উন্নয়নশীল দেশে সব সময় সম্প্রসারণমূলক বাজেটের চিন্তা করা হয়। করোনা বা করোনার আগে থেকে বাংলাদেশেরও সম্প্রসারণমূলক চিন্তা-চেতনা রয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে কয়েকটি চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। তার মধ্যে ক্রমাগতভাবে রিজার্ভ অবনমন অন্যতম।
অভিমত
রিজার্ভ বাড়ানোর পথনকশা থাকা প্রয়োজন
- নূরুল আমিন

বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বাজেট ঘাটতির কারণ হলো আয় ও ব্যয়ের পার্থক্য। সে ক্ষেত্রে আমরা বছর শেষে এটাকে সংশোধনী বাজেট তৈরি করি।
এখন আমাদের অর্থনীতিতে একাধিক চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। যেমন—মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা, রিজার্ভ বৃদ্ধি, আমদানি হ্রাস, ব্যাংকের মার্জার ও ব্যাংক খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনা।
বাজেটের সঙ্গে দেশের ব্যাংক খাতের একটি সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু ব্যাংক খাতে পুনরায় সুশাসন ফিরিয়ে আনতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে।
এবারের বাজেট সংকোচনমুখী না করলেও গত বছরের চেয়ে যাতে বেশি না বাড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আমাদের বাজারে যেমন এখন ডলারের সংকট চলছে, ঠিক একইভাবে নগদ টাকারও সংকট রয়েছে। কয়েক বছর ধরে কাঙ্ক্ষিত হারে আমাদের রাজস্ব আহরণ হচ্ছে না। এবারও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য পূরণ হবে কি না তাতে সন্দেহ রয়েছে। কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় না হলে ঋণ করে ঘাটতি পূরণ করতে হয় সরকারকে। দেশ থেকে অথবা বিদেশ থেকে যেখান থেকেই হোক। এখন বাজেট ঘাটতি মেটাতে গিয়ে যদি টাকা ছাপিয়ে ঋণ নেওয়া হয় তাহলে সেটা সারাসরি মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব ফেলবে। আবার ব্যাংক খাতে নগদ টাকার সংকট এবং বেসরকারি ঋণে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। সে জন্য এবারের বাজেট সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনামূলক, অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা থাকা উচিত।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ। কিন্তু অনেক সময় বাংলাদেশ ব্যাংকেরও কিছু করার থাকে না। কারণ যখন ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ বাড়ে, তখন মুদ্রাবাজারের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। এর ফলে টান পড়ে বেসরকারি খাতের ঋণে, যেটা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেওয়ার অন্যতম কারণ। আগামী মুদ্রানীতি কতটা সফলতার সঙ্গে কাজ করতে পারবে সে বিষয়েও এবারের বাজেটে দিকনির্দেশনা থাকা দরকার।
লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস বাংলাদেশ (এবিবি) ও এফএএস ফাইন্যান্সের চেয়ারম্যান
সম্পর্কিত খবর

আলী রীয়াজ
জুলাই সনদের চূড়ান্ত ঘোষণা শিগগিরই
নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে কমিশন আশাবাদী। এ আশাবাদ নিয়ে কমিশন কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের মানুষ একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করে—যে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ গণতন্ত্রের পথে আরো এগিয়ে যাবে।
গতকাল শুক্রবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন অধ্যাপক রীয়াজ।
