরে বলেন, আমি কিছু বলতে চাই। তখন বিচারক বলেন, আপনার আইনজীবীরা যা বললেন তার সঙ্গে কি আপনি একমত, নাকি এর বাইরে কিছু বলার আছে? তখন আসামি অপু বলেন, আরো বলতে চাই। তখন আসামি অপু বলতে থাকেন, এই মামলায় অলরেডি পাঁচজন গ্রেপ্তার আছে। তাঁদের মধ্যে রিয়াদ বাদে বাকি চারজন চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত না। আমিও জড়িত নই। রিয়াদ বিপদে পড়েছিল বলে আমাদের তখন ডেকেছিল। রিয়াদ বলেছিল, তোরা দ্রুত আয়। আওয়ামী লীগের লোকজনের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে। আমরা সবাই গিয়ে ফেঁসে গেছি। অপু বলেন, ঘটনার দিন ২৬ জুলাই রাতে আমরা তার ডাকে গুলশানের ওই বাসায় যাই। যখন শুনি চাঁদাবাজির ঘটনা, তখনই আমি চলে আসি। এর আগে রিয়াদ যে চাঁদাবাজি করেছে, তার কিছুই জানতাম না। তিনি আরো বলেন, আমাদের লোকেশন ট্র্যাকিং করে দেখেন। আমরা কোথায় ছিলাম, আমাকে কেন রিমান্ডে নেওয়া হবে? রিমান্ডে নেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। রিয়াদ বাদে বাকি চারজন নাবালক। তাদের রিমান্ডে নিয়ে উল্টাপাল্টা স্বীকারোক্তি নেবে। আমাকেও এ জন্য রিমান্ডে নিতে চায়।

গতকাল শুনানি শেষে আদালত আসামির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে গত শুক্রবার রাজধানীর ওয়ারী থেকে অপুকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।

এ মামলায় গত ২৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক (বহিষ্কৃত) আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ, সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব ও মো. ইব্রাহিম হোসেনের  সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। পুলিশ জানায়, রিমান্ড শেষে আজ রিয়াদসহ চারজনকে আদালতে হাজির করার কথা রয়েছে। গত ২৬ জুলাই শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফর বাদী হয়ে গুলশান থানায় চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করেছিলেন।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