আলী রীয়াজ জানান, রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে শিগগিরই ‘জুলাই সনদ’-এর চূড়ান্ত ঘোষণা দেওয়া হবে। কয়েক দিনের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সনদের পূর্ণাঙ্গ খসড়া পাঠানো হবে এবং তাঁদের মতামতের ভিত্তিতে আগামী সপ্তাহে আরো একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, ঐকমত্যের ভিত্তিতে রচিত এবং প্রত্যাশিত এই সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া কেমন হবে, তা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই ঠিক করতে হবে। সে লক্ষ্যে আগামী সপ্তাহে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এক দফা সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে এবং সেই আলোচনার আলোকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় পর্যায়ের বৈঠকে বসবে কমিশন। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরের মাধ্যমে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে এবং একটি টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ভিত্তি তৈরি হবে।
বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, ‘গত ১৫ বছরে দেশের নির্বাচনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
আগামী জাতীয় নির্বাচন সনদের ভিত্তিতে হবে কি না জানতে চাইলে অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, ‘নির্বাচন কিভাবে হবে সে সিদ্ধান্ত নেওয়া আমাদের দায়িত্ব নয়।
‘নোট অব ডিসেন্ট’ নিয়ে যেসব সুপারিশে ঐকমত্য হয়েছে সেগুলোর ভবিষ্যৎ কী এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, ‘টিআইবির পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে আমরা নির্দিষ্টভাবে কিছু বলছি না। তবে আমরা চেয়েছি এই প্রক্রিয়ায় যেন একটি সম্মতিতে পৌঁছানো যায়। বাস্তবায়নের দায়িত্ব যদিও আমাদের নয়, তার পরও আমরা আলোচনা চালিয়ে যেতে প্রস্তুত।’
কমিশনের ব্যয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেরা কোনো ব্যয় করি না। কমিশনের অর্থসংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখে আইন মন্ত্রণালয় ও সংসদ সচিবালয়। সরকারের পক্ষ থেকে অডিট নিশ্চয়ই হবে।’
স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় সংসদ সদস্যদের প্রভাব প্রসঙ্গে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আদালতের রায় অনুযায়ী স্থানীয় পর্যায়ের কার্যক্রমে সংসদ সদস্যদের সম্পৃক্ততা আইনত বৈধ নয়। অথচ বর্তমানে তাঁরা স্থানীয় সরকারে হস্তক্ষেপ করছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনায় এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ এসেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বড় রকমের পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের কয়েকটি প্রস্তাবে এরই মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। যেমন—প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছরে সীমিত করা এবং প্রধানমন্ত্রীর পদে থেকে দলীয় প্রধান হওয়া বন্ধ করার বিষয়ে অধিকাংশ দল একমত। জাতীয় সংসদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু কমিটিতে বিরোধী দলের সভাপতিত্ব থাকলে এক ধরনের চেক অ্যান্ড ব্যালান্স প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।’
প্রসঙ্গত, সংবিধান সংস্কারের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ গঠিত হয়। কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি। এরই মধ্যে ৩০ জুলাই প্রথম দফায় ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ৬২টি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। দ্বিতীয় দফার খসড়া ২৮ জুলাই পাঠানো হয় এবং ৩১ জুলাই সেই দফার আলোচনা শেষ হয়।

বাড়িভাড়া বিতর্কে ব্রিটিশ মন্ত্রীর পদ ছাড়লেন রুশনারা
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

স্বেচ্ছায় মন্ত্রীর পদ ত্যাগ করেছেন ব্রিটিশ সরকারের মন্ত্রী রুশনারা আলী এমপি। গত বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশনারা আলী লন্ডনের বেথনাল গ্রিন ও স্টেপনি নির্বাচনী আসনে লেবার পার্টি থেকে নির্বাচিত এমপি। মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগের আগ পর্যন্ত ব্রিটেনের লেবার সরকারের হোমলেসনেস (গৃহহীনতা) মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।
উল্লেখ্য, লেবার পার্টির আরেক এমপি টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর সমালোচনার মুখে গত ১৪ জানুয়ারি স্বেচ্ছায় মন্ত্রিত্ব ছাড়েন। তিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি। অন্যদিকে ২০২৪ সালের ৫ জুলাই যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে লেবার পার্টি থেকে টানা পঞ্চমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশনারা আলী দেশটির নতুন সরকারে দায়িত্ব পান।
তবে হঠাৎ করেই মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের কারণ হিসেবে জানা যায়, লন্ডনে নিজের মালিকানাধীন একটি বাড়িভাড়ার বিষয়ে ‘দ্বিচারিতা’র অভিযোগ ওঠার পর বাড়িভাড়া বাড়ানোর পদ্ধতি নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে গৃহহীনতাবিষয়ক একাধিক দাতব্য সংস্থা এবং বিরোধীদলীয় রাজনীতিকরা তাঁর পদত্যাগের দাবি জানিয়েছিলেন। বিষয়টি নিয়ে রুশনারা আলীর বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনার ঝড় ওঠার পর পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা পদত্যাগপত্রে আলী লেখেন, “ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমি মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করছি।
প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে রুশনারা আলীর কাজের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “রুশনারা আলীর ‘পরিশ্রমী’ ভূমিকার জন্য তিনি কৃতজ্ঞ এবং ভবিষ্যতেও তিনি ব্যাকবেঞ্চ থেকে সরকারের কাজকে সমর্থন দিয়ে যাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।”
‘দি আই পেপার’-এর অনুসন্ধানে উঠে আসে রুশনারা আলী পূর্ব লন্ডনের একটি বাড়ির ফিক্সড টার্ম কন্ট্রাক্ট বাতিল করে সেটি বিক্রির উদ্দেশ্যে তালিকাভুক্ত করেন।
সাবেক এক ভাড়াটে জানান, ২০২৪ সালের নভেম্বরে তাঁকে চার মাসের নোটিশ দিয়ে বলা হয়, বাড়ির লিজ নবায়ন হবে না। তিনি ও বাকি তিন ভাড়াটে বাড়ি ছাড়ার পর সেই বাড়িটিই আবার নতুন করে ভাড়া দেওয়া হয়। সূত্র : ডেইলি মিরর

অন্য জীবন
সেন্টুর ডাকে আসে ইঁদুরের ঝাঁক
পিন্টু রঞ্জন অর্ক

দৃশ্যটা অদ্ভুত সুন্দর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সামনের ফুটপাত। ‘আয়, আয়’ বলে ডাকছেন একজন। সে ডাকে ম্যানহোলের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে ইঁদুর! ইঁদুরগুলোকে তিনি পরোটার টুকরা দিচ্ছেন।
চারুকলার সামনের এই রাস্তায় প্রতিদিন দুপুরে এমন দৃশ্য দেখা যায়। ব্যতিক্রমী এই দৃশ্যের নায়ক কামাল হোসেন সেন্টু।
শুধু ইঁদুর নয়, চড়ুই, শালিক, কাঠবিড়ালিও আসে খাবারের খোঁজে। এমন মনকাড়া দৃশ্য দেখে অনেকে থমকে দাঁড়ায়। অবাক হয়ে ছবিও তোলে। কুকুর, বিড়াল কিংবা পাখিকে অনেকেই পোষ মানায়।
সাধারণ সেন্টুর অসাধারণ কাজ : সদা হাস্যোজ্জ্বল মানুষটা মধ্যবয়সী। পরনে অতি সাধারণ পোশাক। কিন্তু করে যাচ্ছেন অসাধারণ কাজ। চারুকলার শিক্ষার্থীরা তাঁকে ‘সেন্টু ভাই’ বলে ডাকেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চারুকলার দেয়াল ঘিরে তাঁর অস্থায়ী গয়নার দোকান। তাঁকে চারপাশে ঘিরে থাকে পাখি, কাঠবিড়ালি, বিড়াল। তিনি ডাকলেই গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে কয়েকটি সাহসী ইঁদুর। ছোট ছোট পা আর ডানাওয়ালা এই ক্ষুধার্ত অতিথিরা সেন্টুর কাছে আসে খাবারের আবদার নিয়ে। তিনিও নিরাশ করেন না ওদের।
রাজপথে সংসার : সেন্টুর জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। অভাবের সংসারে বেশি দূর পড়তে পারেননি। জীবনের শুরু থেকে সংগ্রাম নিত্যসঙ্গী। স্কুল ছেড়ে বেছে নিতে হয়েছে শ্রমিকের জীবন। মজুরি দিয়েছেন হাজারীবাগের ট্যানারিতে। সায়েন্স ল্যাবের পাশে খেলনা বিক্রি করেছেন। একসময় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে গ্যাস সিলিন্ডার ভরেছেন। কখনো ধানমণ্ডি, ফার্মগেট আর সায়েন্স ল্যাবে কাঁধে ব্যাগ আর চোখে স্বপ্ন নিয়ে ঘুঙুরও ফেরি করেছেন। কিছু টাকা জমিয়ে ছোট্ট এক স্টেশনারির দোকান দিয়েছিলেন নবাবপুরে। সেটা ২০০০ সালের কথা। অনেক স্বপ্ন নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। বিশ্বাস করে মানুষকে বাকি দিয়েছেন। কিন্তু তা আর ফেরত পাননি। দীর্ঘস্থায়ী হয়নি তাঁর ব্যবসায়ী হয়ে ওঠার স্বপ্ন। ফলে আবার নামতে হলো রাজপথে। যেন হেলাল হাফিজের সেই কবিতার মতো সেন্টুর জন্মই হয়েছে ‘রাজপথে সাজাতে সংসার’। এবার তাঁর ঠিকানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
চলার পথে হোঁচট খেয়েছেন বারবার। আবার সাহস নিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন। জীবনে বিশ্বাসভঙ্গের বেদনায় পুড়েছেন অনেকবার। তবে সেন্টু হারাননি বুকের কোণে পুষে রাখা স্বপ্নটুকু। স্রোতের ভিড়ে হারাননি আত্মমর্যাবোধ আর মমতার পরশপাথর। যার প্রমাণ মেলে পশুপাখির প্রতি তাঁর ভালোবাসা দেখে।
সেন্টু বলেন, ‘আমার মতো অবস্থায় থাকলে অনেকে হতাশায় মুষড়ে পড়ে। কিন্তু স্ত্রী আর ছেলেমেয়ের মুখের পানে চেয়ে আমি বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছি। কারো মুখাপেক্ষী হয়ে নয়, বাঁচতে চেয়েছি পরিশ্রম করে।’
চা-বিড়ির টাকায় ইঁদুর-পাখির আপ্যায়ন : গত ১৩ বছর ধরে চারুকলার সামনের ফুটপাতে ছোট্ট এক গয়নার স্টল নিয়ে বসেন সেন্টু। প্রতিদিন দুপুর ১২টার দিকে গয়নাভর্তি কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে আসেন। পরে গয়নাগুলো সাজিয়ে দেন চারুকলার দেয়ালে। স্টলটা সাধারণ। কিন্তু তাঁর দোকানের প্রতিটি পণ্য যেন একেকটা গল্প বয়ে বেড়ায়। কোনোটা অলংকরণে ভরপুর, কোনোটা যেন হারিয়ে যাওয়া কোনো রূপকথার অংশ। সেন্টুর ভাষায় ‘আসলে শুধু লকেট বা ব্রেসলেট নয়, আমি গল্প বিক্রি করি।’ বোঝা যায়, কষ্ট নয়—তিনি নিজে অন্তরে পোষেণ মায়া আর মমতার গল্প। সেই মায়ার টানে ছুটে আসে তাঁর অতিথিরা—ইঁদুর, কাঠবিড়ালি আর চড়ুই পাখি। চালের খুদ, পরোটা সবই নিয়ে আসেন ওদের জন্য। দুপুরে এসে ‘আয় আয়’ ডাক দিলেই ছুটে আসে তারা। যেন তারা তাঁর আত্মার আত্মীয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উজ্জ্বল কুমারের ভাষায়, ‘বিনি সুতোর মালায় গাঁথা বন্ধন’। এভাবে দৈনিক গড়ে ৫০ থেকে ৬০ টাকার মতো খরচ হয় সেন্টুর। পান, বিড়ি, সিগারেট কিছুই খাওয়ার অভ্যাস নেই তাঁর। পারতপক্ষে চা-ও না। সেই টাকা ইঁদুর-পাখির খাবারের পেছনে খরচ করেন বলে জানালেন। সেন্টু বলেন, ‘গয়না বিক্রির টাকায় সংসার চলে। নিজে চা-বিড়ি খাইলে যে পয়সা খরচ হতো, সেটা ব্যয় করি ইঁদুর আর পাখির জন্য। আসলে এদের খাওয়াই আত্মার শান্তির জন্য। নিজের দুঃখ ভুলে ওদের নিয়ে মেতে থাকি। ওদের খেতে দেখলে আনন্দ লাগে। শান্তি পাই।’
ওদের জন্য মন পোড়ে : মানুষ নানা প্রাণীকে খাওয়ায়। তাই বলে ইঁদুর? ফসল থেকে শুরু করে কাপড়, বইপত্র নষ্ট করে বলে লোকে ইঁদুর মারে। সেন্টুর ভাষায়—‘ক্ষুধার জ্বালায় বাধ্য হয়েই এসব করে ইঁদুর। ক্ষুধার জ্বালায় কে কি না করে?’
অস্থিরতা বা অন্য কোনো কারণে যখন ক্যাম্পাসে প্রবেশাধিকার সীমিত হয়ে যায়, অসুস্থতা বা কোনো কারণে যেদিন নিজে ক্যাম্পাসে আসতে পারেন না, তখন খুব খারাপ লাগে সেন্টুর। বলেন, ‘ওদের জন্য মন পোড়ে। আবার ভুলে কোনো দিন যদি খাবার না আনি, তাহলে দেখি ওরা ঘোরাঘুরি করছে। তখন আফসোস লাগে—আহা রে, আজ খাবার আনলাম না!’
আহত পাখি বা বিড়াল নিয়ে অনেক সময় তাঁর কাছে আসেন চারুকলার শিক্ষার্থী বা পথচারীরা। তিনি সাধ্যমতো শুশ্রূষা করে সেগুলোকে আবার ছেড়ে দেন প্রকৃতির মাঝে। যেমনটা বলছিলেন চারুকলার ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগের ছাত্রী সুবাহ সামাউন ওহি, ‘চারুকলায় আসার পর থেকে সেন্টু ভাইকে দেখছি, ইঁদুর পোষেণ, খাওয়ান। অনেক সময় চারুকলায় আহত কাক, বিড়াল পেলে সেন্টু ভাইয়ের কাছে দিয়ে যাই। তিনি সেগুলোকে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। মানুষটার মাঝে অনেক মায়া।’
সেন্টুর এসব কর্মকাণ্ড দেখে অনেকে তাঁকে ‘হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা’ বলে। কিন্তু হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা ইঁদুরগুলোকে ঠেলে দিয়েছিল মৃত্যুর মুখে। আর সেন্টু দিচ্ছেন বাঁচার রসদ। মমতার বার্তা ছড়ানো সেন্টু জানালেন, যত দিন বেঁচে আছেন, কাজটি চালিয়ে যাবেন।

কলকাতায় ‘পার্টি অফিস’ খুলে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম চলছে কিভাবে
বিবিসি বাংলা

কলকাতা লাগোয়া উপনগরীতে শয়ে শয়ে বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স, রাত-দিন লাখ লাখ মানুষের ভিড় সেখানে। ব্যস্ত এই এলাকায় একটি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সে এমন কয়েকজন যাতায়াত করছেন, যাঁদের কয়েক মাস আগেও সেখানে দেখা যেত না। ওই বাণিজ্যিক পরিসরে যাতায়াত করে, এমন বেশির ভাগ লোকই চেনে না এই নবাগতদের, চেনার কথাও নয়।
তবে এঁদের অনেকেই মাত্র এক বছর আগেও বাংলাদেশের সবচেয়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন।
এর আগে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার পরের কয়েক মাসে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে যাঁরা ভারতে অবস্থান করছেন, তাঁরা নিজেদের মধ্যে ছোটখাটো বৈঠক বা দলীয় দপ্তরের কাজকর্ম চালাতেন নিজেদের বাসাবাড়িতেই। বড় বৈঠকগুলো অবশ্য করতে হতো কোনো রেস্তোরাঁ বা ব্যাংকুয়েট হল ভাড়া করে।
কী রকম সেই ‘পার্টি অফিস’?
বাণিজ্যিক পরিসরটির পেছনের দিকের ভবনটির অষ্টম তলায় লিফট দিয়ে উঠে বাঁ দিকে গেলেই সার দিয়ে বাণিজ্যিক সংস্থার দপ্তর। করিডরের দুই দিকে হালকা বাদামি রঙের একের পর এক দরজা। তার মধ্যেই একটিতে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস।
একজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বা নেত্রীর কোনো ছবি, সাইনবোর্ড কোনো কিছুই আমরা রাখিনি খুবই সচেতনভাবে। আমরা চাইনি যে এই ঘরটার পরিচিতি প্রকাশ করতে। এমনকি একটা দলীয় দপ্তরে যেসব ফাইল ইত্যাদি থাকে, সেসবও এখানে রাখা হয় না।
তিনিই জানালেন, ৩০ থেকে ৩৫ জনের বৈঠক এই দপ্তরেই হয়ে যায়, কিন্তু একটু চাপাচাপি করে বসতে হয়। ছোটখাটো বৈঠক বিভিন্ন নেতার বাসাবাড়িতে এখনো হয়। তবে বড় বৈঠকগুলো, যেখানে শ দুয়েক নেতাকর্মী হাজির হওয়ার কথা, সে রকম বৈঠকের জন্য কোনো ব্যাংকুয়েট হল বা কোনো রেস্তোরাঁর একটি অংশ ভাড়া নেওয়া হয়।
কারা যাতায়াত করেন ‘পার্টি অফিসে’?
গত বছরের ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে আসা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর অনেক শীর্ষ নেতা এবং সাবেক মন্ত্রীই কলকাতা বা তার আশপাশের অঞ্চলে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন। এর বাইরে বিভিন্ন পেশাজীবী, সরকারি কর্মচারী, পুলিশ কর্মকর্তা ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারাও চলে এসেছেন ভারতে। মাস ছয়েক আগে আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানিয়েছিল, অন্তত ৭০ জন সাবেক সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জেলার সভাপতি ও সম্পাদক, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, মেয়রসহ শীর্ষ নেতৃত্বের অন্তত ২০০ জন কলকাতা ও সংলগ্ন অঞ্চলে থাকছেন। এঁদের কেউ সপরিবারে থাকেন, আবার কোথাও একসঙ্গে কয়েকজন মিলেও একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছেন। কারো পরিবার মাঝেমধ্যে বাংলাদেশ থেকে এসেও কিছুদিন কাটিয়ে যায়।
আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘এখন যে সংখ্যাটা খুব বেশি বেড়েছে তা নয়। বর্তমানে দ্বাদশ সংসদের ৮০ জনের মতো সংসদ সদস্য এবং তারও আগে সংসদ সদস্য ছিলেন, এমন ১০ থেকে ১২ জন নেতা আছেন এখানে। আবার এমনও কয়েকজন এসেছেন যাঁরা কলকাতায় এসে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া বা অন্যান্য দেশে চলে গেছেন।’
সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারাও থাকেন কলকাতার আশপাশেই। কলকাতা বা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে আওয়ামী লীগের যে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বাস করছেন, তাঁদের প্রায় সবাই ‘পার্টি অফিসে’ যাতায়াত করে থাকেন। ওই আওয়ামী লীগ নেতা জানান, অফিস খোলার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। যে রকম প্রয়োজন, সে রকমই আসেন নেতারা। আবার রোজই যে সবাই আসেন, তা-ও নয়। আসলে প্রয়োজনীয়তা ছিল একটা নির্দিষ্ট জায়গা গড়ে তোলা, সে জন্যই এই ‘পার্টি অফিস’।
আওয়ামী লীগের এই নতুন পার্টি দপ্তরের ব্যাপারে ওই বাণিজ্যিক পরিসরে যাতায়াত করা সাধারণ মানুষ যে কিছু জানবে না, সেটাই স্বাভাবিক। দলেরও কোন স্তরের নেতাকর্মীরা এই দপ্তরের ব্যাপারে কতটা জানেন, সেটা জানা যায়নি। কিন্তু এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে ভারতীয় গোয়েন্দারা এই দপ্তরের ব্যাপারে জানেন এবং ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ স্তরের অনুমোদন ছাড়া এই দলীয় দপ্তর থেকে আওয়ামী লীগের কাজকর্ম চলতে পারত না।
যেভাবে দল চলছে এক বছর ধরে
গত এক বছরের কিছুটা কম সময় ধরে ভারত থেকেই আওয়ামী লীগ পরিচালিত হচ্ছে। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা দিল্লির কাছাকাছি কোথাও থাকেন, আর বড় অংশ থাকে কলকাতাসংলগ্ন অঞ্চলে। তবে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘এই ধারণাটা ঠিক নয় যে ভারত থেকে দল চলছে। মূল দল বা সহযোগী সংগঠনগুলোর কতজন নেতাই বা ভারত অথবা অন্যান্য দেশে রয়েছেন? বেশির ভাগ তো এখনো বাংলাদেশেই আছেন।’ সাদ্দাম হোসেনও বর্তমানে কলকাতায় আছেন।
কিন্তু দলের নেত্রী শেখ হাসিনা এবং শীর্ষ নেতৃত্বের একটা বড় অংশ ভারতে আছে বলে সেখান থেকেই যে রাজনৈতিক দিশা-নির্দেশ দেওয়া বা দলীয় অবস্থান চূড়ান্ত হবে, সেটাই স্বাভাবিক। তবু দুই সপ্তাহ আগে পর্যন্তও শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সরাসরি দেখা হয়নি দলনেত্রীর। গত ৩১ জুলাই শীর্ষ নেতৃত্বের কয়েকজনকে দিল্লিতে এক বৈঠকে ডেকেছিলেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা ওই বৈঠকের বিষয়টি বিবিসি বাংলার কাছে নিশ্চিত করেছিলেন, তবে বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, কোথায় বৈঠক হয়েছে, সে ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি ওই নেতারা।
দলের নেত্রীর সঙ্গে ওই বৈঠকটি ছাড়া এবং নিজেদের মধ্যে সশরীরে দেখা-সাক্ষাৎ ও বৈঠক ছাড়া দলটির বাকি সব কাজই চলে ভার্চুয়াল মাধ্যমে। বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের জন্য আলাদা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ, টেলিগ্রাম গ্রুপ ইত্যাদি গড়া হয়েছে। এ ছাড়া নিয়মিতই লাইভ অনুষ্ঠান করে থাকে দলটি। এ রকম লাইভ অনুষ্ঠানে মাঝেমধ্যেই যোগ দেন শেখ হাসিনা নিজেও। সেসব আলোচনায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা যেমন হয়, তেমনই আবার মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মী, যাঁরা বাংলাদেশেই থেকে গেছেন, তাঁদের নির্দেশনাও দেওয়া হয়ে থাকে।
‘কর্মীরা দেশে মার খাচ্ছেন, নেতারা কেন ভারতে?’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে মাঝেমধ্যেই এই প্রশ্ন ওঠে যে আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা যখন দেশে মার খাচ্ছেন, গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যাচ্ছেন, তখন শীর্ষ নেতৃত্বের একটা বড় অংশ কেন ভারতে পালিয়ে আছে।
এ প্রসঙ্গে সাবেক সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, ‘এই প্রশ্ন ওঠা যে খুব অযৌক্তিক, তা নয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ১৯৭১ সালে যদি তখনকার নেতৃত্ব ভারতে চলে এসে প্রবাসী সরকার গঠন না করতেন, তাহলে কি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ পরিচালনা করা সম্ভব হতো? আমি ১৯৭১ সালের সঙ্গে তুলনা করছি না বর্তমান সময়ের, কিন্তু এ রকম উদাহরণ আমাদের দেশেও রয়েছে, অন্যান্য দেশেও আছে যে বিদেশ থেকে দল পরিচালনা করে, শক্তি সঞ্চয় করে দেশে ফিরে ক্ষমতা দখল করেছেন নেতারা। পাকিস্তানে নওয়াজ শরিফ বা বেনজির ভুট্টো বলুন বা আমাদের দেশের তারেক রহমান। সবাই তো বিদেশ থেকেই দল পরিচালনা করেছেন বা এখনো করছেন।’
তাঁর প্রশ্ন, ‘দেশে থাকলে হয় জেলে থাকতে হতো, মেরেও ফেলতে পারত। কিন্তু তাহলে আমাদের যে রাজনৈতিক কাজকর্ম, বর্তমান সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরা, দলকে আবারও সংগঠিত করা, সেগুলো কি আমরা করতে পারতাম?’
নেতাদের মধ্যে রাজনৈতিক আলোচনা
দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন প্রচার করেছিল এই সরকার, তাতে তারা গত এক বছরে সব দিক থেকেই ব্যর্থ হয়েছে। অর্থনীতি ফেইল করেছে, বিচারব্যবস্থা প্রহসনে দাঁড়িয়েছে। আর সব ক্ষেত্রেই তাদের ব্যর্থতার জন্য তারা শেখ হাসিনা আর ভারতের ওপরে দায় চাপাতে ব্যস্ত। একটা যেন ইন্ডিয়া ফোবিয়া, হাসিনা ফোবিয়া হয়ে গেছে তাদের।’
তিনি বলেন, “এক বছর পরে তাদের নিয়ে সেই উন্মাদনা কিন্তু আর নেই। তাদের মুখের কথায় মানুষ আর বিশ্বাস করতে পারছে না, বিভ্রান্ত হচ্ছে না। সবাই বাস্তবতার নিরিখে মূল্যায়ন করছে সরকারের। তাদের এই ব্যর্থতার জন্য বহু মানুষ বলছে, ‘শেখ হাসিনার সময়েই ভালো ছিলাম।’”
অর্থায়ন কিভাবে হচ্ছে?
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেছেন, দেশে-বিদেশে থাকা শুভাকাঙ্ক্ষীরাই তাঁদের খরচ চালাচ্ছেন। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সাংগঠনিকভাবে আগস্টের পর যে বিপর্যয় নেমে এসেছে, সেই অন্ধকার অতিক্রম করা কঠিন কাজ। যেসব নেতাকর্মী দেশে বা বিদেশে আছেন, তাঁরাই এই দুঃসময়ে এগিয়ে আসছেন, অর্থ দিয়ে সাহায্য করছেন। কর্মীরা এখানে কষ্ট করেই আছেন, তবে মনোবলই আমাদের সম্বল।’
আরেক নেতা নাম উল্লেখ না করার শর্তে বলেন, ‘দেশ থেকে আমার পরিবার-পরিজন ও সহকর্মীরা প্রয়োজন মতো অর্থ পাঠিয়ে দেয়। তবে এই এক বছরে আমাদের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন আনতে হয়েছে।’ তাঁর কথায়, ‘আমরা যে এখানে মানবেতর জীবন যাপন করছি, বা ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময়ের মতো শরণার্থীশিবিরে থাকছি, তা নয়। কিন্তু আমাদের মধ্যে যাদের মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত জীবনযাত্রা ছিল, সে সবই পরিবর্তন করতে হয়েছে। যাঁরা ঢাকায় হয়তো গাড়ি ছাড়া চলতেন না, তাঁদের এখন কলকাতার গণপরিবহন ব্যবহার করতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি একটি ফ্ল্যাটে আরো তিনজনের সঙ্গে থাকি। বাসে, ট্রেনে বা মেট্রো রেলে যাতায়াত করি। আবার সহকর্মীদের মোটরসাইকেল বা বাইকেও চেপে ঘোরাঘুরি করি। যদি কয়েকজন মিলে একসঙ্গে কোথাও যেতে হয়, তখন হয়তো ট্যাক্সিতে উঠলাম। ভাড়াটা ভাগাভাগি করে নিলে গায়ে লাগে না। আসলে সঞ্চিত অর্থে যতটা স্বল্প খরচে চলা যায়।’
কিন্তু কত দিন থাকবেন তাঁরা দেশ ছেড়ে? ওবায়দুল কাদের বলন, ‘দিনক্ষণ ঠিক করে ওভাবে তো রাজনৈতিক লড়াই হয় না, আবার লড়াই ছাড়া উপায়ও নেই।’